উপন্যাস       :         অধ্যায়টা তুমিময়
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “অধ্যায়টা তুমিময়” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।

অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০৪)

আজ বিয়ের দিন। মিষ্টি আপুর বাসায় সকাল থেকে বিয়ের তোরজোর চলছে। আপুর হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছে আপুর মামাতো বোন।আমি দুপুরে আপুকে ভাত খাওয়াইয়ে দেই।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপু চলে যাবে বলে।আমি বাইরে এসে চোখের পানি লুকালাম।কিন্তু আপু ঠিকই বুঝে ফেললো।
মিষ্টিঃআমি চলে যাবো বলে কান্না করছিস। তোকেতো আমি আর কয়দিন পরই নিয়ে যাবো।কাদিস না বোনু।
সিমরানঃআমি কাদছি না। তুমি পার্লারে যাবা না চলো। 
মিষ্টিঃহ্যা।চল।
আমি আপু আর আপুর মামাতো বোন একসাথে পার্লারে যাই।আপু আর আপুর মামাতো বোন রেডি হতে থাকে। 
সিমরানঃআমি বাসায় যাই।একবার সেন্টার এ চলে আসবো। তুমি থাকো।
আপু আমার হাত ধরে।আপুর হাত প্রচন্ড গরম।আমি কপালে হাত দিয়ে দেখি আপুর অনেক জ্বর।
মিষ্টিঃতুই থাক।যাইস না।
সিমরানঃআমি নাপা পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি খেয়ে নাও।আমার যেতেই হবে। আব্বুর ও জ্বর আম্মু কল করে বললো।আমি সেন্টার এ এসে পরবো।
মিষ্টিঃআচ্ছা।
আমি বাসায় এসে দেখি আব্বুর অনেক জ্বর।তাই আম্মু যাবে না অনুষ্ঠানে। আমি আমার ভাই আর আমার মামাতো বোনই যাবো।
আপু আমাকে রেডি করে দেয়।তারপর আমরা বেরিয়ে পরি।
আপু স্টেজে বসে আছে।বরযাত্রি আসার সময় হয়ে গিয়েছে।লামিয়া আপু আমার সামনে দিয়ে টইটই করছে।এমন ভাবে সেজেছে যেন আজকে উনারই বিয়ে।
সিমরানঃআপু বরযাত্রি কি রাওনা দিয়েছে!?
লামিয়াঃআমাকেতো আফিফ বললো হুট করে এসে চোখের পলকে বউ নিয়ে চলে যাবে। কেউ টের ও পাবে না।
সিমরানঃকি করে বললো? তোমাকে কল করেছে?


লামিয়াঃআমার সাথে মেসেঞ্জারে এড আছে।সারা রাত আমাদের কথা হয়েছে জানিস।ওই একটু আগেই আমাকে মেসেজ দিলো যে ও আসবে আর তার ভাবিকে নিয়ে চলে যাবে।
সিমরানঃওহ।কথাগুলো শরির জ্বলে গেল।এই মেয়ে আল্লাহই জানে সত্য বলে না মিথ্যা বলে।যে কালকে তাকে অপমান করলো তাকে নিয়ে এত শখ আসে কি করে। বেহায়া মেয়ে।
বাইরে হই হুল্লোড় শুরু হয়েছে। বরযাত্রি এসে পরেছে।আমিও গেট ধরতে চলে গেলাম।গেট এ দর কষাকষি হচ্ছে।আমাদের দাবি ১০ হাজার টাকা।আর উনারা ৫ হাজার দিতে চাচ্ছেন।এই নিয়ে ছেলেদের মাঝে কঠিন দ্বন্দ হচ্ছে।আর আমরা মেয়েরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।আকাশ ভাইয়াও মুখে রুমাল দিয়ে এদের কাহিনী দেখছেন।এদের মাঝে একটা লোক শান্ত থাকতে পারলো না।আর সে হলো আফিফ আরহাম ফাইয়াজ। ইনি বিয়ে বাড়ির গেটই ভেংগে ফেলছেন। ঢুকতে না দেয়ায়।আমি উনার কান্ডে হতবাক হয়ে গেলাম।
তার দাবি ~
আমার ভাইয়ার বউ আমরা নিবো তোমাদের কেন টাকা দিবো
ধাক্কা ধাক্কিতে গেটটা পুরো নড়োবড়ো হয়ে গেল।
সিমরানঃইয়া আল্লাহ।ইনি ভাইয়ার বিয়েতে এমন করছে নিজের বিয়েতে কি করবে।উনার জন্যতো লোহার গেট বানানো লাগবে।
এসব নিয়ে কথা কাটাকাটি আর শেষ হচ্ছিল না।তখন মিষ্টি আপুর মামি বললেন গেট ছেড়ে দিতে। সবাই আফসোস করতে করতে সরে এলো।আর ভাইয়া উপরে চলে আসলেন।
আমি আর এখানে থাকি নাই।বাসা থেকে আম্মু কল করছিল তাই খাওয়ার টেবিলে বসে পরি। খেয়ে রাওনা দিতে হবে।খাওয়া দাওয়া শেষে দেখি মিষ্টি আপু ভাইয়া খেতে বসেছে।মিষ্টি আপুর পাশে তার দেবর আফিফ বসে আছেন।আমি মিষ্টি আপুর কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বর এখন কমেছে।
_আপু নিজের খেয়াল রেখো।আমি চলে যাচ্ছি।
_তুই আমার সাথে যাবি না।চল কালকে এসে পরিস।
_আমি যেতে পারবো না।আব্বু অসুস্থ। আমি চলে গেলে আমাকে খুজবে।আর রাগ করবে। অন্য একদিন যাবো।
_আচ্ছা। ঠিক মতো যা।
_হুম।তুমিও নিজের যত্ন নিও।
বলে চলে আসি।আসার সময় খেয়াল করি উনার দেবর আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। আমি পাত্তা না দিয়ে চলে আসি।
বিয়ের পর ৩ দিন হয়ে গেলো মিষ্টি আপুর সাথে যোগাযোগ নেই।আকাশ ভাইয়া আর মিষ্টি আপু দুইজনেরই নাম্বার বন্ধ।আমারতো মন পরে আছে মিষ্টি আপুর শশুড়বাড়িতে।বিয়ের দিন উনার জ্বর ছিল।আল্লাহই জানে এখন কেমন আসে!
কোনো উপায় না পেয়ে আপুর একমাত্র পচা দেবরটার ফেসবুক আইডিতে মেসেজ দিয়ে ফেলি।
_আসসালামু আলাইকুম। 
কিছুক্ষন পর রিপ্লাই আসে।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আফিফ রিপ্লাই করেছেন।বাহ।মেসেজ রিকোয়েস্ট দেখার জন্য বসে থাকেন নাকি।
আচ্ছা আমি আগে আপুর খোজ নিয়ে নেই।
_আমি আপনার ভাবির ছোট বোন। আপু যাওয়ার পর থেকে আপুর ফোন অফ।আর আকাশ ভাইয়াও কল ধরছে না।তাই আপনাকে মেসেজ দেই।আপু কি ঠিক আসে?
_ভাবির বিয়ের রাত থেকে অসুস্থ। বাসার সবাই ভাবিকে নিয়ে ব্যস্ত।ভাইয়া ভাবির ফোনে চার্জ নেই মনে হয়।


_ওহ। আচ্ছা।আমাকে কল দিতে বইলেন।
_আচ্ছা।
আমি অফলাইন চলে গেলাম।
লোকটা এতোটাও খারাপ না।কত সুন্দর করে সব বললো।ধুর আমি কি যে ভাবছি। যাই পড়তে বসি।
বিকেলের দিকে কল আসলো।তাও ভিডিও কল আফিফ এর আইডি দিয়ে।কল ধরবো কি ধরবো না ভেবেও ধরলাম। হাত দিয়ে ক্যামেরা ঢেকে রেখেছি।কল ধরে আমি অবাক হয়ে গেলাম।মিষ্টি আপু কল করেছে।
_আপু তুমি।কত দিন পর তোমাকে দেখলাম।
_হ্যা রে।আমার টাচ ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।তাই আফিফ এর টা দিয়ে কল করলাম।
পাশে আকাশ ভাইয়া ও আছেন।
আকাশঃকেমন আছো শালী।তোমার বোনতো তোমাকে মনে করে করে আমার কান পাকিয়ে ফেলছে।
সিমরানঃহি হি হি।আপনি ঠিকমতন যত্ন নেন নাই। আমার বোন এর। তাই জ্বর এসে পরেছে।
আকাশঃহ্যা।এখনতো সব দোষ আমারই।
সিমরানঃহ্যা।
মিষ্টিঃআমি রান্না করবো বুঝলি। থাক পরে কল দেই।
সিমরানঃকি রান্না করবা গো?
মিষ্টিঃমুরগির মাংস ভাজবো। নাস্তা করার জন্য।
সিমরানঃওহ। আচ্ছা।
আফিফ ফোন ধরে রেখেছেন। আর আপুনি রান্না করছে।
আফিফঃআহারে বিয়াইন। আপনিতো মিস করলেন।আমি এখন মজা করে খাব।
সিমরানঃনজর দিয়ে দিলাম। পেট ব্যাথা করবে।
আফিফঃআমি একটু ফেলে খাবো।দেখতে কতো সুন্দর লাগছে।
আফিফ গরম ভাজা মাংস মুখে দিয়ে দিলো।আর সাথে সাথে বের করে ফেললো।
আফিফঃভাবি মাংস কাচা রয়ে গিয়েছে। আরো ভাজতে হবে। 
আমি হাসতে হাসতে শেষ।
সিমরানঃআরো খান।হা হা হা।
আফিফ মুগ্ধ হয়ে আমার হাসি দেখছে।ব্যাপারটা কেমন জানি লাগলো।আমি কল রেখে দিলাম।
আফিফ এর এই চাহনি কেন জানি ভালো লাগলো।তাইলে কি আমি চাই আফিফ আমাকে ভালোবাসুক। কিন্তু আমার মন কেন চায় আফিফ আমাকে ভালোবাসুক।তাহলে মিষ্টি আপু কি আমার মনে ভালোবাসার বীজ রোপন করে ফেলেছে!
এক ধ্যানে ডুবে গিয়েছিলাম।আম্মুর ডাকে ধ্যান ভাংলো।
আম্মুঃপড়তে যাবি না?!নাকি সারাদিন মিষ্টিকে নিয়েই পড়ে থাকবি!
সিমরানঃএভাবে বলছো কেন!আমি যাচ্ছি।
আন্টির কাছে পড়তে গেলাম।গনিত আমার একটুও ভালো লাগে না।ম্যাডাম আমাকে অনেক বকলো।কারন মিষ্টি আপুর বিয়ের জন্য আমি একটা হোমওর্য়াক ও করি নাই।মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কারন আমি বরাবরজ ভালো স্টুডেন্ট। এই বিয়ের জন্যই সব এলোমেলো হয়েছে।পড়া শেষে বাসায় ফিরে ফোন হাতে নিলাম।
মেসেঞ্জার এর রিংটোনতা টুইয়িং করে বেজে উঠলো।
আফিফঃকই ছিলেন এতক্ষন?অনলাইনে দেখি নাই!
লোকটা আমার অপেক্ষা করেছে বুঝি।মনের অজান্তেই ঠোটগুলো প্রশস্ত হয়ে গেলো।
সিমরানঃব্যস্ত ছিলাম একটু।
আমি অংক করতে করতেই আফিফ এর সাথে চ্যাটিং করছিলাম।
আফিফঃকি করেন?


সিমরানঃঅংক করি।মুড অফ।
আফিফঃতাহলে মুড এর সুইচটা কোথায় বলুন অন করে দেই।
সিমরানঃহি হি হি।Thank u হাসানের জন্য।
আফিফঃWel Q.
সিমরানঃwel q. আবার কি?
আফিফঃthank q. হতে পারলে wel q হতে পারে না।
সিমরানঃহি হি হি।আপনি খুব হাসাতে পারেন।
আফিফঃহুম।কিন্তু আমাকে হাসানোর মতো কেউ নেই।
সিমরানঃআপনার এতগুলো বিয়াইন থাকতে আর কি লাগে?
আফিফঃসবাইতো আর আপনার মতো না বিয়াইন।
সিমরানঃতাই বুঝি?
আফিফঃহুম।
সিমরানঃহা হা হা।
এভাবে কথা বলতে বলতে কতক্ষন কেটে গেলো জানা নেই।মনে তার প্রতি যত খারাপ লাগা ছিল।ছু হয়ে গেল।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন