উপন্যাস : অধ্যায়টা তুমিময়
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “অধ্যায়টা তুমিময়” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ০৭)
পরীক্ষা শেষে দেখা করতে যেতে হবে ভেবেই মনটা কেমন কেমন জানি করছে।পেট ও এক গুচ্ছ প্রজাপতি উড়ু উড়ু করার মতো অনুভূতি হচ্ছে।প্রথমবার দেখা করার অনুভূতি গুলো এমন হয় বুঝি।ভয়ও কাজ করছে যদি ধরে পরে যাই।না না কিছু হবে না।আমি প্রথমবার আহসান মঞ্জিল যাবো।জায়গাটা কেমন হবে!উফফ অপেক্ষা হচ্ছে না।
ক্লাসে বসে এসব ভাবছিলাম মিস এসে পড়ে। পরীক্ষার খাতা নিয়ে।সব পারতাম তাই সব চিন্তা বাদ দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে লিখা শুরু করলাম।
পরীক্ষা শেষ এ বাইরে অপেক্ষা করছি।কিছুক্ষন এর মধ্যে উনি আসেন।আমি না বুঝার না জানার ভান ধরে দাঁড়িয়ে আছি যেন তাকে আমি চিনিই না।আমি বোরখা নিকাব পরেছিলাম। আমাকে উনার চেনার কথা না। বেচারা আমাকে কল দিয়েই যাচ্ছে।আর এক মাথা থেকে আর এক মাথা আমাকে খুজছে।আর আমি কল ধরছিই না।আমার অনেক মজা লাগছে ব্যাপারটা।হি হি হি।
কিছুক্ষন পর দেখি ঠিক আমার সামনে এসে দাড়ান।
_আসসালামু আলাইকুম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
_রিকশা নেই?
_হুম।
আমি তো আহম্মক হয়ে গেলাম।আমাকে চিনলো কি করে? ধুর খেলবো না।এটা কোনো কথা।
রিকশায় উঠে বসলাম।আমার খুব আনইজি ফিল হচ্ছে।এভাবে একটা ছেলের সাথে রিকশায় বসাটা কেমন জানি লাগছে।আফিফ ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পেরেছেন।তিনি একটু সরে বসেছেন।গা ঘেষে বসেন নাই।আমি একটু স্বস্তি পেলাম।
_কি করে চিনলেন?
_চোখ দেখে চিনে ফেলেছি।
_এটাও সম্ভব?
_হুম।
_বাসায় কি বলে এসেছেন?
_বলেছি কিছু একটা।তুমি?
_বলি নাই।আম্মু জানে পরীক্ষা আছে।
_ওহ।
_বলেন না। কি বলে এসেছেন?
_বললাম একটু আসতেসি।
_ওহ।
উনি বিড়বিড় করে কি যেন পড়লেন।তারপর আমার মাথায় তিনবার ফু দিলেন।তারপর নিজের বুকে ফু দিলেন।
_কি করলেন?
_আয়াতুল কুরসি পড়ে ফু দিলাম।
_সবসময় পড়েন?
_হুম। তাহলে রাস্তায় আল্লাহ ফেরেশতা নিয়োগ দিয়ে দেন। বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করতে।
_আমি তো পারি না।আয়াতুল কুরসি।
_শিখিয়ে দিবো নি বাসায় যেয়ে।
_আচ্ছা।
আমাদের মাঝে আর কোনো কথা হয় নেই।দুই জন এর মাঝে পিনপিনে নিরবতা বিরাজ করছে।
আমি সোজা তাকিয়ে আছি।উনার দিকে সরাসরি তাকাতে পারছি না।লজ্জা করছে খুব।উনি ব্লাক শার্ট পরেছেন।গা থেকে পারফিউম এর মিষ্টি ঘ্রান আসছে।ফর্সা হাতে ঘড়িটা সুন্দর মানিয়েছে।গালে হালকা ছোট ছোট দাড়ি।ঠোঁট গুলো অসম্ভব গোলাপী।গল্পে এমন নায়কের কথা শুনলেও বাস্তবে এমন ছেলে আছে সেও আমার গল্পের নায়ক এটা মেনে নিতে পারছিলাম না আমি।কারন আমার মধ্যে নায়িকা হওয়ার মতো কোনো রূপ গুন নেই।
রিকশায় অসম্ভব ঝাকি লাগছে। আহসান মঞ্জিল যাওয়ার পথটা অসম্ভব ভাংগা চুরা।আফিফ আমার সামনে হাত বাড়িয়ে রিকশার হুক ধরেন।
আজিব তো আমি কি বাচ্চা!!যে পড়ে যাবো।এভাবে আম্মু ধরে রাখতো ছোট থাকতে যাতে আমি পড়ে না যাই।কিন্তু এটা কি ছিলো।
কিছুক্ষন পর এসে পরলাম।আফিফ টিকিট কাটলেন আমরা ভিতরে গেলাম।একটা জায়গায় যেয়ে বসতে নিলাম আফিফ বসতে দিলো না।ফু দিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে তারপর বসতে বললো।
সিমরানঃআমি এত কিছু খেয়াল করি না। আর ইনি আমার পুরোটা বিপরীত।পরিপাটি লোক।
আমি বসলাম। উনি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে আমার পাশে বসলেন।আমি কিছুই বলছি না।কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না।
_কিছু খাবা?নাস্তা করে এসেছো?
_না কিছু খাবো না।
আফিফ আমার হাতটা তার দুই হাত এর মাঝে নিলেন।আমি চমকে উঠলাম।
_হাত এতো ঠান্ডা কেন?শীত করছে?
ভয়ে আর নারভেসনেসে এ আমার হাত ঠান্ডা বরফ হয়ে গিয়েছে।আমি কিছুই বললাম না।চুপ করে বসে আছি।
আফিফ আমার হাতটা দুই হাত এর মাঝে রেখে গরম ফু দিচ্ছেন।উনার হাত অসম্ভব গরম।বুঝলাম না ছেলেদের শরির গরম থাকে নাকি আমার গায়ে একফোটাও রক্ত নেই।কিছুক্ষন পর আমার হাতটা গরম হয়ে গেলো।এবার উনি আর এক হাত এর সাথে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।আমি কিছুই বলছি না উনার কান্ড গুলো দেখছি।আমার ঠান্ডা হাত নিয়ে উনার অনেক মাথা ব্যাথা।
সিমরানঃআমি ঠিক আছি।
উনি তবুও আমার হাতের আংগুল গুলো নিজের পাচ আংগুল এর মাঝে গুজে রাখলেন।তার আংগুল গুলো বেশ বড়ো বড়ো আর আমার আংগুল গুলো পিচ্চি পিচ্চি।
আফিফঃ I love u.
কথাটা আমার চোখে চোখ রেখে বললেন।আমি চোখ নাময়ে নিলাম।তার চোখ গুলো অসম্ভব মায়াবি।এই চোখ আমাকে হাজার বার খুন করতে সক্ষম। এখানে তাকিয়ে থাকাটা খুবই বিপদ জনক।
আমি নিচের দিকেই তাকিয়ে বললাম~
I love u to.
উনি মুচকি হাসলেন।হাসিটা খুব সুন্দর।
সিমরানঃবাসায় যেতে হবে।
আফিফঃমাত্রইতো আসলাম।
সিমরানঃআমার খুব ভয় করছে।দেখা তো হলোই।এখন চলুন।
আফিফঃচেহারাটা দেখাবে না।
সিমরানঃএখানে অনেক মানুষ আছে।
আফিফ আমার হাত ধরে সেখান থেকে উঠে পরলো।তারপর ভিতরে একটি নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে গেলো।
আমি নিকাবটা হাল্কা করে উপরে তুললাম আর সাথে সাথে নামিয়ে ফেললাম।
আফিফঃএটা কি হলো? আমি তো দেখি নেই।
সিমরানঃবেশি দেখা লাগবে না।
আমি সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।
সিমরানঃএখন আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।
আফিফঃযাই আগে একবার ভিতরটাতো ঘুরে আসি চলো।
আমারও ইচ্ছে ছিল জায়গাটা ঘুরে দেখার তাই না করলাম না।আফিফ আমার হাত ধরে পুরো জায়গাটা ঘুরে ঘুরে দেখালেন।তারপর আমাকে বাসায় দিয়ে উনি চলে গেলেন।পুরোটা পথ হাতটা ধরেই ছিলেন।এখন বাসায় এসে হাতটা খালি খালি লাগছে।
আফিফ এর মেসেজ আসে।মেসেজটা ওপেন করে দেখি লিখা আছে~
তোমার নরম তুলতুলে হাতগুলো ধরে মনেই হচ্ছিল না কিছু ধরে রেখেছি।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কি যেন নেই। খুব মিস করছি তোমায়।অনেক অনেক অনেক গুলো।এখনো রাস্তায় আছি। বাসায় যেয়ে কথা বলছি।আল্লাহ হাফেয।নিজের খেয়াল রেখো।
মেসেজটা পরে আনমনে হেসে দিলাম।আচ্ছা মানুষ কি এতো ভালো ও হয়?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন