উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০৮)
সিয়ামের রক্তে আরাফ এর হাত ভরে আছে।তবুও আরাফ থামছে না।সিয়ামের জীবনের আলো ক্ষীণ হয়ে আসছে।সিয়াম এর করা কোনো আকুতি মিনতি যেন আরাফের কানে পৌছালো না।রড দিয়ে ইচ্ছে মতো পেটালো।নিজের সমস্ত রাগ সিয়ামের উপর ঢেলে দিয়ে আরাফ বলল
আরাফ:Guards Come Fast .
Guards গুলো বলা মাত্র এসে পরলো যেন তারা আগে থেকেই জানতো তাদের ডাক পরবে।
Guard:জি স্যার।
আরাফঃডাক্তার আনো।একে সুস্থ কর। খবরদার ও যাতে না মরে।না হলে তোমাদেরকে জীবনের মায়া ত্যাগ করতে হবে।বলে হন হন করে বেরিয়ে গেল।
নবনি শুয়ে ছিল।যখন আরাফ আসলো।
আরাফ কিছুক্ষণ নবনির নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিল।তারপর আস্তে করে মাথাটা নিজের কোলে নিল যাতে নবনি উঠে না পরে।তারপর আস্তে আস্তে নবনির চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো।
আরাফঃতোমার মধ্যে কি মায়া আছে মায়াবতী?তোমার স্পর্শ পেলে আমার সব রাগ কষ্ট পানি হয়ে যায়।আবার সে তুমি আঘাত পেলে আমার কঠিন রাগ এ পরিপূর্ণ চোখটাও কেদে ফেলে।তুমি কখনো রাগ করে আমার কাছ থেকে সরে যেও না মায়াবতি। আমি সব কিছু মেনে নিতে পারবো।কিন্তু তোমার থেকে দূরত্ব নও।
নবনি মাথায় থাকা আরাফের হাতগুলো ধরে।
নবনিঃআরাফ।
আরাফঃহুমম।
নবনিঃকিছু চাইবো। দিবেন?
আরাফঃআমার সাধ্যে থাকলে অবশ্যই দিবো পাখি।তুমি বল।
নবনিঃসিয়ামকে ছেড়ে দিন।
আরাফ চমকে উঠলো।তার চোখে ভয় স্পষ্ট। এই ভয় যে নবনিকে হারানোর ভয়।
আরাফঃনবনি কি সব জেনে গেল।তার মানে ও আমার থেকে দূরে সরে যাবে।না।এমনটা হতে পারে না।(মনে মনে)
নবনি আরাফের হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো। যেন সে আরাফের মনে চলা তুফানের স্পষ্ট আভাস পাচ্ছে।
নবনিঃআমি জানি আরাফ সিয়াম আপনার কাছে।কি করে জানলাম জিজ্ঞেস করবেন না?
আরাফ নির্বিকার হয়ে বসে আছে।কিছুই বলছে না।ও যে নবনিকে মিথ্যে বলতে পারবে না।তাই সে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলো।
নবনিঃআমাকে বাস স্টপে যে ছেলে গুলো নোংরা মন্তব্য করেছিল আপনি তাদেরকে কিভাবে মারলেন তার সাক্ষী আমি নিজেই।সিয়ামতো আমাকে গুলি করতে চেয়েছিল।তাকে যে আপনি কি করতে পারেন তা হয়তো আমার কল্পনারও ঊর্ধ্বে। তাই বলছি ওকে ক্ষমা করে দিন।
আরাফঃআরাফ চৌধুরী ক্ষমা করতে জানে না নবনি।
নবনি বুঝতে পারলো আরাফ রেগে যাচ্ছে।তাই সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরাফের রক্তাক্ত হাতের ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলো। আরাফ ডান হাতে গুলি খেয়েছিল।আর ডান হাত দিয়েই সিয়ামকে মেরেছে। যার কারনে হাতের ক্ষত তাজা হয়ে রক্ত পরতে লাগলো।নবনি পুরো ব্যান্ডেজ খুলে নতুন করে ব্যান্ডেজ করতে লাগলো।
নবনিঃকে বলছে আরাফ চৌধুরি ক্ষমা করতে জানে না।আমার আরাফ চৌধুরী সব পারে।যখন আমি থামিয়ে ছিলাম আপনি ভার্সিটির ওই গুন্ডাদেরকে ছেড়ে দিয়েছিলেন।আজকে ওয়ারদাকে ক্ষমা করে দিলেন শুধুমাত্র আমি ওয়ারদাকে ভালোবাসি বলে।আপনি পারেন ক্ষমা করতে। কিন্তু কথাটা মেনে নিচ্ছেন না।
আরাফ মলিন হাসলো।
আরাফঃও কে ক্ষমা করা যায় না।নবনি।আজকে গুলি তোমাকে লাগলে কি হতো! এই অপরাধ ক্ষমার যোগ্য না।
নবনিঃও যা করসে ওর বোনের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে করেছে।যেমন আপনি আমাকে ভালোবেসে সব কিছু করতে পারেন ঠিক তেমনি ও ওর বোনের জন্য সব করলো। ছেড়ে দিন ওকে।কখনো কাউকে হত্যা করবেন না।কারণ হত্যা আদম সন্তানদের করা প্রথম গুনাহ। আর কাউকে হত্যা করলে তার জীবনে করা সমস্ত পাপ আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে।আল্লাহ হত্যাকারীকে অপচ্ছন্দ করেন।
আরাফঃতুমি ওকে কিভাবে এতো সহজে ক্ষমা করে দিলে?
নবনিঃকারন আল্লাহ ক্ষমাকারী খুব পচ্ছন্দ করেন।আর আল্লাহ ও তাকেই ক্ষমা করে যে আল্লাহর সৃষ্টিকে ক্ষমা করে।
আরাফ ফোন বের করে Guards দের ফোন দিল।
আরাফঃসিয়ামকে কোনো ভালো হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে আসো।
Guard :আচ্ছা স্যার। চিকিৎসা করে নিয়ে আসতেসি।
আরাফঃআমি বলসি আনতে? ওকে চিকিৎসা করিয়ে বাসায় দিয়ে আসো।আর আমাকে জানাও।
Guard :কিন্তু স্যার। আজ পর্যন্ততো কেউ টর্চার সেল থেকে ফেরত যায় নি। তাহলে?
আরাফঃযা কখনো হয়নি।এখন হবে।বলে কল কেটে
দিল।
নবনি মুচকি হাসি দিল।
আরাফঃহায়!এই হাসি দিয়েতো তুমি মানুষ খুন করতে পারবা।
নবনিঃহি হি হি।
আরাফঃজানো নবনি তুমি আমাকে খুব করে বুঝো।কি সুন্দর বিনা রাগে সবকিছু এত সুন্দর করে বুঝে নিলে।তোমার মতো স্ত্রী, প্রেমিকা সকল পুরুষ এর কাম্য।যে একান্ত আপন হয়ে বুঝবে।তাদের সকলের জীবনেই তোমার মতো একটা তুমি দরকার যাতে তাদের পৃথিবীটাও হয়ে উঠে তোমায় ঘিরে।
নবনিঃআর সকল প্রেমিকা ও স্ত্রীর ও আপনার মতো একজন একান্ত আপন ভালোবাসার মানুষ দরকার যে তার ভালোবাসার মানুষের ঢাল হয়ে থাকবে।আর সামান্য গুণকেও অসাধারণ চোখে দেখবে।
আরাফ হেসে চুলে ব্রাশ করলো।
আরাফঃএই ভাবে বলে না হবু বউ। আমার লজ্জা করে না বুঝি।
নবনিঃহ্যা আপনারতো খুব লজ্জা। এখন নিজের বেডে যেয়ে শুয়ে পরুন।
আরাফ এরও খুব ক্লান্ত লাগছিল।তাই বিনা বাক্যে চলে গেল।
আরাফ নিজের বেডে যেয়ে চোখ বন্ধ করলো।কখন যে দুইচোখে ঘুম নেমে আসলো।হয়তো খুব ক্লান্ত তাই।
আরফের বাবা মা আসলো।সাথে নবনির বাবা ভাইও এসেছে।
নবনির বাবা আসাদ খান নবনির মাথায় হাত বুলয়ে দিল।
রাজ খান আপুউউউউউ বলে চিৎকার দিতে চাইলে নবনি মুখ চেপে ধরলো।
নবনিঃশিসসসসসস।আরাফ মাত্র ঘুমিয়েছে।উঠে যাবে।
আদর চৌধুরীঃদেখছো নিলী।আরাফের প্রতি বৌমার কত টান।
নিলীমা চৌধুরীঃহ্যা।তা তো দেখছি।They are made for each other.😊
আসাদ খানঃনবনি।আমি আদর চৌধুরীর কাছে সব কিছু শুনেছি।আর উনাদের কথায় যা বুঝলাম।উনারা শশুর শাশুড়ী হিসেবে তোমাকে খুব মায়া করে।এমন ঘরে যে আমার মেয়ে রাজকন্যা হিসেবে থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর একটা বাবার এর থেকে বেশি আর কি বা চাওয়ার থাকে।তোমার মা যাওয়ার পর। তুমি যে পরিমান কষ্ট করেছো এই টাই হয়তো আল্লাহর কাছ থেকে দেয়া পুরষ্কার। আমি দোয়া করি তুমি খুব ভালো থাকো।
নবনিঃতার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
সত্যি সব মেয়েরা তার বাবার রাজকন্যা। নবনির বাবাও নবনিকে খুব ভালোবাসে।
আদর চৌধুরিঃআপনি নিশ্চিতে থাকেন বিয়াই।আর আপনিও আমাদের সাথে আমাদের বাসায় থাকেন।আপনার মেয়েকে ছাড়া থাকতে হবে না।
আসাদ খানঃনা না। এটা আপনি কি বলছেন। আমি অবশ্যই আসবো যাবো।কিন্তু আমার একটা আপত্তি আসে।
আদর চৌধুরিঃএটা কি বলছেন?বিয়াই।আমাদের কোনো ভুল হয়েছে?
আসাদ খানঃআমি আরাফকে যাচাই করতে চাই।তারপরই এই বিয়ে হবে।কারণ আমি ছেলে কেমন তা না জেনে আমার মেয়েকে দিতে পারছি না।আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
আদর চৌধুরীঃনা না।আমি আপনার অবস্থা বুঝতে পেরেছি। মেয়ের বাবা আপনি।আপনি যা ভালো মনে করেন।
আরাফ এর মাথা ব্যাথা করছিল তাই সে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিল।যা ঘটলো তার কিছুই সে জানে না।
নবনির বাবা নবনিকে নিয়ে বাসায় চলে গেল।নবনি আরাফকে না বলে যেতে চাইনি। কিন্তু বাবার উপর কিছু বলতে পারলো না।
নবনি চলে যাওয়ার পর আরাফ ঘুম থেকে উঠে নবনিকে পায় না।আরাফ পাগলের মতো হাসপাতালের কেবিনে বাথরুমে নবনিকে খুজে।
আদর চৌধুরীঃখুজে লাভ নাই চলে গেছে।
আরাফঃকই গিয়েছে?কেন গিয়েছে??
আদর চৌধুরীঃওর বাবা নিয়ে গেসে।
আরাফঃতুমি কি সত্যি চাও না দাদা হতে।এমন ছেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এ নামসো কেন?
আদর চৌধুরীঃদেখ আমি শশুর হিসেবে সার্থক।এখন তুই প্রমান কর তুই জামাই হিসেবে সেরা তবেই নবনি তোর।
আরাফ মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো।মেয়েকে পটাইতেই কত কাঠখোর পোহাত হয়েছে। এখন দেখি এটা তার থেকেও বড়টা।নবনি বাবা।আমিতো ফাইসা গেছি......... চিপায়।
চলবে ...
৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন