উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111

২২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৩)

মাহতিমের ধৈর্য্যের বাঁধ এবার চূ"র্ণবি"চূর্ণ হয়ে পরে। রাগে মাথার ভেতরটায় আগুন দাউদাউ করে জ্ব"লে। এসব পাগলামি কার জন্যে করেছে মাহতিম। প্রিয়ন্তির জন্যই তো! অথচ যার জন্যে মাহতিম বেপরোয়া তাকেই প্রিয়ন্তি বুঝে না। কেন বুঝে না? সে কি একটুও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়? মাহতিম প্রিয়ন্তির হাত নিজের কলার থেকে ছাড়িয়ে নেয়। প্রিয়ন্তি চমকে উঠে। মাহতিম প্রিয়ন্তির দুহাত নিজের হাতে চেপে ধরে পিঠের পেছনে বেধে তীক্ষ্ম কণ্ঠে বলে, 'হ্যাঁ, আমি বন্ধুত্ত্বের যোগ্য নই। তোর যোগ্য কে তাহলে? ওই অনুরাগের বাচ্চা অনুরাগ? ও তোর সাথে কথা বললে, ভালো লাগে। আর আমি কথা বললে গায়ে ফো"সকা পরে? কি আছে ওর মাঝে যা আমার মধ্যে নেই? বল! '

প্রিয়ন্তি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে মাহতিমের দিকে। মাহতিমের হাতের ভাঁজে পি"ষে যাচ্ছে প্রিয়ন্তির হাত। হাতের ব্যথায় মরে যাচ্ছে ও। তবুও সেই ব্যথা তুচ্ছ ঠেকল প্রিয়ন্তির কাছে। মাহতিমের এমন অভদ্রের মত আচরনের সঙ্গে প্রিয়ন্তি একটুও পরিচিত নয়। এ যেন এক নতুন মাহতিম। হঠাৎ মাহতিমের হাতের আঙ্গুল প্রিয়ন্তির কব্জিতে দাবিয়ে মাহতিম চেঁচায়, 'কথা বলস না ক্যান? '

প্রিয়ন্তি চোখের জল ফেলে। মৃদু স্বরে বলে, 'অনুরাগের মধ্যে কি আছে জানতে চাও? অনুরাগ আমার প্রতিটা ভালো মন্দের খেয়াল রাখে। আমার কোন কাজে অসুবিধা হবে, সেটা ওর মাথায় থাকে। আর সবচেয়ে বড় কথা, অনুরাগ আমাকে সম্মান করে! জানো, আজ তোমার কথা ও শুনে একটুও রিয়েক্ট করেনি। বরং রাগের মাথায় তোমাকে কষ্ট না দেই, সেই কথা বলেছে। অথচ তুমি হলে কি করতে। অনুরাগের সঙ্গে আমার নাম মিলে গেলে অনুরাগকে মা"রধর করতে। তারপর এক বুক অপরাধবোধে আমাকে ডুবিয়ে নিশ্চিন্তে মনে আবার আসতে ভালোবাসার কথা বলতে। তোমার কাছে আমি কখনো চাইনি, তুমি আমার জন্যে কাউকে মা"রো, পে"টাও। আমার জন্যে আমারই অফিসের বসকে ব্ল্যাকমেইল করো। বস খারাপ, আমি মানছি সেটা। কিন্তু তাই বললে তুমি আমাকে উপর বিশ্বাস রাখতে পারতেনা। আমি সব সামলে নিতাম, সেই বিশ্বাসটুকু তোমার আমার উপর নেই। এটাই তোমার আর অনুরাগের মধ্যে পার্থক্য। একবার মনে আছে, তুমি আমার জন্যে রাস্তার বখাটেদের সঙ্গে মারামারি করেছ। আমি তাদের প্র"তিশো"ধের কারণে রে"ইপড হতে পারতাম তাদের কাছে। আল্লাহ আমাকে সেদিন বাঁচিয়েছিলেন। নাহলে আজ আমার দেহ কবরে থাকত। ওদেরকে এই সুযোগ কে দিয়েছে? তুমি দিয়েছ! সবসময় মা"রামা"রি করা কোনো কিছুর সমাধান না। তুমি যদি মা"রামা"রি না করে, বারবার সব জায়গায় আমাকে নিজের বেপরোয়া পাগলামি দিয়ে অ"পদস্ত না করে আমার ভালোবাসা চাইতে, আমি হয়ত একসময় না একসময় গলে যেতাম। কিন্তু তোমার এই অসহ্য পাগলামিই আমাকে তোমার দিকে এগিয়ে যেতে বাঁধা দিচ্ছে, মাহতিম। '

মাহতিম এসব শুনে চট করে প্রিয়ন্তির হাত ছেড়ে দেয়। প্রিয়ন্তি হাতে কব্জি চেপে ধরে। রক্ত পড়ছে হাত থেকে। প্রিয়ন্তি চোখের জল মুছে মৃদু স্বরে হেসে বলে, ''ভালোবাসা মানেই কাউকে জোর করা না, মাহতিম। ভালোবাসা হল নিজের কাজ দ্বারা ওপর মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া, সে তোমায় চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারে। অথচ তুমি? আমি তোমাকে ভরসা করতে পারি না মাহতিম। তোমার এই ভালোবাসা আজ অব্দি আমাকে অনেক ট"র্চার করেছে, অনেক বিপদের সম্মুখীন করেছে। আর এখন যদি আমি তোমায় বিয়ে করি, তাহলে বলা যায় না তোমাকে এই পাগলামি ভালোবাসার কারণে আমি কতটা মানসিক, শারীরিক যন্ত্রনায় ভুগব। আমি তোমায় ভ"য় পাই, মাহতিম। এই ভয়টা আমার অনুরাগে প্রতি আসেনা। ভালো থেকো। '

প্রিয়ন্তি চলে যাচ্ছে। কাদতে কাদতে পথে হাঁটছে ও। বারবার চোখের পানি মুছে হয়তো মনেমনে ধিক্কার জানাচ্ছে মাহতিমকে। প্রিয়ন্তি কিছু হলে কাদতে পারে, কিন্তু মাহতিম কেন কাদতে পারে না! কাদতে ইচ্ছে করলে, চোখ লাল টকটকে হয়ে যায়। নাকের পাটা ফুলে যায়। কিন্তু তবুও কান্না আসে না। মাহতিম আর তাকায় না। গলার টাই ঢিলে করে টাই ছিঁ"ড়ে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়। অফিসে ঢুকে নিজের কেবিন থেকে ব্যাগপত্র নিয়ে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। পথে তাকে আটকায় তার অফিসের কলিগ। অফিস রেখে এখন মাহতিম কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে, রাগে অন্ধ মাহতিম শুধু এটুকু বলে, 'জা"হান্নামে যাচ্ছি। সামনে থেকে সরে দাঁড়াও। '

কলিগ আর ঘাটায় না মাহতিমকে। মাহতিম বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। নিজের ঘরে এসে কাধের ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে সোফার উপর। মাহতিমের ভাই টেবিলে বসে তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছে। ভাবি মাহতিমকে এভাবে রে"গে ভেতরে আসতে দেখে দৌঁড়ে যান মাহতিমের দিকে। তবে তার আগেই মাহতিম নিজের ঘরে এসে দরজা আটকে দেয়। ভাবি দরজায় করাঘাত করেন, 'মাহতিম, এই মাহতিম। দরজা খুল। কি হয়েছে তোর? এভাবে হুট কর অফিস থেকে চলে এলি কেন? মাহতিম। '

মাহতিম জবাব দেয় না। কিছুক্ষণ বারান্দার দোলনায় বসে থাকে। মনেমনে ভাবতে থাকে, প্রিয়ন্তির কথা। এই একটা মেয়ের জন্যে মাহতিম কত কিনা করেছে। নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে এই মেয়ের তরে। প্রিয়ন্তি তাকে ভালো না বাসুক, একটু মায়া দয়া তো দেখাতে পারত। বস তার সঙ্গে অভদ্রতা করেছে, এটা প্রিয়ন্তি কেন নিজে থেকে বলেনি। আজ যখন মাহতিম এসব জেনে বসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা প্রিয়ন্তির খারাপ লেগেছে। হ্যাঁ, মানছে সে প্রিয়ন্তির বিশ্বাস ভেঙেছে। বন্ধুত্বের দেওয়া শর্ত ভেঙেছে। কিন্তু এসব কেন করেছে সে সেটা একবার ভাবতে ইচ্ছে করল না প্রিয়ন্তির। এত কঠোর কেন এই মেয়ে? আর কি করলে, এই মেয়ের একটুখানি ভালোবাসা পাওয়া যাবে? কি করলে?

মাহতিম শার্ট খুলতে খুলতে বারান্দা থেকে ঘরে এলো। শার্ট খুলে বিছানার উপর ছুঁ"ড়ে ফেলল। থুতনির নিচ গলার জায়গাটা জ্বল"ছে। মাহতিম আয়নার সামনে গিয়ে গলা দেখল। প্রিয়ন্তির নখের আঁ"চড় লেগে গেছে। মেয়েটা কি নখ কা"টে না ঠিকমত? মাহতিম রাগ সামলাতে না পেরে আয়নায় ঘু"ষি দেয়। সঙ্গেসঙ্গে আয়না ভে"ঙেচুরে মাটিতে পরে যায়। মাহতিম সেই ভাঙ্গা আয়নায় হেঁটে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে পরে। পা থেকে র"ক্ত ঝরছে তার। সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই তার। এতক্ষণের হম্বিতম্বি পর মাহতিম ক্লান্ত হয়ে যায়। সিলিংয়ের দিকে চেয়ে ভেজা কণ্ঠে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করে, 'কেউ আমায় একটু ভালোবাসা দাও। আমি ভালবাসা না পাওয়ার অভাবে মা"রা যাচ্ছি। ও আমায় কেন ভালোবাসল না? '


অনুরাগ ভয় পাচ্ছে। আজকাল প্রিয়ন্তিকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়। আর আজ প্রিয়ন্তির মুখে যখন শুনেছে, মাহতিম তার আপন কেউ! অনুরাগের পুরো পৃথিবী থমকে দাড়িয়েছে। অন্ধকার লেগেছে আশপাশ, ভূমণ্ডল। বোধ হয়েছে, প্রিয়ন্তি মেয়েকে জয় করা এত সহজ নয়! প্রিয়ন্তি হচ্ছে গোলাপের ন্যায়। গোলাপ পেতে গেলে তার কাটার ব্যথা তো সহ্য করতেই হবে। অনুরাগ তাই সিদ্ধান্ত নেয়। সে অতি দ্রুত প্রিয়ন্তিদের বাড়িতে বিয়ে প্রস্তাব পাঠাবে। আর কোনো হেয়ালিপনা নয়। প্রিয়ন্তিকে হারিয়ে ফেলার আগেই তাকে নিজের করে নিতে হবে। নাহলে পস্তাতে হবে অনেক!

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন