উপন্যাস : অধ্যায়টা তুমিময়
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “অধ্যায়টা তুমিময়” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০৬)
রাগ দুজনেই করলেও আফিফ এর রাগের পাল্লাটা বেশি ভারী।কারন আফিফ খুবই ধৈয্যশীল একটা ছেলে। পরিস্থিতি যতই খারাপ হয় না কেন।আফিফ এর ধৈয্যের বান ভাংগে না।সে নিজের আবেগ খুব সুন্দর করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আর সিমরান এর ঠিক উল্টোটা স্বভাবে খুব চঞ্চল কিন্তু সরল মনের মেয়ে।মনের ভিতর রাগ পুষে রাখাটা তার স্বভাবে নেই।যার উপর রাগ উঠে তার উপর তা ঝেড়ে টেরে সবকিছু ভুলে যাবে এটাই সিমরান এর ব্যাক্তিত্ব।
সিমরানঃআচ্ছা উনি কি আমার কথা ভুলেই গেলেন!লোকটা এমন কেন?কোনো কিছু মুখে প্রকাশ করে না।চেহারা দেখে ও বুঝতে পারি না উনার ভিতরে কি চলছে।আমিই কি কল করবো!আচ্ছা করি ঝগড়া করার জন্য হলেও কল করাটা জরুরি।
সিমরান আফিফকে মেসেঞ্জার এ কল দিচ্ছে কিন্তু আফিফ তা ধরছে না।
সিমরানঃফোনে টাকাও নেই।আচ্ছা আমি যেয়ে টাকা ভরে এসে ডিরেক্ট কল দেই।
সিমরান ফোনে টাকা ভরে এসে ছাদে চলে যায় কথা বলার জন্য তারপর ডিরেক্ট কল দেয়।কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর আফিফ কলটা রিসিভ করে।
আফিফঃআসসালামু আলাইকুম। কে?
সিমরানঃআমি!
আফিফঃকেন কল করেছেন?
সিমরানঃএকটু কথা ছিল।
আফিফঃআমি এখন ব্যস্ত আছি।আপনার সাথে পরে কথা বলছি।
কথাটায় সিমরান এর ছোট্ট মনটা ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
সিমরানঃআপনি এমন কেন?আমি নিজে থেকে কল করলাম তবুও এটিটিউড দেখিয়ে কল কেটে দিলেন। আমার কষ্ট হয় না বুঝি!আমি কষ্ট পেলে কি আপনি কষ্ট পান না!আচ্ছা আমি কি আপনার মনে এটুকু জায়গাও করতে পারি নেই?আমাকে কি ভালোবাসা যায় না?
সিমরান এর চোখ থেকে এক ফোটা পানি মাটিতে পরলো।সিমরান চোখ মুছে নিচে চলে গেলো।
আফিফঃসিমরান আমাকে কল দিলো কেন?এখানে মটর নষ্ট হয়ে গিয়েছে।বাসায় মটর ছাড়তে পারছি না সকাল থেকে সবাই পানি ছাড়া কষ্ট করছে।মিস্ত্রি এনে কখন থেকে ঠিক করাচ্ছি ঠিক হচ্ছে না।গরমে মাথা গরম হয়ে আছে। কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।পা গুলোও ব্যাথা করছে।এমন সময় সিমরান কল দেয়।তাই বললাম পরে কথা বলি।কবে যে কাজ শেষ হবে আর কবেই যেয়ে জিজ্ঞেস করবো কেন কল করেছিলো।মনটা ছটপট করছে।
সিমরান বসে বসে অংকগুলো করছে।এমন সময় মেসেজ আসে।মোবাইল এর লক ওপেন করে দেখে আফিফ এর মেসেজ।
আফিফঃকি কাজে কল দিয়েছিলেন?
সিমরান এর খুব রাগ উঠলো।
সিমরানঃভুলে দিয়ে ফেলেছি। সরি।
আফিফঃও। আচ্ছা।
আফিফ অফলাইন চলে গেলো।
সিমরানঃফাজিল লোক।বুঝে না আমি রেগে আছি।
সিমরানঃকি করেন?
সাথে সাথেই সিন হলো।
আফিফঃশুয়ে আছি।
সিমরানঃসারাদিন কি ইনবক্সেই থাকেন?
আফিফঃহুম।থাকিতো।
সিমরানঃমানে?
আফিফঃআচ্ছা আপনাকে কেউ প্রপোজ করলে কি একসেপ্ট করবেন?
সিমরানঃমাথা ফাটিয়ে দিবো ওই লোকের।কত বড় সাহস আমাকে প্রপোজ করবে।
আফিফঃওহ আচ্ছা।
আফিফঃআচ্ছা মুসিবত। এই মেয়ে নিজেও কিছুই বলে না।আবার আমি বললে যদি সত্যিই মাথা ফাটিয়ে দেয়।যে গুন্ডি টাইপ এর মেয়ে।(মনে মনে)
সিমরানঃকি হলো মেন্ডাক?
আফিফঃকিছু না ফড়িং।
সিমরানঃখবরদার ফড়িং ডাকবেন না।
আফিফঃতাহলে আপনিও মেন্ডাক ডাকবেন না?
সিমরানঃজ্বি না। আপনি মেন্ডাকই।আর মেন্ডাককে মেন্ডাকই ডাকতে হয়।
আফিফঃআচ্ছা।আপনি জানেনতো মেন্ডাক লম্বা জ্বিহবা বের করে আপনার মতো পুচকো ফড়িং খেয়ে ফেলতে পারে?
সিমরানঃআমিতো জানি গল্পের মেন্ডাক রাজকুমারির ছোয়া পেয়ে রাজকুমার হয়ে গিয়েছিল।
আফিফঃতাহলে আপনিও ছোয়া দিয়ে আমাকে রাজকুমার করে তুলেন।
সিমরানঃআমি কেন করবো করবো না।
আফিফঃঠিক আসে।আমি গেলাম তাহলে থাকেন আপনি।
সিমরানঃকোথায় যাবেন?কেন যাবেন?
আফিফঃথেকে কি করবো?থাকার কারন আছে কি?
সিমরানঃভালোবাসি আপনাকে।
আফিফ লেখাটা পড়ে ফ্রিজ হয়ে যায়।কিছুক্ষন পর উত্তর দেয়।
আফিফঃআমিও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
সিমরানঃতাহলে বললেন না কেন?
আফিফঃবললেতো মাথাটা ফাটিয়ে দিতেন আপনি!কি করে বলতাম?
সিমরানঃহুম।কিন্তু সেটা অন্যদের জন্য ছিল।আপনার জন্য না।
আফিফঃওহ।আমিতো জানতাম না।
সিমরানঃআমাকে ভালোবাসলে লামিয়া আপুকে কেন এক্সেপ্ট করতে চাইলেন?
আফিফঃআপনাকে জেলাস ফিল করানের জন্য।ওকে তো আমি ভালোবাসি না তাহলে ওকে কেন এক্সেপ্ট করবো?
সিমরানঃলামিয়া আপু আপনার প্রতি এতো পাগল। তাকে কেন ভালোবাসলেন না?
আফিফঃচাইলেই তো আর কাউকে ভালোবাসা যায় না।ওকে ভালোবাসতে পারি নাই কিন্তু আপনাকে না চাইতেই ভালোবেসে ফেলেছি।আপনাকে ছাড়া দম বন্ধ হয় আসে।আপনি আমার নিঃশ্বাস এ নিশ্বাস এ মিশে আছেন।
সিমরানঃআপনি জানেন আমার কোনো ছেলে বন্ধু নেই। কারন আমি কারো প্রতি এতোটা বিশ্বাস করতে পারি না।কিন্তু আপনাকে আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।একদম চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার মতো বিশ্বাস। আপনার প্রতি অদৃশ্য টান অনুভব করি।এমনটা কেন হয়?
আফিফঃহয়তো আপনাকে আমার বাম পাজর এর হাড্ডি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে।তাই আমরা একে অপরের প্রতি এতো মায়া অনুভব করি।অল্প সময়ের পরিচয়েও মনে হয় অনেক অনেক দিন হতে একে অপরকে জানি।
সিমরানঃহ্যা।আমার সত্যিই মনে হয় পরিচয়টা অল্প দিন এর মনে হয় অনেক বছর যাবত আপনাকে চিনি।আবার ভয় ও হয়।ছেড়ে যাবেন না তো?
আফিফঃনা। কখনো না।ভালোবাসি জান।
সিমরানঃভালোবাসি Jaan Ji❤️
আফিফঃজান জ্বী!?
সিমরানঃআপনাকে খুব সম্মান করতে ইচ্ছে করে তাই জান জ্বী।
আফিফঃওকে জানপাখিটা আমার।
সিমরান লজ্জা পেয়ে অফলাইন চলে গেলো।
[ভালোলাগাগুলো ভালোবাসায় খুব তাড়াতাড়ি পরিনত হয়ে যায়।কিন্তু সেই ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবেতো সিমরান আফিফ এর ভালোবাসা]
অনলাইন এর প্রেম চললেও এখনও সরাসরি দেখা হয় নাই আফিফ সিমরান এর।
সিমরানঃআচ্ছা।আপনিতো আমার চেহারাটাও ঠিকমতন দেখেন নেই।তাহলে আমাকে ভালো কি করে বেসে ফেললেন?
আফিফঃআমিতো তোমার চেহারা প্রেমে পরি নেই।আমি যে তোমার ভিতরে যে সিমরানটা আছে তার প্রেমে পরেছি।আর এই প্রেম ভালোবাসা আজীবন থাকবে।চেহারাটাও তো একটা সময় লাবন্য হারিয়ে ফেলবে।কিন্তু মনটা সারাজীবন একই থাকবে।তাই আমি তোমার সুন্দর মনকে ভালোবেসেছি।চেহারায় কিছুই যায় আসে না।
সিমরানঃআপনি খুব ভালো মনের মানুষ জানেনতো। এই যুগে এমন কাউকে খুজে পাওয়া খুব কঠিন।
আফিফঃতোমার মতো সহজ সরল অবুঝ মেয়ে পাওয়াও খুব কঠিন।আচ্ছা তোমার বয়স কতো বলোতো?
সিমরানঃআমি মোটেও অবুঝ না।আপনি আমাকে বাচ্চা ভাববেন না।আমার বয়স ১৬ চলছে।আর কয়েকমাস পরই আমার ১৭ হয়ে যাবে।
আফিফঃহ্যা।তাইতো।তুমি অনেক বড়।
সিমরানঃআপনার বয়স কতো?
আফিফঃ২২ বছর।
সিমরানঃআপনিতো তাহলে বুড়ো হয়ে গিয়েছেন।আর আমার কত বড়।আল্লাহ!!
আফিফঃএভাবে বলো কেন!আমি মোটেও বুড়ো হই নেই।
সিমরানঃসঠিক বয়সে বিয়ে করলে আপনি ২ বাচ্চার বাবা থাকতেন।
আফিফঃসঠিক বয়সে তোমাকে পেলাম কই? কই ছিলে হা?এতোদিন থাকলেতো আমি দুই বাচ্চার বাবা হতে পারতাম।
সিমরানঃহ্যা!বলছে আপনাকে?আমি তখন কতো ছোট থাকতাম জানেন?পরে তো বাচ্চার আগে আমাকেই আপনার পালতে হতো।
আফিফঃপালতেতো আমার এখনও হবে।তুমি কবে বড় হবে গো?
সিমরানঃযখন আপনি বুড়ো হয়ে যাবেন।তারপর আমি গান করবো বুইড়া কাকার কাছে আমায় বাপে দিলো বিয়া।হা হা হা।
আফিফঃএই এভাবে বলো না তো।আমি যতই বুড়ো হই সারাজীবন জোয়ানই থাকবো। আচ্ছা এটা বলোতো।তুমি বড় হয়ে বদলে যাবে না তো?
সিমরানঃবদলাবো কেন!!আমি সারাজীবন এমনই থাকবো।
আফিফঃএমনেই যেন হয়।আচ্ছা।দেখা করবে?
সিমরানঃকিহ!না না না।
আফিফঃপ্লিজ।আমি তোমাকে সামনা সামনি দেখতে চাই একবার প্লিজ।
সিমরানঃআচ্ছা কালকে আমার পরীক্ষা শেষে স্কুলের বাইরে আইসেন।
আফিফঃকোথায় যাবে?লালবাগ কেল্লা নাকি আহসান মঞ্জিল?
সিমরানঃলালবাগ কেল্লাতো কাছেই দূরে কোথাও যেতে হবে।আহসান মঞ্জিলই চলেন।
আফিফঃআচ্ছা। আমি টাইমমতো এসে পরবো।
সিমরানঃআচ্ছা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন