উপন্যাস        :         ভিলেন
লেখিকা        :          মনা হোসাইন
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

লেখিকা মনা হোসাইনের “ভিলেন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০১৯ সালে লিখেছেন।
ভিলেন || মনা হোসাইন Bangla Golpo - Kobiyal
ভিলেন || মনা হোসাইন

৪৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

ভিলেন || মনা হোসাইন (পর্ব - ৪৯)

নিলিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 
আকাশঃ তোমাকে পুলিশে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। তোমার এত সাহস কি করে হলো..??
রুবিনা বেগম ও এখানে আছে কিন্তু যেহেতু অপরাধ প্রমান হয়ে গিয়েছে তাই তিনি কিছু বলতে পারছেন না।
নাবিল: আকাশ শান্ত হ পারিবারিক বিষয়ে পুলিশ না জড়ানোয় ভালযা হবার হয়েই গিয়েছে সেটা ত আর ফিরে আসবে না।তারচেয়ে  ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় তার ব্যাবস্থা কর।
নাবিলঃ অবশ্যই পাবে তুই ওকে ওর দেশে পাঠিয়ে দে আমার মনে হয় এটাই ভাল।
আকাশঃ শুধুমাত্র নাবিলের জন্য আজ তোমায় ছেড়ে দিলাম তুমি আজেই ফিরে যাবে। অফিস থেকে ফিরে যেন তোমাকে এই বাড়িতে না দেখি বুঝেছো?
রুবিনা বেগমঃ কি বলছিস এসব আকাশ? তুই নিলিমাকে এভাবে অপমান করতে পারিস না।
তুই ওকে বিয়ে করবি বলে নিয়ে এসেছিলি।

আকাশঃআমাকে কি তোমার পাগল মনে হচ্ছে মা? যাকে ভালবেসে এত কিছু করলাম তাকে রেখে নিলিমা কে বিয়ে করব?আচ্ছা সে যাই হোক বাসা টা যেহেতু তোমাদের তোমরা ওকে রাখতেই পারো সেক্ষেত্রে মেঘলাকে নিয়ে আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে এই আর কি।
রুবিনা বেগমঃ তুই মেঘলার জন্য আমাদের সবাইলে ছেড়ে দিতে পারবি আকাশ.
আকাশঃ মেঘলার জন্য কে বলল? যে মায়ের কাছে তার সন্তানের চাওয়ার কোন দাম নেই সেখানে আর যাই হোক মমতাবোধ থাকতে পারে না।মা তুমি ভুল করছো,মেঘলা কে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবো না প্লিজ।মা মায় হয় তার সাথে অন্য কাউকে তুলনা করে সব মায়েদের অপমান করো না প্লিজ। আমি কখনই তোমার চেয়ে মেঘলাকে বেশি গুরুত্ব দিব না। তবে অন্যায় অন্যায়েই সে তুমি হও বা মেঘলা। মেঘলা যদি ভুল করে ও নিশ্চুই শাস্তি পাবে।ওর সাথে গদগদ প্রেমের সম্পর্ক আমার কখনো ছিল না আজও নেই ভবিষ্যতেও থাকবে না।
তবে ওকে আমি ভালবাসি তাই আমি চাইব না তুমি আমার ভালবাসাকে কেড়ে নাও।তুমি যদি আমার ভালবাসাকে কেড়ে নাও আমিও তোমার ছেলেকে কেড়ে নিতে বাধ্য হব। ভালবাসা ছাড়া বেঁচে থেকে কি লাভ? আশা করি বুঝাতে পেরেছি তাই একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিঃসন্তান হওয়ার চেয়ে ভালবাসা মেনে নেওয়াটাই মনে হয় ভাল।
কথাগুলি বলেই আকাশ চলে গেল।


নাবিলঃআকাশ এক কথার মানুষ ওকে রাগিও না বড় মা তারচেয়ে নিলিমাকে পাঠিয়ে দাও।
ঈষানঃ ওরা পাঠাবে কি নিলিমা যেটা করেছে এর পর আমিই ওকে থাকতে দিব না নিলিমা যা ব্যাগ গুছিয়ে নে আমরা আজেই ফিরে যাব।
নিলিমাঃ এত শোধ আমি তুলব মিষ্টার আকাশ.... মনেমনে।
বেশকিছুক্ষন পর আকাশ রেডি হয়ে মেঘলার ঘরে আসল। মেঘলার পায়ে ব্যাথা তাই তখন নিলিমার সাথে আকাশের কি হয়েছে জানতে পারে নি।তাই আকাশ আসতেই মেঘলা বলল,
মেঘলাঃ ভাইয়া এত চেঁচামেচি হচ্ছিল কিসের..?? কি হয়েছে রে...
আকাশঃ কিছু হয় নি....
মেঘলাঃ কি হয়েছে বল না....
আকাশঃ একবার নিষেধ করেছি না? এক কথা বারবার  বলা আমার পছন্দ না জানিস না।
মেঘলা চুপ হয়ে গেল....
আকাশঃ যাই হোক আমি অফিসে যাচ্ছি।তুই কোন রকম ঝামেলা করবি না। হাঁটার চেষ্টা একদম করবি না ঠিক আছে..??
মেঘলাঃ তুই অফিসে যাচ্ছিস মানে? 
আকাশঃ অবাক হলি মনে হচ্ছে...
মেঘলাঃঅবাক হওয়ার কথা না?
আকাশঃ কেন অবাক হবি কেন?
মেঘলাঃ আমার পায়ে ব্যাথা তাও তুই আমাকে রেখে চলে যাবি?
আকাশঃ কেন যাব না কেন?

মেঘলাঃ আমি ব্যাথা পেয়েছি সে জন্য। 
আকাশঃ তোর দেখাশুনা করার জন্য...???
মেঘলাঃ না না তা হবে কেন..??
আকাশঃ আমি তোর কাজের লোক, তুই ব্যাথা পেয়েছিস তাই বসে বসে তোকে পাহারা দিতে হবে সেটাই ত বুঝাতে চায়লি তাই তো?
মেঘলাঃ না এসব বলি নি বলছিলাম আজ না গেলে হয় না?
আকাশঃ আমি কি তোর গোলাম..তোর কথায় উঠতে হবে তোর কথায় বসতে হবে
আকাশের কথা শুনে মেঘলার মন খারাপ হয়ে গেল।
মেঘলাঃ প্রেমিক রা তার প্রেমিকার জন্য কতকিছু করে আর ওকে একদিন থাকতে বল্লাম তারজন্য কতকিছু বলল (মনে মনে)
মেঘলাঃ আমি সেটা বলি নি... এমনি বলেছিলাম।
আকাশঃ অযোক্তিক কথা বলবি কেন.
মেঘলাঃ ভুল হয়েছে সরি...


আকাশঃ একটা কথা কান খোলে শুনে রাখ অফিস অফিসের জায়গায় পার্সনাল লাইফ পার্সনাল জায়গায় ২ টা কখনোই এক জায়গায় করবি না।আর আমার উপড় জোর কাটানোর চেষ্টা একদমি করবি না।
অন্যসব প্রেমিক প্রমিকার মত যদি ভেবে থাকিস আমি তোকে নিয়ে আহ্লাদী প্রেম করব তাহলে বলব এসব স্বপ্ন এখানেই বাদ দে আমি তোকে নিয়ে কখনো বৃষ্টি তে ভিজব না কখনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজের হাতে ফুচকাও খাওয়াতে পারব না বুঝেছিস...
মেঘলাঃ সরি বল্লাম তো.. থাকতে বলেছি জন্যে এত গুলি কথা শুনালি...??
আকাশঃ কথা শুনাইনি যা সত্যি তাই বলেছি।
মেঘলাঃ ঠিক আছে যা যা চলে যা...
আকাশঃ রাগ দেখাচ্ছিস কোন সাহসে...???

 (ধমক দিয়ে) তোর জন্য কাজ কর্ম সব ছেড়ে দেওলিয়া হয়ে যায় নাকি?
মেঘলা প্রায় কেঁদে ফেলেছে....কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলল আর কখনো বলব না।
আকাশঃগুড কিন্তু মুখটা এমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল কেন?
মেঘলা এবার কেঁদে ফেলল,কেঁদে কেঁদে বলল
 আমি কি ঘুরতে যেতে বলেছিলাম আমি অসুস্থ তাই তোকে থাকতে বলেছিলাম। আর তুই কতগুলি কথা বললি।তুই ত জানিস বাসায় কেউ আমাকে পছন্দ করে না আমার কিছু দরকার হলেও কেউ দিবে না তাই বলেছিলাম আর কিছু না....
আকাশঃ আমি ছোট মাকে বলে দিচ্ছি ছোট মা তোকে খায়িয়ে দিবে....বলেই আকাশ নাবিল কে ডাকতে লাগল।
মেঘলাঃ ওকে ডাকছিস কেন আমার দেখাশুনা করতে হবে না আমি একাই পারব তুই যা।
আকাশঃ আমি কি তোকে ডাকছি? তাহলে তুই কথা বলছিস কেন।চোখ মুছ নাবিল এসে যেন না দেখে তুই কাঁদছিস।
মেঘলাঃ....


আকাশঃ কিরে কথা কানে যায় না? থাপ্পড় মারতে হবে?
মেঘলা জানে আকাশের মায়া দয়া নেই এখন চোখ না মুছলে সত্যি সত্যি মারবে তাই বাধ্য হয়ে চোখ মুছতে লাগল। 
তখন নাবিল আসল।
নাবিলঃ আকাশ ডাকছিলি..???
আকাশ নিজের হাতে থাকা গাড়ির চাবিটা নাবিলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল অফিসে যা তো। আজ থেকে তুই আমার অফিসের ম্যানেজার।আমি মিসেস জেনিফার কে বলে দিচ্ছি তোকে সব দেখিয়ে দিবে।তুই সবটা একটু গুছিয়ে নিস আর বলিস আমি আজ যাব না।
আকাশের কথা শুনে মেঘলা অবাক হল।
নাবিল মুচকি হেসে চলে গেল।

মেঘলা আকাশের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আকাশ বলল এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন..
মেঘলাঃ থাকতে হবে না তোকে.. 
 তুই যা।
আকাশঃ আগেই বলেছি আমি কারো কথায় চলতে পারব না। যাব না মানে যাব না।
মেঘলাঃ যাবিই না যেহেতু তাহলে এতগুলি কথা না বললেও ত পারতি।
আকাশ কোর্ট খুলতে খুলতে বলল তোকে হার্ট করার দরকার ছিল তাই করেছি। 
মেঘলাঃ মানে...??
আকাশঃ এই যে তুই কষ্ট পেলি কাঁদলি এতে লরে ভবিষ্যতে কোন অন্যায় আবদার করার আগে তোর বুক কাঁপবে...

মেঘলাঃ তুই কি বলিস কিছুই বুঝি না। কষ্ট দেওয়ারও  দরকার থাকতে পারে...??
আকাশ এসে মেঘলার পাশে বসল,তারপর মেঘলার হাত ধরে মেঘলার চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বলতে শুরু করল,
কিছু বলার চাওয়ার আগে বুঝতে হয় কি আবদার করছি সেটা কি আদো যুক্তিসঙ্গত?আর কার কাছেই বা আবদার করছি।তুই কি বুঝিস না আমি তোকে কতটা ভালবাসি?
তুই যে বললি আজ আমি অফিসে না যেতে তুই কি জানিস না আজ আমার অফিসে প্রথম দিন? অফিসের বস হিসেবে আমার কি উচিত ছিল না অফিসে গিয়ে সবার সাথে ভালভাবে পরিচিত হওয়া?সবার কাজ সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে অফিস টা গুছিয়ে নেওয়া?


আর তুই এটাই বা ভাবলি কি করে যে তুই ব্যাথা পেয়েছিস সেটা আমার মাথায় নেই। আমি অফিসে গিয়ে যাস্ট সবাইকে কাজ গুলি বুঝিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যেই চলে আসতাম আমি নাবিল কে বলেছিলাম তোর দিকে খেয়াল রাখতে ছোট মাকেও বলেছিলাম তোকে দেখতে আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আস৷ কিন্তু তুই আমাকে ভরসা করতে পারলি না ভাবলি আমি তোকে ফেলে চলে যাচ্ছি।অফিসে যাওয়াটা আমার খুব প্রয়োজনীয় ছিল এই পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য আবেগের চেয়ে টাকার প্রয়োজন অনেক বেশি। সবসময় যা ইচ্ছা আবদার করা যায় না মেঘলা। নিজের ইচ্ছাকে সবসময় গুরুত্ব দেয়া যায় না সেক্রিফাইস করা শিখতে হয়।যা তুই পারিস না।তুই বাস্তবতা বুঝিস না সবসময় আবেগে ভাসিস যা ক্ষতিকর। আমি কি বুঝাতে চাইছি বুঝতে পেরেছিস তো..??

মেঘলা অনুশোচনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আকাশ মেঘলাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিল।
আকাশঃ থাক কাঁদতে হবে না....ব্যাপার না আস্তে আস্তে তুই ও স্ট্রং হয়ে যাবি আকাশ আছে তো তোজে সব শিখিয়ে দিবে কাঁদিস না প্লিজ।
কে শুনে কার কথা মেঘলা আবার কেঁদে ফেলেছে।
আকাশঃ কি হচ্ছেটা কি কাঁদবি না...
মেঘলাঃ আমি আবার তোকে ভুল বুঝলাম....
আকাশঃ বোকা মেয়ে ভূল হোক বা ঠিক  আমরা আমরাই তো ভুল না করলে ঠিক টা শিখবি কি করে মন খারাপ করিস না...
মেঘলাঃ উম মমমম....


আকাশঃ উফফ আবার কাঁদে....দেখি তাকা আমার দিকে... আকাশ মেঘলার মুখ উঁচু করে চোখ মুছে দিতে লাগল।
মেঘলা আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলল যাই বলি আর যাই করি আমি তোকে খুব ভালবাসি এটা কিন্তু সত্যি।
আকাশঃ আমি জানি রে পাগলি...আমিও তোকে খুব ভালবাসি বলে মেঘলার কপালে চুমু খেল আকাশ।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন