উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান 

২৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ২৯)

নবনি ঘুম থেকে উঠে আরাফকে পায় নাই।আরাফ আজকে ও সকাল সকাল চলে যায়।
নবনি ঘুম থেকে উঠে ওয়ারদাকে কল দেয়।
ওয়ারদাঃহ্যা দোস্ত বল।
নবনিঃনিলয় ভাইয়া চলে গিয়েছে?
ওয়ারদাঃহ্যা।
নবনিঃমন খারাপ করিস না। ৩ মাসে দেখতে দেখতে কেটে যাবে।উনি তো কাজেই গিয়েছে।সেটেল হতে না।
ওয়ারদাঃতিন মাসে ৯০ দিন হয়।এত দিন আমি কি করে পার করবো।
নবনিঃআমি থাকতে টেনশন নেই।এসে পরো ওয়ারদা মনি।
ওয়ারদাঃআচ্ছা আসতেসি।
আরাফ এর চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।রাতে ঘুম না হওয়ায় মাথাও ব্যাথা করছে।
আরাফঃদিয়া। আমার জন্য কফি পাঠাও।
দিয়া আরাফ এর নতুন এসিস্ট্যান্ট। ১ মাস হয়েছে জয়েন করেছে।আরাফ এর বলার সাথে সাথে দিয়া কফি নিয়ে হাজির হয়।
দিয়াঃস্যার।আপনার কফি।
আরাফ কফি নিতে গেলে দিয়ার হাত আরাফ এর হাতে লাগে আরাফ সাথে সাথে হাত সরিয়ে ফেলে।আর কফিটা আরাফ এর গায়ে পরে যায়।
আরাফঃOh no. Shet.একটু পর মিটিং আসে আর এখন এটা। 
দিয়াঃআমি ঠিক করে দিচ্ছি স্যার।
দিয়া আরাফ এর কোট খুলে নিয়ে নেয়।স্যার আমি এখনই এটা ক্লিন করে আনছি।আরাফ এর অনেক রাগ উঠে এই মেয়ের উপর। ১ মাস যাবত আসছে।সারাদিন আরাফকে দেখে পার  করে। কাজ ও তেমন পারে না।মেয়েটার বাবা প্যারালাইজড। ওর টাকায় সংসার চলে বলে কিছু বলতেও পারছে না।
আরাফঃআমার জন্য কফি পাঠাও ফাস্ট।
দিয়া দৌড়ে চলে গেল।আরাফ এর মাথা ছিড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়। 
নবনি গোসল করে বের হয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো।তার পেটটা আরো ফুলে গিয়েছে।নবনির কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।৯ মাসে পেট টা যেমন ফুলে যায়।ঠিক তেমন ফুলে গিয়েছে।কিন্তু ওর তো মাত্র ৬ মাস চলছে।
নবনি আরাফকে কল দিলো।আরাফ মাথা চেপে ধরে  বসে ছিল।নবনির কল আসায় এত যন্ত্রনার মধ্যেও আরাফ এর ঠোঁটে হাসি ফুটলো।আরাফ নিজেকে যতটা পারছে স্বাভাবিক রেখে নবনির সাথে কথা বলে।
আরাফঃহ্যা নবনি পাখি বলো।
নবনিঃআরাফ আমার পেট অনেক ফুলে গেছে।কালকে রাতেও এতো ফুলা ছিল না।
আরাফঃIts Normal. পাখি। তাও যদি মনে হয় অস্বাভাবিক। তাহলে আমরা ডাক্তার এর কাছে যাবো।তুমি চিন্তা করো না।
নবনিঃআপনি ঠিক আসেন?আরাফ।
আরাফঃহুম। একটু মাথা ব্যাথা করছে।
নবনিঃকফি খেয়েছেন? 
আরাফঃনা আনতে দিয়েছি।


নবনিঃবেশি ব্যাথা করছে!?
কথার মাঝখানে দিয়া আসে।
দিয়াঃস্যার।আসতে পারি?
আরাফ রেগে দিয়ার দিকে তাকালো।দিয়া ভেতরে ঢোকার সাহস পেলো না।
আরাফঃI m ok.টেনশন করো না।রাখি। নিজের খেয়াল রেখো।আল্লাহ হাফেজ।
নবনিঃআই লাফ ইউ আরাফ।
আরাফঃসেম টু ইউ।পাখি।😊
আরাফ দিয়াকে ইগনোর করে কথাই বলছে।দিয়ার ব্যাপারটা ভালো লাগলো না।
দিয়াঃস্যার আসবো?(কিছুটা জোরে)
আরাফ কল রেখে দিয়ার দিকে তাকালো।
আরাফঃNo. You can't. 
দিয়া আরাফ এর কথাটা না শুনেই ভিতরে এসে পরলো।
দিয়াঃস্যার। আপনার কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আগে খেয়ে নিন।তারপর কথা বলুন।আরাফ কফির কাপটা বাইরে ছুড়ে মারলো।
আরাফঃHow dare you Miss Diya!!!আপনি আমার কেবিনে আমার পারমিশন ছাড়া Enter করার সাহস কি করে পান?!!
আরাফ এতো জোরেই দিয়াকে ধমক দেয় যে বাইরের সব স্টাফ আরাফের রুমের বাইরে ভীর করে।দিয়া ভয়ে কাপছে।আরাফ এর কপালের রগ ফুলে উঠেছে।
দিয়াঃসরি স্যার।আমি বুঝতে পারি নেই।
আরাফঃসরি মাই ফুট।আপনি যখন দেখেছেন আমি ফোনে কথা বলছি তাহলে আমাকে ডিস্টার্ব কেন করলেন?
দিয়াঃকফি ঠান্ডা হ.....
আরাফঃগেট লস্ট। আই সেইড গেট লস্ট।
দিয়া কাদতে কাদতে বের হয়ে গেলো।
আরাফঃএখানে কি তামাশা হচ্ছে?!!Get back to you work.
আরাফ মিটিং এ চলে গেলো।
নবনিঃআরাফ এর খুব মাথা ব্যাথা ছিল।আমি কি অফিস থেকে হয়ে আসবো।
ওয়ারদা নবনির রুমে এসে বিছানায় বসে আছে।নবনি তা খেয়াল করছে না।
ওয়ারদাঃকি রে কি এমন ভাবছিস?
নবনিঃআরাফ এর অফিসে যাবো ভাবছি।
ওয়ারদাঃতো যা।এতো ভাবার কি আসে।
নবনিঃকি পরবো।আমাকে এই অবস্থায় কেমন লাগবে সেখানে গেলে!!?
ওয়ারদাঃ এক কাজ কর শাড়ি পরে নে।
নবনিঃগুড আইডিয়া বাট।আমি তো শাড়ি সামলাতে পারি না।
ওয়ারদাঃ কিছু হবে না। ভাইয়াতো আসেই। চল তোকে রেডি করে দেই।
নবনি আজ প্রথম শাড়ি পরলো।সুন্দর করে সেজে অফিসে গেলো।অফিসে ঢুকতেই একটা মেয়ের সাথে  ধাক্কা খেলো।
নবনিঃসরি।
দিয়াঃদেখে হাটতে পারেন না।ষ্টুপিড। 
নবনি কিছু বলতে নিলে দেখে আরাফ মিটিং শেষে নিজের কেবিনে ঢোকে। নবনি কিছু না বলে আরাফ এর কেবিনের দিকে এগোয়।
দিয়াঃওয়েট মিস।আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
নবনিঃআরাফাত চৌধুরীর কেবিনে। রাস্তা ছাড়ুন।
দিয়াঃআপনি এভাবে উনার কেবিনে যেতে পারেন না।পারমিশন নেই।
নবনিঃযেতে পারি কি না সেটা আমার উপর।সরুন বলছি।
দিয়া নবনিকে ধাক্কা মারে।অন্য একটা ছেলে ধরে ফেলে।একটুর জন্য পেটে আঘাত পেতো।ছেলেটা আরাফ এর ম্যানেজার ছিল।
ম্যানেজারঃম্যাম।আর ইউ ওকে?
নবনিঃহুম।
দিয়া রেগে নবনির দিকে তাকিয়ে আছে।


নবনি কিছু না বলে আরাফ এর কেবিনে ঢুকে পরে।
দিয়াঃএই মেয়ে এখন অপমান হয়ে বের হবে।কতো মানা করলাম। শুনলোই না।আরাফ তার কেবিনে কাউকেই ঢুকতে দেয় না। আর এই মেয়ের কি সাহস!!।
লিজা নবনির অপমান হয়ে বের হয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করছে।
আরাফ তার কেবিনে মাথা নিচু করে বসে আছে।নবনি আরাফকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।আরাফ নবনিকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে যায়।
আরাফঃতুমি এখানে কি করছো?
নবনি আরাফের জন্য আনা কফিটা কাপে ঢেলে দেয়।আরাফ নবনির হাত ধরে কোলে বসায়।আরাফ নবনির শাড়ির ভিতরে হাত ঢুকিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে নবনির ঘাড়ে মাথা গুজে।
আরাফঃদিন দুপুরে আমাকে মাতাল করার জন্য শাড়ি পরে এসেছেন?!
নবনি আরাফ এর চুল হালকা করে টেনে দিচ্ছে।
নবনিঃমোটেও না। আপনার মাথা ব্যাথা সারাতে এসেছি।কফিটা খেয়ে নিন।ঠান্ডা হয়ে যাবে।
আরাফঃনবনি পাখি। তোমাকে দেখেই মাথা ব্যাথা কমে গিয়েছে।সত্যিই।
নবনিঃকি দরকার এতো কষ্ট করার!!শরির খারাপ ছিল।বাসায় চলে আসতেন।আজকে অফিস না করলে কি অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো।
আরাফঃআমাদের বেবিদের যাতে এত কষ্ট না হয় সে জন্যই তো এতো কষ্ট নিচ্ছি।বাবা হওয়াটা যে অনেক দায়িত্বের।আমি পুরে গেলেও তো আমার সন্তানদের রোদে পুরতে দিবো না।
নবনিঃআপনি এতো সুন্দর করে কি করে ভালোবাসেন।
আরাফঃতুমিও তো ভালোবাসো।রাত এ স্বামীর ঘুম নষ্ট করে যেমন আবদার পূরন করাও।আবার ঠিক সকালে নিজের ঘুম নষ্ট করে সেই স্বামীর জন্য কফি বানিয়ে সেজে গুজে এসে পরো।
সব মেয়েদের মধ্যেই এই গুনটা আছে।কারন মেয়েরা হলো মায়াবতী।আফসোস কিছু ছেলে এই গুনটা বুঝে আর কিছু ছেলে ন্যাকামি ভেবে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
হুট করে দরজা খোলার শব্দ হলো। আরাফ নবনি তাকিয়ে দেখে দিয়া না নক করে ভিতরে ঢুকে গেলো।নবনি এবার খুব রেগে গেলো।কিন্তু আরাফ এর খুব হাসি পেলো।কারন দিয়া নবনিকে আরাফ এর কোলে দেখতে পায়। যা দেখে দিয়ার চেহারার অবস্থা এমনেতেই কান্না কান্না।
নবনিঃএই মেয়ে তুমি সেই মেয়ে না যে আমাকে আরাফ এর কেবিনে আসার আগে পারমিশন নিতে বলছিলে?এখন তুমি বিনা নক করে ঢুকে পরো কিভাবে!!?
দিয়া আরাফ এর দিকে তাকালো এই ভেবে যে আরাফ কিছু বলবে।আরাফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে  এক হাত দিয়ে ফাইল পরছে।আর এক হাত  নবনির পেটে। দিয়া রেগে চলে গেলো।
নবনিঃএই মেয়ে কি পাগল?!!
আরাফঃকি জানি।আমার সেকেট্টারি।
নবনি লাফ মেরে আরাফ এর কোল থেকে নামলো।
নবনিঃকি বললেন!!?এই মেয়ে আপনার সেকেট্টারি?
আরাফঃহ্যা।কেন!!
নবনিঃকেন মানে!!দেখেন না এই মেয়ে আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।চোখে পরে না নাকি!!?
আরাফঃকই আমিতো এমন কিছু দেখি নেই।
নবনিঃদেখবেন কি করে।আপনি তো দেখবেন না।আজকেই এই মেয়েকে বাদ দিয়ে ছেলে এসিস্ট্যান্ট রাখবেন।Got it!!
নবনি আরাফকে ঝাড়িয়ে হাপাতে লাগলো। আরাফ নবনিকে সাইডে রাখা সোফায় বসালো।
আরাফঃঠিক আছে। ঠিক আছে।ঠান্ডা হও।এই নাও পানি খাও।
নবনি ঢকঢক করে সব পানি শেষ করে ফেললো।
আরাফঃবাপরে!এতো রাগ!! আমারে নিয়া কি পালিয়ে যাবে? দিয়া?
নবনিঃদিয়া!ওই মেয়ের নাম দিয়া!!???আবার ওর নাম মুখে এনেছেন?
আরাফ নবনি ক্ষেপিয়ে সেই লেভেলের মজা পাচ্ছে।
আরাফঃদিয়াকে দিয়া বলবো না তো কি বলবো!!
নবনিঃচলে যাবো কিন্তু!! 


আরাফঃমরে যাবো কিন্তু!!
নবনিঃমরুক আপনার দুশমন।উলটা পালটা বলবেন না খবরদার।
আরাফঃহা হা হা।আচ্ছা চলো তোমাকে ডাক্টার কাছ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি কেমন?!!
আচ্ছা চলুন।
নবনিকে ডাক্তার চেকআপ করলো।
আরাফঃIs she ok?
ডাক্টারঃCongratulation.Mr  Arafat Chowdhury.আপনি জমজ সন্তানের বাবা হতে চলেছেন।তাই নবনির পেট স্বাভাবিক এর তুলনায় বড় দেখাচ্ছে।কারন তার গর্ভে একটি নয় দুইটি সন্তান।
আরাফঃThanks a lot Doctor.
ডাক্তারঃTake care of her.😊
নবনঃকি বলছে ডাক্তার?
আরাফঃআপনি দুই বাচ্চার মা হতে চলেছেন।
নবনিঃসত্যিই!! তার মানে আমার দোয়া কবুল হয়েছে।
আরাফঃক্রেডিট কিছু আমাকেও দিও।
নবনিঃ😒
আরাফঃ হা হা হা।
নবনির ফোনে কল আসে।
নবনিঃহ্যালো।
ওয়ারদাঃদোস্ত আমাকে বাচা।আমি অনেক বিপদে আছি।দোস্ত। ফোনটা কেটে গেলো।
আরাফঃকে কল দিয়েছে?
নবনিঃকেউ না। আপনি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে যান।আমি পারবো যেতে।
আরাফঃশিউর!!
নবনিঃহুম।
আরাফ নামিয়ে দিয়ে চলে যেতেই নবনি ওয়ারদার পাঠানো এড্রেস এর জন্য রাওনা হয়।নবনি জানেও না সেখানে তার জন্য কতো বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


৩০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন