উপন্যাস : মধুবালা
লেখিকা : ফারজানা আক্তার
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা ফারজানা আক্তারের “মধুবালা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১লা নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
মধুবালা || ফারজানা আক্তার |
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
মধুবালা || ফারজানা আক্তার (পর্ব - ০৯)
শুভ্র ভাই প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দিন। আর কখনো হবেনা এমন।"
"ঠিক আছে ছেড়ে দিবো আগে বল আজ থেকে আবারো আগের মতো তুমি করে বলবি নয়তো চুল যেমন কাটতে বাধ্য করেছিলাম তেমনভাবে হাতটাও ভে'ঙে গুড়িয়ে দিবো।"
শুভ্র ছোঁয়ার হাত মু'চ'ড়ে ধরে রেখেছে। ব্যাথায় কান্না করে ফেলে ছোঁয়া তবুও শুভ্রর মনে একটু মায়া হয়না। পরে আর কোনো পথ না পেয়ে ছোঁয়া শুভ্রর শর্তটা মেনে নেয়। তারপর শুভ্র ছোঁয়ার হাত টা ছেড়ে হনহন করে হেঁটে নিজের রুমে চলে যায়।
আঁড়াল থেকে টিয়া সব শুনে ফেলে। রাগে ফুঁসছে টিয়া। টিয়া আগে থেকেই বুঝতো শুভ্র যে ছোঁয়াকে ভালোবাসে এখন সেটা সন্দেহ থেকে সত্যি হয়ে গেলো টিয়ার কাছে। বুঝতে পারছেনা শুধু ছোঁয়া শুভ্র তাদের মনের অস্পষ্ট ভালোবাসা টা।
টিয়া শুভ্র আর ছোঁয়াকে কিছু না বলে সোজা বেলাল মির্জার কাছে গিয়ে বলে "আঙ্কেল কিছু কথা আছে আপনার সাথে।"
নাজমা বেগমও উপস্থিত আছেন। নিজের বোনের মেয়েকে বউ হিসেবে পাবে বলে বেশ আনন্দিত নাজমা বেগম। যদি বোনের মেয়ে পারে শুভ্রর মনের রা'গ গুলোকে কিছুটা হলেও কমাতে।
বেলাল মির্জা হাতের কাজটা রেখে একটু গলা খাখারি দিয়ে বলেন "বলো মা কি বলবে।"
"আঙ্কেল আমি চাই এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে যাক। নয়তো বেশি দেরি করতে গেলে হয়তো চিরদিনের জন্য হারাতে হবে শুভ্রকে। আমি পারবোনা শুভ্রকে অন্যের সাথে দেখতে তাই প্লিজ তুমি দ্রুত এই বিয়ের ব্যবস্থা করো।"
"কেনো মামনি হঠাৎ করে কি হলো? কি বলছিস এসব তুই?"
নাজমা বেগম কিছুটা চিন্তিত হয়ে প্রশ্নগুলো করেন।
"জানো ফুফি তোমাদের ওই ছোঁয়া আমার শুভ্রর দিকে নজর দিয়েছে। আমার ভয় হচ্ছে ফুফি। ছোঁয়া যদি আমার শুভ্র কে আমার থেকে ছিঁ'নি'য়ে নেয় তবে আমি যে শেষ হয়ে যাবো। যেদিন থেকে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে সেদিন থেকেই আমি শুভ্রকে নিয়ে স্বপ্ন সাজিয়েছি অসংখ্য।"
মির্জা বাড়ির ড্রয়িংরুমে সবাই উপস্থিত আছে শুধু ছোঁয়া ছাড়া। শুভ্র টিয়ার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে। ছোঁয়ার একটুও ইচ্ছে করছে না সবার সামনে গিয়ে নিজেকে আরো বেশি করে অপমানিত করার তাই সে ছাঁদে গিয়ে ফুলগাছের চর্চা করছে। বুকে একরাশ শুন্যতা নিয়ে ফুলবাগানের যত্নে ব্যস্ত ছোঁয়া।
আজ থেকে ঠিক ৭দিন পর শুভ্র টিয়ার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে। শুভ্র সবাইকে বলে কথা আগানোর জন্য তারপর ছাঁদের দিকে পা বাড়ায়। টিয়া শুভ্রর পেঁছনে যেতে চাইলেও লিলি টিয়াকে আঁটকে দেয়। লিলিও চাই ছোঁয়ার ভালোবাসা+স্বপ্ন যেনো পূর্ণতা পায়।
শুভ্র ছাঁদে গিয়ে দেখে ছোঁয়া একটা গোলাপকে বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। গালে কান্নাজলের ছাপ স্পষ্ট। ধুক করে উঠলো শুভ্রর বুকটা হুট করে। তবুও জোর করে মুখে হাসির রেখা টেনে ছোঁয়ার সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে "নে মিষ্টিমুখ কর মধুবালা। আজ থেকে গুনে গুনে ঠিক ৭দিন পর অষ্টম দিনের দিন আমার বিয়ের তারিখ দেওয়া হয়েছে। বলেছিলাম নাহ খুব দ্রুত বিয়ে করে দেখাবো তোকে? একবার জেদ ধরলে এই শুভ্র কখনোই হারেনা।"
শুভ্রর কন্ঠস্বর পেয়ে ছোঁয়া চোখ মেলে তাকায়। শুভ্রর চোখে খুশি চিকচিক করছে। শুভ্রর হাতে একটা চকলেট। ছোঁয়া মুখ ফিয়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে "চকলেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি আমি শুভ্র ভাই।"
খুব অপমানবোধ হচ্ছে ছোঁয়ার। বালা গুলো শেষ পর্যন্ত অন্যের হতে চলেছে এটা ভাবতেই ছোঁয়ার চোখে জল টলমল করে। শুভ্রর মুখে উচ্চারণ হওয়া প্রতিটি শব্দ যেনো ছোঁয়ার হৃদপিন্ডটাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। ছোঁয়াকে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুভ্র ছোঁয়ার খুব কাছে গিয়ে কানে কানে জিজ্ঞেস করে "একটা সময় তো অন্যের চকলেট ছি'নি'য়ে নিয়ে খেয়ে ফেলতি এখন কি হয়েছে? মনটা ভে'ঙে চূ'র্ণ'বি'চূ'র্ণ হয়ে গেছে নাকি?"
"হ্যাঁ ভে'ঙে'ছে আমার মনটা। খুব বাজে ভাবে ভে'ঙে'ছে। কোনদিন ভে'ঙে'ছে জানো? যেদিন তুমি আমার স্বাদের চুলগুলো কে'টে কোমর থেকে পিটে তুলে দিয়েছো। আর সেদিনই আমি নিজের সাথে ওয়াদা করেছি যতদিন না আমার চুল আগের মতো কোমর ছুঁবে ততদিন আমি চকলেট খাবোনা।"
"চকোলেটের সাথে চুলের সম্পর্কে কি আবার? মাথার তাঁর কি ছিঁ'ড়ে গেছে সব তোর?"
"নাহ শুভ্র ভাই। আমার মাথার সব তাঁর ঠিক আছে। আমার জীবনের সবচেয়ে পছন্দের জিনিস ৪টা। তার মধ্যে একটা চুল আরেকটা চকোলেট তাই চুলের জন্য চকোলেটকেও ত্যা'গ করেছি।"
"ওহ্, তো বালা জোড়া কার জন্য ত্যা'গ করেছিস? আর তোর চার নাম্বার পছন্দ রকি তাইনা?"
ছোঁয়া এবার মাথা নিচু করে ফেলে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা। এক হাতে ফোন আর অন্য হাতে গায়ের ওড়না মোট করে ধরে রেখেছে। সেলিনা পারভীনের দেওয়া কসম রক্ষা করার জন্য যে ছোঁয়া বালাজোড়া ত্যাগ করেছে এটা সে শুভ্রকে জানতে দিতে চাইনা। ছোঁয়া মলিন চেহারায় অন্তরীক্ষের দিকে তাকিয়ে ভাবে "আমার চতুর্থ পছন্দ যে শুধু তুমি শুভ্র ভাই। কিভাবে বলি তোমায়? বড় আব্বু যে আমায় পছন্দ করেননা, আর তুমিও তো কখনো ভালো করে একটা শব্দ উচ্চারণ করোনি আমার সাথে তাহলে আমি কিভাবে বুঝবো আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা আছে বিন্দুমাত্রও। আমি যে আর পারছিনা শুভ্র ভাই। খুব ইচ্ছে করছে তোমার বুকে মুখ লুকিয়ে হৃদয়ে জমিয়ে রাখা সব কথা শেয়ার করি তোমার সাথে।"
ছোঁয়াকে আনমনা হয়ে থাকতে দেখে শুভ্রও চুপ হয়ে যায়। শুভ্রর মনেও যে ব্যাথার প্রচন্ড ঢেউ খেলা করছে। হঠাৎ শুভ্রর চোখ যায় ছোঁয়ার বামহাতের দিকে। সকালে শুভ্র ছোঁয়ার হাতের যে স্থানে চেপে ধরেছিলো সেখানে কিছুটা লাল আর কিছুটা কালো হয়ে আছে। শুভ্রর এখন বেশ আফসোস হচ্ছে। এমনটা না করলেও পারতো সে কিন্তু রা'গ কন্ট্রোল করতে যে সে পারেনা। নিজের সব অস্পষ্ট কষ্ট যত্ন করে লুকিয়ে রেখে শুভ্র বলে "ব্যাথার ঔষুধ খেয়েছিস?"
ছোঁয়া হঠাৎ শুভ্রর এমন কথার অর্থ বুঝতে না পেরে অবাক করা দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে। শুভ্র ছোঁয়ার হাত টা ধরে উঁচু করে ওর চোখের সামনে ধরে বলে "হাতে দাগ যেহেতু পরেছে ব্যাথাও হবে নিশ্চয়ই?"
ছোঁয়া কিছু বলতে যাবে তখনই ওর ফোনে কল আসে রকির। রকির নাম টা স্ক্রিনে ভাসতে দেখে শুভ্রর বুকের ভেতর যেনো মো'চ'ড়ে উঠে। রা'গি দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে শুভ্র কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলোনা টিয়ার আগমনে। চোখ বন্ধ করে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করে শুভ্র। ছোঁয়া টিয়ার দিকে তাকিয়ে মুখে মৃদু হাঁসির রেখা টেনে বলে "এক্সকিউজ মি।"
এটা বলেই কল রিসিভ করে ছোঁয়া নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
"প্লিজ রকি যখন তখন কল করিসনা। আমার ভালো লাগেনা।"
"একটা কথা বলতে চাই তোকে ছোঁয়া। প্লিজ ফিরিয়ে দিসনা আমায়। খুব ভয় করছে তুই ফিরিয়ে দিবি ভেবে তাই এতোগুলো বছর তোকে এই কথাটা বলার সাহস পায়নি আমি। কিন্তু আর যে পারছিনা আমি।"
"দেখ রকি তুই কি বলবি সেটা আমি জানি। তানহা আমায় সব বলেছে। তুই কি জানিস তানহা তোকে কতটা ভালোবাসে। শুধু তোর জন্য তানহা রাত জেগে নিজের এসাইনমেন্ট না করে তোর এসাইনমেন্ট করতো, কিন্তু তুই কখনো তা জানার চেষ্টাও করিসনি কারণ তোর ভাবনাতে ছিলাম শুধু আমি অথচ আমার মনে পরছেনা আমি নিজের ক্ষ'তি করে কখনো তোর উপকার করেছি কিনা।
তুই যেমন বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে আমাকে বলতে পারিসনি এতোদিন ঠিক তেমনই তানহাও একই কারণে হৃদয়ের লুকানো কথাগুলো তোকে বলতে পারছেনা। তুই ওকে প্রপোজ কর, খুব সুখী হবি তোরা দেখিস।"
"কিন্তু ছোঁয়া আমি যে তোকে ভালোবাসি, বড্ড বেশি ভালোবাসি।"
"আর আমার সবটা জোড়ে রয়েছে অন্যকারো বসবাস। ভুলে যা আমায়, পারলে তানহার সাথে নতুন করে শুরু করিস জীবনের পথচলা।
আমার আর তোর ফে'ই'ক রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেখার পরই তানহা আমার সাথে সব শেয়ার করেছে। আমি এতোদিন সুযোগের অভাবে বলতে পারিনি।
ভালো থাকিস দোস্ত। আল্লাহ হাফেজ। "
সাথে সাথেই কথাগুলো বলে রকিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছোঁয়া কল কে'টে দেয়।
"হৃদয়ে জমানো অস্পষ্ট ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কিভাবে করতে হয় জানা নেই আমার। চোখ বন্ধ করলেই যার চেহারা ভাসে চোখ খুললেও তার অবয়ব জড়িয়ে ধরে আমায় আর সে কেউ নয় শুধুই তুমি মায়াবতী।
শুন্য বুক তোমার ছোঁয়ায় পূ্র্ণতা পাওয়ার অপেক্ষায়। দিবে কী ধরা? বাসবে কী ভালো?"
লিলির ফোন ঠুং করে উঠতেই সে ফোন হাতে নিয়ে এই মেসেজ টা পড়ে সারপ্রাইজ হয়ে যায় ভীষণ। কে করতে পারে তাকে এমন মেসেজ ভাবতে থাকে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা ফারজানা আক্তারের ডাক নাম ফারজু। তিনি তার জন্মস্থান চট্টগ্রামেই বসবাস করেন। তিনি ২০০০ সালের ২৫ মার্চ জন্মগ্রহন করেন। নিজের সম্পর্কে তিনি তার সোশ্যাল একাউন্টে লিখেছেন, "আমার সম্পর্কে কী আর বলব, আমি নিজেও আমাকে বুঝিনা.. আর অন্য কেউ কীভাবে বুঝবে। নতুন নতুন বন্ধুত্ব করতে খুব ভালো লাগে আমার। তাই কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে তাকে কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনা। আমি বন্ধু নির্বাচন করতে পারিনা, মানুষ চিনতে সবসময় ভুল করি। আর তাই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ঠকেও যাই। আমি একটু না বরং অনেক বেশি রাগী এন্ড জেদি। একটুতেই রেগে যাই আমি, কিন্তু যত দ্রুত রেগে যাই আমি তার থেকে বেশি দ্রুত রাগ কমেও যায় আমার। আর এই দিক দিয়ে তো আমি আমাকে মোটেও বুঝিনা। আমি অনেক মিশুক প্রকৃতির মেয়ে ছিলাম। খুব অল্প সময়ে সবার সাথে মিশে যেতে পারতাম কিন্তু এখন পরিস্থিতি আমাকে বদলে দিয়েছে। এখন চাইলেও সহজে কারো সাথে মিশতে পারিনা। আমার প্রিয় রং আকাশি নীল, সোনালি এবং কালো।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন