উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০২)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৩)

কলেজের সবুজ ঘাসে ঘেরা মাঠের একপাশে বসে টিফিন খাচ্ছে তিন বান্ধবী তূবা, কুহু আর দোলা। কাটা চামিচে টিফিন বক্সে থাকা নুডুলস পেঁচাতে পেঁচাতে কুহু তূবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কিরে, তোর প্রপোজের খবর কিছু বললি না যে।
হাতে থাকা রোলটা ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে দেখতে তূবা বলল
- রিজেক্ট হলে বুঝি কেউ লাফাতে লাফাতে এসে বলে, "জানিস আমি প্রপোজ করার পর উনি আমাকে রিজেক্ট করেছে।"
খেতে খেতে কুহু বলল
- লাফালাফি করতে যাবি কেন? নরমাল ভাবেই বলবি। অবশ্য লাফালাফি করে পা ভাঙলেও খারাপ হবে না। ভাইয়া যেহেতু ডাক্তার। কিছুদিন আদর যত্ন পাবি।
বলেই হেসে দিল কুহু। সাথে দোলাও হাসলো। তূবা বা-হাতটা বা-গালে রেখে বলে
- ওইদিন যেই আদরটা করেছে। তা এখনো ভুলতে পারিনি।
তুবার কথা শুনে দোলা আর কুহু দুজনেই বড় বড় চোখ করে তূবার দিকে তাকায়। তারপর কৌতুহল নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে দোলা জিজ্ঞেস করল
- তুই গালে হাত দিয়ে রেখেছিয়া কেন? ভাইয়া কি তোর গালে আদর করেছে?
কুহু বায়না করার মতো করে জিজ্ঞেস করল
- ভাইয়া তোকে কিভাবে আদর করেছে বল না জানু?
তূবা অসহায় কন্ঠে বলল
- চড় দিয়ে।
তূবার কথা কানে যেতেই কুহু আর দোলা অবাক হয়ে, একসাথে বলল
- কিহহহহহ!
কুহু জিজ্ঞেস করল
- ভাইয়া কেন তোকে চড় মেরেছে? তুই কি করেছিলি? পুরো কাহিনীটা বল না। প্লিজ।
তূবা বোতলের ঢাকনা খুলে তার থেকে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে। ঢাকনাটা লাগাতে লাগাতে বলল
- তাহলে শোন, বৃহস্পতিবার কি হয়েছে।


বৃহস্পতিবার ----------
বিকেলেই মা'কে বলে খালার বাসায় চলে যায় তূবা।তূবাদের বাসার কয়েকটা বাড়ি পরই তার একমাত্র খালা মিসেস মিতালীর বাসা। খালার কোন মেয়ে নেই, একটা মাএ ছেলে। তাই তাকে তার খালা খালু অনেক স্নেহ করে। তার বড় ভাই-বোনদেরও ভালোবাসে। কিন্তু তাকে তাদের থেকে একটু বেশিই ভালোবাসে। সেও তাদের অনেক ভালোবাসে। তাই প্রায়ই সে তার খালার বাসায় থাকে। ইভেন সেখানে থাকার জন্য তার একটা নিজের রুমও আছে। মাসে ৩০ দিনের মধ্যে ১৫ দিন সে নিজের বাসায় থাকে, আর বাকি ১৫ দিন থাকে তার খালার বাসায়। খালার বাসায় থাকার আরো একটা কারন আছে তা হলো তার থেকে প্রায় ১০ বছরের বড়, তার খালাতো ভাই অভ্র। ছোটবেলা থেকেই অভ্র তাকে অত্যধিক মাএায় স্নেহ করে, ভালোবাসে। তার সকল দুষ্ট মিষ্টি আবদার পুরোন করে। এই অভ্রের জন্য তাকে কেউ বকাঝকা করে না। তাকে কেউ বকাঝকা করলে অভ্র রেগে যায়। আর অভ্রকে রাগাতে কেউ চায় না। তা এই জন্য না যে, অভ্রকে সবাই ভয় পায়। আসলে পড়াকু, শান্ত, বুদ্ধিমান, বুঝদার ছেলেটাকে সবাই ভালোবাসে। আর সবাই জানে অভ্রের মতন বুঝদার ছেলে তূবাকে বিপথে যেতে দিবে না। এতো স্নেহ, যত্ন, ভালোবাসা যার থেকে পেয়েছে তাকে ভালো না বেসে সে কি আর থাকতে পারে। সেও তাই ছোটবেলা থেকে তার অভ্র ভাইয়াকে খুব ভালোবাসে। শুধু এখন তার ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আলাদা। আগে তাকে ভালোবাসতো নিজের খেলার সঙ্গী হিসেবে, আর এখন ভালোবাসে তার জীবন সঙ্গীর মতন। ১৬ বছর বয়সে সে তাকে প্রথম প্রপোজ করে। কিন্তু অভ্র তাকে সেদিন ফিরিয়ে দেয় ছোট বলে। বলে তার নাকি তখন ভালোবাসা সম্পর্কে বুঝার বয়স হয়নি। তাছাড়া অভ্র তার থেকে অনেক বড়। কিন্তু তূবা তা মানতে নারাজ। সে ছোট কোথায়? এখন তার বয়স ১৬, আর মাএ ২ বছর পর তার বয়স হবে ১৮। তাছাড়া দাদী বেঁচে থাকতে বলতো, তার নাকি ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছে। সেখানে তো তার বিয়ের বয়স ২ বছর পার হয়ে গিয়েছে। আর দাদীর থেকে দাদা ১২-১৩ বছরের বড় ছিল। সেখানে তো অভ্র তার থেকে মাএ ৯ বছর ৭ মাস ১৫ দিন ২ ঘন্টা ২৭ মিনিটের বড়। তাই সে আবার প্রপোজ করে। কিন্তু সেই একই উত্তর পায়। কয়েকবার প্রপোজ করার পর যখন কোন লাভ হয় না। তখন সে ঠিক করে তার ১৮ বছর হওয়ার আগে তাকে আর সে প্রপোজ করবে না। গত সোমবার তার ১৮ বছর হয়। তাই এই বৃহস্পতিবার সে আবার অভ্রকে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার খালা খালুর ডাইবেটিসের রুগী। ভোরে উঠে নামাজ পড়েই হাটতে চলে যায়। তাই তারা রাত দশটার মধ্যেই খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। আর অভ্র ঘুমায় ১২ টার পর। তাই সে প্ল্যান করে রাত ১১.০০ টায় সে অভ্রের ঘরে গিয়ে তাকে প্রপোজ করবে। যথারীতি, রাত ১০ টায় খালা খালু ঘুমিয়ে পরলে সে সাজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গত দু'বার অভ্র তাকে পিচ্চি বলেছিল। তাই এবার সে শাড়ি পরে প্রপোজ করবে, যাতে তাকে পিচ্চি না লাগে। রাত ১১.২৫ তূবা আস্তে করে রুমের দরজা খুলে রুমের ভিতরে ডুকে। রাত ১১টায় আসাবে বলে ঠিক করলেও শাড়ি পরতে আর খোপা করতে টাইম বেশি লেগে যায়। অভ্র তখন তার রুমের বুক সেলফে একটা বই খুজছিল। দরজা খোলার শব্দ শুনে এতো রাতে তার রুমে কে এসেছে তা দেখার জন্য পিছনে তাকাতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে।
তূবা দারজাটা ভেজিয়ে এসে অভ্রের সামনে হাটু গেড়ে বসে হাতে একটা টকটকে লাল গোলাপ ফুল অভ্রর দিকে উঁচু করে ধরে বলে
- আই লাভ ইউ অভ্র।
অভ্র এখনো তাকিয়ে আছে তূবার দিকে। ফর্সা গায়ে তার ফেভারিট পারপেল কালার শাড়ি। হাটু পর্যন্ত লম্বা চুল গুলো খোঁপা করে তাতে বেলি ফুলের মালা জড়ানো। দুহাতে দু'মুঠো পারপেল কালারের কাচের চুড়ি। চোখে কাজল, ঠোঁট রেড কালারের লিপস্টিক। কানে শাড়ির সাথে ম্যাচ করে একজোড়া পারপেল কালারের পাথরের টপ। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তূবাকে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে টুপ করে একটা পরি তার ঘরে এসে পড়েছে। তূবা অভ্রের এমন চাহনি দেখে লজ্জা পায়। সাথে খুশিও হয়। সে ভাবে, অভ্র এবার তার প্রপোজ নিশ্চয় একসেপ্ট  করবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে অভ্র তার গালে সজোড়ে এক চড় বসিয়ে দেয়। তূবা তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। হাতে থাকা লাল টকটকে গোলাপ ফুলটা গিয়ে পরে খাটের পাশে। গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখ অভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে অভ্রের ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে। চোখ যেন আগুন জ্বলছে। তূবাকে গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকাতে দেখে অভ্রের ও কষ্ট হয়। এই প্রথম তূবার গায়ে হাত তুললো সে। যাকে ছোট থেকে আদরে আল্লাদে বড় করেছে। তার জন্য যাকে কেউ শাসন করেনি। সেই কিনা আজ তার তূবাকে মেরেছে। কিন্তু তাছাড়া আর কিই বা করবে সে। সে তো তূবাকে অনেকবার, অনেকভাবে বুঝিয়েছে। সম্পর্কে সে তার আপন খালাতো ভাই। তাছাড়া সে তার থেকে বয়সেও অনেক বড়। কিন্তু কে শুনে কার কথা। তাই সে একপ্রকার বাদ্য হয়েই তূবাকে মারে। যদিও তূবাকে মেরে তূবার থেকে বেশি কষ্ট সে নিজে পাচ্ছে। কিন্তু না, তাই বলে এই মূহুর্তে তূবার প্রতি কোনো স্নেহ ভালোবাসা দেখানো যাবে না। তাকে কঠোর হতে হবে। তাই তূবাকে বসা থেকে টেনে তুলে বলল
- আর কোনদিন যদি তোর মুখ থেকে এই ধরনের কথা শুনি তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
কথাটা বলেই টেনে হিচড়ে রুম থেকে বের করে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয় অভ্র। কারণ এর থেকে বেশি তূবাকে মারা কিংবা শাসন করা তার পক্ষে সম্ভব না।
বর্তমানে ---------
দোলা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তারপর?


তূবা দোলার দিকে তাকিয়ে বলল
- তারপর আর কি। আমি কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যাই আর সকালে উঠে বাসায় চলে আসি। এই দুইদিন আর ওই বাড়ি যাইনি। ভাবছি কাল যাবো। তার মুডের অবস্থা দেখে পরের চড়টা পাওয়ার ডেট ফিক্সড করতে।
কথাটা বলেই তূবা দাত কেলিয়ে হেসে দেয়। সাথে সাথে কুহু আর দোলাও হেসে দেয়। তূবা কুহুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তা তোর কি খবর?
ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে কুহু বলল
- গাধার প্রেমে পরলে কি আর খবর হবে।
দোলা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল
- কেন? কি হয়েছে?
কুহু বিরক্ত নিয়ে বলল
- আহাম্মকটা কি বলেছে জানিস। আমি বলেছি আপনি কারো সামনে হাসবেন না। আর উনি আমাকে বলে, "কেন? আমি কালো বলে আমাকে হাসলে খুব বাজে লাগে তাই?" বল কেমনটা লাগে। রাগে ইচ্ছা করছিল ওর গলাটা কেটে ফেলি। শুধু আমার ফিউচার বাচ্চা-কাচ্চাগুলো বাপ হারা হয়ে যাবে তাই কিছু বললাম না।
কুহু শেষের কথা শুনে তূবা আর দোলা দুজনেই হেসে ফেলে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে কুহুও হেসে ফেলে।
💞
একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে গাড়ি পার্ক করে, গাড়ির ভিতর ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আয়ান। তার দৃষ্টি স্থির স্কুলের গেটের দিকে। সেখান থেকে খুশি মুখে গার্জিয়ানদের হাত ধরে, তাদের সাথে গল্প করতে করতে বের হচ্ছে ছোট ছোট বাচ্চারা আর টিচার্সরা। কিছুক্ষণ পর গেইট দিয়ে বের হলো একজন টিচার যাকে দেখে আয়ান দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল
- আসসালামু আলাইকুম তিথি মিস।
তিথি চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বলল
- আপনি আজও এসেছেন।
আয়ান অসহায় মুখ করে বলল
- কি করবো তিথি মিস। আপনার ওই চোখ দুটো যে আমাকে সারাদিন ডাকে, না এসে যে থাকা যায় না।
তিথি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
- দেখুন এসব আজেবাজে কথা আমাকে বলবেন না তাহলে কিন্তু,,,,, 
তিথি আর কিছু বলার আগেই, আয়ান তিথির আরও একটু কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল
- তাহলে কিন্তু কি?
হুট করে আয়ান তার এতো কাছে চলে আসায় তিথির অস্বস্তি হয়। সে চুপ করে যায়। আয়ান আবার জিজ্ঞেস করল
- কি হলো বলছেন না কেন?
তিথি এক পা পিছনে গিয়ে বলল
- তাহলে আমি আপনার নামে ইভ টিজিং এর মামলা করবো।
তিথির কথা শুনে আয়ান প্রথমে অবাক হয়ে তিথির দিকে তাকায়। তারপর হা হা করে হেসে বলল
- ইভ টিজিং এর মামলা! লাইক সিরিয়াসলি। 
আয়ানের হাসি দেখে তিথির রাগ উঠে যায়। রেগে গিয়ে আয়ানকে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনি আয়ানের ফোন বেজে উঠে। আয়ান বিরক্ত নিয়ে ফোন রিসিভ করে বলল
- হ্যালো বল।


ফোনের ওপাশ থেকে কিছু একটা বললে আয়ান বলল
- এতো তাড়াতাড়ি! আচ্ছা তুমি রাখ আমি আসছি।
ফোন কেটে তিথির দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলল
- বাই মিস তিথি। কালকে আবার দেখা হবে।
বলেই আয়ান গাড়িতে উঠে তিথিকে হাত নেড়ে টাটা দিয়ে চলে যায়। তিথি বিরক্তিতে বিরবির করে আয়ানকে বকতে বকতে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৪)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন