উপন্যাস       :        প্রিয়োশীর ভালোবাসা
লেখিকা        :         নুসাইবা রেহমান আদর
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ৩০ই নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের ‘প্রিয়োশীর ভালোবাসা’ শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৩০ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর Bangla Love Story - Kobiyal
প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর

1111111111111111111111

০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়োশীর ভালোবাসা || নুসাইবা রেহমান আদর (পর্ব - ০৪)

রাত ঠিক ১০ঃ২০ বাজে, সিকদার বাড়ির এক নিয়ম হলো সকালের এবং রাতের খাবার সবাই একসাথেই খাবে৷ কারন দুপুরে সবার অফিস থাকে ছোটদের স্কুল,কলেজ। এই নিয়ম টা সমুদ্রের দাদার তৈরি করা। 
নিয়ম অনুযায়ী খাবার টেবিলে সবাই এসে বসেছে। সবার শেষে রওনাক সেখানে উপস্থিত হয়৷ সমুদ্র রওনাক কে চেয়ার টেনে যায়গা করে দিলো বসার জন্য। 
- তা ছোট আম্মু তুমি এখন কেমন আছো?
- ভালো আছি বড় আব্বু।

শামীম সিকদারের প্রশ্নে মৃদু স্বরে জবাব দিলো রওনাক। 
পিয়াশ সিকদার এবার নরম গলায় বড় ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললো।
- ভাইয়া আমি একটা কথা জানাতে চাই আপনাদের৷ 
- কি কথা বলো?
- আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আগামি ৭ দিনের মধ্যে আমরা ঢাকা সিফট হবো। প্রিয়োশীকে ঢাকার কলেজে এডমিশন নিয়ে দিবো। তাই আমি আমার সন্তান ও স্ত্রী কে নিয়ে আলাদা হয়ে যেতে চাচ্ছি।

শামীম সিকদার ভাতের লোকমা টা মুখে দিতে নিয়েছিলো অই সময়ে ছোট ভাইর কথা শুনে হাত থেকে প্লেটে পরে গেলো।  অবাক চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো সে। সমুদ্র সব থেকে বেশি অবাক হয়ে আছে এই কথায়। ছোট আব্বু কেনো হঠাৎ আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।  সমুদ্রের মায়ের কোনো রিয়্যাকশন নাই সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খেতে লাগলো। 

- এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানতে পারি আমি পিয়াশ?
- আর কিছু জানার বাকি আছে আপনার ভাইয়া সব কিছুই জানেন আপনি। আপনার ছোট ছেলের জেদ আর আপনার রিকুয়েষ্ট রাখতে আপনার সব কথায় বিনাবাক্যে রাজি হয়েছিলাম। তারপর কি হলো আমার মেয়ের জিবন নিয়ে টানাটানি ভাইয়া। আজকে সকালে সে বাসায় এসেছে এরপর ওর ওপর আরো মানসিক ভাবে প্রেসার দেওয়া হলো৷ আমার একমাত্র মেয়ে আমি চাইনা এইখানে থেকে ও কষ্ট পাক। 

- কি ব্যাপার পিয়াশ সকালে কি হয়েছে?
- আমার থেকে ভালো আপনি ভাবিজান কে জিজ্ঞেস করুন ভাইয়া। 
- সমুদ্রের মা, পিয়াশ,আলিয়া তোমরা আমার রুমে আমার জন্য অপেক্ষা করো যাও৷ 
শামীম সিকদারের কথায় সবাই উঠে চলে গেলো৷ 
- বাবা বাড়িতে কি এমন হয়েছে যে আমি জানিনা? এসব কথার মানে আমি বুঝতেছিনা আমাকে ক্লিয়ার করে বলবা?
- তুমিও তাদের সাথে রুমে গিয়ে অপেক্ষা করো তোমার থেকে আর কিছুই লুকাবো না আমি। ছোট আম্মু তুমি খাবার শেষ করে  গিয়ে ঘুমিয়ে থেকো কেমন? 
- আচ্ছা বড় আব্বু। 

রওনাকের মনে কু ডাকতে লাগলো কি হবে এসবের পরিনতি?  হাত ধুয়ে এসে সে অতীত নিয়ে ভাবতে লাগলো। 
আজ থেকে দুইবছর আগে যখন সে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে এডমিশন নিয়ে কলেজে প্রথম দিন গেলো সেদিন তার পরিচয় হয় লিয়ার সাথে৷ প্রথম দেখায় লিয়া আর রওনাকের খুব ভাব হয়। এরপর দুইজন একসাথেই থাকতো। রওনাক কে দিয়ে আর নিয়ে আসার দায়িত্বে ছিলো রাফিন৷ লিয়া আর রাফিনের প্রেমের সূচনা হয় কলেজ থেকেই। 

- কাল আমার জন্মদিন লিয়া তুই কিন্তু কাল সকালেই আমাদের বাসাহ যাবি ঠিক আছে?
- তোর জন্মদিন আর আমি যাবোনা তোর সাথে এটা কখোনো হয় রনু? 
- ভাইয়া গিয়ে নিয়ে আসবে তোকে তুই রেডি থাকিস৷ 
-আমি নিজেই চলে আসবো আমাকে কারো নিয়ে আসা লাগবে না। 
- বনু তুই তোর ফ্রেন্ড কে জিজ্ঞেস কর তো আমি নিয়ে আসতে গেলে কি তোর ফ্রেন্ডের গায়ে ফোস্কা পরবে?
- রওনু তোর ভাইকে বল আমার গায়ে ফোস্কা না পরলেও তোর ভাইয়ের গায়ে ঠিকই পরবে। কারণ আমাদের মতো গরিবদের বাড়ি গিয়ে বসার যায়গাও পাবেনা। 
- কি শুরু করলা তোমরা ভাইয়া থামো প্লিজ। আর গরিব বড়লোক কোনো কথা না লিয়া। আজকের পরে যেনো এসব আমি তোর মুখে না শুনি। 
- আরে বাবা রাগ করিস কেন যা সত্যি তাই তো বলি না কি?
- এই মেয়ে এই এতবড় সত্যি তোকে কেউ বলতে বলছে?

সিকদার বাড়ি সকাল সকাল হাজির হয় লিয়া। লিয়া দেখতে খুব সুন্দরী৷ গায়ের রং উজ্জল ফর্সা,লাল রঙ্গের থ্রিপিস টা তে খুব সুন্দর লাগছে লিয়াকে। দোতালায় দাঁড়িয়ে থাকা আয়ান প্রথম দেখায় লিয়ার থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না। লিয়ার কথা বলা,লিয়ার হাসি সব কিছুই আয়ানের নজর কেড়েছিলো। 

সকাল বেলায় মায়ের ডাকে খুব ভাঙ্গে রওনাকের। অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি সে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে গেলো সে। সবার মুখের অবস্থা খুব গম্ভির কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। নিজেদের মতো খাবার খেয়ে যাচ্ছে। 

- আমার একটা কথা বলার ছিলো বড় আব্বু। 
- হ্যাঁ ছোট আম্মু বলো তোমার কথা আছে?
- আব্বু লিয়া আর আয়ানের বিয়ের কথা তো কেউ জানেনা আর যেহেতু সিকদার বাড়িতে নতুন অতিথির আগমন হচ্ছে তাদের ওয়েল্কাম তো করতেই হয় তাই না? আমি চাচ্ছিলাম কি আমরা বাসায় সবাই মিলে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করি? 
- তোমার মাথা ঠিক আছে ছোট আম্মু এতো কিছুর পরেও তুমি ওদের জন্য ভাবছো? যারা তোমাকে ঠকানোর আগেও ২ বার ভাবে নাই। আমি আয়ান আর লিয়াকে বাড়ি থেকে বের করি নাই কারণ লিয়ার অবস্থার কথা ভেবে। 

- যেহেতু তোমরা তা কে কিছুই বলো নাই তাই এখন আর আমার জন্য তোমাদেত নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করার প্রয়োজন নাই বড় আব্বু। আমার কপালে যা ছিলো তাই হয়েছে। 
সমুদ্র এতোক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে শুধু নিজের মতো করে খেয়ে গেছে।  খাওয়া শেষ করে সে বলে।

- তোকে এতো না ভাবলেও চলবে অন্যের কথা নিজের কথা ভাব আগে।  শুন একটু পরে রেডি হয়ে থাকিস আমি তুই আর রাফিন বের হবো।
- কোথায় যাবো আমরা?
- আমি যা বলেছি তা করবি তুই,এতো প্রশ্ন তুই আমাকে কবে থেকে করিস? সাহস তো তোর ভালোই হয়েছে ফিনাইল খেয়ে। 

সমুদ্রের এই কাট কাট জবাব রওনাক হজম করতে পারলো না। আসার পরে তো ভালোভাবেই কথা বলেছে সমুদ্র তার সাথে।রওনাক ভেবেছিলো সমুদ্র চেঞ্জ হয়ে গেছে।  কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে সমুদ্র আগেরমতোই সয়তান মার্কা খাটাশ আছে৷ 
- জ্বী আচ্ছা ভাইয়া। 
সমুদ্র উঠে যাচ্ছিলো তখন তার বাবার কথায় থেমে গেলো। 
- তুমি অফিস কবে থেকে জয়েন করবে সমুদ্র?
- আপনাদের অফিসের কাজ আপনি আয়ান কে বুঝিয়ে দিন।  আমার অফিসে জয়েন করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই। 

- তাহলে তুমি কি করবে নিজেদের অফিসে জয়েন না করে। এতো পড়াশুনা করে কি তুমি মানুষের আন্ডারে কাজ করবে?
- কোনো কাজ ছোট নয় এটা মনে রাখবেন। আর আমি কি করবো তা আমার ভাবাই আছে আমাকে নিয়ে আপনাদের না ভাবলেও চলবে। 

রাগের সাথে কথাগুলো বলে সমুদ্র ড্রয়িংরুম ত্যাগ করলো।  সবাই  হতভম্ব হয়ে আছে সমুদ্রের আগের সেই রাগ দেখে। আয়ান আর আফিয়া সিকদার শয়তানি হাসি দিলো।  শামীম সিকদার অসহায় ভাবে সমুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলে কাল রাতে সব জানার পর থেকে এমন বিহেব করছে সে ভালোই বুঝতে পারছে। অপরদিকে উপর থেকে লিয়া ভালোভাবেই বুঝতে পারছে মা ছেলের মাথায় আবার কি ঘুরপাক খাচ্ছে। এদের প্রতি লিয়ার প্রচন্ড ঘৃনা কাজ করে। অইদিন টা কে লিয়া অভিশাপ দেয় যেইদিন লিয়া এই বাড়িতে পা রাখে আর আয়ানের চোখ ওর দিকে যায়। রওনাক রুমে যাওয়ার সময় লিয়ার সামনে পরে যায়। লিয়া অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে রওনাকের দিকে। রওনাক লিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যার মধ্যে আছে একরাশ অসহায়তা আর অপরাধবোধ। লিয়া কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না রওনাক কে। এখন যে লিয়া কিছু বলতে পারবে না তার যে হাত পা বাধা। 

রওনাক লিয়াকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো রওনাকের রাগ আরো বেড়ে যাবে। 
সমুদ্রের কথামতো রওনাক রেডি হয়ে গাড়িতে বসে আছে। কোথায় যাবে কেনোই বা যাবে তা সে জানেনা।  সমুদ্রকে প্রশ্ন করার মতো সাহস ও তার হচ্ছে না। সমুদ্র এসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। 

- তা পড়াশোনা করার কি ইচ্ছে আছে না কি নিজেকে ঘরবন্ধি করে সারাজিবন রাখবি? 
- আপনি আবারো সেই আগেরমতো আমার সাথে কথা বলছেন? এই কয়দিন তো সেই কি সুন্দর ভাবে বলতেন?
- এতো কিছু করার পরেও তুই আমার কাছে আশা করিস আমি তোর বা তোদের সাথে ভালোভাবে কথা বলবো? 
রওনাক কি উত্তর দিবে খুঁজে পেলো না। সত্যিই তো সে এই মানুষ কে আগে কিছু জানানো হয় নাই।

- যাইহোক প্রিয়ো তুই কিন্ত ফিনাইল খেয়ে সু*ই*সা*ই*ড করার ড্রামা টা খুব সুন্দর ভাবে করেছিস। নাটকে জয়েন করতে পারিস তো তুই।
সমুদ্রের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রওনাক। রওনাক ক্ব এভাবে তাকাতে দেখে মুচকি হাসি দিলো সমুদ্র। 
- কি সব আবোল তাবোল বলতেছেন আপনি?
- তুই চলো ডালে ডালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়। তোমার করা প্রতিটা কাজ আমার দৃষ্টির বাহিরে নয় এটা কিভাবে ভুলে যাও তুমি?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা নুসাইবা রেহমান আদরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল। এই দিনে তিনি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার নড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০২০ সালে নড়িয়ার ডা. কে এ জলির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এর বাইরে আদর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে। তবে তিনি সামাজিক মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “আমি অধরার এক আচল মাত্র যে কি না বিনা দ্বিধায় ধুলোয় মিলিয়ে যায়। আমার প্রতিটা কল্পনায় ফুটে ওঠা প্রতিটা চিত্র শব্দতে রুপান্তরিত করি।”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন