উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৪৭তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪৮)
নবনি ফাইলগুলো দেখছে আর কিছু একটা ভাবছে।
নবনিঃ আমি এখানে শুধু অফিস সামলানোর জন্য আসি নাই।আমার কেন জানি মনে হয় আরাফ এর নিখোঁজ হওয়ার কারনটা এই অফিস এর সাথে জড়িত আছে।কারন আরাফ বেশিরভাগ সময় এখানেই থাকতো।আর আরাফাত চৌধুরীকে নিখোঁজ করাটা চাট্টিখানা ব্যাপার না!!
কি হতে পারে! কেউ কি কিডন্যাপ করেছে! কিডন্যাপ করলে বাবা খুজে ফেলতেন এতদিনে। তার মানে কি!!
আরাফ নিজেই নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে??!
Oh! No. আমিতো এটা ভাবি নেই। আরাফ নিজেওতো সবার থেকে আড়াল হতে পারে।কিন্তু কেন হবেন?
_ম্যাডাম আসবো?
একজন আগুন্তক এর ডাকে নবনির ধ্যান ভাংগে।
_Yes.come in.
_ম্যাম। আপনার কফি।
_আমি আনাই নাই।নিয়ে যান।
_ম্যাম।আদর স্যার পাঠিয়েছেন। প্লিজ নিয়ে নিন।
নবনি লোকটার দিকে তাকালো।লোকটা কালো টুপি পড়া।চোখে মোটা চশমা।চশমার জন্য চোখ গুলো দেখা যাচ্ছে না।গাল ভরা দাড়ি।
নবনি কফিটা।নিয়ে নিলো।
নবনিঃআপনি যেতে পারেন।
লোকটা চলে গেলো।নবনি ফাইল গুলো দেখতে লাগলো।
মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছিল।কফিটা আসায় ভালোই হয়েছে।বাবার মতো শশুড় পেয়ে সত্যিই আমি ধন্য।এই ১৫টা দিন উনি না থাকলে আমি কবেই নিঃশেষ হয়ে যেতাম।
নবনি ফাইলগুলো চেক করে অনেক টাকার গরমিল পেলো।এই ১৫ দিনে কর্মচারীরা অনেক টাকা চুরি করেছে।
নবনি ম্যানেজারকে কল করে।
_এখনই আরাফ মানে আমার কেবিনে আসুন। ফাস্ট।
ম্যানেজারঃআসছি ম্যাম।
ম্যানেজার কেবিনে প্রবেশ করতেই নবনি একটা কাগজ এগিয়ে দেয়।তার সামনে।
ম্যানেজারঃএটা কি ম্যাম?
নবনিঃনিজে চেক করে নিন।
ম্যানেজার কাগজ খুলে দেখে নবনি ম্যানেজারকে ফায়ার করে দিয়েছে।
নবনি কেবিন এর বাইরে এসে তানভীরকে উচু স্বরে ডাক লাগায়।তানভীর আরাফ এর পিএ ছিল।এখন নবনির পিএ।
তানভীরঃইয়েস ম্যাম।
নবনি তানভীর এর হাতে কতগুলো এনভোলাপ দিলো।
নবনিঃযাদের নামের এনভোলাপ দিয়েছি তাদের হাতে এনভোলাপগুলো বুঝিয়ে দাও।এখনই এরা বের হয়ে যাবে অফিস থেকে।
তানভীর সবার এনভোলাপ বুঝিয়ে দেয়।সবাই এনভোলাপ খুলে দেখে হতাশ হয়ে যায়।কেউ কেউ রাগে ফেটে পড়ে।
তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে
_আপনি একা অফিস চালাবেন!!আমাদেরকেতো বের করে দিচ্ছেন।
আর একজন বললো~
স্বামীর সম্পত্তির লোভ সামলাতে পারছেন না ম্যাডাম। তাই এমন আচরন করছেন।
আর একটা মেয়ে বললো~
স্যার কি দেখে এই বোরখাওয়ালী মেয়েকে বিয়ে করলেন। আল্লাহই জানেন।বড়লোক দেখে ফাসিয়েছে স্যারকে এই মেয়ে।
নবনিঃহয়েছে?!!আরো কিছু বলবেন?আর কারো কিছু বলার আছে??নবনি কথাটা উচু স্বরে বলে।
আপনি কি বললেন?আমি একা অফিস চালাবো?!!হ্যা।আপনার মতো চোর কর্মচারী রাখার চেয়ে একা অফিস চালানোটা আমার কাছে বেশি লাভজনক।আর আপনি চিন্তা করবেন না।আপনি যে টাকা গুলো চুরি করে এতো বড় বড় কথা বলার সাহস দেখাচ্ছেন।সে টাকাগুলো আমি আদায় করে নিবো।কারন আপনার নামে প্রমান দিয়ে মামলা করে ফেলেছি আমি।
লোকটা এবার চুপসে গেলো।
আর আপনি কি বললেন?আমার স্বামীর সম্পত্তির লোভ আমি সামলাতে পারছিনা??আমার স্বামী আগেই সবকিছু আমার নামে লিখে রেখেছিলেন।তো লোভ আমার করার কথা না।আর করলেই বা কি। আমি আমার স্বামীর সম্পত্তির দিকে তাকিয়েছি।কিন্তু আপনিতো যে প্লেটে খেয়েছেন সেই প্লেটেই ছিদ্র করেছেন।বসের সম্পত্তিতে লোভ দেখিয়েছেন।
নবনি এবার মেয়েটার দিকে তাকালো।
লজ্জা করে না আল্লাহর নাম নিয়ে বাজে কথা মুখ থেকে বের করতে??আল্লাহ পর্দা করার বিধান ফরজ করেছেন আর আপনি সেটা নিয়ে তাচ্ছিল্য করছেন!আবার মুখে আল্লাহর নাম ও নেন।আরাফ আমাকে আমার সিরাত দেখে ভালোবেসেছেন।রূপ দেখে ভালোবাসলে আপনার মতো কুৎসিত মেয়ে তার কপালে জুটতো।আর ছেলেদের ফাসানো আপনার ব্যাক্তিত্ব যেটা আপনার পোশাক দেখে বোঝা যায়।নিজেকে দিয়ে অন্যদের জার্জ করবেন না।
গেট আউট। ফায়ার করা কর্মীগুলো এক এক করে সবাই বেড়িয়ে গেলো।
নবনি~
যারা আছেন ভালো করে কান খুলে কথা গুলো শুনে রাখেন।আরাফ ঘাম রক্ত এক করে এই বিজনেস দাঁড় করিয়েছেন।যারা পরিশ্রম করে এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তারা থাকবেন।আর যারা পারবেন না। গেট খোলা আছে।
কথাগুলো বলে নবনি আরাফ এর কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।
নবনি কেবিনে যেয়ে আদর চৌধুরীকে ভিডিও কল করে। আদর চৌধুরী বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন।
আদর চৌধুরীঃহ্যা মা।সব ঠিক আছে সেখানে?
নবনিঃহুম।মেহরাব আদ্রিতা কি করে?
আদর চৌধুরীঃখেলছে।দাঁড়াও দেখাই।
আদর চৌধুরী ক্যামেরা বাবুদের দিকে ঘুড়ায়।
নবনি দেখে বাচ্চারা খেলছে।ওয়ারদা অনেক শুকিয়ে গিয়েছে।আরাফ যাওয়ার পর থেকে ওয়ারদা এক রাতও ঠিকমতো ঘুমায় নাই।আরাফ প্রতি রাতে ওয়ারদাকে বুকে নিয়ে হাটাহাটি করতো তারপর ওয়ারদা ঘুমাতো। এখন আরাফ এর বুক পায় না বলে ঘুমায় না।সারাদিন হেসে খেলে থাকলেও সারা রাত আরাফ এর জন্য কান্না কাটি করে।
মেহরাব ও আরাফ যাওয়ার পর থেকে খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।হাসি যেন মুছে গিয়েছে তার ঠোঁট থেকে।
নবনি কান্না করলে মেহরাব আদ্রিতাও কান্না করে। বাসায় নবনি এদের সামনে কান্নাও করতে পারে না। বাচ্চা গুলো ছোট হলেও তাদের কাজে ঠিকই বোঝা যায় তারা তাদের বাবা ছাড়া ভালো নেই।
নবনি এদের দিকে তাকালে আরো ভেংগে পড়ে।নবনি কল কেটে দিলো।
কেবিনে আরাফ এর একটা ছোট ছবির ফ্রেম আছে।ছবিতে আরাফ এর হাস্যজ্জ্বল মুখটা ফুটে উঠেছে। নবনি ছবির ফ্রেমটাকে বুকের সাথে চেপে ধরলো।
কেন করলেন?এমন।আপনার কাছে ছোট্ট একটা বায়নাইতো করেছিলাম যে আমি এখন থেকে প্রতিদিন আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো।না পূরন করার থাকলে না করতেন।এভাবে হারিয়ে কেনো গেলেন?কেন আমার ঘুমটুকু কেড়ে নিলেন।কেন আরাফ।
আপনার কি একটুকু মায়া হয় না আমার প্রতি?আপনি জানেন আদ্রিতা যখন সারা রাত আপনার জন্য কান্না করে তখন একজন মায়ের বুকের উপর দিয়ে কি যায়!!আমার বুকটা ছিড়ে যায় আদ্রিতার কান্নার শব্দে।এখন আমি বুঝি কেন সেদিন হাসপাতালে আপনি আমার উপর রাগ করেছিলান।আপনিও এমন কষ্টই অনুভব করেছিলেন।
আচ্ছা এখন কি অনুভব করতে পারছেন না?আদ্রিতার কষ্ট কি আপনার বুকে আঘাতে সৃষ্টি করতে পারছে না।আপনি কি বুঝতে পারছেনা।আপনার আল্লাদি মেয়েটা আপনাকে ছাড়া শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আচ্ছা আদ্রিতারটা না হয় আপনি নাই শুনলেন কিন্তু মেহরাব!!
মেহরাব সবসময় আমাকে বেশি ভালোবাসে আপনি এটা বলতেন তাই না!!আপনি জানেন মেহরাব আপনাকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসে।বাচ্চাটা আমার হাসতে ভুলে গিয়েছে।
সারাদিন আব্বু তা। আব্বু তা ডাকতে থাকে।কিন্তু তার আব্বু নেই।কি জবাব দিবো আমি তাকে??বলেন কি জবাব দিবো?তার বাবা কোথায়?
এসে পরেন না আরাফ।আই প্রমিজ সব কথা শুনবো।যা বলবেন যেভাবে বলবেন সেটাই করবো। আপনি এসে পড়েন। আমার আর কিছুই লাগবে না।
নবনির এই কষ্টগুলো আরাফ এর কেবিন এর চার দেয়ালে মাঝে বিলীন হয়ে গেলো।কেউ জানতে পারলো না নবনির আত্মাও আরাফ এর পিপাসায় কাতর হয়ে আছে।
নবনির কাদতে কাদতে হিচকি উঠে গেলো।
তানভীরঃম্যাম আসবো?
নবনি চোখের পানি গুলো মুছে নিজেকে পরিপাটি করলো।
নবনিঃআসেন।
তানভীরঃম্যাম পানি এনেছিলাম।আপনার পানির জগটা খালি।আসলে ১৫ দিন ধরে কেবিনটা ফাকাতো তাই পানির জগটা ভরা হয়ে উঠে নি।
নবনির বুকটা ধক করে উঠলো।১৫ দিন যাবত কেবিনটা ফাকা।
নবনিঃআরাফ এর রুমের সিসিটিভি ফুটেজ এনে দিতে পারবে?আর পুরো অফিস এর ও।
তানভীরঃজ্বী।একটু সময় লাগবে কিন্তু আমি এনে দিচ্ছি।
নবনিঃআচ্ছা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৪৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন