লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
২৮তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২৯)
কুসুম ঊষার গা ধরে ঝাঁকায়। ঊষা নিরবে চোখের জল ফেলে সঙ্গেসঙ্গে মুছে ফেলে। তারপর বেশ শান্ত কণ্ঠে বললে,
‘ আমার যেতে হবে, কুসুম। এভাবে তোদের পরিবারকে অপমানিত করতে পারিনা আমি। আমার সেই অধিকার নেই।’
কুসুম বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, ‘ এই পরিবার শুধু আমাদের না আপা, তোমারও। চার বছর থেকে কিভাবে আগলে রেখেছ এই পরিবারকে আমি নিজে দেখেছি। পরিস্থিতির চাপে পরে ভাইয়াকে ছেড়ে দিও না আপা। ভাইয়াকে কল করো এক্ষুনি। আমরা তোমার বাড়ি যাব বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। তুমি যেও না আজ। ‘
কুসুম ফোন নিয়ে কল করতে উদ্যত হয় ইয়াহিয়াকে। তবে তাকে আটকে দেয় ঊষা। কুসুম প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো ঊষা ভাঙা স্বরে বলে,
‘ তোর ভাইয়ার সামনে আমাকে আর নিচু করে দিস না কুসুম। ও এমনিতেই অনেক কিছু সয়েছে। ওর আর এক ফোঁটা অপমান হলে, আমার বেচে থাকতে ইচ্ছে করবে না। যেই মানুষকে আমি এতটা সম্মান করি, সেই মানুষের এতটা অপমান হতে দেখে আজ আমি কিচ্ছু করতে পারছি না, কিচ্ছু না। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি। বিশ্বাস কর কুসুম, আমার হাতেও কিছু নেই। বাবাকে আমি ভয় পাই। কাল বাবার ওই রক্ত গরম করা চোখ দেখে আমার গলা দিয়ে এক ফোঁটা কথা বের হয়নি। বাবা রেগে আমাকে খুন কর ফেললেও আমি আশ্চর্য্য হব না কুসুম। বাবা এমনি। আমি তাকে ছোট বেলা থেকে এমনি দেখে এসেছি। আমি এসব অভ্যস্ত হলেও, ও অভ্যস্ত নয়। আমি দেখেছি বাবা যখন ওর মুখের সামনে আঙুল তুলে কথা বলেছিল, ওর চোখ লাল হয়ে গেছিল। তবুও সে আমার জন্যে বাবা মুখের উপর চুপ করে ছিল। কিন্তু আর না! আমার জন্যে এই পরিবারের এতটা অশান্তি আমি সত্যি আর নিতে পারব না। আমাকে আটকাবি না আর। আর না তোর ভাইয়াকে ঐ বাড়ি পাঠাবি। যেতে চাইলে তুই আটকে রাখবি। ঐ বাড়ি গেলে বাবা তোর ভাইয়াকে মেরে ফেলবে রে। প্লিজ বোন আমার! কথাটা রাখিস। ‘
কুসুমের চোখ ভর্তি জল টলমল করেছে। ঊষা আপার এই কথা সে একদমই রাখতে পারবে না, আর ভাইয়াও ওর কথা শুনবে না। ছোট থেকে দেখে এসেছে ইয়াহিয়া শান্ত অথচ কি ভীষন জেদী ছেলে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে এতটা সহজে ছেড়ে দেবার মানুষ দে কখনোই ছিল না। কুসুমের নিজের ভাইয়ের প্রতি পুরো বিশ্বাস আছে। কুসুম আটকাল না আর ঊষাকে। ঊষাকে নিতে তার হবু স্বামী এলো। যখন ইয়াহিয়ার সামনে ঊষার হবু স্বামী ঊষার হাত চেপে ধরে রেখেছিল, ইয়াহিয়া শুধু হাত মুঠো করে চেয়ে দেখেছে। ঊষার অসহায় চাওনি দেখে আর কিছুই করতে পারেনি সে। নাহলে আজ এক ছেলের মুখের নকশা বদলে দিতে এটুকু সময়ও নিত না সে। ঊষা চলে গেল। ঊষা চলে যেতেই ইয়াহিয়া ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। সাহেদা পেছন ডাকেন। ইয়াহিয়া শুনে না। সেই যে বেড়িয়ে যায়,রাত হয়ে গেছে এখনো বাড়ি ফেরে নি।
সাহেদা নিজের রুমে বসে কোরআন পড়ছেন। কুসুম এসে পাশে বসল। নির্বাক হয়ে মায়ের কোরআন পড়া শুনছে। সাহেদা কোরআন পড়ার সময় কাদছেন। কান্নার জল গড়িয়ে পরছে কোরআন শরীফের উপর। ঘন্টা লাগিয়ে কোরআন পড়া শেষ করে সাহেদা কোরআন জায়গায় রাখেন। বিছানার এক পাশে বসে থাকেন চুপচাপ। কুসুম কিছু সময় পর এসে মায়ের গা ছুঁয়ে বসে। সাহেদা একপল মেয়েকে দেখে আবার সামনে তাকান। কুসুম খানিক পর ভাঙা স্বরে বলে,
‘ আম্মা, আপা কি আর কখনোই আমাদের বাড়ি আসবে না? আব.. বৌ হয়ে? ‘
কুসুম ভেবেছিল শেষের কথা শুনে সাহেদা রাগ করবেন। অথচ সাহেদা কিছুই বললেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও চুপচাপ বসে রইলেন। কুসুম আবার বলল,
‘ আম্মা চলো না, আমরা আপার বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই? আপা খুব কষ্টে আছে। ‘
সাহেদা উত্তর দিলেন না। কিন্তু কিছু সময় পর ক্লেশপূর্ন কণ্ঠে বললেন,
‘ সবকিছু ঠিক থাকলে, আমি যেতাম ওদের বাড়ি ঊষার হাত চাইতে। কিন্তু এখন….সব উলোটপালোট হয়ে গেছে। সবকিছু আমাদের হাতের বাইরে। কিচ্ছু করার নেই এখন। কিচ্ছু না। ‘
কুসুমের খুব করে কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কান্না ভেতর ভেতর চেপে রেখে কুসুম প্রশ্ন করল,
‘ ভাইয়াকে এভাবে মরে যেতে দিবে আম্মা? ঊষা আপাকে ভাইয়া প্রচন্ড ভালোবাসে। আপা ছাড়া ভাইয়া পাগল হয়ে যাবে আম্মা। ‘
সাহেদা ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বললেন,
‘ আমার ছেলে খুব শক্ত রে কুসুম। সে নিজেকে সামলে নিবে নয়ত পরিস্থিতি ঠিক করে নিবে। ঊষার পরিবারকে কিভাবে মানাবে সেটা ও জানে। আমি মায়ের দায়িত্ত্ব পালন করার অপেক্ষায়। ভীষন অপেক্ষায়। ‘
কুসুম সব শুনে। মায়ের কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকে আর কিছুক্ষণ। চোখের দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে কুসুমের চোখ থেকে। কুসুম সঙ্গেসঙ্গে চোখ মুছে উঠে যায় বিছানা ছেড়ে। দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ফেলে। বিছানায় বসে এবার শব্দ করে কেঁদে ফেলে। এতক্ষণ খুব কষ্ট করে কান্না চেপে রাখার দরুন এখন এত কেঁদেও মন হালকা হচ্ছে না। কুসুমের ফোন বেজে উঠে এবার। কুসুম ফোন হাতে নিয়ে দেখে উচ্ছ্বাস কল করেছে। কুসুম সঙ্গেসঙ্গে কল রিসিভ করে কেঁদে উঠে আবার। উচ্ছ্বাস ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ কুসুম? কি হয়েছে? ওখানের সব ঠিকাছে? এভাবে কাদছ কেন? এই কুসুম? ‘
কুসুম কান্না করতে করতে বলল, ‘ সব শেষ হয়ে গেছে উচ্ছ্বাস, সব শেষ। আপা চলে গেছে। আর আসবে না। জানেন, আপাকে নিতে এসেছে আপার ওই জঘন্য ফিওন্সি। ভাইয়ার সামনে ও ছেলে আপার হাত ধরেছে, জড়িয়ে রেখেছে আপাকে। ভাইয়ার খুব কষ্ট হয়েছে জানেন তখন? আমি আর নিতে পারছি না এসব। আমার খুব খারাপ লাগছে। ভাইয়া…ভাইয়া কিভাবে এসব সহ্য করছে? ‘
উচ্ছ্বাস সব শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়েছে। এমনটা হবে সে আগেই কুসুমের কথা শুনে ভেবেছিল। তবে এতটা জটিল হয়ে যাবে পরিস্তিতি সেটা সে আন্দাজ করতে পারেনি। তবুও কুসুম কাদঁছে দেখে উচ্ছ্বাস বলল,
‘ শান্ত হও, কুসুম! কান্না থামাও। আমার কথা শুনো। কান্না থানাও বলছি। ‘
কুসুম নাক টেনে কান্না আটকাল। উচ্ছ্বাস বলল,
‘ শুনো কুসুম, ইয়াহিয়া যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে। তোমার চেয়ে ওর মাথায় বুদ্ধি বেশি যতটুকু বুঝলাম। ও ঠিক কোনো না কোনো রাস্তা বের করে ফেলবে। এখন আমরা শুধু অপেক্ষা করতে পারি, আর কিছুই না। ‘
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
৩০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন