উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৯)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৬০)
একজন মহিলার কন্ঠস্বর শোনা যায়, মহিলাটি আফসোসের কন্ঠে বললো
- তোর কপালটাই খারাপ শিখা। বড় মেয়েটা কত সুন্দরী ছিল। মাশাল্লাহ দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যেত।
তারপরই শোনা যায় মিসেস শিখার কন্ঠস্বর। তিনি বললো
- এমন কথা বলছো কেন বড় আপা। নিশা খুব ভালো মেয়ে, লেখাপড়ায়ও খুব ভালো, খুব ভালো রান্নাবান্নাও করতে পারে। শুধু গায়ের রঙটা একটু চাপা। তো কি হয়েছে চেহারা তো অনেক মায়াবী।
প্রথম মহিলাটির কন্ঠস্বর পুনরায় শোনা গেল, সে বললো
- মনে কর তুই বাজারে গেলি কমলা কিনতে। পাশাপাশি দুই লোক কমলা বিক্রি করছে। তো এক লোকের ঝুড়ির কমলাগুলো দেখতে টাটকা আর অন্য লোকের ঝুড়ির কমলা গুলো দেখতে বাসী। তো তুই কোন লোকের কাছে যাবি? অবশ্যই টাটকা কমলানওলায়া লোকের কাছেই যাবি। ঠিক তেমনি, আগে তো মানুষ গায়ের রঙটাই দেখে। পরেই না চেহারা।
অন্য একটা মহিলা কন্ঠস্বর বললো
- ওকে বুঝিয়ে লাভ নেই বড় আপা। দেখ গিয়ে ওকে বোকাসোকা পেয়ে, সুন্দরী মেয়েকে দেখিয়ে একে গছিয়ে দিয়েছে। আমাদের রিশানটা দেখতে কতো সুন্দর, কতো বড় চাকরি হয়েছে তার। এর থেকে কতো ভালো জায়গায় তার বিয়ে করাতে পারতি। তা রেখে কি এক মেয়েকে বিয়ে করিয়ে আনলি। একে কি রিশানের পাশে মানায়।
মিসেস শিখা পুনরায় বললো
- তেমন কিছু না ছোট আপা। রিশান ,,,,,,,
আর শুনতে পায় না নিশা, কেউ রুমের একটু খোলা দরজাটা টেনে লাগিয়ে দিয়েছে। রিশানের রুমে তার প্রিয় ফুল কাঠগোলাপ দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো খাটের উপর বসে আছে সে। তার কতো স্বপ্ন ছিল কাঠগোলাপে সাজানো বাসরে বউ সেজে তার প্রিয়তমের অপেক্ষায় বসে থাকবে সে। এখনো তাই আছে। কিন্তু তবুও, তার মুখে কোন হাসি নেই, নেই কোন আনন্দ। উল্টো তার এখন নিজেকে অপরাধী স্বার্থপর মনে হচ্ছে। এই বিয়ের শাড়ি, এই গহনাগাঁটি, এই কাঠগোলাপে সাজানো বাসর সবই তো তার বোনের জন্য। তার মতো নীলারও যে কাঠগোলাপ খুব পছন্দ। নিশ্চয়ই নীলা বলেছিল, তার প্রিয় কাঠগোলাপ দিয়ে খাট সাজাতে। তাই রিশান সাজিয়েছে। নিজেকে খুব নিকৃষ্ট বলে মনে হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে সকালে তার ফুফুর বলা কথাগুলোই ঠিক। তার জন্মই হয়েছে তার বড় বোনের সুখ কেরে নেওয়ার জন্য। জন্মের পর পর তার বোনের মাথার উপর থেকে বাবার ছায়া কেরে নিয়েছে, হাসিখুশি জীবন কেরে নিয়েছে আর এখন কেরে নিয়েছে তার পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গী। সত্যিই সে একটা অলক্ষী। তার বোনের জীবনের অভিশাপ সে।
রাতের বেলা দুইজন যুবক আহাম্মেদ ভিলার দেয়াল টপকে বাগানে নামলো। বাগানের লাইটের আলোতে তাদের মুখ স্পষ্ট হয়। যুবক দুজন আর কেউ না দীপক আর অভি। মলিন কন্ঠে দীপক বললো
- কি কপাল আমার নিজের বাবার ভয়ে নিজের সদ্য বিয়ে করা বউয়ের সাথে দেখা করতে, এই রাতের বেলায় চোরের মতো নিজেরই বাসার দেয়াল টপকাতে হচ্ছে।
অভি আফসোসের সুরে বললো
- তবুও তো তোর কপালে বউয়ের ভালোবাসা আছে, আমার কথাটা ভাব।
- শালা করেছিস কেন আমার বোনকে জোর করে বিয়ে। একদম ঠিক আছে।
- শুধু নিজের বোনের দিকটাই ভাবলি, আমার কথা দিকটা ভাবলি না। শালা এক চোখা কোথাকার। আমার শশুর আব্বা একদম ঠিক করেছে। থ্যাংক ইউ শশুর আব্বা। লাভ ইউ।
দীপক দাত কেলিয়ে হেসে বললো
- আচ্ছা তাই, ডাক দেই তোর পেয়ারে শশুর আব্বারে। বলি তুই তার মেঝ কন্যারে জোর করে বিয়ে করেছিস।
অভি ভাব নিয়ে বললো
- দে ডাক। তবে ডাক দেওয়ার আগে মনে রাখিস। বর্তমানে আমার আর তোর অবস্থা সেইম।
দীপক মুখ বেজার করে বললো
- কপাল, সবই আমার কপাল।
দীপকের কথা শেষ হতে না হতেই পকেটে রাখা ফোনটা বো বো করে ভাইব্রেট করতেই করে উঠে। ফোনটা পকেট থেকে বের করে রিসিভ করে বললো
- হ্যাঁ দীপ্তি বল।
ফোনের ওপাশ থেকে দীপ্তি বললো
- পাঁচ মিনিটের মধ্যে রুমে চলে যা। আমি ফোন করলেই তুই আর অভি ভাইয়া চলে আসবি।
দীপক হাসি মুখে বললো
- ওকে ম্যাম।
নিজের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শেরওয়ানির পকেটে হাত দিয়ে, দেখে নেয় পকেটে রাখা লকেটটা ঠিক আছে কি না। খুব শখ করে বাসর রাতে নিশাকে পরিয়ে দিবে বলে, এই সোনার লকেকটা আজকে সকালে গিয়ে কিনেছে সে। তার মায়াবিনী এখন তার স্ত্রী। আজ থেকে আর তাকে দূর থেকে লুকিয়ে দেখতে হবে না, তাকে দেখার জন্য ভার্সিটিতে যাওয়ার প্রহর গুনতে হবে না । এখন সে তার মায়াবিনীকে যখন ইচ্ছা তখনই দেখতে পারবে। দূর থেকে নয়, খুব কাছ থেকেই দেখতে পারবে। ইচ্ছে হলেই ছুয়ে দিতে পারবে তার মায়াবিনীকে। আর তর সইছে না রিশানের। এখনি সে দেখতে চায় কাঠগোলাপের রাজ্যে, বউ সেজে বসে থাকা তার মায়াবিনীকে। দরজার লক ঘুরিয়ে দরজা খুলে রুমে ঢুকে রিশান। রুমে ঢুকে দরজা লক করে হাসি মুখে পিছনে ঘুরে, হাসি মুখেই খাটের দিকে তাকায় সে। খাটের দিকে তাকিয়েই রিশানের মুখের হাসি সরে, কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। খাটের মধ্যে নিশা নেই। আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজে, কিন্তু নিশা রুমে নেই। বারান্দায় গিয়ে খোঁজে, বারান্দায়ও নেই। কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হয়। কোথায় গেল তার মায়াবিনী? রুমেই তো থাকার কথা, অন্যকোন রুমে আছে না কি? একবার দেখে আসবে সে? কথাটা ভেবে যেই দরজার দিকে পা বাড়াবে, তখনই ওয়াসরুমের দরজা খুলে বের হয় নিশা। শ্যামলা গায়ে লাল রঙের নরমাল একটা সুতির থ্রিপিস পরা, গায়ে না আছে কোন গহনা আর না আছে মুখে কোন মেকাপ। রিশান কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হয়। নিশার প্রিয় ফুল কাঠগোলাপ। কথাটা জানার পর, সে কতো আশা নিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাঠগোলাপ ফুল দিয়ে এই খাটটা সাজিয়েছে। নিশাকে তার প্রিয় কাঠগোলাপ ফুলের রাজ্যে রানী সেজে বসে থাকতে দেখবে বলে। আর দুটো মিনিট অপেক্ষা করতে পারলো না। মনঃক্ষুণ্ন হলেও মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- তুমি এখানে, আমি তোমাকে খুঁজছিলাম।
- কেন স্যার কিছু বলবেন?
নিশার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হয় রিশান। সেদিকে খেয়াল না করে বা রিশানের উত্তরের অপেক্ষা না করে, নিশা আবার বললো
- আমাকে কিছু বলতে হবে না স্যার। আমি আপনার জীবনের কাটা হয়ে থাকবো না। ছয়মাস পরেই আপনাকে আমি মুক্তি দিয়ে চলে যাবো।
রিশান কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- মুক্তি দিবে মানে?
- আপনাকে ডিভোর্স দিবে!
বিস্মিত কন্ঠে রিশান প্রশ্ন করল
- কি?
- আপনি তো আপুকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, তা তো আর হলো না। আমি আপুর হয়ে সরি বলছি।
- আসলে নিশা নীলাকে আমি বিয়ে ক ,,,,,,,
রিশানকে কথা শেষ করতে না দিয়ে, নিশা বললো
- আপনাকে কোন কৈফিরত দিতে হবে না, আমি বুঝেছি।
- নিশা তুমি ভু ,,,,,,
আবার রিশানকে কথা শেষ করতে না দিয়ে, নিশা বললো
- প্লিজ স্যার। আমি বললাম তো আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
- কিন্তু আমি চাই না তোমার ডিভোর্স। নিশা আমি তোমার সাথে সংসার করতে চাই।
নিশা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো
- দয়া করছেন আমার উপর। আমি আপনার দয়া, মায়া, করুণা কিছুই চাই না।
রিশান নিজের দুই হাতে নিশার দুই বাহু ধরে শান্ত কন্ঠে বললো
- নিশা আগে আমার কথাটা শোন।
নিশা এক ঝটকায় রিশানের দুই বাহু ছাড়িয়ে বললো
- ছাড়ুন আমাকে। আমার কিছু শোনার নেই। আমি বলেছি আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।
রিশান রাগী কন্ঠে বললো
- ডিভোর্স ডিভোর্স ডিভোর্স। খুব শখ হয়েছে তোমার আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার না। আমিও দেখবো তুমি কিভাবে আমাকে ডিভোর্স দেও।
বলেই রিশান নিশাকে টেনে নিয়ে খাটে ফেলে দেয়। যেই রাতটা সুন্দর হয়ে কথা ছিল, যেই সময়টা মধুর হওয়ার কথা ছিল। নিশার বোকামি আর রিশানের রাগে তা বিষাদে পরিনত হয়।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৬১)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন