উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৩০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৩১)
নবনিঃমেহরাব।
কথাটা বলা মাত্রই নবনি জ্ঞান হারায়। সেই মুহূর্তেই সেখানে আরাফ এসে পড়ে।আরাফ সাথে পুলিশ নিয়ে আসে।আরাফ দেখতে পায় নবনি ফ্লোরে পরে আছে।তার থেকে কিছু দূরে ওয়ারদা দাঁড়িয়ে আছে।সিয়াম তিশাকে নিয়ে ব্যস্ত।সে এখনো আরাফকে দেখে নেই।পুলিশ সিয়ামের হাতে গান দেখে তাকে এরেস্ট করে।আরাফ নবনিকে কোলে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।
আরাফঃওয়ারদা। আমার সাথে আসো।
আরাফ একহাতের বাহুডোরে নবনিকে জড়িয়ে রাখে আর এক হাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।গন্তব্য হাসপাতাল।নবনির এখনো জ্ঞান ফিরে নেই।ওয়ারদা হিচকি তুলে কান্না করছে।তিশার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না হয়তো।
আরাফঃওয়ারদা। কান্না থামাও।
ওয়ারদা এখনো কান্না করে যাচ্ছে।
আরাফঃআই সেইড স্টপ ক্রায়িং।
আরাফ এত জোরে ধমক দিলো যে ওয়ারদা একদম চুপ হয়ে গেলো।
কিছুক্ষন পর ওয়ারদা বললো~
ওয়ারদাঃভাইয়া নবনির জ্ঞান ফিরছে না কেন!আপনি তাড়াতাড়ি চালান।আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
আরাফঃএতই যদি চিন্তা ছিল নবনির তাহলে আমাকে কল দিয়ে না ডেকে নবনিকে কেন ডেকেছিলা!!এই নিয়ে দুইবার নবনিকে বিপদে ফেললা।
ওয়ারদা আরাফ এর দিকে তাকাতে পারছে না।আরাফ এর চোখ অসম্ভব লাল হয়ে গিয়েছে।যেন এখন যাকে পাবে তাকেই মেরে ফেলবে।
আরাফঃআর একজন ড্যাং ড্যাং করে চলে গেলো।আমাকে জানানোর প্রয়োজন পর্যন্ত মনে করলো না।আজকে নবনি বা বাচ্চাদের কারো কোনো ক্ষতি হলে তোমাদের দুইজনকেই আমি দেখে নিবো।তোমরা আমার ভালোবাসা দেখেছো।এখন রাগটা সামাল দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও।
কিছুক্ষন পর গাড়ি হাসপাতাল এর গেট এ থামলো।আরাফ নবনিকে কোলে করে ডাক্তার এর কেবিনে নিয়ে গেলো।আর ওয়ারদাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলো।
আরাফঃDoctor.Is she Alright?
ডাক্টারঃনা।বাচ্চারা উলটো হয়ে গিয়েছে।নবনি পেট এ প্রেসার দিয়েছিলো।যার কারনে বাচ্চারা উল্টো হয়ে গিয়েছে।এখন ডিলেভারির সময় নবনি অনেক কষ্ট হবে। এমনো হতে পারে নবনি মারাও যেতে পারে।
আরাফঃPlease Doctor.Dont say like that.কিছু হবে না নবনি পাখির।আলনি আমাকে এটা বলেন নবনির জ্ঞান ফিরছে না কেন!!
ডাক্টারঃআমার মনে হয় নবনি এমন কিছু দেখেছে যা সে আশা করে নেই।তাই শকড এ জ্ঞান হারায়।কিছুক্ষন এর মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে।
আরাফঃএমন কোনো ওষুধ নেই যেটা দিয়ে বাচ্চাদেরকে আগের পজিশনে আনা যাবে?
ডাক্টারঃওষুধ নেই কিন্তু ব্যায়াম আছে।রেগুলার করলে বাবুদের পজিশন ইমপ্রুভ করবে।বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
আরাফঃআমি নবনিকে নিয়ে যেতে পারবো?
ডাক্টারঃহুম।
আরাফ নবনিকে বিছানায় রাখে।নবনি জ্ঞান ফিরে আরাফকে তার পাশে বসে থাকতে দেখে।
নবনিঃআরাফ।
আরাফঃহুম।বলো।
নবনিঃআমি এখানে কি করে আসলাম।আমি তো
আরাফঃআমি এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।শাড়ি চেঞ্জ করে জামা পরো। খাবার নিয়ে আসছি।
কথাটা বলে আরাফ বেরিয়ে যায়।
নবনিঃআরাফ কি রেগে আছেন!!কিন্তু উনি তো কখনো রাগ করে না।আজকে!!
আরাফ আবার ফিরে আসে।
আরাফঃyou have only 10 minutes.Do it first. নবনিতা।
ডাকটা তীরের মতো লাগলো নবনির বুকে।নবনি বুঝতে পারলো আরাফ অনেক রেগে আছে।এখন কিছু বলা মানেই এর রাগকে আরো বাড়িয়ে দেয়া।তাই দেরি না গোসল করতে ঢুকে পরে।
আরাফ নবনির জন্য রান্না করছে।কিন্তু সে খুব একটা ভালো রান্না করতে পারে না।তবুও এক চুলায় ভুনা খিচুড়ি আর এক চুলায় গরুর মাংস বসিয়েছে।নবনির এটা খুব পচ্ছন্দের একটা খাবার।তাই এটাই রান্না করছে।তারপর ইউটুব দেখে সুন্দর করে শসা কাটে।তারপর রেস্টুরেন্টের স্টাইলে সার্ভ করে নিজের রুমে নিয়ে আসে।
নবনি গামছা দিয়ে চুল মুছছে।
আরাফ গামছা নিয়ে নিজেই চুল মুছে দিচ্ছে।
নবনিঃআরাফ।
আরাফ নিশ্চুপ।
নবনিঃআরাফ।
এবারও আরাফ এক ধ্যানে চুল মুছছে।
আরাফ কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে নবনি কিছুটা রেগে বললো~
নবনিঃআরাফ।কথা বলবেন না!?
আরাফঃকথা বলার মতো কিছু আছে কি!!?
নবনিঃআই এম সরি।
আরাফঃনবনিতা। আমার কথা খেয়াল করে কানে ঢুকিয়ে নাও।তুমি আমার বাচ্চাদের মা। এর জন্য আমার তোমার প্রতি যা দায়িত্ব আছে আমি সবই পুরণ করবো।কিন্তু এর থেকে বেশি আমার কাছে কিছুই আশা করবা না।
নবনিঃশুধুই বাচ্চাদের মা!!আপনার স্ত্রী না?
আরাফঃসেই অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছো।
নবনিঃআরাফ!!!
আরাফঃখেতে বসো।
নবনি আরাফ এর ব্যবহারে কষ্ট পায় পরক্ষনেই খাবার দেখে খুব খুশি হয়ে যায়।একতো নবনির পচ্ছন্দের খাবার আবার কত সুন্দর করে সাজানো।
নবনিঃআমার চুল মুছবে। আমার জন্য রান্না করবে।আবার আমার সাথে কথাও বলছে।অথচ ইনি আমার সাথে রেগে আছেন।রেগে থেকে ও কি সুন্দর নিখুঁতভাবে ভালোবেসে যাচ্ছে।এমন স্বামী কি সত্যিই পাওয়া যায়?
আরাফঃ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি খিচুড়ি পাকাচ্ছো।আমি খিচুড়ি রান্না করেছি।খেতে এসো।ফাস্ট!!
নবনি প্রথম নিজে থেকে যেয়ে আরাফ এর গলা জড়িয়ে ধরে কোলে বসে পরলো।
আরাফঃনামো নবনি..নবনিতা।
আরাফ অভ্যাসগত নবনি বলে ফেলে।আর নবনি মুচকি মুচকি হাসে।
নবনিঃআমি মোটেও নামছি না।আপনি যদি আমাকে নামিয়ে দেন তাহলে আমি আর খাবো না বলে দিলাম।
আরাফঃআমি তোমাকে নামাতাম ও না নবনি পাখি।তোমাকে আমার কোল থেকে নামানোর সাধ্য যে আমার নেই।পাগলিটা আমার। (মনে মনে)
চেহারা কাঠিন্য বজায় রেখেই আরাফ বলে~
আরাফঃঠিক আসে। খেয়ে নেমে যাবে।নবনিতা।
নবনিঃআমি জানি আমার নাম নবনিতা।বার বার মনে করাতে হবে না।
আরাফ সুন্দর করে খিচুড়ি লোকমা করে নবনির মুখে দিচ্ছে।নবনি পেটুক এর মতো খেয়ে যাচ্ছে।খেতে খেতেই নবনি বলে উঠে।
নবনিঃআপনি না বললেন আমি স্ত্রীর অধিকার হারিয়ে ফেলেছি!!তাহলে খাওয়াই দিচ্ছেন কেন!!
আরাফঃকে বলছে তোমাকে খাওয়াচ্ছি।আমি আমার বাবুদেরকে খাওয়াচ্ছি।তোমাকে খাওয়ায় দিতে আমার বয়েই গেছে।
নবনিঃভাংবে তবু মচকাবে না।বলে ভেংচি দিলো।
নবনি লোকমা করে আরাফ এর মুখে দিলো।
নবনিঃআপনিও খান!
আরাফঃনা।আমার খিদে নেই।
নবনিঃএকটু খেয়ে নিন।
আরাফ উঠে চলে যায়।নবনি আরাফকে ডাক দেয় কিন্তু আরাফ ফিরেও তাকায় না।
নবনিঃএত নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছেন বুঝি!!আমার ডাকটাও ফিরিয়ে দিলেন।আমি কি খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি?আপনি অফিসের কাজে এতোটা ব্যস্ত ছিলেন যে আপনি অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন।এমন সময় আমি কি করে ওয়ারদার ব্যাপারটা বলতাম?(মনে মনে)
আরাফ স্পীডে গাড়ি চালানো শুরু করে।
আরাফঃকি করে ফিরে তাকাতাম নবনি পাখি।তাকালে যে আমার চোখের পানি গুলো তুমি দেখে ফেলতে।আমি চাই না তোমাকে দুর্বল করতে। কিন্তু ডাক্টার এর কথাগুলো যে আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না।তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে।তোমাকে আমি যতটা দোষী ভাবি তার থেকেও হাজার গুন বেশি আমি দোষি।আমার উচিত ছিল এই সময়টা তোমার সাথে থাকা। কিন্তু আমি অফিস এর কাজে ভবিষ্যতের জন্য এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পরলাম যে বর্তমানটাই হারাতে বসেছি।
গাড়ি এয়ারপোর্টে এসে থামে।আরাফ গাড়ি থেকে নেমে কাংখিত মানুষটার জন্য অপেক্ষা করছে।এই মানুষটাই আরাফকে সব থেকে বেশি বুঝে।যে আরাফ এর বলার আগেই সবটা বুঝে নেয়।যার কাছে সকল সমস্যার সমাধান আছে।আরাফ অধির আগ্রহে মানুষটার অপেক্ষা করছে।
মানুষটা কে গো?!!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৩২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন