উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব - ০১)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০২)

নিজের রুমের ডিভানের উপর বসে কোলের উপরে ল্যাপটপ নিয়ে দশ আঙুল কিবোর্ডের উপর দপাদপ ফেলে পোগ্রামিং করায় ব্যস্ত কাব্য। ঠিক সেই সময়, রুমের দরজা ঠেকে ভিতরে ঢুকলো কুহু। কুহুর নুপুরের জুম জুম শব্দেই কাব্য বুঝে ফেলে যে কুহু এসেছে। তাই আর মাথা তুলে সামনে তাকালো না। কুহু রুমে ডুকে দরজাটা হালকা ভেজিয়ে ডিভানে কাব্যর পাশে ধপাস করে বসে, হাতে থাকা উচ্চতর গনিতের বই, খাতা, কলম আর সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটরটা ঠাস করে ডিভানের সামনে থাকা টেবিলার উপর ফেলে দেয়। তারপর কপাল কুঁচকে কাব্যর দিকে তাকায়। জীম করা গায়ে ঢিলেঢালা  সাদা রঙের টি-শার্ট আর গাঢ় নীল রঙের টাউজার। মাথা ভর্তি কালো সিল্কি চুল গুলো এলোমেলো। মনে হয় ভার্সিটি থেমে এসে গোসল করে আর মাথা আঁচড়ায়নি, বসে পরেছে তার ল্যাপটপ খানা নিয়ে। এই যে এতক্ষণ হয়ে গেল সে যে এসেছে, এখন পর্যন্ত তার দিকেও চোখ তুলে তাকায়নি। মাঝে মাঝে কুহুর খুব হিংসে হয় এই ল্যাপটপটার উপর। ইচ্ছে করে জোড়ে একটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতে। কিন্তু তাতে লাভ কিছুই হবে না। একটা ভাঙলে, আরেকটা কিনে আনবে। সিএসসির স্টুডেন্ট তাই নাকি সারাদিন ল্যাপটপে কাজ থাকে। অসহ্যকর। কে বলেছে তাকে সিএসসিতে পড়তে। ইভেন কে বলেছে তাকে লেখাপড়া করতে। তার কিছুই করতে হবে না। সে শুধু সারাদিন তার দিকে চেয়ে থাকবে আর তার রুপের প্রশংসা করবে। আত্নীয়-স্বজন, বান্ধবী, পাড়া-প্রতিবেশী কতো মানুষ তার রুপের প্রশংসা করে। অথচ সে যার কাছ থেকে একটু প্রশংসা শোনার জন্য বেকুল হয়ে বসে থাকে, তার সময়ই হয় না। সে ব্যস্ত তার পড়ালেখা নিয়ে। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে সে। টাকা পয়সার অভাব তার হবে না। তাছাড়া কাব্যের বাবার অবস্থাও যথেষ্ট ভালো। কাব্য আর কিরণ দুই ভাইই তো সব পাবে। তাহলে কেন এতো লেখাপড়া?
কাব্য জানতো কুহু এখন কোনো না কোনো সাবজেক্ট এর সমস্যা নিয়ে এসেছে। প্রায় প্রতিদিনই আসে। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে এসেও কুহু কিছু বলছে না দেখে ল্যাপটপ এর দিকে তাকিয়েই কাব্য জিজ্ঞেস করল
- কি সমস্যা?
এতো রূপবতী কিশোরী মেয়ে সে তার দিকে না তাকিয়ে কাব্যের এমন প্রশ্ন করাতে, কুহুর কাব্যের গলা টিপে ধরতে ইচ্ছে হলো। নিজের শুপ্ত ইচ্ছেটাকে হাওয়ায় বিলুপ্ত করে ঠোঁটে হাসির রেখা তুলে বলল
- মাথা ব্যথা করছে।
কাব্য ল্যাপটপ দিকে তাকিয়েই ভ্রু কুঁচকে বলল
- মাথা ব্যথা তো বই, খাতা নিয়ে এখানে কি করছ। কিছু খেয়ে ম,,,,,,,
কাব্যকে আর বলতে না দিয়ে, কুহু স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
- তাহলে তুমি দেখছে যে আমি বই, খাতা নিয়ে এসেছি।
কাব্য ল্যাপটপ এর দিকেই দৃষ্টি স্থির রেখে বলল
- তুমি যেভাবে দড়াম করে বইগুলো টেবিলের উপর রাখলি। তাতে, না দেখেও বলে দেওয়া যায়।
কুহু বিরক্ত নিয়ে বলল
- তাহলে বই, খাতা নিয়ে যখন এসেছি তো পড়তেই এসেছি। তাই না? শুধু শুধু জিজ্ঞেস করো কেন?
কাব্য এবার ল্যাপটপের থেকে চোখ তুলে কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল
- আরে, আমি তো জিজ্ঞেস করলাম তোমার সমস্যা কোন সাবজেক্টের, কোন পড়ায় তা জানার জন্য।


কুহু বিরক্ত নিয়েই বলল
- এই মাথা গরম করবে না তো। আর তোমার এই সাধের ল্যাপটপটা রাখ। নাহলে আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই এখন এটাকে ভেঙে ফেলবো।
কাব্য আদরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কুহুরানীর মাথা আজ এতো গরম কেন?
কাব্যের আদরে কন্ঠ শুনে, কুহুর বিরক্ত উড়ে গেল। কুহু অভিমানী কন্ঠে বলল
- মাথা গরম হবে না। সবাই বলে আমি দেখতে নাকি পরির মতো সুন্দর। একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। সেই আমি তোমার সামনে সেই কখন থেকে বসে আছি আর তুমি তাকাচ্ছ পর্যন্ত না। হাউ ইনসাল্টটিং।
কুহুর কথা শুনে কাব্য নিশব্দে হেসে ফেলে। যার ফলে তার ডিপ রেড কালারের ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে বা-গালের এক চিমটি মাংস উধাও হয়ে যায়। কুহু পলকহীন চোখে চেয়ে থাকে কাব্যর দিকে। এই হাসিটাকেই তো তার অবাধ্য মন প্রতিটা দিন, প্রতিটা ঘন্টা, প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা ন্যানো সেকেন্ড খুঁজে বেড়ায়।
কাব্য হাসি থামিয়ে ল্যাপটপটাকে কোল থেকে উঠিয়ে টেবিলের উপর রাখে। তারপর কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল
- নেও, ল্যাপটপ রেখে দিয়েছি এখন বল।
কুহু এখনো এক দৃষ্টিতে কাব্যের দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য আবার বলল
- কি হলো বল।
কুহু কাব্যের মুখের দিকেই স্থির দৃষ্টি রেখে বলল
- এমন করে, কক্ষনো কারো সামনে হাসবে না।
কাব্য তাচ্ছিল্য হেসে বলল
-  কেন? আমি কালো বলে আমাকে হাসিলে খুব বাজে লাগে তাই?
কুহুর রাগে মাথাটা গরম হয়ে যায়। কষ্টে চোখ দুটো ছলছল করে উঠে। এই কথাটা যদি কাব্য না বলে অন্যকেউ বলতো, তাহলে কুহু তাকে পঁচা ডোবাতে চুবিয়ে মারতো। ছলছল চোখে রাগে কটমট করতে করতে কুহু বলল
- আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাসিটা দেখেছ কখনো? একদিন সময় করে দেখ। তাহলেই বুঝবে হাসলে তোমাকে ঠিক কি পরিমাণ বাজে লাগে।
বলেই টেবিলের উপর থেকে নিজের বই-খাতা গুলো নিয়ে চলে গেল কুহু। কুহুর মুখে এমন কথা শুনে কাব্যর চোখ দুটো ছলছল করে উঠে। মনে মনে ভাবতে থাকে, তার গায়ের রং কালো এতে তার কি দোষ। আচ্ছা, মানুষের গায়ের রঙটাই কি সব? নম্রতা, ভদ্রতা, শিক্ষা এগুলোর কি কোন দাম নেই? ভাবতে ভাবতেই ডিভানে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে সে। আর প্রায় সাথে সাথেই সেই বন্ধ চোখ বেয়ে পরে, শিশির বিন্দুর নেয় দুফোঁটা জল।
💞
বিছানায় শুয়ে আহান চৌধুরীর পেজের নতুম পোস্টের প্রায় নয় হাজার কমেন্টপর সব একটা একটা করে পড়ছে চন্দ্রা। ছেলেদের কমেন্ট গুলো পড়ে বেশ ভালোই লাগছে তার। সব ছেলেরা আহানের প্রশংসা করছে, আহানের মতো হতে চাচ্ছে, আহানকে হিরো বলছে, আহানের জন্য দোয়া করছে। গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে চন্দ্রার। কিন্তু মেয়েদের পোস্ট গুলো পড়ে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার। "হায় হ্যান্ডসাম",  "লুকিং হট", " আই লাভ ইউ আহান", "প্লিজ ম্যারি মি", " ভালোবাসি তোমায় আহু", "হবু বর তোমার চোখ গুলো খুব সুন্দর", " আহু লাভ ইউ", "ওহ আমার ফিউচার বাচ্চা-কাচ্চার বাপ লাভ ইউ", " আহু বেবি লাভ ইউ", "কিস ইউ আহুসোনা উম্মাহ" ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।


কতো বড় সাহস এই মেয়েগুলোর তার ক্রাশের দিকে নজর দেয়। ইচ্ছে করছে সব গুলো মেয়ের চুল কেটে, তা দিয়ে নুডুলস রান্না করে তা তাদের খাওয়াতে। মরুক এরা খাদ্যনালিতে চুল আটকে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে সে আহানকে ভালোবাসে। এখনো সে আহানকে কিছু বলতে পারেনি। আর এই মেয়েগুলো দুইদিনের পরিচয়ে যা তা বলছে। হাউ ডেয়ার দে! চন্দ্রার এখনো মনে আছে সেই দিনের কথা, যেদিন প্রথম তার আহানের সাথে দেখা হয়। সেদিন ছিল তাদের ফ্রেশারদের নবীনবরণ। সেদিন সে প্রথম শাড়ি পরেছিল। একটা নীল রঙের শাড়ি। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি। মাথার চুলগুলো খোপা করা। কপালে ছোট একটা নীল টিপ, হাতে নীল কাচের চুড়ি। দুইতালার হলরুমে তাদের নবিনবরণের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। কিন্তু দীপ্তির সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে সে ভুল করে তিনতালায় উঠে যায়। তিনতালায় উঠে হলরুম খুজে না পেয়ে দরজার উপরে লেখা রুম নাম্বার ৩০৪ দিকে তাকাতেই সে বুঝতে পেরেছিল যে এটা দুইতলা না তিনতালা। তিনতালা থেকে তাড়াতাড়ি করে নামতে গিয়ে পাড়ে যাচ্ছিল সে। ঠিক তখনি একটা শক্ত পুরুষালি হাত তাকে ধরে ফেলে। সেই শক্ত হাত তাকে সোজা করে দাড় করালেই সে পিছনে ফিরে ব্যাক্তিটিকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য। পিছনে ফিরতেই সে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে সেই ব্যাক্তিটাকে। ফর্সা লম্বা গায়ে খয়েরী রঙের পাঞ্জাবি। সিল্কি চুল গুলো বেক ব্রাশ করা। ঘন পাপড়ির মায়াবী চোখ। চিকন লাল ঠোঁট দুটো নড়ছে। ঠিক যেমন নড়ে কেউ কথা বললে। আচ্ছা সে কি কথা বলছে? কি বলছে? হঠাৎ চোখের সামনে সেই ব্যাক্তিটি হাত নারালেই ধ্যান ভাজ্ঞে চন্দ্রার শুনতে পায় সামনে থাকা ব্যাক্তিটি বলছে
- এই যে মিস শুনছেন।
চন্দ্রা লজ্জা পেয়ে যায়। ইস এতক্ষণ সে এই ছেলেটার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে ছিল। লজ্জিত কন্ঠে বলল
- হ্যাঁ, হ্যাঁ বলুন।
সামনে থাকা ব্যাক্তিটি জিজ্ঞেস করল
- আপনি কি ফ্রেশার?
চন্দ্রা অবাক হয়। সে ভেবেছিল ছেলেটা তাকে কথা শোনাবে দেখে না হাটার জন্য। কিন্তু ছেলেটা সেই সম্পর্কে কিছু না বলে, জিজ্ঞেস করছে সে ফ্রেশার কি না? সে উত্তর দিল
- হ্যাঁ।
সামনে থাকা ব্যাক্তিটি আবার জিজ্ঞেস করল
- কোন ডিপার্টমেন্ট?
চন্দ্রা আবার উত্তর দিল
- সিএসসি।
সামনে থাকা ব্যাক্তিটি মিষ্টি হেসে বলল
- ওহ। আমি আহান চৌধুরী। সোশ্যাল ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের সেভেন সেমিস্টার। আপনার নামটা কি জানতে পারি?
চন্দ্রা মুগ্ধ নয়নে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল
- তাসরিবা জাহান চন্দ্রা।
- চন্দ্রা, নাইস নেইম। তা আজকে কি প্রথম শাড়ি পরেছেন?
চন্দ্রা মাথা নেড়ে উত্তর দিল
- হুম্ম।
তখনি আহানের ফোন আসে। আহান ফোনটা রিসিভ করে বলল
- হ্যাঁ আসছি, দুইমিনিট।
বলেই ফোনটা কেটে পকেটে রেখে চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বলল
- সাবধানে হাটবেন। আর খুব বেশি প্রয়োজন না হলে শাড়ি পরবেন না।
কথাটা বলেই আহান চলে গিয়েছিল। সেদিন আহানের সেই কথায় চন্দ্রার খুব খারাপ লেগেছিল। তাকে কি এতোই খারাপ লাগে শাড়ি পরলে যে তাকে শাড়ি পরতে না করে গেল। সেদিন এর পর থেকে আর কোনদিন সে শাড়ি পরেনি। সময়ের সাথে সাথে সে আহানের সাথে পরিচিত হয়েছে। আহান তাকে এখন আপনি থেকে তুমি ডাকে। কিন্তু তাদের সম্পর্কটা জুনিয়র সিনিয়রেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আহান তাকে কিছু বলেনি। আর সেও কিছু বলেনি ভয়ে পরে যদি তাদের মধ্যে এই জুনিয়র সিনিয়রের সম্পর্কটুকুও না থাকে।


বৃষ্টিহীন ধুলোময় এই শহরের মাঝে ঝকঝকে তকতকে প একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে অভি। চোখ দুটো তার স্থির ঠিক সামনের চেয়ারটায় বসে থাকা তোয়ার দিকে। ফর্সা গায়ে সাদা আর গোলাপি রং এর মিশ্রনের একটা সেলোয়ার-কামিজ। চুলগুলো পনিটেল করে বাধা। সামনের ছোট ছোট চুলগুলো বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর লাফিয়ে উঠছে। কাজল বিহীন চোখের উপর কালো গোল ফ্রেমের চশমা । মেকাপহীন মুখে আছে খুশির উচ্ছ্বাস। এভাবেই খুটিয়ে খুটিয়ে তোয়াকে দেখায় ব্যস্ত অভ্র। কিন্তু সেই দিকে কোন খেয়ালই নেই তোয়ার। সে উইলিয়াম শেক্সপিয়রের রচনাসমগ্র বইটা দেখায় ব্যস্ত। বারবার বইয়ের পাতা উল্টে-পাল্টে দেখছে। দেখে কেউ বলবে না এই মেয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট। মনে হচ্ছে ছোট কোন বাচ্চা তার পছন্দের গল্পের বই পেয়ে তাকে বারবার উল্টিয়ে দেখছে। বইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে অভির দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে তোয়া বলল
- থ্যাংক ইউ সো মাচ, ভাইয়া। তুমি জানো, তৃতীয়বার যখন বই পড়তে পড়তে গাড়ির নিচে পড়তে নিয়েছিলাম, তখন থেকে তো আব্বু আমাকে বই কিনার জন্য কোন টাকাই দেয় না। আম্মু লুকিয়ে দেয়। তাও মাসে শুধুমাএ একটা বই কিনার জন্য। তুমি জানো, গতসপ্তাহে বইটা হারিয়ে যাবার পর থেকে আমার মনটা কতো খারাপ ছিল। কান্না পাচ্ছিল। এই মাসের বরাদ্দ একটা বইও কিনা হয়ে গিয়েছে। আম্মুকে বলেছিলাম বইটা হারিয়ে গিয়েছে। আম্মু বলেছে সামিনের মাসের বরাদ্দ টাকা দিয়ে বইটা কিনতে। কিন্তু তাহলে সামনের মাসে নতুন কোন বই কিনতে পারতামনা। এদিকে এটা আমার অনেক প্রিয় একটা বই। থ্যাংকস এতোগুলো।
অভি হেসে বলল
- থ্যাংকস দিতে হবে না। যাস্ট হাটা চলার সময় বই পড়ো না। প্লিজ।
তোয়া তাড়াহুড়ো করে বলল
- না! না! এখন হাটা চলার সময় পড়ি না। আম্মু বলেছে হাটার সময় বই পড়তে দেখলে মাসে একটা বইও কিনে দিবে না। আর তাছাড়া ব্যথা পেলে হয় হসপিটালের, না হয় বাসার বেডে ব্যথা নিয়ে সুয়ে বসে থাকতে হয়। বই পড়তেও দেয় না। তাই এটা থেকে হাটা চলার সময় বই না পড়াটাই বেটার।
এরই মাঝে ওয়েটার এসে দুইপ্লেট চাওমিন আর দুইগ্লাস কোল্ড ড্রিংক দিয়ে যায়। অভি হাসি মুখে বলল
- যাক মাথায় বুদ্ধি হয়েছে তাহলে।
তারপর দুজনই হেসে দেয়। তোয়া খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল
- আচ্ছা ভাইয়া, এই বইটা গিফট করার পিছনের গুড নিউজটা তো বললে না।
অভি মুখ তুলে তোয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- গুড নিউজ ছাড়া কি তোমাকে গিফট দিতে পারবো না।
তোয়া মুখে চাওমিন নিয়ে বলল
- না তা নয়। প্রতিবারই তো তোমার সাথে ভালো কিছু হলে আমাকে গিফট দেও তাই জানতে চাচ্ছিলাম আর কি।
অভি ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হাসি দিয়ে বলল
- এটা তোমার মন ভালো করার জন্য। বইটা হারানোর পর থেকে তোমার মন খারাপ ছিল তাই।
তোয়া খুশি হয়ে বলল
- তুমি কতো ভালো। আমার কতো খেয়াল রাখ।
অভি খুশি হয় কথাটা শুনে। তোয়া আফসোস করে আবার বলে উঠলো
- ইস, তুমি আমার ভাইয়ার বন্ধু না হয়ে যদি আমার ভাইয়া হতে। তাহলে কতো ভালোই না হতো।


তোয়ার মুখে এই কথা শুনে অভির কাশি উঠে যায়। তোয়া তাড়াতাড়ি অভির দিকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। অভি ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানি খেয়ে অসহায় চোখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। এই মেয়ে তাকে কবে বুঝবে? আদৌও কি কখনো তাকে বুঝবে? নাকি এভাবেই তার জীবনটা কাটবে? সাত সাতটা বছর ধরে সে এই মেয়েটাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। ভালোবেসে সব সময় এই মেয়ের পছন্দ, অপছন্দ, প্রয়োজন সব কিছুর প্রতি সে খেয়াল রেখেছে। এখন এই খেয়াল রাখার জন্য যদি এই মেয়ে তাকে ভাই হিসাবে চায়, তাহলে তো তার কোনো এক সুকিয়ে যাওয়া নদীতে গিয়ে, কেঁদে বাসিয়ে। সেই কান্নার জলে ডুবে মরা উচিত।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে …


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব - ০৩)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন