উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৮)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫৯)

নীলার জন্য রিশানদের বাসা থেকে পাঠানো শাড়ি গহনা সব পরে বউ সেজে খাটের উপর বসে আছে নিশা। কি হচ্ছে তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। ভোরে তার মা তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে, নীলা না কি তার অফিসের বসকে ভালোবাসে! আর তাকে বিয়ে করার জন্য মাকে বলে ভোরে বাসা থেকে চলে গিয়েছে। কথাটা শুনে তার সন্দেহ হয়ে। নীলা সব সময় নিজের আগে তার মা বোনের কথা ভাবে। সে এমন কাজ করবে! কখনোই না। তার সন্দেহ আরও শক্তপোক্ত হয়, যখন সে জানতে পারে নীলার সেই বস হচ্ছে তোয়ার বড় ভাই দীপক। তার এখন সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিশ্চয়ই তোয়া তার মা'কে আর বোনকে বলে দিয়েছে যে সে রিশান স্যারকে ভালোবাসে। আর তাই তার বোন ভোরে চলে গিয়েছে। এভাবে তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো তোয়া। খুব রাগ হয় তার তোয়ার উপর। তোয়ার সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু বাসা ভর্তি এতো মানুষ থাকার জন্য তা আর হয়ে উঠছে না।

স্টাডি রুমের দরজার বাহিরে কান পেতে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্তি, তূবা, অভি, চন্দ্রা আর শুভ্র। আর স্টাডি রুমের ভিতরে গম্ভীর মুখে সোফাতে বসে আছে মিষ্টার আফরান। তার পাশে বসে আছে মিসেস সোনালী। মিষ্টার আফরানের ঠিক সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে দীপক আর নীলা। পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে নীলার। ছেলের সুখের কথা ভেবে মিসেস সোনালী হাসিমুখে সব মেনে নিলেও মিষ্টার আফরান কি এতো সহজে মানবে? না মানাটাই স্বাভাবিক। এতো বড় লোকের একমাত্র ছেলের সাথে তার মতো মেয়েকে কি মানায়। এই বুঝি মিষ্টার আফরান মুভির পাজি শশুরদের মতো বলে উঠল, "সামান্য একজন পিএ হয়ে কোন সাহসে তুমি আমার ছেলেকে বিয়ে করেছো। কোন সাহসে তুমি আমার বাড়িতে পা রেখেছ। এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বের হয়ে যাও।" তার ভাবনার মাঝেই গম্ভীর কন্ঠে মিষ্টার আফরান নীলার দিকে তাকিয়ে বললো
- অফিসে আমার সব থেকে পছন্দের এমপ্লয়ি হলে তুমি। তোমার উপর আমার অনেক ভরসা ছিল।


 দীপক মাথা নিচু করে অপরাধী কণ্ঠে বললো
- বাবা ওর কোন দোষ নেই। আসলে আমি ,,,,,,,
মিষ্টার আফরান রাগী চোখে দীপকের দিকে তাকিয়ে ধমকে বলল
- তোমাকে আমি কথা বলতে বলেছি! চুপ থাক তুমি।

নীলার এবার ভয়ের সাথে সাথে অপরাধবোধও হচ্ছে। কতো স্নেহ করতো মিষ্টার আফরান তাকে। তার ফ্যামিলির অবস্থা জানার পর তার স্যালারিও বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর সে ,,,,,, । পুনরায় নীলার ভাবনার মাঝে মিষ্টার আফরান জিজ্ঞেস করল
- তুমি এতো কর্মঠ মেয়ে হয়ে এমন একটা অকর্মার ঢেঁকিকে কিভাবে বিয়ে করলে? এই ছেলে তো নিজের অফিসের দায়িত্ব পালন করতে পারো না। তোমার দায়িত্ব পালন করবে কিভাবে?

মিষ্টার আফরানের কথা শুনে নীলা নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। আবাক চোখে মিষ্টার আফরানের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। মিষ্টার আফরানের যেখানে তাকে বলার কথা, যে সে তার ছেলের যোগ্য না। সেখানে সে নিজের ছেলেকে তার অযোগ্য বলছে? মিসেস সোনালী ছেলের পক্ষ নিয়ে বললো
- বিয়ের আগে ছেলেরা একটু বেখেয়ালি হয়। বিয়ে করেছে এখনো সব ,,,,,, 

মিসেস সোনালীকে কথা শেষ করতে না দিয়ে, মিষ্টার আফরান রাগী কন্ঠে মিসেস সোনালীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আমি কি বিয়ের আগে বেখেয়ালি ছিলাম?


মিসেস সোনালি উত্তর দেয় না চুপ করে থাকে। উত্তর দেওয়ার মতো কিছু নেইও। কারণ ভার্সিটিতে পড়ার সময় থেকে মিষ্টার আফরান বাবার বিজনেসে জয়েন করে। আর সে জয়েন করার পর থেকে তাদের বিজনেসে এতো উন্নতি হয়। মূলত তার কারণেই তাদের বিজনেস আজ দেশের টপ ফাইবে আছে। মিষ্টার আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো
- আমি বিয়েটা মেনে নিবো তবে আমার শর্ত আছে। 

নীলার ভয়টা আবার বেড়ে যায়। নিশ্চয়ই মিষ্টার আফরান এখন তাকে কোন কঠিন কাজ করতে বলবে। মিসেস সোনালী স্বামীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি শর্ত।

মিষ্টার আফরান দীপকের দিকে তাকিয়ে বললো
- তোমাকে আমি ছয় মাস সময় দিলাম। এই ছয়মাস আমি তোমার সব কাজের উপর নজর রাখবো। ছয়মাস পর যদি আমার মনে হয় যে, তুমি অফিসের সব দায়িত্ব নিজে একা সামলাতে পারবে। তাহলে আমি নীলার সাথে তোমার বিয়ে দিবে। আর যদি ছয়মাস পর আমার মনে হয় যে, তুমি অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্য না। তাহলে আমি নিজে থেকে নীলার অন্য যায়গায় বিয়ে দিব।

মিষ্টার আফরানের কথা শুনে রুমে এবং দরজার বাহিরে দাড়ানো সবাই অবাক হয়ে যায়। শুভ্র ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- বেচারা দীপক ভাই।
অভি একটা ঢোক গিলে বললো
- দীপকেরই এই অবস্থা। যদি শশুড় আব্বা জানতে পারে আমি তার মেঝো মেয়েকে জোর করে বিয়ে করেছি। তাহলে আমার না জানি কি অবস্থা করে। আল্লাহ বাঁচাও।


অভির কথা শুনে শুভ্র, তূবা, চন্দ্রা, দীপ্তি মুখ টিপে হাসে। মিসেস সোনালী আবাক হয়ে বলল
- কি বলছো এগুলো তুমি!

দীপক জানে মিষ্টার আফরান যেহেতু এই সিদ্ধান্ত একবার নিয়েই নিয়েছে তাহলে এখন তার এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই মাথা নিচু করেই শান্ত কন্ঠে বললো
- বাবা, আমি তোমার শর্তে রাজী।

দীপকের কথা শেষ হতে না হতেই মিষ্টার আফরান বললো
- আমার আরও শর্ত আছে। তোমার কার্ডগুলো আর গাড়ির চাবি দেও।

দীপক পকেট থেকে তার ডেভিড কার্ড, কেডিট কার্ড আর গাড়ির চাবি বের করে তার বাবাকে দেয়। মিষ্টার আফরান জিজ্ঞেস করল
- ক্যাস কতো টাকা আছে তোমার কাছে?

দীপক একটু ভেবে উত্তর দিল
- আট-দশ হাজারের মতো হবে।

মিষ্টার আফরান বলল 
- তুমি এই ছয়মাস এই বাড়িতে থাকবে না। 
মিসেস সোনালী বিস্মিত চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুমি আমার ছেলেকে বাসা থেকে বের করে দিচ্ছ?


মিষ্টার আফরান মিসেস সোনালীকে উত্তর দিল
- নাহ। শুধু ছয়মাস ও বাড়ির বাহিরে থাকবে। নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য।

তারপর দীপকের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো
- তোমার কার্ড গুলো আর গাড়ি এই ছয়মাস তুমি পাবে না। তোমাকে প্রতিমাসে অফিস থেকে দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এটা দিয়েই তুমি অফিসে যাওয়া আসা সহ তোমার থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ চালাবে।

মিসেস সোনালী পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- এতো অল্প টাকা দিয়ে ছেলেটা কিভাবে চলবে?
মিষ্টার আফরান বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল
- এমন অনেক মানুষ আছে যারা এই টাকা দিয়ে তাদের পুরো সংসার চালায়।

তারপর নীলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- নীলা তোমার এক্সাম কবে?

নীলা বুঝে উঠতে পারছে না মিষ্টার আফরানকে ঠিক কি বলে সম্মোধন করবে স্যার, আংকেল না কি বাবা। সে এতোদিন মিষ্টার আফরানকে স্যার বলে এসেছে। এখন সে সম্পর্কে তার শশুর। কিন্তু সম্পর্কটা তো এখনো ঠিক হয়নি। তাই সে স্যার বলাই ঠিক বলে মনে করলো। মাথা নিচু করে নম্র সরে উত্তর দিল
- আড়াইমাস পর স্যার।


মিষ্টার আফরান আদেশের সুরে বললো
- এই আড়াইমাস তুমি কোন জব করবে না। তোমার মাস্টার্স শেষ হলে তোমার যদি ইচ্ছা হয় তাহলে আমাদের অফিসে জয়েন করবে। আর ইচ্ছে না হলে নেই। তোমাকে কেউ জোড় করবে না। আর হ্যাঁ এখন তুমি আমার এমপ্লয়ি না, আমার ছেলের বউ। আমাকে বাবা বলে ডাকবে। 

নীলা মনে মনে ভাবছে আসলে সে কি তার শশুরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, নাকি দীপকের শশুরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টার আফরান দীপকের উদ্দেশ্য বললো
- যাও একঘন্টার মধ্যে তোমার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে তুমি বের হয়ে যাও।
মিসেস সোনালী আমতা-আমতা করে বললো
- বলছিলাম কি আজকে তো বিয়ে হলো আজকে দিনটা থেকে কালকে সকালে ,,,,,,,
মিষ্টার আফরান গম্ভীর কন্ঠে বললো
- নাহ। আজকে এখনই যাবে ও।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৬০)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন