উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
২৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৩০)
নবনি ওয়ারদার দেয়া জায়গায় পৌছায়। শহর থেকে দূরে গ্রামের আশেপাশে জায়গাটা।জায়গাটিতে একটা পুরানো বাড়ি রয়েছে।আশেপাশে মানুষ এর কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।নবনি আয়াতুল কুরসি পরে নিজের গায়ে ও পেটে ফু দেয়। তারপর বাড়িটিতে প্রবেশ করে। চারিপাশ মাকড়সার জাল দিয়ে আচ্ছন্ন। ২ তলা বাড়িটার ঠিক মাঝ বরাবর উপরে যাওয়ার জন্য একটা সিড়ি রয়েছে।নবনি সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠে।হঠাৎ করেই ওয়ারদার চিৎকার শুনতে পায়।যেখান থেকে চিৎকারের শব্দ আসছে নবনি ধীরে ধীরে সেই দিকে এগোতে থাকে।কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা হলো নবনি যতই সামনে এগোচ্ছে বাতাস তাকে উল্টো পথে নিয়ে যাচ্ছে।বদ্ধ বাড়িটাতে আলোর ছিটাফোটাও নেই মানে বাসাটাতে কোনো জানালা নেই।কিন্তু বাতাস আসছে কোথা থেকে!!নবনি সকল বাধা উপেক্ষা করে সেদিকে এগিয়ে গেলো।নবনি খেয়াল করলো ওয়ারদা মাটিতে সেন্সলেস হয়ে পরে আছে।নবনি ওয়ারদার কাছে ছুটে গেল।
নবনিঃওয়ারদা। ওয়ারদা।
ওয়ারদা ঝাপসা চোখে নবনিকে দেখছে।
ওয়ারদাঃনব নি।
_এসে পরেছো বুঝি!!!
নবনি পিছনে ফিরে দেখে অবাক হয়ে গেলো।নবনির সামনে সিয়াম আর তিশাকে দেখতে পেলো।
নবনিঃসিয়াম!!!
সিয়ামঃহ্যা। আমি মনে রেখেছো বুঝি?হা হা হা।
নবনি ওয়ারদাকে ধরে উঠালো।ওয়ারদার মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।নবনি হাত দিয়ে চেপে ধরলো।
নবনিঃতুই ঠিক আছিস???
ওয়ারদাঃহুম।
তিশাঃমরে নেই।এতো সহজ এ ওকে মারবো না।চিন্তা করিস না।
নবনিঃতিশা তুমি এইভাবে কথা বলছো কেন!!!ওয়ারদা তোমার বোন।
তিশাঃহ্যা সৎ বোন।
নবনিঃকিহ!!
ওয়ারদাঃহ্যা।আমার আম্মু আমাকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা গিয়েছিল।তারপর আব্বু ছোট আম্মুকে বিয়ে করে।তারপর তিশা হয়।কিন্তু আমি কখনো ওকে সৎ বোন ভাবি নেই। সবসময় আপন বোনের মতো আদর করেছি।
সিয়ামঃআর আমি সেই আদর এর সুযোগ নিয়েছি।
নবনিঃকি হচ্ছে এখানে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
সিয়ামঃআচ্ছা দাঁড়াও মরবাই তো মরার আগে কাহিনীটা বুঝাই।
সিয়াম তিশার কোমর জড়িয়ে ধরে।
সিয়ামঃআমি ওয়ারদাকে কখনো ভালোইবাসি নাই।আমি সবসময় তিশাকে ভালোবাসতাম।ওয়ারদার বাবা মারা যাওয়ার আগে সব সম্পত্তি ওয়ারদার নামে লিখে যায়।তিশার নামে কিছুই থাকে না।তখন আমার আর তিশার ২ বছরের প্রেম ছিলো।তাই আমি আর তিশা প্ল্যান করি যে আমি ওয়ারদাকে বিয়ে করে সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিবো।তারপর ওয়ারদাকে ডিভোর্স দিয়ে তিশার সাথে সুখের জীবন কাটাবো।প্ল্যান মতো ওয়ারদার বাবা আমার সাথে বিয়ে ঠিক করে মারা যায়।আর আমার কাছে কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়।তারপরই একদিন আমি জানতে পারি তুমি আমার জন্মের শত্রু আরাফাত চৌধুরীর ভালোবাসা।এরপর তিশাকে কল দিয়ে সব বললেই সে আমার কাছে চলে আসে।আর আমি ওয়ারদাকে বলি যে আমি তিশাকে কিডন্যাপ করেছি।ওয়ারদাও আমার জালে পা দেয়।আর বাকিটাতো তুমি জানোই।
নবনিঃতিশা তুমি নিজের বোনকে কেন ধোকা দিচ্ছো?
তিশাঃকারন সে আমার থেকে সব কিছু ছিনে আসছে।আমার মা আমার আপন মা হওয়া সত্ত্বেও ওয়ারদাকে ভালোবাসতো।আর বাবা তিনি সব কিছু বড় মেয়ের নামে করে দিলেন।আমি সারাটা জীবন শুধু ঠকেই আসলাম।
তোমার বিয়ের দিন আমি ওয়ারদাকে বলেছিলাম আমি আরাফকে ভালোবাসি।ওয়ারদা আমাকে থাপ্পর মেরে দেয়।সে আমাকে হুমকিও দেয় যে যদি আমি তোমার আর আরাফ এর মাঝে আসি আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিবে।আপন বোন হলে আমাকে আমার ভালোবাসার কাছে পৌছে দিতো।এমনটা কখনো করতো না। নিজেতো নিলয়কে ফাসিয়ে বিয়ে করে নেয় কিন্তু ওই চাইতোই না আমি আরাফ এর মতো কোনো বড়লোক ফ্যামিলিতে যাই।
নবনিঃতুমি যখন সিয়ামকে ভালোবাসো তাহলে আরাফকে কেন বিয়ে করতে চাইলে?
সিয়ামঃকারন আমি বলেছিলাম।এতে এক ঢিলে দুই পাখি শিকার হতো। তুমি আর আরাফ আলাদা হয়ে যেতে।আর তিশা আরাফ এর সম্পত্তি দখল করতে পারতো।আমরা দুইজনই অনেক টাকার মালিক হয়ে যেতাম।
তোমাকে আর আরাফকে আলাদা করার জন্য আমিই আরাফকে তিশার সাথে বিছানায় রেখে তোমাকে কল দিয়ে আনাই।যাতে তোমার আর আরাফ এর মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়।আর আরাফ ও তিশার সাথে কিছু হয়েছে ভেবে তিশাকে বাদ দিয়ে তোমাকে বিয়ে করে নেয়।কিন্তু এমন কিছুই হলো না।তোমার আর আরাফ এর একে অপরের প্রতি এতোটাই বিশ্বাস যে আমার এই প্ল্যান ও ফ্লপ হয়ে গেলো।
ওয়ারদাঃআমি তোকে নিজের বোন থেকে এক অংশ কম ভালোবাসি নেই তিশা।তুই আমাকে কি করে ঠকাতে পারলি!!!?
তিশাঃতুই যদি আমাকে ভালোইবাসতি তাহলে আরাফ এর সাথে আমার বিয়েটা দিতি।কিন্তু তুই তা করিসনি।
ওয়ারদাঃকি করতাম বল।তুই আমার বোন হলে নবনিও আমার বোনের মতো।কি করে পারতাম এক বোনের অন্যায় করে অন্য বোনকে খুশি করতে।আর আরাফ ভাইয়া।আমি নবনিকে একবার ঠকিয়েছি জেনেও তিনি আমাকে আরক একবার সুযোগ দিলেন।তিনি নিলয়কে না বললে নিলয় কখনো আমাকে বিয়ে করতো না।আমি কি করে এমন মানুষকে আবারো ঠকাতাম।এটা করলে যে মানুষ এর এতিমদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যেতো।আর কেউ কোনো এতিম এর ভালো করতো না।
সিয়ামঃ অনেক হয়েছে তোমাদের ভাষন এখন মরার জন্য প্রস্তুত হও।
তিশাঃঅনেক শখ না আমাকে গুলি করার?!খুব বড় ভুল করেছিস!আমাকে গুলি করে না।আমাকে জীবিত ছেড়ে। হা হা হা।
সিয়ামঃআসলে নবনি আরাফ দুই জনই খুব বোকা।।তা না হইলেকি আমাদের জীবিত ছাড়ে।আরাফ সে দিন আমাকে মেরে ফেললে তোদের আজকে এই দিন দেখতে হতো না।হা হা হা।
নবনি পেট ব্যাথার অভিনয় করে মাটিতে বসে পড়ে।সিয়াম আর তিশার চোখ এর আড়ালে গলায় থাকা লকেট এর বোতামে চাপ দেয়।
তিশা নবনির চুল এর মুঠো ধরে দাড়া করায়।ব্যাথায় নবনি কুকড়ে উঠে।
তিশাঃআমাকে গুলি করেছিলি না!!আগে এই বাচ্চাকে মারবো।তারপর তোকে।
নবনিঃনা।আমার বাচ্চাদের ছেড়ে দাও।
ওয়ারদা নবনির সামনে এসে দাঁড়ায়।
ওয়ারদাঃকোথায় সাইন করতে হবে। দে। আমি সাইন করে দিবো।তবুও ওকে ছেড়ে দে।
সিয়ামঃসাইন তো তুমি করবাই।সাথে আমাকে বিয়ে না করে নিলয়কে বিয়ে করার শাস্তিটাও যে পাবে।
সিয়াম ওয়ারদাকে শুট করতে নিলে নীল তীযক রশ্মি সিয়াম এর চোখে পড়ে।
সিয়ামঃআয়াহহহহহ।আমিয়ামি কিছু দেখতে পারছি না।আমার চোখ!!তিশা আমার চোখ।
তিশা সিয়ামকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।
তিশাঃকই দেখি।তুমি চিন্তা করো না। ঠিক হয়ে যাবে।
নবনি ওয়ারদাকে ইশারায় বের হয়ে যেতে বলে। ওয়ারদা আর নবনি বেরিয়ে পরে।কিন্তু বাসা থেকে বের হতে পারে না।দরজা বাইরে থেকে লাগানো।নবনি ওয়ারদা বাসাটাতেই সোফার নিচে লুকিয়ে পরে।
ওয়ারদাঃতুই ঠিক আছিস নবনি!!
নবনিঃআমি ঠিক আছি। কিন্তু পেটটা ব্যাথা করছে।
ওয়ারদা কিছু বলতে নিলে নবনি তার মুখ চেপে ধরে।
সিয়ামঃওয়ারদা।কই তুমিই।মাই লাভ। বেরিয়ে পরো।দেখো আমি জানি তুমি ভিতরেই আসো।বাইরে তোমরা বের হতে পারবা না।
তিশাঃকতক্ষন আর লুকিয়ে থাকবে।আজকে এদের মৃত্যু নিশ্চিত।
নবনি পেটে এ অসম্ভব ব্যাথা করছে।তিশা ওয়ারদার ওড়না দেখে ফেলে।তিশা ওয়ারদাকে টেনে বের করে। নবনিও ওয়ারদাকে বাচাতে বের হয়ে পরে।
তিশাঃহা হা হা।হাউ ষ্টুপিড ইউ বোথ আর!!
সিয়াম নবনির পেটে বন্দুক রাখে।
সিয়ামঃসরি বেবি।বলে ফায়ার করে নবনির পেটে।
নবনিঃনায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
গুলির শব্দে নবনি চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষন পর নবনি বুঝতে পারলো সে কোনো ব্যাথা পায় না।চোখ খুলে দেখে তিশা মাটিতে পরে আছে।আর পুরো ফ্লোর রক্তাক্ত হয়ে আছে।সবার চোখ বন্ধ কারন বাড়িটা নীল রশ্মিতে ভরে উঠেছে।
নবনিঃমেহরাব!!!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৩১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন