উপন্যাস       :        কৃষ্ণবেণী
লেখিকা        :         নন্দিনী নীলা
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ৬ই অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা নন্দিনী নীলার ‘কৃষ্ণবেণী’ শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৬ই অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কৃষ্ণবেণী || নন্দিনী নীলা Bangla Golpo - Kobiyal
কৃষ্ণবেণী || নন্দিনী নীলা

1111111111111111111111

১৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কৃষ্ণবেণী || নন্দিনী নীলা (পর্ব - ১৭)

তৃষ্ণা যখন জাগ্রত হলো চোখের সামনে দেখতে পেল জায়ান বসে আছে। ও তাকালো তখনো জায়ান ওর মুখে পানি ছিটা দিচ্ছে ও ধরফরিয়ে উঠে বসে এদিক ওদিক তাকালো।
"পাগলটা আমাকে মারতে এসেছিল।" বলেই কান্না করে দিলো। তৃষ্ণা জায়ানের বাহু খামচে ধরে বলল,"আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আর কোনদিন পাগলের কাছে যাব না। খুব ভয় পেয়েছি কি ভয়ংকর ওই পাগলটা। সময় মতো আপনি না আসলে আমার কি হয়ে যেতো? পাগলটা আমাকে মেরে ওই ঘরে বন্ধ করে দিতো।"

জায়ান ঝামটা মেরে বাহু থেকে তৃষ্ণার হাত ছাড়িয়ে ঠাস করে তৃষ্ণার গালে একটা থাপ্পড় মেরে বসল। তৃষ্ণা শক্তপোক্ত জায়ানের হাতের থাপ্পড় খেয়ে ছিটকে পরল বিছানায়। জায়ান তৃষ্ণার হাতের কনুই শক্ত করে ধরে টেনে আবার বিছানায় বসিয়ে গাল চেপে ধরে বলল,"কোন সাহসে তুমি ওই রুমে যাওয়ার সাহস করেছো? বেশি লাই দিয়েছি বলে মাথায় চরে বসেছো তাই না?"

তৃষ্ণার ফর্সা গালে ৫ আঙ্গুলের ছাপ ফুটে উঠেছে। লাল টুকটুকে হয়ে। গাল চেপে ধরার তৃষ্ণার মুখ মন্ডল আরো ব্যথায় নীল হয়ে উঠছে। ওর চোখে জল ভর্তি হয়ে উঠেছে।
তৃষ্ণা কথা বলতে পারছে না উম উম করে কথা বলার চেষ্টা করছে। জায়ান হাত সরিয়ে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। 

মন চাচ্ছে তৃষ্ণাকে এর উপযুক্ত শাস্তি দিতে কিন্তু এই মেয়েটাকে ও একটু বেশি ভালোবাসে তাইতো একটু আঘাত দিয়েই এখন নিজের খারাপ লাগছে।
তৃষ্ণা ভয় খাটের সাথে লেপ্টে আছে। জায়ান রাগে হাত মুষ্টি বন্ধ করছে আবার খুলছে। তৃষ্ণা মুখে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর ভয়ার্ত চোখে জায়ানের দিকে তাকাচ্ছে।
জায়ান তৃষ্ণার দিকে চোখ ঘুরিয়ে একটু তাকাতেই তৃষ্ণা ভয়ে বিছানা থেকে উঠে পরল। জায়ান ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে আছে। আঙুল দিয়ে কাছে আসতে বলল।
তৃষ্ণা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

" আমাকে ক্ষমা ক‌ইরা দেন।আমি আর কোনদিন ওই রুমে যামু না। আমাকে মাইরেন না।"
" এদিকে আসো।আমার উঠা লাগলে মার খাওয়া থেকে কেউ তোমায় বাঁচাতে পারবে না।"
তৃষ্ণা ভয়ে ভীত হয়ে এগিয়ে আসে জায়ানের কাছে।
জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। তৃষ্ণা বসে ও আরো দুইবার ক্ষমা চাইল কান্না গলায়‌।

জায়ান নিষ্পলক চোখে চেয়ে আছে ওর মুখের দিকে। তৃষ্ণা মাথা নিচু করে কাঁদছে। জায়ান তৃষ্ণার গালে আঙুল স্পর্শ করতেই তৃষ্ণা আহ্ করে উঠে।
রাগের মাথায় খুব জোরেই থাপ্পড় মেরেছে। তৃষ্ণার গালের অবস্থা খারাপ করে দিছে।
জায়ানের রাগ এবার একটু কমলো। তৃষ্ণা ব্যথিত মুখশ্রী দেখে ওর রাগ নিমিষেই গায়েব হয়ে গেছে। ও নরম সুরে বললেন," ব্যথা কি বেশি লেগেছে?"
তৃষ্ণা বিস্মিত চোখে তাকালো জায়ানের দিকে। 
" answer me"
" হ্যা অনেক ব্যথা করছে।"

জায়ান চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করে করে বলল," ঐ রুমে কেন গিয়েছিলে?"
তৃষ্ণা শুকনো ঠোঁট দুটো জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল," পাগলটা কে দেখার অনেক ইচ্ছা হয়েছিল তাই গিয়েছিলাম। একটু দেখেই চলে আসবো। আমাকে ক্ষমা করে দিন আর কোনদিন এমন কাজ করব না।" 

" পাগল কারো দেখার ইচ্ছে হয়? এই প্রথম শুনলাম।"
তৃষ্ণা আবার পলক নিচের দিকে নামিয়ে ফেললাম।
" বেশি দুঃসাহস করে ফেলেছ। তাই আঘাতটা তোমার প্রাপ্য ছিল।"
জায়ান পকেট থেকে ফোন বের করে কল করল লিয়াকে। 
"হ্যালো লিয়া ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আসো আমার রুমে।"
বলে কল কেটে দিলো। কয়েক মিনিট পরে লিয়া বরফ নিয়ে এসে হাজির হলো বাটিতে করে।

"স্যার কি হয়েছে?"
"কিছু না তুমি আসতে পারো। বাকিটা আমি হ্যান্ডেল করে নিতে পারবো।"
লিয়া মাথা নিচু করে চলে যায় দরজা থেকেই। জায়ান তৃষ্ণার গালে আলতো হাতে বরফ লাগিয়ে দিতে থাকে। তৃষ্ণা ব্যথায় কেঁপে কেঁপে ওঠে।

" আহ্ ব্যথা লাগছে। ক্ষমা করে দিন।"
" তোমাকে এখন ব্যথা নয় বরফ দিয়ে ব্যথা সারাতে চাচ্ছি। বসো আমি মলম দিয়ে দিচ্ছি কমে যাবে। "
জায়ান তৃষ্ণার গালে মলম দিয়ে দিলো। তৃষ্ণা বলল," নিজে মারলেন এখন নিজেই সেবা করছেন?"
জায়ান বললেন," আমার ব‌উ। আমিই মারব। আমিই আদর করবো। বুঝেছ"
"বুবু তোমার গালে কি হ‌ইছে?"
বকুল চোখ বড়ো বড়ো করে তৃষ্ণার গালের দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা গাল হাত দিয়ে বলল,"কিছু না কি হবে?"
"হাছা কথা ক‌ও। তোমার গাল ওমন গাল হয়ে আছে ক্যান? মনে হ‌ইতাছে কেউ মারছে!"
" ধুর কি বলিস! কে মারবে আমারে?"
" তাইলে গাল ওমন লাল হ‌ইয়া আছে ক্যান?"
" ঘুম থেকে উঠে দেখি ফুলে আছে। বাদ দে তো এসব।"
"আমারে রাইতে তুমি একলা ঘরে রাইখা আসছিলা আমিতো টের ও পাইলাম না।"
" টের পাইলে কি তুই আর একা থাকতি? ভালোই হয়েছে রাত শেষ করে ফেলেছিস এক ঘুমে। তোর ঠোঁটা এতো লাল হইয়া আছে ক্যান?"
বকুল থপ করে বিছানায় থেকে উঠে গেল। 
"আমি মুখ ধুইয়া আসি।"

তৃষ্ণা সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে। বকুল বাথরুমে ঢুকে নিজের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বন্ধ করতেই একটা ঘটনা ওর চোখের সামনে ভেসে উঠল। ও লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল। 

"তুই আমার কাছ কিছু লুকাচ্ছিস?" সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল তৃষ্ণা।
" বুবু কি ক‌ও? কি লুকামু?" চমকানো কন্ঠে বলল বকুল।
" আর দুই দিন আছিস তাই কিছু লুকাবি না আমার থেকে।"
" বুবু কি যে ক‌ও না। আমি কিচ্ছুটি লুকাই নি।"
" আচ্ছা।"

তৃষ্ণা বাইরে আসতে বলে চলে গেল। বকুল ভয়ে কাঁপছে। ও কি ভাবে সব বুবু কে বলবে? 
ও বিছানায় বসতেই দরজা আটকানোর আওয়াজ হলো। ও চোখ কপালে তুলে সামনে তাকিয়ে আছে। জোভান ভয়ে ভীত হয়ে এগিয়ে এসেছে বকুলের দিকে।
" বকুল আই এ্যাম সরি। বিশ্বাস করো কালকে তোমাকে ওইভাবে স্পর্শ করতে চাইনি। কিভাবে যেন হয়ে গেল। আমাকে ভুল বুঝো না বিলিভ মি আই রিয়েলি লাভ ইউ। আমার তোমাকে খারাপ ভাবে অপবিত্রভাবে স্পর্শ করার ইচ্ছে ছিল না। আমি ভুল করে তোমার ঠোট স্পর্শ করে ফেলেছিল।"

" শয়তান পোলা আবার আইছিস? বুবুর দেবর ব‌ইলা এহনো কিছু ক‌ই নাই। তোর ভালো আচরণ দেইখা তোরে আমার মনে ধরেছিল আর তুই সুযোগ পাইয়া কি করলি?"
জোভান কীভাবে মানাবে জানে না তাই। মাথা নিচু করে বলল," দুইদিন পর চলে যাবে শুনলাম সত্যি?"
" হ সত্য।"
"তোমাকে অনেক মিস করব। আবার কবে আসবে?"
"তগো এই শয়তান বাড়িতে আর জীবনে আসমু না।"

জোভান আরেকবার সরি বলে চলে গেল। চলে যাওয়ার আগে বকুলের রাগ ভাঙাতে হবে যেভাবেই হোক ভাবতে ভাবতে গেল।
বকুল বাইরে এসে আজ প্রথম ঝটকা খেল। ও তৃষ্ণার মতো দুইটা জায়ান দেখে চোখ কপালে তুলে ভূত বলে চিৎকার করে উঠে। ওর চিৎকার শুনে সবাই চমকে ওর দিকে তাকায়। 
তৃষ্ণা কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? চিৎকার করছিস কেন?"

জোভান তখন খাবার জন্য টেবিলের দিকে আসছিল বকুলে চিৎকার শুনে ও বুঝে গেছে কাহিনীটা ও এগিয়ে এসে বলে,"ভাবি আমার দুই জমজ ভাইকে দেখে তোমার বোন হয়তো ভূত ভেবে চিৎকার করেছে তাই না বকুল?"
"দুলাভাই এর মত আর একটা দুলাভাই আছে? আয় হায় দুজনে জমজ !"

বকুল চিন্তিত মুখে ভাবছে তাহলে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল কে? সে আবার তৃষ্ণা বলে চুমু দিয়েছিল। তাহলে সেটা দুলাভাই কিন্তু তার কপালে যেন আমি তিল দেখছিলাম। এখন আমার দুলাভাই কোনটা ও বুবুর দিকে তাকিয়ে বলল,"বুবু আমার দুলাভাই কি ওই লাল তিল ওয়ালা টা?"
ওর ঠোঁট কাঁপছে উত্তেজনায়।

তৃষ্ণা মাথা নাড়িয়ে না বলে বলল," ওই তিল ওয়ালা টা আমার দেবর তোর দুলাভাইয়ের জমজ ছোট ভাই‌।"
বকুল জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ান কেমন অদ্ভুত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তৃষ্ণা বকুল কে চেয়ার টেনে বসিয়ে নিজেও বসল।
বকুল ভয়ে কাঁপছে ওর সোজা বসেছে আয়ান পাশে জোভান। 

"বুবু তোর সাথে আমার কথা আছে।"
" কি কথা বল?"
" বুবু তোর দেবর তোরে জড়িয়ে ধরে ক্যান?" কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলল। 
তৃষ্ণা থমকানো চোখে তাকালো বকুলের দিকে।
" কি আজেবাজে কথা বলছিস তুই বকুল?"
" বল না বুবু আমি নিজের চোখে দেখছি!"

" কি দেখছিস তুই? এরকম একটা কথা কিভাবে বলতে পারলি? আমার দেবর আমারে...
তৃষ্ণা থেমে গিয়েও আবার বলল," এমন...
বকুল বলল," তোমারে আমার কিছু কথা জানানোর আছে। আমারে তুমি ভুল বুঝো না‌। আমি আসলে কথাটা এভাবে বলতে চাইনি অন্য একটা কথা বলতে চাইছিলাম।"
"যা বলার সরাসরি বল। এতো ভনিতা কবে থেকে শুরু করছিস?"

বকুল ঢোক গিলে ভাবে সমস্ত কথা বলে দিবে এক্ষুনি। আর সময় নষ্ট করবে না। এতো দিন ভেবেছিল দুলাভাই না হয় একবার ভুল করে ধরেছে কিন্তু দুলাভাইয়ের ভাই কেন ওর বুবুকে জড়িয়ে ধরতে চাইছিল? ব্যাপারটা তো পরিষ্কার হচ্ছে না কোন তো গন্ডগোল আছেই। তৃষ্ণা বোনের দিকে তাকিয়ে আছে কি সত্যি জানাতে চাই বকুল। সেটা জানবার জন্য অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে বকুলের দিকে। আর বকুল হাঁসফাঁস করছে। কথাটা কীভাবে বলবে ভেবে অস্থির ও।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে 

১৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা নন্দিনী নীলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন