উপন্যাস       :         উজল প্রাতের আরশি
লেখিকা        :         সাদিয়া খান সুবাসিনী
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা সাদিয়া খান সুবাসিনীর “উজল প্রাতের আরশি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
উজল প্রাতের আরশি || সাদিয়া খান সুবাসিনী Bangla Golpo - Kobiyal
উজল প্রাতের আরশি || সাদিয়া খান সুবাসিনী


০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

উজল প্রাতের আরশি || সাদিয়া খান সুবাসিনী (পর্ব - ০৪)

আগুন এবং গোপন কথা দ্রুত ছড়ায়।তেমনি শর্মীর কথাও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো বস্তিতে।এতো দিন অনেকটা রাখ ডাক করে চলছিল কিন্তু হাসপাতালে একজন শর্মীকে ভর্তি দেখে। কৌতুহল বশত আউয়ালের পিছন পিছন ডাক্তারের কাছে গিয়ে সবটা শুনে এসে বলে দিয়েছে বস্তিতে।মুখরোচক গল্পে তেল মশলা মিশিয়ে বস্তির আনাচে কানাচে সে গল্প চলছে সবার মুখে।

আউয়ালের বাবা সবজির দোকান আজ খুলেনি। লজ্জায় মাথা উঁচু করতে পারছে না সে। নিম্নবিত্ত হলেও সম্মানের বড়াই সারা জীবন করে এসেছে। মেয়ে স্কুলেও তো পড়তো। এই শহরে বেঁচে থাকতে গেলে টাকার প্রয়োজন। তাছাড়া মেয়েটার টাকা পয়সা সে জমাচ্ছিল।সামনের বছর তার বিয়ে দিবে।মেয়ের একটা চাকরি থাকলে ভালো পাত্র পাবে।মেয়ের কিছু গোছানো টাকা পয়সা থাকলে পাত্র পক্ষের যৌতুক নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এটাই ছিল তার চিন্তা। কিন্তু কি হল?এই মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

শর্মীকে যখন ঘরে আনা হলো এক চোট তাকে গালিগালাজ করলো তার বাবা। শর্মী চোখ বুজে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। তার ধারণা নিশ্চয়ই মেয়ের সাথে কারোর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে এখন বিয়ে করবে না বলে এই বাহানা দিচ্ছে সে। রাগে গজগজ করতে করতে লাঠি দিয়ে দু ঘা আঘাত করল মেয়েকে। 


শর্মী তবুও নিশ্চুপ।সে হিসেব মেলাতে ব্যস্ত।তবে কি নিয়তিও চাইছে বাচ্চাটা বেঁচে থাকুক? তা না হলে বিষ খাওয়ার পরেও কেন মারা গেল না? সে মনে মনে চিন্তা করে নিলো এই বাচ্চাকে যেহেতু জন্ম দিতেই হবে তখন সে ভালোভাবেই দিবে।নিজের এবং সন্তানের খেয়াল রাখবে। আর যদি জন্মের পর সে তাকে লালন পালন না করতে পারে তবে এমন কাউকে দিয়ে দিবে যে তার বাচ্চার খেয়াল রাখবে, তাকে ভালো একটা ভবিষ্যৎ দিবে। ফিরে আসার পূর্বে ডাক্তার আপা তাকে বার বার বলে দিয়েছে সময় মতো সব খাবার খেতে এবং নিয়মিত ঔষধ খেতে। কল তলা থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে রান্না ঘরে গেল।সবার খাওয়া ইতিমধ্যে শেষ। হাড়ির নিচে পড়ে থাকা স্বল্প ভাত এবং একটু শাক নিয়ে কোনো ভাবে গিলতে লাগলো সে।ইদানীং তার খুব মিষ্টি খাবার খেতে ইচ্ছে করে। বেকারীর মিষ্টি গন্ধটাও তার খুব ভালো লাগে। ভাতে পানি মিশিয়ে একটু গুড় নিলো সে। পাতিলে দাদীর জন্য দুধ আছে কিন্তু এই দুধ খাওয়া যাবে না।খেলে দাদী মারবে বাবাও ছাড়বে না।

কিন্তু দুপুড় গড়িয়ে বিকেল হলেও তার দুধের তেষ্টা গেল না। দাদী বাইরে বসে কারোর সাথে কথা বলছে।বাবা ঘুমে, মা আর সুবর্ণ শাক তুলতে গেছে। এই সুযোগটা কাজে লাগালো শর্মী।ভালো একটা পাট কাঠি বার বার ফু দিয়ে পরিষ্কার করে নিয়েছে। মাটির চুলোয় এখনো দুধের পাতিল রাখা।ঘন করে সর জমেছে।দুধের ঘ্রাণে জ্বিহবায় পানি চলে এসেছে তার। ডানে বায়ে আরো একবার দেখে সরের এক সাইডে ফাঁকা করলো পাট কাঠি দিয়ে। এরপর সেখান থেকে কাঠির সাহায্যে চুমুক দিয়ে খেতে লাগলো দুধ।হালকা কুসুম গরম গরম দুধ যতোটা পারলো খেয়ে নিলো। একটু বেশিই খেয়ে নিলো এরপর কাঠি দিয়ে সরটা ছড়িয়ে দিয়ে ঢেকে রেখে চলে এলো। রাতে যখন তার দাদী দুধ ভাত খেতে গেল তখন দুধ পাতিলের তলানিতে ঠেকেছে। সব দোষ গিয়ে পড়লো দাদীর উপরেই। কারণ সে নিজের খাবার নিজেই তৈরী করে। দাদী নিজেও মেনে নিলো হয়তো চুলোয় আগুন বেশি ছিল বলে দুধ শুকিয়ে একটু হয়েছে। এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করলো না কেউ কিন্তু আশকারা পেয়ে গেল শর্মী।কারণ পরবর্তী দিন গুলোতেও সে একই কাজ করতে লাগলো।


টেস্ট অব লাভ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে উষ্ণা। ইযহান তাকে পনেরো মিনিট যাবত অপেক্ষা করাচ্ছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পানির বোতল খুলছিল।এমন সময় কেউ এসে তাকে বলল,
"ম্যাম, স্যার আপনাকে ভিতরে আসতে বলেছে। একটা ঝামেলা হয়েছে।"
"কি হয়েছে?"

"একটা মেয়ে না কি রেপ হয়েছে চার মাস আগে। আর তার ভাইও এখানে চাকরি করে। এই কথা আজ বলছে৷ এটা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে।"
"আপনার স্যার কোথায়?"
"কেবিনে।"

উষ্ণা সরাসরি ইযহানের কেবিনে প্রবেশ করলো।এখান থেকে ম্যানেজারের রুমটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ল্যাপটপের স্ক্রীনে ভেসে উঠছে সব৷ সাথে শোনা যাচ্ছে কথাও। উষ্ণার উপস্থিতি টের পেয়ে  না তাকিয়েই হাত বাড়ায় তার দিকে ইযহান। হাত ধরে টেনে এনে নিজের কাছাকাছি এসে দাঁড় করিয়ে সে বুক ভরে শ্বাস নেয়। এরপর ফিসফিস করে বলে,
"উষ্ণতার তৃষ্ণায় আমি ক্লান্তি কিভাবে ভুলে যাই?" 

হেসে ইযহানের চুলে হাত বুলিয়ে দেয় সে।কোমর বন্ধনীর মতো দুই বাহুতে আগলে আছে ইযহানের হাত৷ খানিকটা পিছিয়ে প্রেয়সীকে টেনে এনে সামনে বসিয়ে পুনরায় ম্যানেজারের কথায় মনোযোগ দিলো সে।


এতক্ষণে স্ক্রীনের লোকের দিকে তাকিয়ে তাকে চিনতে পারলো উষ্ণা।সকালের সেই লোকটা। কিছু সময় পর সে ইযহান কে বলল,
"লোকটা মিথ্যে বলছে না জাহান। আমি আজ সকালে উনার বোনকে দেখেছি। মেয়েটা ট্রমার মধ্যে আছে।তুমি তো জানো আমি এটা বুঝার ক্ষমতা রাখি।আপত্তি না থাকলে উনাকে এখানে আসতে বলবে?আমি একটু কথা বলবো।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা সাদিয়া খান সুবাসিনী সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন