উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111

১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৮)

#প্রিয়ন্তিকা
আজকাল অফিসে আসতে প্রিয়ন্তির বড্ড অস্বস্থি বোধ হয়। চোখের সামনে বসের এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে গা কাটা দিয়ে উঠে। মেয়ে হয়ে এটুকু অন্তত বুঝতে পারে যে, বসের দৃষ্টি স্বাভাবিক নয়। বস ইদানিং প্রিয়ন্তিকে নানা ছুঁতোয় বারবার কেবিনে ডাকেন। তারপর অযথা কিসব কথা তুলে চেয়ে থাকেন প্রিয়ন্তির দিকে। আজও ডেকেছেন। সেই কখন থেকে প্রিয়ন্তি বসে আছে বসের সামনে চেয়ারে। অথচ এখন অব্দি কাজের কথা কিছুই হচ্ছে না। প্রিয়ন্তির দেহের দিকে দৃষ্টি বসের। প্রিয়ন্তি এবার এলোমেলো দৃষ্টিতে চাইল বসের দিকে। বসের চোখের সীমা ঘুরছে প্রিয়ন্তির ওড়না ঢাকা বুকের উপর। যেন তিনি আশ্চর্য্য ক্ষমতা দিয়ে প্রিয়ন্তির নগ্ন দেহ দেখতে পারছেন। প্রিয়ন্তি ঢোক গিলে। এই প্রথমবার নিজেকে কেমন নিঃস্ব মনে হচ্ছে। প্রিয়ন্তি ফাইল আরো একবার এগিয়ে দিল বসের দিকে। মৃদু স্বরে বলল, 'স্যার, ফাইলটা? '

বস ক্রুর হাসল। ফাইল নেবার ভঙ্গি করে আরো একবার দেখল প্রিয়ন্তিকে। ফাইল উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে বলল, 'ওড়না দিয়ে এমন ঢেকে আছো কেন? বি মডার্ন। আজকাল এমন ওল্ড ফ্যাশন ওড়না কে পড়ে, মিস প্রিয়ন্তি? ত্রো দিস এওয়ে। '

প্রিয়ন্তি জড়োসড়ো ভাবে ওড়না টেনে ধরে নিজের গায়ের সঙ্গে মিশিয়ে নেবার চেষ্টা করল। অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলল, 'যে আধুনিকতা আমার দেহ উন্মুক্ত করতে উৎসাহিত করে, সে আধুনিকতা আমার প্রয়োজন নেই, স্যার। ''
বস তীক্ষ্ম চোখে প্রিয়ন্তিকে দেখলেন। পরপরই লোভনীয় দৃষ্টিতে বিড়বিড় করলেন, '৩২,২৫,৩২ '
সঙ্গেসঙ্গে প্রিয়ন্তির ভ্রু কুঁচকে যায়। সে মৃদু স্বরে চেঁচায়, 'এসব কিরকম অভদ্রতা, স্যার? '
বস আগের ন্যায় নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, 'আমি ফাইলের পৃষ্ঠা নাম্বার বলছি। এই পৃষ্ঠার ডাটাগুলো ভুল লেখা। ঠিক করে নেবেন। '
প্রিয়ন্তি বুঝতে পারে, বস কথা ঘুরাচ্ছেন। প্রিয়ন্তিও আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ ফাইল নিয়ে বেরিয়ে যায় বসের কেবিন থেকে।

কেবিন থেকে বেরিয়ে দেখা হয় অনুরাগের সঙ্গে। অনুরাগ কেবিনের সামনেই এতক্ষণ দাড়িয়ে ছিল। শুনেছে সব। অফিসে আসার কদিনের মাথায় অনুরাগের ব্যবহার বদলে গেছে। আগের ন্যায় অপমান করে রাগিয়ে তুলে না প্রিয়ন্তিকে। বরং কেন যেন অনুরাগ শান্ত হয়ে গেছে ভীষন। অনুরাগের এই পরিবর্তনে প্রিয়ন্তি বেশ খুশি।

প্রিয়ন্তি অনুরাগকে দেখে থেমে যায়। অনুরাগ শান্ত স্বরে প্রশ্ন করে, 'বস কি বলেছেন তোমাকে? '
প্রিয়ন্তি গলা কেপে উঠে। অফিসে দুর্নামের ভয় চেপে ধরে তাকে। প্রিয়ন্তি বলে, 'আ.সলে…'
' জাস্ট টেল দ্যা ট্রুথ, প্রিয়ন্তি। '
প্রিয়ন্তি হকচকিয়ে যায়। অনুরাগ কণ্ঠে কিছু একটা ছিল। যার কারণে প্রিয়ন্তির মিথ্যা বলার সাহস হয় নি। প্রিয়ন্তি উত্তর দেয়, 'উনি আমার বডি সাইজ নিয়ে কথা বলেছেন। '
মুহূর্তেই অনুরাগের মুখ শক্ত হয়ে যায়। যেন রাগে অন্ধ হয়ে পরে সে। অনুরাগ থেমে থেমে বলে, 'উত্তরে কিছু বলো নি? মুখের কথা দ্বারা কষিয়ে থাপ্পড় বসাতে পারো নি তার মুখে? '

প্রিয়ন্তি চুপ করে থাকে। কিছুক্ষণ থেমে তারপর বলে, 'আমার কাছে চাকরি বড়। যতদিন না বড়সড় ঝামেলায় না পরছি, চাকরি ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে যাবার মত মেয়ে আমি নই। '

অনুরাগের কুচকে থাকা ভ্রু সোজা হয়ে যায়। এতক্ষণে রাগে মুষ্টিবদ্ধ করে থাকা হাতদ্বয় সোজা হয়ে খুলে যায়। হুট করেই প্রিয়ন্তি নামের মেয়েকে তার ভারী ভালো লেগে যায়। প্রিয়ন্তির হার না মানার মনোভাব তাকে আকৃষ্ট করে বসে। প্রিয়ন্তি আজকালকার মেয়েদের মত নয়। তার কথাবার্তায় স্পষ্টতা। দেহ-মনে সূর্যের মত উত্তপ্ত কিছু তেজ। ডাবের পানির ন্যায় ঘোলাটে দু চোখ, তার মধ্যে বসে আছে কালো রঙের টকটকে চোখের মণি। চেহারার দিকে যেকোনো প্রেমিকের ভীষন আদর আদর বোধ হবে। ইচ্ছে করবে, সূর্যের মত তেজী এই নারীকে বুকের মধ্যে পুড়ে নিয়ে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে উড়ে যেতে। মেয়েটাকে একবার পেয়ে গেলে এ জীবনে কোনো আফসোস থাকবে না। মনে হবে, জীবনে আর কি দরকার? বিধাতা সবই তো দিয়েছেন।

অনুরাগ প্রিয়ন্তির দিকে চাইল। প্রিয়ন্তির চোখ ভাসা ভাসা। একটু আগের করা অপমানের দরুন মুখে ঘৃণার আভা। অনুরাগ এগিয়ে এল। আচমকাই সকল জড়তাকে তুচ্ছ করে প্রিয়ন্তির ডান গালে হাত রাখল। প্রিয়ন্তি যেন চমকে গেল। হাত বাড়িয়ে গাল থেকে অনুরাগের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইল। তবে অনুরাগের মুখের দিকে চেয়ে যেন সে সাহস আর হয়ে উঠল না তার। অনুরাগ ভরসার স্বরে বলল, 'কোনো অঘটন ঘটার আভাস পেলে সবার আগে আমাকে জানাবে। প্লিজ, নিজের কোনো ক্ষতি হতে দেবে না।

কিছুক্ষণ অনুরাগ থেমে থাকে। প্রিয়ন্তি তখনো অনুরাগের দিকে চেয়ে। অনুরাগ মাথা ঘুরিয়ে ওপাশে চেয়ে ঢোক গেলে। তার গলার অ্যাপল বোন তখন ফুলে উঠে আবার নীচু হয়ে যায়। প্রিয়ন্তি সবই দেখে। অনুরাগকে রাগলে কেন যেন প্রিয়ন্তির কাছে বেশ সুন্দর লাগে। আর ঢোক গেলার সাথে তার অ্যাপল বোনের উঠানামা খুব আকর্ষণীয় লাগল প্রিয়ন্তির কাছে। অনুরাগ কিছুক্ষণ থেমে শান্ত হয়। পরপরই আবার প্রিয়ন্তির দিকে চায়। মৃদু স্বরে বলে, 'তুমি খুব দামী একজন নারী, প্রিয়ন্তি। নিজের দামের উপর কখনও কোনো কুনজর পড়তে দিও না। একে আমার অনুরোধ নাকি শাসানো যা ইচ্ছে নাম দিতে পারো। '

অনুরাগ আর একটাও কথা বলে না। অযথাই এতগুলো কথা বলে সে নিজেই শঙ্কায় ভুগছে। কথাগুলো কেন বলল, কিসের কারণে বলল, কি বলল কিছুই বুঝতে পারছে না অনুরাগ। তার ছাব্বিশ বছরের জীবনে হঠাৎ এত আমূল পরিবর্তনে সে নিজেই হতবাক। কি হয়েছে তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। অনুরাগ আর এক মুহুর্তে দাড়াল না। সে দ্রুত নিজের অনুভূতি থেকে পালাতে সেই জায়গা প্রস্থান করল। প্রিয়ন্তি সেখানেই দাড়িয়ে থাকল। ঠায়, নিশ্চল। বুকের ভেতরটা কাপছে কেন এভাবে? অনুরাগের কথার মানেটা কি?


প্রিয়ন্তি নিজের চেয়ারে এসে বসে। বুকের ভেতরটা বড্ড অস্থির লাগছে। প্রিয়ন্তি কীবোর্ডে চাপতে লাগল। কাজে মন বসছে না। চেষ্টা করলেও হচ্ছে না। প্রিয়ন্তি হাল ছেড়ে দিল। চেয়ারে মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে আরাম করার চেষ্টা করল। মাথাটা চাপ দিয়ে ধরে রেখে ব্যথা কমানোর প্রয়াস চালাল। বাম পাশে থেকে ফিহা এসব দেখে গেল। পরপরই প্রিয়ন্তির বাহুতে হাত রেখে ডাকল, ' প্রিয়ন্তি? কি হয়েছে তোমার? অস্থির লাগছে কেন তোমাকে? '

প্রিয়ন্তি চোখ খুলে। ঘাড় হালকা কাত করে ফিহার দিকে চেয়ে ক্লান্ত কণ্ঠে বলে, ' জানিনা, অসুস্থ লাগছে। হয়ত কাজের প্রেশারে। '
ফিহা বলল,' তুমি কাজের বেশি চাপ নিও না। ধীরেসুস্থে কাজ করো। ক্লান্ত লাগবে না তাহলে। '
' হুঁ। '
প্রিয়ন্তি সায় দিয়ে আবারও চেয়ারে হেলান দিল। হঠাৎ একজন পিয়ন এসে প্রিয়ন্তির টেবিলে একটা বাম রাখে। প্রিয়ন্তি বাম দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি মেলে চায় পিয়নের দিকে। পিয়ন বলে, 'অনুরাগ স্যার পাঠিয়েছেন। বলেছেন মাথায় মালিশ করে কাজ করতে। '

প্রিয়ন্তি এবার দারুন হতভম্ব হয়ে যায়। ফিহা অবাক হয়ে বাম হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে অবাক কণ্ঠে বলে, ' অনুরাগ স্যার তোমার জন্যে মাথা ব্যথার বাম পাঠিয়েছেন? হাও ইজ ইট পসিবল, প্রিয়ন্তি? অনুরাগ স্যার কোনো কর্মচারীর জন্য এতটা কেয়ার করছেন। অবিশ্বাস্য! তুমি জানো, গুরুতর অসুখ না হলে অনুরাগ স্যার কখনোই কাউকে ছুটি দিতে চান না। অনুরাগ স্যারের সামনে মিথ্যা বলেও লাভ হয়না। স্যার কেমন দৈব শক্তি দ্বারা বুঝে যায় সবার মিথ্যা। তবে জানো, স্যার না ভীষন হাম্বল। কারো প্রয়োজনে বসের আগে স্যারই পাশে এসে দাঁড়ায়। স্যার একটা অনাথ আশ্রমও চালায়। সেখানে রোজ ছুটির দিনে স্যার সারাদিন থাকে, সময় কাটায়। আমাদের অফিসের অনেক মেয়ে কলিগই তো স্যারের জন্যে পাগল। আর দেখো না, স্যার সবাইকে ছেড়ে তোমাকে কেয়ার করছে। আশ্চর্য্য লাগছে আমার কাছে। '

প্রিয়ন্তি সব শুনে। অনুরাগের রাগি চেহারার পাশপাশি তার ভিন্ন এক সুন্দর চেহারা আছে, ভাবলে প্রিয়ন্তির ভালো লাগছে। হঠাৎ করে প্রিয়ন্তি চমকে উঠে। এসব কি ভাবছে সে? ছিঃ, ছিঃ! প্রিয়ন্তি, সামলা নিজেকে। এক মাসে অনুরাগের প্রতি তোর এমন মনোভাব, লজ্জা লাগা উচিৎ তোর। প্রিয়ন্তি চট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে। ফিহা অবাক চোখে চায়। প্রিয়ন্তি অপ্রস্তুত কণ্ঠে বলে, ' কফি খেয়ে আসছি। '

প্রিয়ন্তি কফি সেকশনে যায়। কফির কাপ হাতে নিয়ে অযথাই ভাবে। নিজের এই পরিবর্তন তার নিজের কাছেই অসহ্য লাগছে। হঠাৎ করে মাহতিমের কথা মনে পরছে। মনটা বড্ড কু ডাকছে। কিছু একটা অঘটন ঘটতে চলেছে কি?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন