উপন্যাস : মধুবালা
লেখিকা : ফারজানা আক্তার
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা ফারজানা আক্তারের “মধুবালা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১লা নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
মধুবালা || ফারজানা আক্তার |
৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
মধুবালা || ফারজানা আক্তার (পর্ব - ১০)
প্রথম দেখায় আপনাকে খুব ভালো লেগেছিলো আমার স্যার কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি কখনো। ফেসবুকে সবসময়ই ফলোও করি কিন্তু কখনো একটা মেসেজ দেওয়ার সাহস যোগাতে পারিনি। সত্যিই মনটা বেশ আনচান করে। কিন্তু আপনি যে এভাবে হুট করে মেসেজ দিয়ে বসবেন তা কল্পনার বাহিরে ছিলো। পুরোটাই যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে আমার।
সত্যি সত্যি স্বপ্ন দেখছিনা তো আমি?"
মেসেজটা লিখে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আলিফের নাম্বারে সেন্ড করে দেয় লিলি।
ভীষণ নার্ভাস হয়ে আছে লিলি। বুকটা যেনো অদ্ভুত রকমের অনুভূতিতে ভরে উঠেছে। মুখটা লজ্জায় লালছে হয়ে উঠেছে। ফর্সা মুখটা লালছে রঙে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।
আলিফ মেসেজটা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। আলিফ কখনোই ভাবেনি তার মায়াবীনি তাকে মেসেজের রিপ্লাই দিবে তাও এতোটা সুন্দরভাবে। আলিফের যেনো বিশ্বাস-ই হচ্ছে না।
"স্বপ্ন নয় সত্যি। হৃদয়ের সবটা জোড়ে কিভাবে তুমি মিশে গিয়েছো মায়াবীনি? তুমি কি জাদু জানো?"
"আমার নাম্বারটা কোথায় পেলেন স্যার?"
"কিছু কথা অস্পষ্ট থাক। সব কথা একবারেই বললে পরে বলার মতো কথা খোঁজে পাবোনা যে।"
"বড্ড দুষ্টু স্যার আপনি।"
"তুমিও তো কম নাহ মায়াবীনি। প্রথমদিন-ই আমাকে এলোমেলো করে ছেড়েছো।"
এভাবে চলতে লাগলো আলিফ লিলির বার্তা আদান-প্রদান। দু'জনের মনেই দুজনের জন্য অসীম ভালোবাসার পাহাড়। কিন্তু কে জানে এর পেঁছনেও রয়েছে কোনো রহস্যের গন্ধ।
**********
দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসছে শুভ্রর বিয়ের দিন।
একদিন কে'টে গেছে সাতদিন থেকে। হাতে আছে আর মাত্র ছয়দিন। শুভ্র এখন মোটামুটি সুস্থ। সকালে নাস্তা শেষ করেই শুভ্র বাড়ির সকল ছোট সদস্যকে ডাকে ছাঁদে কিন্তু ছোঁয়া আসেনি। টিয়াও আছে শুভ্রর পাশে। লিলি আর সানিয়া কয়েকবার ডেকেছে ছোঁয়াকে কিন্তু ছোঁয়া বিভিন্ন ব্যাস্ততা দেখিয়ে তা এড়িয়ে গেছে।
সানিয়া খুব উদাস মনে দাঁড়িয়ে আছে রেলিং ঘেঁষে। কাউকে সে তার মনের কথাগুলো বুঝতে দিতে চাইনা তবুও এই টিয়া মেয়েটাকে বড্ড বেশি হিংসা হয় সানিয়ার।
সানিয়ার বড় বোন লামিয়া ইন্টারে পড়ে। লামিয়া মাঝে মাঝে সন্দেহ করে সানিয়ার অদ্ভুত আচরণ শুভ্রর প্রতি কিন্তু কখনোই সে এই সন্দেহকে বাস্তব হতে দিতে চাইনা। তবে আজ সানিয়ার ফেস দেখে লামিয়ার সব বুঝা হয়ে গিয়েছে নিজে নিজে।
শুভ্র সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখে ছোঁয়াকে ডাকতে যায়। টিয়া সাথে যেতে চাইলেও সে নিয়ে যায়না ওকে।
শুভ্র নিচে চলে যাওয়ার পর লামিয়া সানিয়াকে ডেকে ছাঁদের এক কোণে নিয়ে যায়। সোহা টিয়াকে ব্যস্ত রেখেছে এটা সেটা নিয়ে বকবক করতে করতে। আর লিলি তো মগ্ন আলিফ স্যারের ভাবনায়।
"দেখ সানিয়া তোর এই বয়সটা একটা আবেগি বয়স। আমি জানি তুই শুভ্র ভাইকে পছন্দ করিস কিন্তু এটা কখনোই ভালোবাসা হতে পারেনা। আমি তোর দোষ দিবোনা বোন, এটা বয়সের দোষ। তবুও নিজেকে একটু কন্ট্রোল কর প্লিজ। এভাবে মন খারাপ করে থাকিসনা। দেখবি কলেজ লাইফে পা দিলেই শুভ্র ভাইয়ের ভুত মাথা থেকে চলে যাবে তোর।"
"আপা প্লিজ এই কথাটা কারো সাথে শেয়ার করিসনা। আমি জানিনা তুই কিভাবে জানলি কিন্তু সত্যি বলতে আমি নিজেও জানিনা কেনো এতো ভালো লাগে শুভ্র ভাইকে আমার। শুভ্র ভাইয়ের চোখগুলো খুব নেশালো রে আপা।"
"ঠিক হয়ে যাবে সব। চল সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করবি। আর হ্যাঁ চিন্তা করিসনা, কাউকে বলবোনা আমি।"
লামিয়া সানিয়াকে হাত ধরে সবার সাথে গিয়ে দাঁড়ায়। সানিয়ার ফেস আগে থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বোধয়। বোনের কথাগুলো খুব ভালোভাবে বুঝেছে সানিয়া। সানিয়া খুব বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে। সহজেই কঠিন বিষয় বুঝে ফেলে স্বাভাবিক ভাবেই।
************
শুভ্র সিঁড়ি বেয়ে নেমে সোজা ছোঁয়ার রুমে গিয়ে ওর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলে "কী? সেদিন তো ঠিকই একটু কথা কাটাকাটিতে আমার গালে থা'প্প'ড় লাগিয়ে দিতে পেরেছিস চট করে আর আজ সহ্য করতে পারছিস নাহ আমার বিয়েটা অন্যকারো সাথে তাইনা? কিন্তু তোকে যে সহ্য করতে হবে মধুবালা। তোর শুভ্র ভাই তোর বালাজোড়া তোর চোখের সামনেই অন্যের হয়ে যাবে আর তোকে সব সহ্য করতে হবে।"
থতমত খেয়ে যায় হঠাৎ এমনটা হওয়ায় ছোঁয়া। ছোঁয়া নিজের রুমে বসে বসে ফেসবুক স্ক্রোল করছিলো ঠিক তখনই শুভ্র এসে ওর হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে কথাগুলো বলে। ছোঁয়া অনেকক্ষণ চুপ থেকে হাত ঝা'ড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে "আপনি বিয়ে করুন বা যা-ই করুন না কেনো তাতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই বুঝেছেন। কেনো আপনার মনে হয় আমি আপনাকে ভালোবাসি? কখনো বলেছি আপনাকে ভালোবাসি আমি? হ্যাঁ ওই বালাজোড়ার জন্য পাগল ছিলাম আমি কিন্তু এখন আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি। তখন অবুঝ ছিলাম তাই এমন পাগলামি করতাম কিন্তু এখন আমি বড় হয়েছি বুঝ হয়েছে আমার। এখন আর ফা'ল'তু জিনিসের প্রতি লোভ নেই আমার। তাই আপনিও এখন থেকে আমাকে আর মধুবালা ডাকবেননা কারণ ওই বালার প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই আমার আর।"
ছোঁয়া এতো কথা বললেও ছোঁয়ার কোনো কথায় শুভ্রর হ্যালদোল হয়নি। শুভ্র রা'গে ফুঁসছে শুধু ছোঁয়ার মুখে আবারো আপনি শব্দ টা শোনে। শুভ্রর চোখগুলো বেশ লাল হয়ে উঠেছে। কথা থামিয়ে ছোঁয়া কিছুটা ভয়ে একটু পিঁছিয়ে গিয়ে বলে "স সরি শুভ্র ভাই। আর কখনো আপনি বলবোনা।"
"আচ্ছা চল, সবাই ছাঁদে আছে। তুইও চল। সবাইকে শপিং করাবো। সবাই আমার গায়ে হলুদে একইরকম ড্রেস পরবি।"
কথাটা বলেই শুভ্র চলে যায়। ছোঁয়া থ মে'রে যায়। শুভ্র রে'গে গিয়েও কেনো নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো ছোঁয়া বুঝতে পারেনি।
আর শুভ্র যেতে যেতেই একটা দুষ্টু হাঁসি দেয়। ভ'য়ং'ক'র হাসি।
শুভ্র এখনো বুঝতে পারছেনা ছোঁয়া যে ওকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে। শুভ্র মনে করে শুধু বালার জন্যই ছোঁয়া শুভ্রকে বিয়ের কথা বলতো। তাই শুভ্র হাসে, শুভ্র যে ছোঁয়ার থেকে ওর বালা ছি'নি'য়ে ওর সামনেই অন্যের হাতে পরিয়ে দিবে এটা ছোঁয়া সহ্য করতে পারবেনা কখনো। শুভ্র ভালো করেই জানে যতই ছোঁয়া মুখে বলুক ও চাইনা বালাজোড়া আর তবুও এই বালার প্রতি এক অদ্ভুত দূর্বলতা আছে ছোঁয়ার।
ছোঁয়া আর কিছু না ভেবে শুভ্রর পেঁছন পেঁছন যায়।
সবাই মিলে ঠিক করলো নীল ওড়না আর পায়জামা নিবে আর হলুদ জামা নিবে সব মেয়েরা। আর সেটাই হলো।
শুভ্র সবাইকে নিয়ে শপিংমলে চলে গেলো। সেখানে টিয়াকে নিয়ে খুব লাফালাফি করলো শুভ্র ছোঁয়ার সামনে। ছোঁয়ার তা দেখে খারাপ লাগলেও ছোয়া শুভ্রর সামনে কিছু প্রকাশ করেনি। বেশ অভিমান হয় এতে শুভ্রর।
"কেনো ভালোবাসতে পারলিনা তুই আমায় মধুবালা? কোনো আমাকে এভাবে জড়িয়ে নিলি তোর সাথে? তুই ছাড়া যে আর কারো সাথে ঘর বাঁধতে চাইনা আমি। তবে কেনো তুই বুঝিসনা? কেনো এতোটা খামখেয়ালি করিস তুই? কেনো আমাকে একটুখানি ভালোবাসতে পারলিনা তুই? খুব যে ভালোবাসি তোকে?"
টিয়া একটু সামনে এগিয়ে গেলে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করে শুভ্র কথাগুলো।
*************
সারাদিন শপিং করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে লিলি ফ্রেশ হয়ে একটুও বিশ্রাম না করেই কল দেয় আলিফকে। ওদের কথোপকথন এখন মেসেজ থেকে কল পর্যন্ত গড়িয়েছে। বেশ ভালোই সময় কাটে একে অপরের সাথে ওদের।
লিলি আলিফের সাথে কথা বলছিলো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে। লিলি দরজা বন্ধ করতে ভুলে যাওয়ায় ছোঁয়া নক না করেই রুমে ঢুকে যায়।
ছোঁয়া বেশ অবাকই হয়েছে লিলির কথা শোনে। ছোঁয়া বুঝতে পেরেছে লিলি কোনো ছেলের সাথেই কথা বলতেছে কিন্তু ছেলেটা কে সেটা সে এখনো জানেনা।
ছোঁয়া গিয়ে পেঁছন থেকে জড়িয়ে ধরে লিলিকে। হঠাৎ চমকে উঠে লিলি। হাত থেকে পরে যায় লিলির ফোন। ছোঁয়া লক্ষ করলো লিলির ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে আলিফ নামটা। চোখ বড় বড় করে ছোঁয়া লিলির দিকে তাকায়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা ফারজানা আক্তারের ডাক নাম ফারজু। তিনি তার জন্মস্থান চট্টগ্রামেই বসবাস করেন। তিনি ২০০০ সালের ২৫ মার্চ জন্মগ্রহন করেন। নিজের সম্পর্কে তিনি তার সোশ্যাল একাউন্টে লিখেছেন, "আমার সম্পর্কে কী আর বলব, আমি নিজেও আমাকে বুঝিনা.. আর অন্য কেউ কীভাবে বুঝবে। নতুন নতুন বন্ধুত্ব করতে খুব ভালো লাগে আমার। তাই কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে তাকে কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনা। আমি বন্ধু নির্বাচন করতে পারিনা, মানুষ চিনতে সবসময় ভুল করি। আর তাই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ঠকেও যাই। আমি একটু না বরং অনেক বেশি রাগী এন্ড জেদি। একটুতেই রেগে যাই আমি, কিন্তু যত দ্রুত রেগে যাই আমি তার থেকে বেশি দ্রুত রাগ কমেও যায় আমার। আর এই দিক দিয়ে তো আমি আমাকে মোটেও বুঝিনা। আমি অনেক মিশুক প্রকৃতির মেয়ে ছিলাম। খুব অল্প সময়ে সবার সাথে মিশে যেতে পারতাম কিন্তু এখন পরিস্থিতি আমাকে বদলে দিয়েছে। এখন চাইলেও সহজে কারো সাথে মিশতে পারিনা। আমার প্রিয় রং আকাশি নীল, সোনালি এবং কালো।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন