উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৩৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪০)
নবনিঃডায়রিতে কি লেখা আছে?
আরাফঃদেখছি।দাঁড়াও।
আরাফ ডায়রিটা খুলতে নিলে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়।
আরাফঃএত রাতে এখানে কে আসবে।
আরাফ নবনির কাছে ডায়রি দিয়ে বাইরে দেখতে চলে যায়।বাইরে এসে দেখে নিলয় ফোনে কথা বলছে।
আরাফঃএত রাতে এখানে কি করছিস?
নিলয়ঃকল আসছিল।রুমে নেট পাচ্ছিলাম না।এই জায়গাটাতে একটু একটু নেট পাচ্ছে।
আরাফঃওহ।
নিলয়ঃতুই এতো রাতে এখানে কি করছিস!?
আরাফঃএকটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম বাসাটা।
নিলয়ঃচল একসাথা ঘুরি।
আরাফঃনা না। আমার ঘোরা শেষ। আমি এখন ঘুমাতে যাবো। তুই ও যা।
নিলয়ঃআচ্ছা।গুড নাইট।
আরাফঃগুড নাইট।
নিলয় চলে যেতেই আরাফ নবনির কাছে ছুটলো।নবনি দরজা বন্ধ করে আরাফ এর দিকে আসছিলো।ধাক্কা লেগে পরে যেতে নেয়।আরাফ কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলে।
নবনিঃআল্লাহ।আমার কোমর!
আরাফঃপরো নাই তো।ধরে ফেলেছি।
নবনিঃthank you.এখন উঠান আমাকে।
আরাফঃথাক না কত দিন পর কোমরটা জড়িয়ে ধরলাম।
নবনিঃএটা আবার কেমন কথা!আমি আপনার বিয়ে করা স্ত্রী। আপনি যখন ইচ্ছে কোমড় জড়িয়ে ধরতেই পারেন তাতে এভাবে ধরার কি আছে?
আরাফঃকই আর ধরতে পারলাম।বাচ্চা গুলো এত বুঝদার আর এডাল্ট হয়েছে কোমর ধরলেও কি না কি বলে ফেলে।ওদের জন্য রোমান্সটা ও করতে পারি না।
নবনিঃছাড়েন তো।
আরাফঃ সত্যিই!!ছেড়ে দিবো?
নবনিঃ না। ছাড়লে কোমর ভেংগে যাবে।তুলেন আমাকে।
আরাফঃ ঠিক আসে।তুমিই বলসো কিন্তু।
আরাফ নবনিকে পাজ কোলে তুলে নিলো।
আরাফঃ আমি কিন্তু জানতাম না। তুমি আমার কোলে ওঠার জন্য এত ব্যাকুল থাকো।
নবনিঃআপনি খুব চালাক একটা মানুষ।
আরাফঃহা হা হা।
আরাফ নবনিকে রুমে এসে নামিয়ে দিলো।বাবুরা এখনো।উঠে নাই।আরাফ রুমের দরজা আটকে দেয়।
আরাফঃনবনি ডায়রি খুলো।
নবনিঃহুম।
ডায়রির প্রথম পাতায় লিখা।
আমি জানতাম তুমি আসবে আরাফ!!
আরাফ নবনির চেহারার দিকে তাকায়।নবনিও আশ্চর্য হয়ে আছে এই লাইনটা পড়ে।
পরের পাতায়~
এখনই আশ্চর্য হয়োও না।এখনো আশ্চর্য হওয়ার ম মতো আরো অনেক কিছু আছে।তুমি আসবে বলে আমার পালিত জ্বিন গুলো আজ ও হয়তো আমার কক্ষটালে গুছিয়ে সুগন্ধি ছড়িয়ে রেখেছে।যাতে তোমার কোনো সমস্যা না হয়।
পরের পাতায়~
আমি জ্বিনদেরকে কোরআন তেলওয়াত ও বিভিন্ন তালিম শেখাতাম। তাই জ্বিন জাতি আমার প্রতি আজ ও কৃতজ্ঞ।এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যই ওরা সারাজীবন আমার মৃত্যুর পর ও আমার কক্ষ আর আমার বংশের সুরক্ষা করবেন।এমনটাই জ্বিন রাজা শাহরিয়ার আমাকে ওয়াদা করেছিলেন।
নবনিঃশাহরিয়ার তো মেহরাব এর নাম এর পেছনেও ছিলো?!
আরাফঃহ্যা।
আরাফ পরের পাতা উল্টায়।
শাহরিয়ার বংশ জ্বীনদের মধ্যে সব থেকে শক্তিশালী বংশ।কিন্তু এই বংশের মতো আরো একটা বংশ ছিল যারা ইবলিশকে পূজা করে শক্তিশালী হতে চাইতো।এরা আল্লাহর সৃষ্টি হয়েও শয়তান পূজারি ছিলো।রাজা শাহরিয়ার সেই শয়তান পূজারি বংশের রাজকুমারীকে ভালোবেসে ফেলে।আর বিয়ে করে ফেলে।রাজকুমারিও রাজাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। যার জন্য তিনি কাফির থেকে মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন।আর আল্লাহর আনুগত্য পালনে মনযোগী হয়ে উঠেন।
পরের পাতায়~
এদের বিয়ে দুই বংশে কলহ সৃষ্টি করে। কিন্তু হাজার ঝামেলার মাঝেও মেহরাব এর জন্ম হয়। মেহরাব শাহরিয়ার।মেহরাব এর জন্মের পর দুই বংশই তাকে রাজা দাবি করতে যুদ্ধ শুরু করেন।রাজা খুব কষ্টে আড়ালে মেহরাবকে আমার হাতে তুলে দেন।আর সে থেকে মেহরাব এর সকল দায়িত্ব আমি গ্রহন করি।মেহরাব আমার দীনি শিক্ষায় বড় হতে থাকে।সেদিকে রাজ্যে মেহরাবকে নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়।মেহরাব এর জন্মের কয়েক বছর পর পরীর জন্ম হয়।আর এবার সবার মনোযোগ পরির দিকে চলে যায়।সবাই মেহরাবকে ভুলে পরিকে নিয়ে মেতে উঠে।
পরের পাতায়~
রাজা পরিকে বাচাতে দিনের পর দিন ব্যর্থ হয়ে উঠছিলেন।তাদের সময় ও ফুরিয়ে আসছিলো। শত্রুরা যে কোনো মূহুর্তে তার জীবন নিয়ে নিতে পারেন।এটা বুঝতে পেরে রাজা আর রানী একরাতে আমার কাছে আসেন।তখন শত্রু পক্ষ তার পিছু নিয়েছিল সেটা তিনি জানতেন না।শত্রু পক্ষ মেহরাবকে খুজে ফেলে। রাজা এদের সাথে শক্তি বলে পেরে উঠছিলেন না। তিনি মারা যাওয়ার আগে মেহরাবকে সব শক্তি দিয়ে দেন।রানী তাকে এতোটাই ভালোবাসতো যে সেও রাজার সাথে মারা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর সব শক্তি মেহরাবকে দিয়ে মারা যান।আর আমি এই নিমম দৃশ্যের একমাত্র সাক্ষী হয়ে রয়ে যাই।মেহরাব তখন ঘুমন্ত শিশু। সে এসব এর কিছুই জানে না।শত্রুগুলো মেহরাব এর দিকে এগোতে নিলে আমি মেহরাবকে কোলে তুলে নেই।আর এক অদৃশ্য দেয়াল তাদেরকে বাধা দেয় মেহরাব এর কাছে আসতে।তারা ব্যর্থ হয়ে চলে যায়।
পরের পাতায়~
কিন্তু মেহরাবকে কিছু না করতে পারলেও তারা পরিকে বশ করে ফেলে।আর ওর মধ্যে শয়তানি বুদ্ধি ঢুকিয়ে দেন।মেহরাবকে আমি পরির ব্যাপারটা জানাই। মেহরাব পরির প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল হয়ে উঠে। অল্প বয়সেই সব কিছু সামলে নেয়।পরি যতক্ষন মেহরাব এর সানিধ্যে থাকে ভালো থাকে।আর মেহরাব কিছুটা দূর হলেই তার ভিতর এর শয়তান জাগ্রত হয়ে উঠে।
পরের পাতায়~
মেহরাব পরির মা মৃত্যুর আগে স্বপ্নে দেখেন যে মেহরাব কখনো রাজা হতে পারবে না।কারন মেহরাব একটা মেয়েকে ভালোবেসে মৃত্যু বরণ করবে।আর রাজা হবে সেই মেয়ের প্রথম সন্তান।
এই স্বপ্নের কথা রাজাও জানেন না।এটা কেবল রানী আমাকে বলেছিলেন।কারন তার মনে হয়েছিল রাজা এটা জানতে পেরে কষ্ট পাবেন। তাই তিনি তাকে বলেন নি।
পরের পাতায়~
মেহরাব প্রায় রাতে স্বপ্নে একটা মেয়েকে দেখতো যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিলো না।আর আমাকে সবটা বলতো।একদিন সে বলে সে দেখেছে মেয়েটা অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসে। যেটা দেখে সে সারা রাত কান্না করে।আমি অসহায়ের মতো তার চোখের পানি দেখি।যে মেয়ে নেই তাকে ঘিরে মেহরাব জীবন কি করে লিখা হলো।
পরের পাতায়~
আমি ওই মেয়ের খোজ করতে শুরু করি।এক দিন তাহাজ্জুদ এর নামায এ আমল করা কালীন আমি তোমাকে আর নবনিতাকে দেখতে পাই।সেদিন আল্লাহ আমাকে তোমাদের সন্ধান দিয়েছিল।আর আমি জানতে পারি আমার আরাফ এর স্ত্রীই মেহরাব এর ভালোবাসা।আর আরাফ নবনির সন্তানই জ্বীন জাতির রাজকুমার।
পরের পাতা~
আমার মনে হচ্ছে আমি আর বাচবো না।জ্বীনেরা আমাকে মারতে উঠে পরে লেগেছে।মেহরার তার রাজ্যে ফিরে গিয়েছে।আরাফ আমি জানি তুমি একদিন সত্যের সন্ধানে আমার কাছে অবশ্যই আসবে।আর এটা ও জানি যে তুমি চাইবে না মেহরাবকে জ্বীন জগতে পাঠাতে।তবুও বলছি এটাই ওর নিয়তি।তুমি যদি এতে বাধা দাও।তাহলে জ্বীন জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।সেখানে শয়তানের রাজত্ব বসে যাবে।আমি তবুও তোমার দাদা হওয়ার দায়িত্ব পালন করবো।আমার ড্রয়ারে তোমরা অবশ্যই তজবির জাতীয় মালা পেয়েছো।এটা দিয়ে আমি মেহরাবকে লুকিয়ে রাখতাম। এটা তোমাদের ছেলের হাতে পরিয়ে দাও।তাহলে কেউ তার সন্ধান পাবে না। আর সে স্বাভাবিক মানুষের জীবন পাবে।কিন্তু ২২ বছর হলে তাকে রাজার আসন এ বসানো হবে।তখন তোমরা সিদ্ধান্ত নিবে। কারন মালাটা না খোলা পর্যন্ত সে সাধারন মানুষই থাকবে।আর মনে হয় ডায়রিটা লিখা হবে না।আমার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে।ভালো থেকো তোমরা।মেহরাব এর জন্য অনেক দোয়া রইলো।
তারপরের পাতা গুলো ফাকা।আর কিছু নেই।
নবনি আরাফ এর দিকে অসহায় এর মতো তাকিয়ে আছে।আরাফ ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৪১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন