উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৭)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫৮)
দীপ্তির অফিসটা মূলত বাইশ স্কোয়ার ফিটের একটা ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটটায় আছে চারটা বেড রুম, একটা ড্রয়িং রুমে , একটা ডাইনিং রুম, কিচেন, দুইটা বারান্দা, তিনটা বাথরুম। মাস্টার-বেডরুমে শুভ্র থাকে। সেখানে একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা আলমারি আর একটা খাট আছে। অন্য একটা রুমে মাঝে কাজের বেশি চাপ হলে চন্দ্রা আর দীপ্তি থাকে। সেখানেও একটা ড্রেসিং টেবিল, একটা আলমারি আর একটা খাট আছে। এই দুই রুমের সাথেই এটাচ করা দুটো বারান্দা আর দুটো বাথরুম। আর একটা বাথরুম ড্রয়িংরুমে। বাকি দুটো রুমই মধ্যে একটা সেই সাউন্ড প্রুফ রুমটা আর একটা স্টাডি রুম। যেখানে তাদের প্রয়োজনীয় বই, খাতা, ফাইল সব খুব সুন্দর করে দেয়ালের সাথে এটাচ করা বুক সেলফে সাজানো আছে। একটা টেবিল, তিনটা চেয়ার আর একটা হোয়াই বোর্ডও আছে। ডায়নিং রুমে চার চেয়ারে একটা ডায়নিং টেবিল আর একটা ফ্রিজ। ড্রয়িং রুমে শুধু এক সেট সোফা আর একটা স্মার্ট টিভি। এতোক্ষণ তাড়া ড্রয়িংরুমে বসা ছিল। অভির কথা শুনে দীপক দীপ্তিদের রুমের দিকে পা বাড়ায়। দীপ্তির ইশারায় সেই মেয়েটাও উঠে দীপকের পিছন পিছন যায়। রুমে গিয়ে দীপক খাটের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটার উদ্দেশ্য বললো
- বসো।
মেয়েটা গিয়ে আস্তে করে খাটে উপর বসে। দীপক ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলে গিয়ে বসে। দুই হাটুর উপর দুই কুনই দিয়ে ভর দিয়ে মাথা নিচু করে, স্থীর দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকে সে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মাথা উঁচু করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল
- আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো। জানি এখন আমি যে কথাগুলো বলবো সে কথাগুলো যে ব্যাক্তি কিছুসময় পর তোমার স্বামী হবে তার কাজ থেকে শুনতে তোমার ভালো লাগবে না। কিন্তু আমি তবুও বলব। কারণ আমি চাই আমার সম্পর্কে সবকিছু জেনেই তুমি এই সম্পর্কে জড়াও। আমি জানি না, আমার বোনেরা তোমাকে ঠিক কি বলেছে বা তারা আমার আর নীলার সম্পর্কে কি জানে। তাই আমি নিজে তোমাকে আমার আর নীলার সম্পর্কে বলতে চাই।
এতুটুকু বলে একটু থেমে আবার বললো
- নীলার প্রতি আমার ভালোবাসা ওয়ান সাইডেড লাভ। নীলা আমাকে ভালোবাসে না।
দীপকের আটকে আটকে যাওয়া কন্ঠস্বরই বলে দিচ্ছে, কথাগুলো বলতে তার কতো কষ্ট হচ্ছে। দীপক বলতে থাকে
- কিন্তু আমি বাসি। খুব, খুব ভালোবাসি। তাই ওর চোখে কষ্ট দেখতে পারি না। ওকে জোর করতেও পারি না। বিশ্বাস করো, নীলা সেদিন যখন বলেছিল আমি তাকে জোর করে বিয়ে করলে সে আত্মহত্যা করবে। আমার বুক কেঁপে উঠেছিল।
কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে পুনরায় বললো
- চট্টগ্রাম ট্রেন স্টেশনে প্রথম দেখাতেই আমি ওর প্রেমে পরে যাই। কিন্তু সেদিন ওকে হারিয়ে ফেলি। অনেক খুঁজেও পাইনি। যখন ওকে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। তখনই ও আমার সামনে আসে, আমার অফিসের পিএ হয়ে। অনেকবারই ওকে মনের কথা বলতে চাই, কিন্তু বলা হয়ে উঠে না। এক সপ্তাহ আগে ও যখন এসে নিজের বিয়ের কার্ড দেয়, তখন আমি ওকে আমার মনে কথা বলি। কিন্তু ও রিজেক্ট করে দেয়। বলে ওর ভালোবাসার মানুষের সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। যাকে ভালোবাসি তাকে তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে কিভাবে আলাদা করি বল? খুব কষ্ট হয়। এখনও হচ্ছে। প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয় এই কষ্টের থেকে মরে যাওয়াও শ্রেয়। কিন্তু আমি পারিনি নিজের মুক্তির জন্য, নিজের প্রিয় মানুষ গুলোর কথা চিন্তা না করে স্বাথপরের মতো মরে যেতে। আমার কিছু হলে আমার বাবা মা'র শেষ বয়সটা, মুখের হাসির পরিবর্তে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কাটবে। আমার বোনরা হারাবে তাদের মাথায় উপরের দ্বিতীয় ছাউনিটা। আমি কিভাবে তা হতে দেই। নীলাকে যাতে তাড়াতাড়ি ভুলতে পারি, তাই এতো তাড়াতাড়ি তোমার সাথে আমার বিয়ে। আর আমি আমার মা বোনের খুশির জন্যই বাদ্য হয়েই বিয়েটা করছি। হয়তো আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না। কিন্তু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমার প্রতি আমার দায়িত্ব কর্তব্যের কখনো কোন অবহেলা হবে না।
আস্তে ধীরে একসাথে এতোগুলো কথা বলেই থামে দীপক। সোজা হয়ে বসে মেয়েটার দিকে তাকায়। ঘোমটার আড়ালে থেমে থেমে কেঁপে উঠছে মেয়েটি। ভ্রু কুঁচকে ভালো ভাবে ঘুমটার শেষ প্রান্তে তাকাতেই খেয়াল করলো টুপ টুপ করে নোনা জল পড়ছে, মেয়েটার মেহেদী রাজ্ঞা ফর্সা হাতের উপর। সে ভাবে হয়তো স্বামীর ভালোবাসা পাবে না বলে মেয়েটা কান্না করছে। একটা চাপা শ্বাস ছেড়ে পকেট থেকে টিস্যু বের করে মেয়েটার দিকে দিয়ে বললো
- টিস্যুটা নেও।
মেয়েটা টিস্যুটা না নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে, মাথার ঘোমটাটা ফেলে দেয়। মেয়েটাকে দেখে দীপক অবাক হয়ে উঠে দাঁড়ায়। নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না তার। এটা কিভাবে সম্ভব তার সামনে বউ সেজে দাঁড়িয়ে আছে নীলা। অবাক হয়ে প্রশ্ন করল
- নীলা তুমি?
কাঁদতে কাঁদতেই নীলা বললো
- হ্যাঁ আমি। আপনি কি ভাবছেন আপনার বোনরা আপনার জন্য অন্য মেয়েকে ধরে এনেছে?
দীপক এখনো যেন বিশ্বাস হচ্ছে না, যে তার সামনে নীলা দাঁড়িয়ে আছে। নিজে হাতটা নীলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- নীলা একটা চিমটি কাটতো দেখি আমি স্বপ্ন দেখছি কি না?
নীলা চিমটি কাটে না, কান্না করতে করতে দীপকের বুকে মাথা রেখে বললো
- মা'র অনুরোধ ফেলতি পারিনি, তাই আপনাকে মিথ্যা বলেছি। আমি আপনাকে ভালোবাসি।
দীপক নীলাকে নিজের বুকে সযত্নে জড়িয়ে ধরে বললো
- ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি নীলা।
- এহেন, এহেন। দোস্ত বলছিলাম কি। আগে বিয়েটা কর, তারপর রোমান্স করিস। তোদের বিয়ের জন্য আমরা কাল রাত থেকে খাওয়া ঘুম সব বাদ দিয়ে বসে আছি।
অভির শুনে নীলা দ্রুত দীপকের থেকে সরে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। লজ্জায় ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে তার। দীপক টিস্যু এগিয়ে দিলে সেটা নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে চোখ মুছতে থাকে সে। কাজী ছাড়া বাকি সবাই রুমে ঢুকে। দীপক কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- তোদের না খায়িয়ে রোদে দিয়ে, সুটকি বানানো উচিত। বাদরের দল সকাল থেকে এতো নাটক আর মিথ্যা বলার কি ছিল! সরাসরি বললেই তো এতোক্ষণে বিয়েটা হয়ে যেত।
দীপ্তি ভাব নিয়ে বললো
- তোকে একটাও মিথ্যা বলিনি। শুধু কিছু জিনিস লুকিয়েছি। এটা তোর শাস্তি আমাদের আগে থেকে কিছু না জানানোর।
দীপক কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- তোরা কিভাবে নীলাকে চিনলি?
দীপ্তি উত্তর দিল
- তুই তোর কষ্টটা সবার কাছ থেকে লুকাতে পারলেও, মার কাছ থেকে পারিসনি। মা ঠিক বুঝে ফেলে তোর মন খারাপ। তোকে কারণও জিজ্ঞেস করে। কিন্তু তুই কথা ঘুরিয়ে ফেলিস। মা বুঝে কারণটা তুই কাউকে বলবি না। তাই মা আমাকে ফোন করে বলে খোঁজ নিতে, কেন তোর মন খারাপ। আমি খোঁজ নিয়ে নীলার সম্পর্কে জানতে পারি। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। বিয়ের দিন পার্লারে যাওয়ার সময় ভাবীকে কিডন্যাপ করার। এদিকে কালকে বিকেলে তোয়া তোর রুমে যায় অভি ভাইয়ার নামে অভিযোগ করার জন্য। সেখানে গিয়ে ভাবীর বিয়ের কার্ড পায়। নিশাকে দেওয়া কার্ড তার কাছে। তাহলে এটা কার? কার্ডের উপরে আবার তোর নাম লেখা সাথে ছেড়াও। কিছু বুঝতে না পেরে তোয়া আমাকে ফোন করে সব বললে আর ভাবীর ছবি পাঠালে আমরা জানতে পারি, যে ভাবী নিশার বড় বোন নীলা। আমি ওকে একা ভাবির সাথে কথা বলতে বলি। বুঝলি এবার সবটা। এভাব তাড়াতাড়ি বিয়েটা কর।
দীপক দাত কেলিয়ে হেসে বললো
- ডাক কাজী, আমি তো একপায়ে রাজী।
সবাই একসাথে হেসে উঠে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫৯)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন