উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০১)

ঘড়ির কাটার ঢংঢং শব্দ করে জানান দিল এখন রাত বারোটা বাজে। কিন্তু সেদিকে অভ্রের কোন খেয়াল নেই। সে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে রুমের ফ্লোরে বসে পড়ে। বক্সটা খুলে তার মধ্যে থেকে ছোট সিলভার কালারের চকচকে কেচিটা বের করে। বাম হাতে কেচিটা নিয়ে ডান হাতের তালুতে একটা টান দেয় সে। আর প্রায় সাথে সাথেই ফর্সা হাতের তালুটা লাল রক্তে ভরে যায়। ব্যথায় চোখ বন্ধ করতেই অতীতে ডুবে যায় সে।
আজ থেকে এগারো বছর আগে -------
বিকেল পাঁচটা। এই সময় অন্যান্য ১৬-১৭ বছর বয়সের ছেলেরা যখন মাঠে ক্রিকেট অথবা ফুটবল খেলায় ব্যস্ত। ঠিক সেই সময় চোখে চসমা পড়ে বইয়ে মুখ গুজে পড়ায় ব্যস্ত অভ্র। বরাবরই সে পড়াকু ছেলে। তার উপর ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম চলছে। তাই এই সুন্দর বিকেলেও পড়ছিল অভ্র। তখনি গুটিগুটি পায়ে কেউ রুমে প্রবেশ করে। কিন্তু পড়ায় মগ্ন অভ্রের সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তাই ধৈর্যহারা হয়ে গাল ফুলিয়ে আগন্তুক ডেকে উঠলো
- অভ্র ভাইয়া।
অভ্র বই থেকে মাথা তুলে আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
- কি হয়েছে আমার তূবাসোনার! এমন গাল ফুলিয়ে আছে কেন আমার তূবাপাখিটা?
তূবা গাল ফুলিয়ে রেখেই বলল 
- আমি তোমার সাথে রাগ করেছি।
অভ্র তূবাকে নিজের কোলের উপর বসিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তা আমার দোষটা কি জানতে পারি তূবাপাখি?
তূবা অভ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলল
- তুমি আমার সাথে খেল না, সারাদিন শুধু পড়।
অভ্র অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বলল
- তাই।
তূবা মাথা উপর নিচে ঝাকালো। সাথে দুলল তার মাথার জুটি দুটো। অভ্র ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হালকা হেসে বলল
- এখন তো আমার এক্সাম চলছে। এখন যদি আমি না পড়ি, তাহলে তো আমি বড় হয়ে বাবার মতো ডাক্তার হতে পারবো না। তাই আমার এক্সামটা শেষ হোক তারপর আমি সারাদিন আমার তূবাসোনার সাথে খেলবো। 
তূবা তার ছোট গোল গোল চোখ দুটো বড় করে জিজ্ঞেস করল
- তুমি বড় হয়ে খালুর মতো ডাক্তার হবে?
অভ্র আগের মতো করে হেসে বলল
- হ্যাঁ, তূবাপাখি।


তূবা মাথাটা হালকা ডান দিকে কাত করে জিজ্ঞেস করল
- আমি বড় হয়ে কি হবো?
অভ্র মিষ্টি হেসে উত্তর দিল
- তোমার যেটা ইচ্ছা।
তূবা গালে আঙুল দিয়ে বিজ্ঞদের মতো কিছুক্ষণ ভেবে বলল
- আমি খালামনির মতন হবো।
অভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- আম্মুর মতন হবে মানে?
তূবা হাত মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল
- খালামনি যেমন খালুর জন্য রান্না করে, খাবার বেড়ে দেয়। হসপিটালে যাওয়ার সময় খালুর টাই বেধে দেয়, ব্যাগগুছিয়ে দেয়। আমিও তেমনি বড় হয়ে তোমার জন্য রান্না করবো, তোমাকে খাবার বেড়ে দিব। তুমি যখন ডাক্তার হয়ে হসপিটালের যাবে, তখন আমি তোমার টাই বেধে দিব, ব্যাগগুছিয়ে দিব।
বর্তমানে ----------------
সাত বছরের তূবার মুখে এমন কথা শুনে সেদিন সে হেসে ছিল। চোখ খুলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবে সে, সেদিন যদি না হেসে ধমক দিতো। তাহলে আজ হয়তো তাকে এতো জ্বালা সইতে হতো না। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনও রক্ত পড়ছে। ফ্লোরেও রক্ত পড়েছে। কিন্তু এই রক্ত তো কাউকে দেখানো যাবে না। নিজের হাতটা ড্রেসিং করে। ফ্লোরের রক্ত মুছে ফার্স্ট এইড বক্সটা আগের যায়গাতে রেখে দেয় সে। তারপর রুমের লাইট অফ করে দেয়। বেড সাইড টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালায়। চোখের চসমাটা খুলে বেড সাইট টেবিলে ল্যাম্পের পাশে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে।
💞
রোদের আলো এসে মুখের উপর পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় দীপ্তির। চোখ মেলে তাকাতেই বুঝতে পারে কমলা খালা ঘর মোছার সময় পর্দাটা ফাঁক হয়ে গিয়েছে। যার জন্য আলো এসে পয়েছে তার মুখে। প্রথমে কমলা খালার উপর রাগ উঠলেও পরক্ষণেই সেই রাগটা গিয়ে পড়ে তার মা'র উপর। বেচারি কমলা খালার আর দোষ কি? সে তো টাকার জন্য যাস্ট তার কাজটা করছে। সব দোষ তার মা'র। এই সকাল বেলা ঘর মোছার মতো অপ্রয়োজনীয় কাজটা না করলে কি নয়। দুপুর বারোটায় তো কমলা খালা ঘর মুছবেই। তাই অন্ততপক্ষে তার রুমটা না হয় সকালে মুছা না হোক। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সকাল সকাল এই ডুপ্লেক্স বাড়ির প্রতিটা রুম, প্রতিটা বারান্দা কমলা খালাকে দিয়ে মুছাবেই মুছাবে। পুরো দুনিয়া ওলটপালট হয়ে গেলেও তার তিন বেলা ঘর মুছা ঠিক থাকবে। বিরক্ত নিয়ে পাশের বালিশটা নিয়ে মুখে উপর রেখে, হাত দিয়ে চাপা দিয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো দীপ্তি। ঠিক তখনি ট্রিং ট্রিং শব্দ করে ফোন বেজে উঠলো। দীপ্তির বিরক্তি এবার আকাশ ছুলো। ইচ্ছে হলো ফোনের ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটার ফোনটা আছাড় মেরে চুরমার করে ফেলতে। যাতে না থাকবে ওই ব্যাক্তিটার ফোন আর না বাজবে তার ফোন। মাথার উপর থেকে বালিশটা পাশে ফেলে মাথার বালিশের পাশে থাকা ফোনটা চোখের সামনে ধরে ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে স্কিনে ভেসে উঠা নামটে পড়ে নিল সে, "চান্দের বুড়ি"। চরম বিরক্ত নিয়ে কলটা রিসিভ করে সে। ফোনটা কানের কাছে নিয়েই বলল
- চান্দের বুড়ির বাচ্চা তোরে উইদাউট রকেটে চান্দের দেশে পাঠায়ে দিব।
ফোনের ওপাশ থেকে চন্দ্রা অভিমানী কন্ঠে বলল
- এজন্যই বলে লোকের ভালো করতে নেই।
দীপ্তি কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করল
- তা এই সকাল সকাল আমাকে ঘুম থেকে তুলে তুই কি ভালোটা করলি শুনি?
ওপাশ থেকে চন্দ্রা বলল
- একরাম স্যার গত সপ্তাহে যে ক্লাসটা নিতে পারেনি সেটা আজকে সকাল নয়টায় নিবে।
দীপ্তি অবাক হয়ে হালকা চিল্লিয়ে বলল
- হোয়াট! কালকেও তো কিছু শুনিনি। তাহলে সকাল সকাল এই খবর তুই কোথা থেকে পেলি।
চন্দ্রা স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল
- সি.আর গ্রুপে পোস্ট করেছে রাত বারোটায়। রাত ১১:৫০ এ নাকি স্যার ফোন করে ক্লাসের কথা বলেছে।
দীপ্তি বিরক্ত নিয়ে বলল
- উফ! আল্লাহ! বিএসসিতে এই লোক শান্তি দেয়নি। এখন এমএসসিতে এসেও এই লোক জ্বালায়ে পোরায়ে ছাই করে উড়ায়ে দিচ্ছে।


চন্দ্রা হেসে বলল
- জানু পেসেন্টটা দিয়ে উড়িছ। না হলে স্যার মার্ক দিবে না।
দীপ্তি রাগী কন্ঠে বলল
- ঘোড়ার ডিম দিব। রাখ, আসছি।
বলেই দীপ্তি ফোনটা কেটে দিয়ে। বিছানা থেকে উঠে ওয়াসরুমে চলে যায়, ফ্রেশ হতে।
💞
বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিল মিষ্টার আফরান। তখনি দুইকাপ চা নিয়ে বারান্দায় আসলো মিসেস সোনালী। একটা কাপ চা মিষ্টার আফরানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
- তোমার চা।
মিষ্টার আফরান পেপার থেকে চোখ সরিয়ে, মিসেস সোনালীর হাতে ধরে রাখা চায়ের কাপটার দিকে একনজর তাকিয়ে পেপারটা ভাজ করে টেবিলে রেখে দেয়। তারপর চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দেয়। সাধারণত মানুষ সকালে চা খেতে খেতে পেপার পড়ে। কিন্তু মিষ্টার আফরান এই কাজটা একদম পছন্দ করে না। খাওয়ার সময় অন্য কোন কাজ তিনি মোটেও পছন্দ করে না। তার মতে, খাওয়ার সময় অন্য কাজ করলে খাওয়ার প্রতি মনযোগ নষ্ট হয়। এতে খাবারের স্বাদ আর তৃপ্তি পাওয়া যায় না। মিসেস সোনালী পাশের চেয়ারে অন্য বসে পড়ে। অন্য চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে চায়ের ছোট ট্রে'টা পাশের টেবিলের উপর রাখে। মিষ্টার আফরান চায়ে আবার চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তা তোমার গুণধর ছেলেটা কবে বাসায় আসবে বলেছে কিছু?
মিসেস সোনালী চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুকটা দিতে যাচ্ছিল। স্বামীর কথা শুনে চুমুকটা না দিয়ে বলল 
- বলল তো পরশু চলে আসবে।
মিষ্টার আফরান বিরক্ত নিয়ে বলল
- এই বয়সের সব ছেলেরা হয় নিজে কিছু করছে, না হয় তাদের বাবার কাজে হেল্প করছে। আর তোমার ছেলে কোন জঙ্গলে কোন মেয়েকে দেখে, এখন পুরো দুনিয়া তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
মিসেস সোনালী বলল
- জঙ্গলে না ট্রেনে দেখেছে। আর এমন করে বলছ কেন। একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে তাকেই তো খুঁজছে। কোন অন্যায় কাজ তো করছে না।
মিষ্টার আফরান রেগে বলল
- হ্যাঁ লেখাপড়া শেষ করে বাপের ঘাড়ে বসে বসে খাচ্ছে আর ঘুড়ছে। কোন অন্যায় তো করছে না। এই তোমার জন্যই না ছেলেমেয়েগুলো মানুষ হলো না। একজন বনে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে মেয়ে খুঁজছে, অন্যজন পাএপক্ষের সামনে পাগল সেজে আমার নাক কাটছে। একজন পড়তে পড়তে গাড়ির নিচে পড়ে যাচ্ছে। আর অন্যজনের পড়ালেখা বাদ দিয়ে, এবাড়ি থেকে ওবাড়ি দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
মিসেস সোনালী কিছু বললেন না। তিরিশ বছরের সংসার তার এই মিষ্টার আফরানের সাথে। সে জানে, এখন সে ভালো কথা বললেও তার স্বামী রেগে যাবেন। তাই, তিনি চুপ করে রইলেন। মিষ্টার আফরান চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে বলল
- তোমার গুণধর বড় মেয়েকে বলো সামনের শুক্রবার আমরা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছি।
মিসেস সোনালী কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল
- রেস্টুরেন্টে কি করতে?


আফরান সাহেব বিরক্ত নিয়ে বলল
- কি করতে আবার ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে, তাদের সাথে দেখা করতে। তোমার গুণধর মেয়ে তো বাসায় পাএপক্ষ আসলে পাগল সেজে বসে থাকে। এবার দেখি ও রেস্টুরেন্টে এতো মানুষের ভীড়ে কিভাবে পাগল সাজে।
কথাটা বলেই চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে রুমের ভেতরে চলে গেল মিষ্টার আফরান। মিসেস সোনালীও ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে চায়ের কাপ দুটো নিয়ে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে …


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব - ০২)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন