উপন্যাস : উজল প্রাতের আরশি
লেখিকা : সাদিয়া খান সুবাসিনী
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা সাদিয়া খান সুবাসিনীর “উজল প্রাতের আরশি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
উজল প্রাতের আরশি || সাদিয়া খান সুবাসিনী |
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
উজল প্রাতের আরশি || সাদিয়া খান সুবাসিনী (পর্ব - ০৩)
ইযহানের এলোমেলো চুলে হাত বুলিয়ে তার পাশে আধ শোয়া হিসেবে বসলো উষ্ণা। নগ্ন উদরে উপুর হয়ে ঘুমিয়ে আছে সে। মিনিট পাঁ হবে হোটেলের এই রুমে এসেছে মেয়েটা। সম্পূর্ণ তৈরী সে। এক্ষুণি বের হতে হবে তাকে। বাবার কল এসেছিল,তার মায়ের রোগটা বেড়েছে।সে আবারো আত্নহত্যা করার চেষ্টা করেছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলল উষ্ণা।ইযহানকে কথা দিয়েছিল,আজকের দিনটা কেবল দুজনে এক সাথে কাটাবে।নোনা জলে পা ভিজিয়ে উষ্ণতায় একে অপরের আলিঙ্গনে।
ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়িতে ঘুম ঘুম চোখে প্রেয়সীকে দেখে তাকে এক হাতে নিকটে টানলো ইযহান।এতটুক মেলামেশা তাদের সোসাইটি কিংবা বয়সে কেউ খারাপ চোখেও দেখে না।তবে একটা দুরত্ব রেখেছে দুজন।ইযহান প্রায় সময় তামাশার ছলে উষ্ণা কে বলে,
" আগুন সুন্দরী প্রেমিকাকে কাছে পেয়েও কাছে না টেনে নেওয়ার যে এক অসীম ধৈর্য্য আমার রয়েছে, সেটার জন্য আমার মনে হয় আমি হিমালয়ের সন্ন্যাসীদের ও হার মানাবো।"
তবে ইদানীং মেলামেশাটা আরো গভীর হচ্ছে। এটা নিয়ে দুজনের একজনেও চিন্তিত নয়।কারণ সামনেই তাদের বিয়ে।
প্রেমিকের নগ্ন কাঁধে হাত রেখে উষ্ণা বলল,
"তুমি আজকের দিনটা অনেক ইঞ্জয় করবে। নতুন বছরের শুভকামনা। আমায় যে এবার ফিরতে হবে।"
"কেন?"
"মা আবারো....
কথা শেষ করতে হয় না উষ্ণার।উঠে বসে ইযহান।বিছানা থেকে দ্রুত নামে।ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে,
" খেয়েছো তুমি কিছু?পাঁচ মিনিট দাও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে বের হবো। ফোন থেকে ড্রাইভারকে কল দাও। মানি পার্সটা নিয়ে নিও তো তোমার পার্সে।"
উষ্ণা নাক কুঁচকে হাসে।ইযহান ওয়াশরুমের দরজা থেকেই সে হাসি দেখে ফিরে এসে আলতো কামড় বসায় তার নাকে।এরপর প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
ওয়াশরুম থেকে ফিরেই ব্রেকফাস্ট অর্ডার করেছিল ইযহান। উষ্ণা ক্ষিধে একদম সহ্য করতে পারে না।গাড়িতে বসেই দুজনে ব্রেকফাস্ট শেষ করে। গাড়ি তখন পৌঁছেছে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে।
ভোরবেলা আউয়াল বাড়ি ফিরে দেখতে পায় শর্মী গেটের এক পাশে পড়ে আছে। চাদর গায়ে নেই,কেমন একটা এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে সে।গায়ে হাত দিতেই বুঝতে পারে গা ভীষণ ঠান্ডা হয়ে আছে৷ মুখের চারপাশে সাদা কোনো কিছু লেগে আছে। বোনকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতেই হাতের থেকে স্যাভনলের খালি বোতল পড়লো।বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার৷ জোরে জোরে মা আর স্ত্রীকে ডাকলো।ঘুম ঘুম চোখে আউয়ালের স্ত্রী বাইরে এসে দেখেই বুঝতে পারলো ঘটনা সুবিধার নয়।বস্তির মানুষ এখনো জাগে নি।আজ তীব্র কুয়াশার কারণে চারপাশ খুব একটা বুঝতেও পারা যাচ্ছে না।সময় নষ্ট করে না তারা।দ্রুত কোলে তুলে নিয়ে ছুটতে থাকে হাসপাতালের রাস্তায়। তিন ঘন্টা যাবত সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছে তারা। ডাক্তার বলেছে ওয়াশ করতে হবে। ভর্তি করা হলো শর্মীকে।যখন তাকে ওয়াশ করার জন্য নেওয়া হলো ডাক্তার ভ্রু-কুঁচকে বলল,
"এ তো গর্ভবতী। স্বামী কোথায়?"
ডাক্তারের কথায় থতমত খেয়ে যায় আউয়াল।বেশ কিছু সময় জেরা করার পর ডাক্তার বলল,
" এখনো যেহেতু জ্ঞান আছে, ঠান্ডায় এবং ভয়েই বেশি অসুস্থ হয়েছে। ওয়াশ করিয়ে নিন।আজ ভর্তি থাকুক এবং হ্যাঁ অবশ্যই আল্ট্রা করাবেন।এই অবস্থায় বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।"
শর্মীকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হলো।স্যালাইন চলছিল তার হাতে।লজ্জায়, ভয়ে মুখে কোনো কথা নেই তার। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আউয়াল ভেবেছে বোন ঘুমিয়ে আছে। তাই স্ত্রীকে বলল,
"বড় হাসপাতাল।একবার ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখব?বাচ্চাটার কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না?"
"কি ব্যবস্থা করবে?"
"অপারেশন করে হলেও এই বাচ্চাটাকে মেরে ফেললে ভালো হয় না?ঝামেলায় ঝামেলায় ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।"
"দেখো কি বলে।"
শর্মীর চোখের কোণা দিয়ে পানির স্রোত গড়িয়ে পড়লো।বাচ্চাটার প্রতি তার ভীষণ মায়া হয়।সে বাচ্চাটাকে মারতে চাইছে না। এই শহরে অনেক মানুষ আছে যারা বাচ্চা দত্তক নেয়, ও জন্মালে না হয় তাদের কাউকে দিয়ে দিবে। তবুও বেঁচে থাক বাচ্চাটা। অপর দিকে তার ভাই-ভাবী ভাবছে এখনো কথাটা মানুষের কানে তেমন ভাবে যায়নি।বাচ্চাটা মরে গেলে মেয়েটার জীবন নষ্ট হবে না। কে বা কারা ধর্ষন করেছে সেটা শর্মী নিজেও জানে না। যেহেতু কেউ জানেই না কথাটা গোপন থেকেই বোনের কপালের দুঃখ শেষ করতে।
কিন্তু ডাক্তার কোনো ভাবেই রাজি হলো না এই অল্প বয়সে মেয়েটার গর্ভপাত করাতে, যেখানে তার দেহে রক্ত এবং পুষ্টি উভয়ের অভাব।
দুই দিন পর শর্মীকে ছুটি দেওয়া হলো।তাদের রিক্সাটা সিগনালে পড়েছে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে উষ্ণার গাড়ি।মা কে নিয়ে বাসায় ফিরছে সে। তার মা রিক্সায় বসে থাকা শর্মীকে দেখিয়ে বলল,
"তৃষ্ণা ওই মেয়েটার বয়সী ছিল।সেদিন পার্টিতে আমার বন্ধুই ওকে রেপ করে। আমার মেয়েটা আমাকে বলেছিল, আমি তখন শুনেও শুনিনি। জানিস এই মেয়েটার মতোই তৃষ্ণাও গর্ভবতী ছিল।পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে এসেছিল তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।"
উষ্ণা তাকালো মেয়েটার দিকে।সে মেয়েটাকে কোথাও একটা দেখেছে। কিন্তু কোথায়?
হ্যাঁ মনে পড়েছে, দেখেছে "টেস্ট অভ লাভ" এর বেকারিতে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা সাদিয়া খান সুবাসিনী সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন