উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111

১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ১৭)

সকাল সকাল দারুণ এক সুখবর পেয়ে প্রিয়ন্তির মন ফুরফুরে হয়ে গেল। সেদিনের ইন্টারভিউটা কাজে লেগেছে। চাকরি কনফার্ম হয়েছে প্রিয়ন্তির। এখন থেকে প্রিয়ন্তির আর টাকার চিন্তা করতে হবে না। বাবাকে আর কষ্ট করে চাকরিতে যেতে হবে না। বাবা ঘরে বসে আরাম করবেন এখন থেকে। খাবার টেবিলে বসে প্রিয়ন্তি চাকরির কথাটা তুলল। সঙ্গে বলল, 'বাবা, তোমাকে আর কষ্ট করে অফিসে যেতে হবে না। তুমি রিজাইন নিয়ে নাও। আমি তো আছি। আমার বেতনে ভালোভাবেই সংসার চলে যাবে। '

প্রিয়ন্তির বাবা মাছের মাথা কামড়ে খাচ্ছিলেন। প্রিয়ন্তির কথা শুনে প্রিয়ন্তির বাবা গম্ভীর দৃষ্টিতে চাইলেন প্রিয়ন্তির দিকে। ফুসে উঠে বললেন, ' আমার চাকরি কেন ছাড়ব? তোমার উপর বসে খাবার জন্যে? না! যতদিন গায়ে জোড় আছে, আমি খেটে খাব। কারোর উপর নির্ভর করে চলার ইচ্ছে আমার নেই। চাকরি পেয়েছ ভালো কথা। নিজের কথা ভাব। নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিয়েছ, ভালো কথা। এখন বিয়ে শাদীর কথা ভাবো। আমরাও তোমাকে ভালো ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে একটু মুক্ত হই। '

প্রিয়ন্তি বাবার রাগান্বিত কথা শুনে দমে যায়। সে তো বাবার ভালোর জন্য বলল কথাগুলো। বাবার রেগে যাবার কারণ বোধগম্য হল না প্রিয়ন্তির। প্রিয়ন্তির মা স্বামির গায়ে হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। বললেন, ' মেয়েটাকে খামোকা বকছ কেন? তোমার ভালোর জন্যেই তো বলল। শরীর ভেঙে যাচ্ছে তোমার। এ অবস্থায় চাকরি করা কষ্টকর হয়ে যায় তোমার জন্য। '
প্রিয়ন্তির বাবা স্ত্রীর দিকে তাকালেন। স্পষ্ট কণ্ঠে বললেন, ' হোক। বিছানা তো নেই নি এখনো। গায়ে যথেষ্ট বল আছে আমার। চাকরি ছাড়ার কথা আমি আর না শুনি। খাও এখন। '

প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বয়স হওয়ার সাথে সাথে বাবা হয়ে উঠছেন একরোখা, জেদি। এই জেদের কারণে তিনি কারো কথা শুনতে চান না। নিজের মত করেই চলতে পছন্দ করেন। নিজের শরীর ভেঙে যাচ্ছে, অসুস্থ হয়ে চোখমুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। তবুও নিজের শরীরকে বিশ্রাম দেবেন না। কি হয় সন্তানের টাকায় খেলে? সন্তানকে এত বছর লালন পালন করেছেন, কষ্ট করে এত বড় করেছেন। এখন সেই সন্তান যদি বাবা মায়ের দেখাশোনা করতে চায় এটাতে মন্দ কি। কিন্তু না! প্রিয়ন্তির বাবা হচ্ছেন আত্মনির্ভরশীল। কারো উপর নির্ভর করে চলা তিনি অপছন্দ করেন। প্রিয়ন্তি আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ খেতে থাকে।


প্রিয়ন্তির আজ প্রথম দিন অফিসে। প্রথমদিনই কাজে কর্মে বেশ দক্ষ দেখানোর চেষ্টা করছে প্রিয়ন্তি। ডাটা ইনপুট করা থেকে শুরু করে ফাইল ট্রান্সফার করা সবই যেন তার নখদর্পণে। প্রিয়ন্তির কাজ দেখে তার পাশে বসা সহকর্মী উৎফুল্ল হয়েছে। সহকর্মী ফিহা চেয়ার টেনে প্রিয়ন্তির গা ঘেঁষে বসল। প্রিয়ন্তি তখন আঙুলের সাহায্যে কীবোর্ডে টাইপিং করছে। ফিহা কম্পিউটারের দিকে চেয়ে দেখল। প্রিয়ন্তির হাতের কাজ আসলেই দারুন। ফিহা বলল, 'তুমি আগে কোথাও চাকরি করেছ, প্রিয়ন্তি? '

প্রিয়ন্তি ভদ্রতাসূচক হেসে বলল, ' না, এই প্রথম। '

ফিহা অবাক হল ভীষন। এই প্রথমবার অফিসে চাকরি করেই এত দক্ষ হাত। প্রিয়ন্তিকে অনুরাগ একবার শুধু কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে। তাতেই প্রিয়ন্তির কাজের হাত দুর্দমনীয় ভাবে চলছে। অথচ ফিহাসহ অন্যান্য কলিগদের অনেকবার অনুরাগ কাজ বুঝিয়ে দেবার পরও তারা বারবার ভুল করে এসেছে। এখনো করে। ফিহা মানতে বাধ্য, প্রিয়ন্তির বেশ চতুর একজন মেয়ে। ফিহা বলল, ' তুমি এই অফিসে খুব নাম করবে, প্রিয়ন্তি। মেধা আছে তোমার। '
প্রিয়ন্তি মৃদু হাসল, ' ধন্যবাদ। '

অনুরাগের কথা বলার শব্দ শুনে ফিহা হকচকিয়ে গেল। সঙ্গেসঙ্গে চেয়ার টেনে নিজের জায়গায় বসে কাজ করতে লাগল। প্রিয়ন্তি অবাক হল একটু। পেছনে তাকিয়ে দেখে অনুরাগ তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। পরপরই প্রিয়ন্তির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তীক্ষ্ম চোখে প্রিয়ন্তিকে দেখে বলল, ' কাজ পারছ? নাকি ঝগড়াটাই ভালো পারো? '

প্রিয়ন্তি রাগে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে যেন। অনুরাগের সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে ততবার অনুরাগ ঝগড়ার কথা বলে খোঁটা দিয়ে যাচ্ছে প্রিয়ন্তিকে। একদিন নাহয় না বুঝে রাগ দেখিয়েছিল, ঝগড়া করে বসেছে, তাই বলে সেই কথার রেশ টেনে এতদূর নিয়ে যেতে হবে? অসহ্য মানুষ একটা। প্রিয়ন্তি হাসার চেষ্টা করল। বলল, ' অনেকটাই পারছি। '

প্রিয়ন্তির সঙ্গে অনুরাগের রেগে কথা বলা দেখে পাশ থেকে ফিহা বলল, ' স্যার, প্রিয়ন্তির কাজ খুব দারুন। একবার শিখেই এত দ্রুত কাজ করছে, বলা মুশকিল। '
ফিহার কথা শুনে অনুরাগের ভ্রু কুঁচকে যায়। সে ঘাড় কাত করে তীক্ষ্ম চোখে দেখে ফিহাকে। গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে, ' আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি, মিস ফিহা শিকদার? অন্যের হয়ে সাফাই গাইবেন না। নিজের কাজে মন দিন। '

অনুরাগের থমথমে গলা শুনে ভয়ে ফিহার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ফিহা সঙ্গেসঙ্গে মাথা নত করে ' সরি স্যার ' বলে কাজে লেগে গেল। প্রিয়ন্তি তীক্ষ্ম চোখ এসব দেখতে লাগল। অনুরাগের কথাবার্তা তার পছন্দ হচ্ছে না। কথায় কথায় রাগ দেখায়, মেজাজ তুঙ্গে উঠে থাকে সবসময়। এর কারণ কি শুধুই প্রিয়ন্তির সেদিনের কড়া ব্যবহার। এত রাগ কেন দেখাচ্ছে? প্রিয়ন্তি নিজ থেকে তাকে সরি বলেছে কয়েকবার। অথচ সে যেন পণ করে রেখেছে, প্রিয়ন্তিযে হ্যানস্থা করবেই। প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে অনুরাগ বলল, ' বস ডাকছেন আপনাকে। ঠিকঠাক হয়ে যাবেন তার কাছে। গো ফাস্ট। '

অনুরাগ চলে গেল নিজের কেবিনে। প্রিয়ন্তি থমথমে মুখে চেয়ে দেখল অনুরাগকে। অনুরাগের কেবিন স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি। ভেতর থেকে বাইরের পরিবেশ আর বাইরে থেকে অনুরাগকে স্পষ্ট দেখা যায় এই কাঁচের কারণে। প্রিয়ন্তি অনুরাগের দিকে চেয়ে আছে। অনুরাগ ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত ভঙ্গিতে কম্পিউটারে কাজ করছে। প্রিয়ন্তি চোখ সরায়। বসের কেবিনে যাবার জন্যে উঠে দাড়ালে ফিহা ফিসফিস করে বলে, ' প্রিয়ন্তি, শুনো। '
প্রিয়ন্তি মাথা নত করে বসে থাকা ফিহার দিকে চায়। ফিহা চারপাশে চোখ বুলিয়ে প্রিয়ন্তির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ' আমাদের বসের নজর ভালো না। ওড়না, জামা ঠিকঠাক করে যেও। '

প্রিয়ন্তির ভ্রু কুচকে যায়। তাহলে সেদিন ইন্টারভিউতে প্রিয়ন্তি ভুল দেখেনি। যা দেখেছে, আসলেই তাই হয়েছে। প্রিয়ন্তির রাগ হয়। বসকে দেখে বয়স্ক মনে হয়। স্ত্রী সন্তান আছে নিশ্চিত। এই বয়সে এসে এমন অশ্লীল ভাবনা, ছিঃ! গা গুলিয়ে আসে প্রিয়ন্তির। প্রিয়ন্তি ওড়না গা থেকে খুলে পুরো শরীরে জড়িয়ে নেয়। যতটুকু পারে শরীর ঢেকে বসের কেবিনে যায়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন