উপন্যাস : প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি |
1111111111111111111111
২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২২)
'রাতটা কোথায় কাটালেন, মিস প্রিয়ন্তি? নিজের ঘরে নাকি আপনার প্রেমিক মাহতিম ইয়ানের ঘরে? '
প্রিয়ন্তির কানের মধ্যে কেউ যেন বি"ষ ঢেলে দিল। বসের এমন নোংরা মন্তব্যের প্রতিবাদস্বরূপ ঝাঁঝ নিয়ে প্রিয়ন্তি বলে, 'ভদ্রভাবে কথা বলুন। আমি একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। '
বসের এগিয়ে আসেন প্রিয়ন্তির দিকে। অফিসের সবার চোখ তাদের উপর। অনুরাগ এতক্ষণ নিজের কেবিনে ছিল। বাইরে এত হইচই শুনে অনুরাগ দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। বসের পাশে এসে বলে, 'এনি প্রবলেম স্যার? '
বস প্রিয়ন্তির দিকে তীক্ষ্ম চোখে চাইলেন। যেন ঐ দু চোখ দিয়েই তিনি প্রিয়ন্তির গা জ্বা"লিয়ে দেবেন। প্র"তিহিং"সার আ"গুন তার ভেতরের মনুষ্যত্ববোধ নিঃশেষ করে দিয়েছে। মাহতিমের করা দোষের জন্যে তার সমস্ত রাগ প্রিয়ন্তির উপর পরেছে। মাহতিমের চুল ছিঁড়বে সেই সাহস তো নেই, তাই নরম প্রিয়ন্তিকেই অপমান করে তার আত্মতুষ্টি মিলছে। অনুরাগ বিস্মিত চোখে প্রিয়ন্তির দিকে চাইল। প্রিয়ন্তির চোখে রা"গের উত্তাপ। কোনো মেয়েই তার চরিত্রের উপর দাগ সহ্য করতে পারে না। আর এ তো প্রিয়ন্তি স্বয়ং!
অনুরাগ বলল, 'স্যার, মিস প্রিয়ন্তি কিছু করেছেন? '
বস শেয়ালের ন্যায় চেঁচিয়ে বলল, 'ও করেনি। করেছে ওর প্রেমিক, যার ঘরে ওর দিনরাত কাটে। আমাকে, এই সুভাষ চন্দ্রকে হুমকি দেয়। ব্ল্যাকমেইল করে? আমি নাকি মেয়েদের সঙ্গে অসভ্যতামি করে বেড়াই। আমার নামে এত বড় মিথ্যা নিশ্চয়ই মিস প্রিয়ন্তিই তাকে বলেছেন। ভালো মেয়ে ভেবে চাকরি দিয়েছিলাম।। আর এখন আমার পেছনেই ছু"রি চালানো! আমি এসব বরদাস্ত করব না। ইউ আর ডিসমিস, মিস প্রিয়ন্তি। আজ অফিস থেকে বেরোনোর সময় নিজের ডিসমিস লেটার নিয়ে যাবেন। '
অফিসের সবার ঘৃণার চোখ প্রিয়ন্তির দিকে। যেন প্রিয়ন্তি মস্ত পাপী একটা মেয়ে। ফিহা নিজেও ঘৃণায় সরে দাঁড়াল প্রিয়ন্তির থেকে। প্রিয়ন্তি এসব শুনে হতভম্ব হয়ে পরেছে। সবার এসব চাওনি দেখে নিজেকে নর্দমার কীট মনে হচ্ছে। বসের কথা শুনে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, মাহতিম এসব করেছে। নিজের শর্ত ভেঙেছে। কেন ভাঙল? প্রিয়ন্তি তাকে এতদিনে নিজের খুব আপন ভাবতে শুরু করেছে। প্রিয় বন্ধু ভেবেছে। আর আজ? মাহতিম আরো একবার দেখিয়ে দিল, সে কারো প্রিয় হবার যোগ্য না। কারো না। প্রিয়ন্তির কান্না আসছে। দু চোখ ঝাঁপিয়ে কান্নার দলা উপচে পরছে। প্রিয়ন্তি আর কথা বলে না। ধপধপ পায়ে কাঁধে ব্যাগ তুলে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। পেছনে পেছন অনুরাগ আসে।
প্রিয়ন্তির চোখের পানি, নাকের পানি এক হয়ে যাচ্ছে। ফের হৃদয় ভাঙল মাহতিম। এতটা অপমান করিয়ে আজ নিশ্চয়ই সে শান্তি পেয়েছে। তার সঙ্গে বোঝাপড়া আছে প্রিয়ন্তির। এইসব নোংরা কাজের জন্যে তার জবাবদিহি করতে হবে। প্রিয়ন্তি আজ আর বাসের জন্যে অপেক্ষা করল না। হেঁটেই চলল মাহতিমের অফিসের দিকে। অনুরাগ এসে প্রিয়ন্তির হাত পেছন থেকে ধরে ফেলল। প্রিয়ন্তি থেমে যায়। ভেজা চোখ নিয়ে অনুরাগের দিকে চায়। অনুরাগ বলে, ' কোথায় যাচ্ছ? '
' কারো সঙ্গে বোঝাপড়া করতে। '
প্রিয়ন্তির চোখের পানিতে আকাশসম রাগ ও অভিমান মিশে আছে। অনুরাগ হয়ত বুঝতে পারল সে অভিমান। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ' রাগের মাথায় ভুল কিছু করে বসো না, প্রিয়ন্তি। রাগের মাথায় এমন কিছু করো না, যার জন্যে পরবর্তীতে আফসোস করতে হয়। '
প্রিয়ন্তি শুনে। হঠাৎ করে উপলব্ধি করে, তার এতটা রেগে যাবার আগে মাহতিমের কাছে জেনে নেওয়া উচিৎ সে আদৌ বসকে এসব বলেছে কি না। একপাক্ষিক কথা শুনে রেগে ভূল সিদ্ধান্ত নেওয়া মূর্খতার পরিচয়। মাহতিমের প্রতি এক মায়া জন্মেছে প্রিয়ন্তির। আরো একবার তাকে বিশ্বাস করলে কি ক্ষতি তাতে।
অনুরাগ কিছুক্ষণ থামে। প্রিয়ন্তির দিকে চেয়ে থাকে নির্নিমেষ। দু চোখে কাতরতা নিয়ে হঠাৎ করেই সে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসে, ' মাহতিম ইয়ান কি তোমার খুব বেশি আপন কেউ, প্রিয়ন্তি? '
প্রিয়ন্তি বিস্মিত হয়। উত্তর দিতে পারে না। সত্যি বলতে, এ কদিন মাহতিমের সঙ্গে মিশে প্রিয়ন্তির তাকে বেশ আপন আপন লাগে। প্রিয় একটা বন্ধু মনে হয়। এই প্রিয় স্থানটা নিজের জন্যে মাহতিম নিজেই প্রিয়ন্তির মনে গড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। প্রিয়ন্তি ঢোক গিলে। অতঃপর নরম কণ্ঠে বলে, ' হয়ত আপন কেউই। কিন্তু যে একবার আমার বিশ্বাস ভাঙে, সে দ্বিতীয়বার আমার আপন হয়না। '
অনুরাগ সঙ্গেসঙ্গে প্রিয়ন্তির হাত ছেড়ে দেয়। প্রিয়ন্তি আর দাঁড়ায় না। দ্রুত হেঁটে যায় মাহতিমের অফিসের দিকে।
' নিচে এসো। তোমার সঙ্গে কথা আছে। '
মাহতিম খুশি হয়ে বলে, ' তুমি এসেছ নাকি? আমার জন্যে? '
প্রিয়ন্তি মৃদু স্বরে জানায়, ' হুঁ। দ্রুত এসো। আমি অপেক্ষা করছি। '
দেখা গেল, মাহতিম পাঁচ মিনিটের মাথায় নিচে নেমে এসেছে। অফিসের সামনে প্রিয়ন্তিকে দেখে তার ঠোঁটে রাজ্য জয় করা হাসি লেগে রইল। সে দ্রুতপদে প্রিয়ন্তির পাশে এসে দাঁড়াল।
প্রিয়ন্তি কোনোরূপ বাক্যক্ষয় না করে বলল, ' মাহতিম! তুমি আমার বসের সঙ্গে কি করেছ? '
হঠাৎ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নে মাহতিম বিস্মিত হয়। পরক্ষনেই চোখ লাল হয়ে যায় তার। এমনিতেই অনুরাগকে নিয়ে সে ভীষন রাগান্বিত এবং বিরক্ত। আর এখন বসের এই কাহিনী তার মাথাটা আরো গরম করে দিল। নিমিষেই মাহতিম ভুলে যায় প্রিয়ন্তির দেওয়া সকল শর্ত। রাগের বশে স্বীকার করে নিজের বিশ্বাস ভাঙার কথা। তাই হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়ে মাহতিম বলল, ' বেশি কিছু করিনি। শিশু ডোজ দিয়েছি শুধু। '
প্রিয়ন্তির বুকে কাঁপন ধরে গেল। ধীরে ধীরে বোধ হল, প্রিয়ন্তি যা শুনতে চায়নি, মাহতিম এখন তাই বলতে যাচ্ছে।
প্রিয়ন্তি আহত কণ্ঠে বলল, ' মানে? '
' মানে হচ্ছে, তার বাথরুমের ফুটেজ আমার কাছে বন্দি। যতই হোক। একজন নামিদামি মানুষ তো আর চাইবে না নিজের প্যান্টের ভেতর থাকা অঙ্গ ভাইরাল হয়ে যাক। তাছাড়া তার বউকে তার কুকর্ম দেখানোর কথা বলেছি। কেউ তো চাইবে না আর বাহারওয়ালির কথা ঘরওয়ালির সামনে প্রকাশ পেয়ে যাক। তাই বেচারা চুপসে আছে। সমস্যা নেই। কদিন যাক। আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ডোন্ট ওয়ারি। '
প্রিয়ন্তি রাগে দুঃখ কথা বলতে ভুলে গেল। কানের মধ্যে পোকা কিলবিল করে উঠল যেন। ভেজা কন্ঠে বলল, ' আমার বিশ্বাস, আমার দেয়া বন্ধুত্বের শর্ত ভাঙতে লজ্জা করল না তোমার? এতটা নিচে কি করে নেমে গেলে? '
মাহতিমের স্বাভাবিক উত্তর, ' ওই শা"লার বাচ্চা তোমায় ই"ভটি"জিং করছিল। তোমার গায়ের পরিমাপ মেপেছে। তোমার দেহ চোখ দিয়ে আস্বাদন করেছে। আর আমি এসব বসে বসে দেখব? জেলাসি ঠেলার ইচ্ছে আমার নেই। এইবার অল্প ডোজে ছেড়ে দিয়েছি। নেক্সট টাইম এমন করলে জাস্ট খু'ন করে ফেলব। '
মাহতিমের কণ্ঠে রাগের আগুন। প্রিয়ন্তি অবাক হল ভীষন। এই সেই মাহতিম,যাকে প্রিয়ন্তি ভরসা করেছিল? প্রিয়ন্তি রেগেমেগে অস্থির হল। নিজের রাগ সংবরণ করতে না পেরে মাহতিমের কলার চেপে ধরে বলল, ' শুধু ভালোবাসা কেন,তুমি বন্ধুত্বেরও যোগ্য নও, মাহতিম। তুমি খুব স্বার্থপর একটা মানুষ। নিজের স্বার্থের জন্যে আমার কতবড় ক্ষতি করে দিলে, সেটা তুমি ভাবতেও পারছ না। আজ তোমার জন্যে সবার সামনে আমার মাথা হেট হয়ে গেছে। আমি আর কখনো কারো সামনে মুখ তুলে কথা বলতে পারব না। সবসময় তুমি এমনই করে আসছ, মাহতিম। বারবার নিজে হেয়ালি কাজের দ্বারা তুমি সবার সম্মুখে আমাকে ছোট করেছ, লাঞ্ছিত করেছ। আমি তোমাকে ঘৃণা করি, মাহতিম। এই ঘৃণাই তোমার প্রাপ্য! '
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন