উপন্যাস : তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৩৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৩৯)
নেহা কফির মগটা সাইড টেবিলে রেখে মেহরাবকে ডাক দিলো।মেহরাব তবুও উঠছে না।
নেহাঃকি ঘুম দিয়েছে রে ভাই। উঠছেই না।গায়ে হাত দিয়ে কি উঠাবো?নাকি চলেই যাবো?না উঠালে তো বাইরে যাবে না।না গেলে আমার কাজটাও আটকে থাকবে।
নেহা মেহরাবের কাধে হাত রেখে ডাকলো।ডাকার সাথে সাথে মেহরাব নেহার হাত ধরে টান দিলো।নেহা মেহরাবের গায়ে যেয়ে পড়লো।
মেহরাবঃঘুমাতে দাও নূরপাখি।নিজেও ঘুমাও।
নেহাঃবাহ!!ঘুমেও বউকে মনে করছে আর এই লোক নাকি তাকে ঘৃনা করে।
কিন্তু আমাকে এভাবে ধরছে কেন!!এই এই ছাড়ুন আমাকে।আমি নূর নই।আমি নেহা।শুনছেন?
মেহরাব আড়মোড় ভেঙে নেহাকে আরো জাপটে ধরে ঘুমাচ্ছে।
মেহরাবঃঘুমাতে দাও না নূর পাখি।বিরক্ত করো না তো।বিরক্ত করলে কিন্তু শাস্তি পাবে।
নেহাঃআরে।শুনছেন?আমিই নেহায়ায়া।নূর ম্যাম নায়ায়া।
মেহরাব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।শীতের সকালে সবারই এমন মিষ্টি ঘুম আসে।মেহরাব ও সেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছে না।নেহার মাথা মেহরাবের বুকে।মেহরাব এর হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন নেহা অনুভব করতে পারছে।নেহা মনের অজান্তেই মুচকি হেসে দিলো।
নেহাঃআপনাকে খুব পরিচিত মনে হয় মেহরাব।আপনার কাজ গুলো করতে মনের অজান্তেই ভালো লাগা কাজ করে।আপনার রাগে স্পষ্ট ভালোবাসা খুজে পাই আমি।কিন্তু সেটার অধিকারীনী আপনার থেকে অদূরে বসে আছে।
প্রথমদিন আপনাকে যেমন ভেবেছিলাম আপনি মোটেও সেরকম না।এখানে আসার পর খুব ভালো করে অনুভব করতে পেরেছি আপনার স্ত্রী ছেড়ে যাওয়াটাই আপনাকে রাগী একগুয়ে করে ফেলেছে।
প্রিয় মানুষ হারানোর কষ্ট খুব তীঘ্ন।একদম বুকে লুকিয়ে থাকা ধারালো ছুড়ির মতো।একটু একটু করে আঘাত করবে।আবার সেই আঘাতকে বারংবার খোচা দিয়ে তাজা করে ফেলবে।আমার বাচ্চাটাকে হারিয়ে আমি এই ব্যাথা গুলো অনুভব করেছিলাম।
নেহার চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।মেহরাব এর বুকে ভিজা অনুভব হচ্ছে।মেহরাব ঘুমের ঘোরেই বিড়বিড় করছে। (মনে মনে)
মেহরাবঃকান্না করার জন্য কি আমার বুকই পাও।ঠান্ডায় তো আরো ঠান্ডা লাগবে।তারপর তোমাকে দিয়েই গরম হবো বলে দিলাম।
নেহা হেসে দিলো।
নেহাঃআপনিই আমার মেহের হলে ভালো হতো মেহরাব চৌধুরী।
মেহরাবের ফোনের এলার্মটা ধুম করে বেজে উঠলো। এ যেন এলার্ম না।এমবুলেন্সের হর্ন। নেহা কিঞ্চিৎ কেপে উঠলো শব্দে।মেহরাব লাফ মেরে উঠে গেলো।নেহা ঝটপট সরে আসলো।
মেহরাব উঠে চোখ কচলাচ্ছে।ঘোলা ঘোলা চোখে একটা মেয়েকে দেখতে পাচ্ছে।মেয়েটার চোখ গুলো একদম নূরের মতোন।মেহরাব ভালোভাবে চোখ মুছলো।
নেহার চশমাটা নিচে পড়ে গিয়েছিলো।নেহা মাটিতে থেকে চশমাটা তুলে পড়ে নিলো।
মেহরাব এই বার পরিষ্কার চোখে দেখলো নেহা সামনে বসে আছে।
মেহরাবঃআপনি এখানে?আমার বেডে বসার সাহস কি করে পান?উঠেন। স্টান্ড আপ আই সেইড।
নেহা ধমকে কেপে উঠলো।নেহা উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।
নেহাঃআপনার কফি। কথাটা বলে নেহা চলে গেলো।
মেহরাবঃএই মেয়ে দাড়ান।
নেহার পা থেমে গেলো।
মেহরাবঃকফিটা নিয়ে যান।৩৫ মিনিট পড়ে আনবেন।মনে থাকবে?
নেহাঃকেন?
মেহরাবঃএতো বকা খায় তারপরও ফিরতি প্রশ্ন করাই লাগবে। (মনে মনে)
কারন আমি গরম ধোঁয়া উঠানো কফি খাই।আর এখন গোসল করে রেডি হতে হতে এটা শরবত হয়ে যাবে।
নেহাঃএমনেই তো অলটাইম গরম থাকেন। আবার গরম কফি খাওয়া লাগে নাকি!
নেহা কথাটা আস্তে আস্তে বললেও মেহরাবের খরগোশের মতো কানে ঠিকই পৌছালো।
মেহরাব এক ভ্রু উচু করে জিজ্ঞেস করলো
মেহরাবঃকি বললেন?
নেহাঃবললাম যে মোবাইলের এলার্মে মানুষ হার্ট এট্যাক করতে পারে।এটার ভলিউম একটু কমান।
মেহরাবঃআপনি ছাড়া মানুষতো কি কোনো পশুও আমার আশে পাশে ঘেষে না।হার্ট এট্যাক করলে আপনিই করবেন।আর তাতে আমার কোনো যায় আসে না।
মেহরাব টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে ধুম করে দরজা আটকে দিলো।
নেহাঃকি হলো এটা!!আমাকে মেরে ফেলার নতুন পঁয়তারা করছে এই লোক।বদ বেটা।
নেহা ধুপ ধাপ পা ফেলে সেখান থেকে চলে গেলো।
আদ্রিয়ানের চোখ খুলতে আদ্রিয়ান নিজেকে সমুদ্রের বালুর উপরে পায়।
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে উঠে বসে।শীতের সকাল বলে আশেপাশে তেমন একটা মানুষ নেই।ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে চারিপাশ।আদ্রিয়ান হোটেলের দিলে পা বাড়ালো।
রুমের এক্সট্রা কি দিয়ে লক খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো।তিথি কম্বল গায়ে দিয়েও শীতে গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।আদ্রিয়ান গায়ের জ্যাকেটটা খুলে তিথি উপর দিয়ে দিলো।তারপর পাশে যেয়ে শুয়ে পড়লো।আদ্রিয়ান এর ঠান্ডা পা তিথি পায়ে লাগতেই তিথি কপাল কুচকে চোখ খুললো।
তিথিঃহয়ে গিয়েছে সমুদ্রবিলাস?
আদ্রিয়ানঃহুম।তুমি গিয়েছিলে নাকি দেখতে?
তিথিঃবারান্দা থেকে দেখা যায়।আমার বয়েই গিয়েছে দেখতে যাবো।
আদ্রিয়ানঃহা হা হা।ভালোই হয়েছে যাও নাই।বাইরে অনেক শীত।কুলফি জমে যেতো তোমার।
তিথিঃহুম।
আদ্রিয়ান তিথির হাত ধরলে। তিথি হাত ছাড়িয়ে নেয়।এই ঠান্ডা হাত দিয়ে ধরবেন না তো আমাকে।
তিথি ঘুরে শুয়ে পড়লো।আদ্রিয়ান ও অন্য পাশ ঘুরে ঘুমিয়ে পড়লো।
মেহরাব গরম ধোয়া উঠা কফি পানির মতো পান করছে।আর নেহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নেহাঃএতো গরম কফি কি করে পান করে মানুষ!!(মনে মনে)
মেহরাবঃদাড়িয়ে আছেন কেন?
নেহা চলে যায়।নেহা যেতেই মেহরাব ২ এ ২ এ ২২ হিসাব করছে।
মেহরাবঃকফির টেস্ট একদমই নূর পাখির মতো।আচার আচরণ ব্যবহার সব নূরের মতো।সকালে যে চোখ গুলো দেখলাম সেটা কি নূরের ছিলো!নাকি স্বপ্ন দেখলাম?!
আচ্ছা এনি হাউ কি নেহা নূর হতে পারে?!কিন্তু গলার স্বরতো নূরের না।তাহলে নূর হলে গলার স্বর কি করে পরিবর্তন হতে পারে!!?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন