গল্প : অবেলায় তোমার আকাশে
লেখিকা : নুসাইবা রেহমান আদর
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২১শে ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের ‘অবেলায় তোমার আকাশে’ শিরোনামের এই ধারাবাহিক গল্পটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য গল্পটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ২১শে ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
অবেলায় তোমার আকাশে || নুসাইবা রেহমান আদর |
1111111111111111111111
অবেলায় তোমার আকাশে || নুসাইবা রেহমান আদর (পর্ব - ০১)
দুলাভাই আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না। আমাকে ক্ষমা দিন আপনার পায়ে ধরছি৷ আমার দিকে আর এক পা আগাবেন না৷
ইতির পুরো চেহারা জুরে আতংকের ছাপ৷ সামনেই ইতির শাড়ীর আচল ধরে টেনে যাচ্ছে মাহবুব৷ মাহবুব কে দেখতে খুব ভয়ংকর ঠেকছে৷ মাহবুবের ঠোটের কোনায় লেগে আছে নোংরা হাসি৷ আজ সে অনেকদিন পর ইতিকে একান্তে পেয়েছে। সতেরো তে পা দেওয়া ইতি আজ এসেছিলো বোনের বাড়িতে বোনের সাথে দেখা করতে । পাশেই তার বান্ধবির বিয়ে খাওয়ার জন্য এসেছিলো। বাড়িতে এসে দেখে বোন না কি বাসায় নাই তার ননদের বাসায় গেছে। বোন কে না পেয়ে যাওয়ার জন্য বাড়াতেই ইতির দুলাভাই টান দিয়ে ইতিকে রুমের মধ্যে ছুড়ে ফেলে দেয়। মাহবুবের এমন কাযে অবাক হয়ে যায় ইতি। মেঝেতে পরায় হাতের কুনুইতে অনেক ব্যাথা পায়। উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তখন ই গায়ের থেকে শাড়ি টেনের ধরে ইতির।
- আমার অনেক দিনের ইচ্ছা আজ পূরন হবে। আমার কাজে রাজি হয়ে যাও ইতি। তোমার বোন কিছু জানতে পারবেনা আর শুনো চুপচাপ থাকলে তোমার লাভ আছে।
- আমার কোনো লাভ লোকসান লাগবে না আমাকে যেতে দিন দুলাভাই। আমি আপনার ছোট বোনের মত। আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না।
ইতির কান্না মিশ্রিত কথা মাহবুবের পাষন্ড মন গলাতে পারলো না কিছুতেই। ইতিকে জরিয়ে ধরলো জোর করে। ইতির সব শক্তি যেনো হারিয়ে গেলো। স্তব্দ হয়ে গেলো সে ঘৃনায় গা গুলিয়ে উঠছে তার। কি হবে তার কে বাঁচাবে তাকে এই পশুর হাত থেকে?
- কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও প্লিজ।
ইতি জোরে চেচিয়ে উঠে, ইতির চিৎকারে ভরকে যায় মাহবুব। পাশের রুম থেকে হেলতে হেলতে এই রুমে আসে মাহতিব। ভাইকে তার শালির সাথে এই কাজ করতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে৷ অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে সে চোখ খুলে রাখার শক্তি পাচ্ছেনা।
- কি হচ্ছে এখানে ভাইয়া?
ছোট ভাইয়ের গলার আওয়াজে দূরে সরে দাঁড়ায় মাহবুব। ইতি এই সুযোগে শাড়ির আচল গায়ে জরিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।
- কিছুনা তুই বাসায় কখন এলি আমি দেখলাম না তোকে?
- যখন ই আসি না আসলে আবারো তোমার সেই জঘন্য রুপ কি দেখতে পেতাম? আজকেও এক নিষ্পাপ মেয়ের জিবন নষ্ট করত্র গায়ে লাগছে না তোমার?
- এতো বেশি বুঝতে তোকে কেউ বলে নাই। নিজের কাজে যা। লজ্জা করে না ভাইয়ের টাকায় বসে গিলছিস আর ভাইয়ের মুখের উপর তর্ক করছিস।
মেহতাব এবার মাহবুবের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।
- আমাক্ব তো থামিয়ে দিলে,অই মেয়েটা কে কিভাবে থামাবে নিজের শালি ছিহ!
ফ্লোরে এক দলা থুথু নিক্ষেপ করে সেখান থেকে চলে গেলো মেহতাম। তার এখজ ঘুমানো দরকার। মাহবুব পড়ে গেছে দুশ্চিন্তায়। ইতি যদি আজকের ঘটনা সবাইকে বলে দেয় তাহলে কি হবে? স্মৃতি যদি জানতে পারে এই ঘটনা তাহলে যে তাকে তালাক দিবে। ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্মৃতি। যেভাবেই হোক বিষয়টি কে সামলাতে হবে তাকে৷
ইতি আর স্মৃতি দুইবোন। বছর দুয়েক আগে মাহবুবের সাথে এরেঞ্জ মেরেজ হয় স্মৃতির৷ গ্রামে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে স্মৃতি। বাবার সামান্য মুদি দোকান এই আয়ের মাধ্যমেই তাদের সংসার লেখাপড়ার খরচ চলে। বাবাকে ছোট থেকে কষ্ট করতে দেখেছে সে। সহজ সরল স্মৃতি কে যখন বিয়ের কথা বলা হয় তখন বাবা মায়েত কথায় রাজি হয়ে যায় সে। পাশের গ্রামেই মাহবুবের বাড়ি। পাশের এলাকার চেয়ারম্যান মাহবুব,২ ভাই এক বোন আর মা আছে পরিবারে। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। বাড়িতে ছোট ভাই মেহতাব যদিও সে বেশিরভাগ ঢাকাই থাকে ওখানে থেকেই পড়াশুনা করে সে৷
মাহবুবের চরিত্র ভালো না যা মেহতাব যখন থেকে জেনেছে সেই থেকে বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিয়েঁছে সে। ঘৃনা হয় বড় ভাই বলে ডাকতে তাই তো দূরে থাকে সে৷ ইতির মা বাবা জামাই বলতে পাগল। হবেই বা না কেন বড় মেয়ের জামাই তাদের সব দেখাশুনা করে। কতবড় মাপের মানুষ সে বিশ্বাস করেন অনেক।
মাহবুব অনেক ভেবে চিনতে একটা পরিকল্পনা করলো। সে নিজের বুদ্ধির কথা ভেবে নিজে নিজেই হেসে উঠলো। এটা হলে যে ঘুরেফিরে ইতিকে এই বাড়িতেই আসতে হবে। আর একবার ইতি এই বাড়িতে আসলে একরাত্ব্র জন্য হলেও সে ইতিকে বিছানায় এনে ছাড়বে। দ্রুত বেড়িয়ে গেলো সে নিজের উদ্দেশ্যে সফল করার জন্য।
ইতির চেহারা কান্না করতে করতে ফুলে গেছে। বাডিতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে নিজের ঠিক করে নিলো সে। আজ তার সাথে এতোবড় কাহিনী হলো কিভাবে কাকে সে বলবে। আদো কি তার বাবা- মা তাকে বিশ্বাস করবে? এম্নিও তার মা তাকে দুঃচোখে দেখতে পারেনা। বাডিতে ঢোকা মাত্রই ইতির মা ইতিকে দেখে বললন।
- অই আসছে নবাবের বেটি একেবারে সাইজা রাস্তায় রাস্তায় বেডাগো নিজের রুপের ঝাজ দেখাইয়া। তা কয়জন রে নিজের রুপের যাদু তে আটকাইলি রে তুই?
মায়ের মুখে এমন যঘন্য ভাষা শুনে হৃদয় তার খন্ড খন্ড হয়ে যায়। আজকে যা ঝড় তার উপর দিয়ে গেছে তার উপর এইসব। নিজের রুমে গিয়ে শাড়ি পালটিয়ে থ্রিপিস পড়ে শুয়ে পড়লো। কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গেলো ইতি। ঘুমানক ছাড়া এসব ভুলার উপায় নেই যে তার কাছে। কেউ নাই তার এই পৃথিবী তে প্রচন্ড একা লাগছে তার। বিকেল গড়িয়েছে সেই কখন। ইতি ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। তখন বাড়িতে আগমন ঘটে মাহবুব আর স্মৃতির। অসময়ে মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে বাড়িতে দেখে অবাক হয়ে যায় ইতির মা। ব্যাস্ত হয়ে যায় সে মেয়ের আর জামাইকে বসতে দেওয়ার জন্য।
- ইতি কোথায় মা?
- সে তো ওর ঘরে ঘুমিয়ে আছে। কার বিয়ে খেতে এসে যে শুয়েছে এখোনো উঠে নি।
- যাও ও রে ডেকে নিয়ে আসো মা।
স্মৃতির কথায় ওর মা ইতিরে ডাকতে যায়। জানেন স্মৃতি ইতি বলতে পাগল তাই তো ডাকতে গেছে। জামাই না থাকলে হয়তো দু এক কথা শুনিয়ে দিতেন এইজন্য তিনি। ইতিকে নিয়ে আবার স্মৃতির সামনে এসে দাড়ালো উনি। মাহবুবের দিকে ইতির নজর যেতেই সে রেগে গেলো। ঘৃনায় মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।
- তোর দুলাভাই আমাকে যা যা বলছে তা কি সত্যি?
- কি বলেছে দুলাভাই তোকে আপা?
- তুই আজ আমাদের বাসায় গিয়েছিলি?
- হ্যাঁ আপাই আমি গিয়েছিলাম তোর সাথে দেখা করতে কিন্তু গিতে দেখি তুই বাড়িতে নাই।
- বাকি কথা কে বলবে যা হয়েছে তা সব বল আমাকে?
ইতির মা দুই বোনের কথায় অবাক হয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। কিচু বলা উচিত হবে না ভেবে কিছু বলছেন না। তবে আজ বড় মেয়েকে দেখ্ব তার অবাক লাগছে মেয়েটা তো রেগে আছে বুঝা যাচ্ছে।
- আপা দুলভাই কি বলছে আমি জানিনা। আমি গিয়ে তোকে না দেখে চলে আসতে নিয়েছি তখন দুলাভাই আমাকে জোর করে রমে নিয়ে গিয়ে।
আর কিছু বলতে পারছে না ইতি ফুপিয়ে কান্না করে উঠলো। স্মৃতির এতে কোনো ভাবাবেগ দেখা গেলো না। সে ঠাটিয়ে এক চর দিলো ইতির গালে। ইতি গালে হাত দিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক।
-লজ্জা করে না অসভ্য মেয়ে। আমার দেবরের সাথে খারাপ কাজ করতে তোকে মাহবুব দেখে ফেলায়া নিজের বড় ভাইয়ের মত দুলাভাইর নামে এমন অপবাদ দিতে লজ্জা লাগলো না?
- ছিহ ইতি তুমি এতো খারাপ? তোমাকে আমি নিজের বোনের নজরে দেখি আর সেই তুমি আমার নামে এতো বাজে কথা বলছো?
- বিশ্বাস কর আপা দুলভাই মিথ্যে বলছে
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল। এই দিনে তিনি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার নড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২০ সালে নড়িয়ার ডা. কে এ জলির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এর বাইরে আদর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে। তবে তিনি সামাজিক মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “আমি অধরার এক আচল মাত্র যে কি না বিনা দ্বিধায় ধুলোয় মিলিয়ে যায়। আমার প্রতিটা কল্পনায় ফুটে ওঠা প্রতিটা চিত্র শব্দতে রুপান্তরিত করি।”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন