উপন্যাস : তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৪১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪২)
আদ্রিতা আদ্রিয়ান সাজেকের হোটেলে বাশের তৈরী রুম গুলোতে উঠেছে।।শীতের সকালে এখান থেকে মেঘ ধরা যায়।আদ্রিতার স্বপ্ন ছিলো হাত দিয়ে মেঘ ছোয়া।সেটাকে পূরন করতেই আরিয়ান আদ্রিতাকে এখানে নিয়ে আসে।
আদ্রিতাঃডাক্টার সাহেব।এটা কি হলো বলুন তো।বাসায় মিথ্যে বলে এভাবে এখানে নিয়ে আসার মানে কি?
আশমিনকে ও তো নিয়ে আসতে পারতাম।
আরিয়ানঃপারতাম।কিন্তু তাতে তোমার সাথে একান্তে সময় কাটানো হয়ে উঠতো না।
আরিয়ান আদ্রিতাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।বাতাসে আদ্রিতার চুল গুলো উড়ে আরিয়ানের মুখে এসে লাগছে।আদ্রিতা বার বার সরাচ্ছে।
আরিয়ানঃউহুম।থাকতে দাও।
আদ্রিতাঃহুট করে এমন প্রেম প্রেম পেলো কেন বলুন তো?
আরিয়ানঃপ্রেম প্রেমতো আমার প্রতিদিনই পায়।কিন্তু তুমি সময় দিতে পারো না আর নয়তো আমি।আচ্ছা মনে করে বলোতো বিগত ৩ বছরে শেষ কবে একসাথে চা খেয়েছিলাম আমরা?
আদ্রিতা চুপ করে গেলো।বলার মতো কোনো উত্তরই ঠোঁটে নেই তার।৩ বছরে জীবনটা এতো এলোমেলো হয়ে গেলো যে সবটা সামলাতে সামলাতে নিজেদের সম্পর্কটা গোছানো হয়ে উঠলো না।
মাঝে ৯টা মাস খুব ভালো কেটে ছিলো। যখন আশমিন গর্ভে এসেছিলো।কিন্তু সেই সময়টাতে মেহরাবের মানসিক বিপর্যয়ের কাছে এই সুখগুলো ছোট হয়ে গেলো।তারপর যখন আশমিন আসলো মেহরাব ঠিক হলো তখন আদ্রিয়ানের নিখোঁজ হওয়া।সব মিলিয়ে ৩ টা বছর সবার কাছে বিষের মতো কেটেছে।
আদ্রিতা ঘুরে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।
আদ্রিতাঃসরি ডাক্টার সাহেব।এতকিছুর মধ্যে সব থেকে বেশি অন্যায় আমি আপনার সাথে করেছি।আমাদের জীবনের ঝড় আমি আপনার উপর চাপিয়ে দিয়েছি।
আপনার স্ত্রী হওয়ার দায়িত্বটা ঠিকমতন পালন করতে পারি নাই।
আরিয়ান হেসে আদ্রিতার থুতনিটা উচু করে চুমু খেলো।
আরিয়ানঃতোমার কষ্ট কি আমার কষ্ট না?তোমার পরিবার কি আমার পরিবার না?
আমার তোমার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।
এখনতো সব ঠিক হয়ে আসছে।মেহরাব স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে।আদ্রিয়ান তিথিকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে।আশমিনকে নেহা দেখেছে।এখন আমাদেরটা গুছিয়ে নেই?
আদ্রিতাঃহুম।ভালোবাসি আরিয়ান।প্রচন্ড ভালবাসি।
আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কখনো এতোটা বুঝতো না যতটা আপনি বুঝেন।
আরিয়ানঃআমার রানীকে আমি বুঝবো না তো কে বুঝবে? হুম?
আদ্রিতাঃঅনেকদিন হলো গান শুনি না আপনার কন্ঠের।
আরিয়ানঃহা হা হা।শুনবে কি করে এখনতো টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।আচ্ছা দাড়াও আমি গিটার নিয়ে আসছি।
আদ্রিতাঃএখন গিটার কই পাবেন?
আরিয়ানঃপাবো পাবো সব পাবো।বউ ফরমায়েশ করেছে।পূরন না করতে পারলে কী লাভ এত টাকা ইনকাম করে।আসছি আমি।
আদ্রিতাঃআরেএ।থাক লাগবে না।
আরিয়ান আসছি বলে বাইরে চলে গেলো।কিছুক্ষন পর গিটার আর বাশের খোলসে এক কাপ চা নিয়ে ফিরলো।
আদ্রিতাঃগিটার কই পেলেন?আর চা এক কাপ কেন?
আরিয়ানঃগিটার বাইরে টুরেস্ট থেকে ডাবল দামে কিনে নিয়েছি।আর স্বামী স্ত্রী একই পাত্রে খাওয়া সুন্নত।তাই একটাই এনেছি।
আদ্রিতা হাসছে আরিয়ানের পাগলামী দেখে।
আরিয়ানঃআসো আসো।
আরিয়ান আদ্রিতার হাত ধরে বারান্দা নিয়ে আসলো।বারান্দার একটা ঝুলনায় বসে পড়লো।আর চা টা পাশে ছোট্ট একটা টেবিলে রাখলো।
আদ্রিতাঃআমি কই বসবো?পুরোটা তো আপনিই দখল করে নিলেন।
আরিয়ান আদ্রিতার হাত ধরে টেনে কোলে বসিয়ে কম্বল দিয়ে গা ঢেকে দিলো।তারপর চায়ের কাপটা আদ্রিতার হাতে দিয়ে গিটার না টা নিজের হাতে তুলে নিলো।
আরিয়ান~
Hai dil ye mera mujhe
Hardum ye poochta
Kyun hai mujhe
Tujhse itni wafa
Kyun teri hasrat
Hai har khwahish
Se badhkar mujhe
Kyun naam tera
Hi leti zubaan
Saathi tera bann jaaun
Kyun hai yeh junoon
Har aansun tera pee jaaun
Or de du sukoon
Har din tujhko chaahun
Teri raah takun
Apni baahon mein tujhko
Main salamat rakhun
Tere hi baare mein
Hai ab har zikr mera
Huaa hai kaisa
Asar yeh tera
Koi naseehat na
Chaahun main koi salaah
Jo rooh ne mere
Tujhe chun liya
Saathi tera ban jaaun
Kyun hai yeh junoon
Har aansun tera pee jaaun
Aur de du sukoon
Har din tujhko chaahun
Teri raah takun
Apni baahon mein tujhko
Main salaamat rakhun
Hai dil khamakhaa
Pareshan badaa
Isko koi samjah de zara
Ishq mein fanaa ho jaana
Hai dastoor yahi
Jisme ho sabar ki fitrat
Wo ishq hi nahin
Samajh bhi ja aye dil mere
Kya hai ye maajra
Saathi tera bann jaaun
Kyun hai yeh junoon
Har aansun tera pee jaaun
Aur de du sukoon
Har din tujhko chaahun
Teri raah takun
Apni baahon mein tujhko
Main salaamat rakhun.
আদ্রিতা আরিয়ানের ঠোঁটের সামনে চায়ের কাপটা ধরে।আরিয়ান চুমুক দেয়।
আরিয়ানঃআহা!এমন বউ সেবা যদি প্রতিদিন পেতাম।
আদ্রিতাঃসব ঠিক হয়ে গেলে প্রতিদিন দিবো প্রমিজ।
আরিয়ানঃওহ তাই নাকি।ইয়া আল্লাহ।এইবার সবটা ঠিক করে দাও।
আদ্রিতাঃহি হি।খান চুপচাপ ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।
আরিয়ানঃহুম।দাও দাও।
আদ্রিতা আরিয়ান খুনসুটিতে মেতে উঠলো।
আশমিনের কান্নার আওয়াজে মেহরাবের ঘুম ভেঙে যায়।চোখ খুলে আশমিনের ঝুলনাটা নিজের পাশে পায় মেহরাব।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে টিপটিপ করে চোখ খুলে উঠে দাঁড়ায়।মেহরাবকে দেখতেই আশমিন চুপ হয়ে যায়।
মেহরাবঃকি হয়েছে আমার বাবুই পাখিটার।সকাল সকাল হরতাল কেন ডাকছো হুম?
মেহরাব হাত দুইটা এগিয়ে দেয় আশমিনের দিকে।আশমিন লাফ দিয়ে মেহরাবের কোলে এসে পড়ে।
আশমিনঃআমি ভ পাচ্ছি।
মেহরাবঃকেন কেন?ভয় পাবে কেন?নেহা কোথায়?
আশমিনঃজানি না।
মেহরাব আশমিনকে কোলে নিয়ে সারা বাড়িতে নেহাকে খুজে। খুজতে খুজতে নূর আর নিজের রুমের কাছে চলে আসে।
মেহরাবঃএই রুমের তালা ভাঙা কেন?দরজাও খোলা। নেহাকে নিষেধ করার পর ও সে এই রুমে এসেছে।ওকে তো আমিইই।।
মেহরাব রেগে ভিতরে প্রবেশ করলো।চারদিকে চোখ বুলিয়ে ও কোথাও নেহাকে দেখতে পেলো না বরং রুমের অবস্থা দেখে নেহার উপর রাগ আরো বেড়ে গেলো।নেহা পুরো রুমের অবস্থা যা ইচ্ছে তাই করে রেখেছে যেন রুমটা থেকে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছে।
আলমারির দিকে তাকাতেই চোখ পড়লো নিচে পড়ে থাকা নেহার উপর।মেহরাব ছুটে গেলো নেহার কাছে।
মেহরাবঃনেহায়া।নেহায়া।
নেহা রেসপন্স করছে না।মেহরাব আশমিনকে নিচে রেখে নেহাকে কোলে তুলে নিলো।আশমিন ছোট ছোট পায়ে মেহরাবের পিছু পিছু হাটছে।মেহরাব নেহাকে নিজের রুমে এনে বেডে নামালো।তারপর একজন মহিলা ডাক্তারকে কল দিলো।উনি নেহাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বললেন।মেহরাব দেরি না করে নেহাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।বাসার কাজের লোকের কাছে আশমিনকে রেখে গেলো।
পাক্কা ৩০ মিনিট অবজার্ভ করে ডাক্টার বেড়িয়ে আসলো।
মেহরাবঃইস শি অলরাইট ডক্টর?
ডক্টরঃউনার মানসিক সমস্যা আছে জেনেও কেন মানসিক চাপে ফেললেন?
আপনার এই খামখেয়ালির জন্য উনি মারাও যেতে পারতেন।
মেহরাবঃমানে!!
ডক্টরঃমানে উনি আপনার স্ত্রী না?
মেহরাবঃনা।আমাদের বাসায় কাজ করেন।
ডক্টরঃওহ সরি।
একচুয়ালি উনার মাথায় গলায় ক্ষতর দাগ আছে।খুব সম্ভবত কোনো দুর্ঘটনায় বেশ জোরেই আঘাত পেয়েছিলেন।অপারেশন করে সেলাই করা হয়েছিলো সেই দাগই এগুলো। তা দেখে এক্সেরে করলাম।
এক্সেরেতে ধরা পড়েছে উনার গলার নার্ভস ড্যামেজ হওয়ায় অপারেশন হয়েছিলো।যার জন্য ভোকাল কর্ড চিকন হয়ে যায়।এতে উনাত স্বাভাবিক গলার স্বর পরিবর্তন হয়েছে।
মেহরাবঃকত জোরে আঘাত পেলে মানুষের গলার রগ পর্যন্ত ব্যাথা যায়।আর মাথারটা?
উনার মেমোরি লস হয়ে গিয়েছিলো সেই দুর্ঘটনায়।আর যে ডাক্টার উনার চিকিৎসা করেছেন উনিও হয়তো বলে দিয়েছিলেন আগের কোনো কিছু মনে না করতে। মনে করলে ব্রেনে প্রেশার পড়বে।
উনি কাল রাতে ব্রেনে খুব প্রেশার দিয়েছেন।যে জন্য জ্ঞান হারান।
মেহরাবঃমানসিক চাপের কথা বললেন যে!
ডক্টরঃচোখের নিচটা কালো হয়ে গিয়েছে।আর হ্যা দুর্ঘটনার সময় উনি হয়তো প্রেগন্যান্ট ছিলেন।উনার এবোর্শন ও করানো হয়েছিলো।
একটা মানুষের স্মৃতি, গলার স্বর আর সবশেষে বাচ্চা হারানোর পর মানসিক অসুস্থতা স্বাভাবিক নয় কি!?
এতুটুকু বয়সে অনেক কিছু সহ্য করেছেন উনি।
মেহরাব অবাক হয়ে গেলো ডাক্টার এর কথা গুলো শুনে।হাসি খুশি নেহাকে দেখে কখনো মনেই হয় নাই তার জীবনে এত কিছু ঘটে গিয়েছে।
সে নিজেও তো তাকে কতই কষ্ট দিলো।অনুশোচনায় মেহরাবের মাথা নিচু হয়ে গেলো।
মেহরাবঃবাসায় নিয়ে যেতে পারবো কখন?
ডক্টরঃজ্ঞান ফিরলে উনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।কিন্তু খেয়াল রাখবেন অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি যাতে না করে।
ডক্টর চলে গেলো।ডক্টর এর শেষ কথাটা মেহরাবের মাথায় ঘর করে গেলো। অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি মানে!নেহ নূর এর রুমে কেন ঘাটাঘাটি করছিলো।নেহা আর নূরের মধ্যে কি কোনো সংযোগ আছে।আর কাল রাতে কি এমন হয়েছিলো।
আমার মনে পড়ছে না কেন?আমি ড্রিংকস করে বাসায় ফিরলাম তারপর নেহা আমাকে ধরে ছিলো তারপর কি হয়েছিলো!?
মেহরাব নেহার কেবিনে প্রবেশ করলো।
নেহার এখনও জ্ঞান ফিরে নাই।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমাটা নেই।মেহরাব নেহার একদম কাছে যেয়ে চোখ গুলো দেখছে।
মেহরাবঃনূরপাখিইই!
মেহরাব কাপা কাপা হাতে নেহার মুখ থেকে নেকাবটা উপরে তুললো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন