উপন্যাস       :        তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

৪০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪১)

নেহা মেহরাবের কথাটা শোনামাত্র বরফের মতো জমে গেলো।মস্তিষ্ক তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।বুকের ভিতরে থাকা হৃৎপিন্ডটায় কেউ যেন হাতুড়ি পেটা করছে।বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।
নেহাঃমেহের!?
মেহরাব এর কোনো সারাশব্দ পাওয়া গেলো না।হিচকির শব্দটাও থেমে গিয়েছে।নেহা মেহরাবের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহরাব জ্ঞান হারিয়ে নেহার উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়েছে।নেহা মেহরাবকে ধরে পাশে থাকা সোফায় আনলো।তারপর গায়ে কম্বল টেনে দিলো।
মেহরাবের গালে বেয়ে আসা চোখের পানি গুলো শুকিয়ে গিয়েছে।চোখটা এখন ভেজা।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
নেহা নিজের ওড়নার আচল দিয়ে ভেজা চোখটা মুছে দিলো।চুলগুলোতে হাত বুলাতেই মেহরাব বিড়বিড় করে বলে উঠলো।
নূরপাখি।আমাকে রেখে কোথাও যাবে না কিন্তু। 
নেহা মেহরাবের গালে হাত বুলালো।
নেহাঃযাবো না মেহের।
মেহরাব ঘুমের মধ্যেই মুচকি হাসলো।
নেহা উঠে দাড়ালো।

নেহাঃতার মানে কি আমিই নূর?মেহরাবই আমার মেহের?!
আমার নিজের অতীত সর্ম্পকে জানতেই হবে। নেহা উঠে ওই রুমেটার বাইরে যেয়ে দাড়ালো যেখানে মেহরাব তাকে আসতে নিষেধ করেছিলো।


নেহাঃআজকে আপনি আমাকে মেরে ফেললেও আমার জানতে হবে এই রুমে কি আছে।কেন সব রুমের দরজা খোলা থাকলেও এটাতে তালা ঝুলানো।
নেহা দরজায় ঝুলানো তালাটা ভেঙে ফেললো।অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকায় দরজা জ্যাম হয়ে ছিলো।অনেক জোর দিয়ে খুলতে হয়েছে।
রুমের ভিতরটা অন্ধকার হয়ে ছিলো।নেহা ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে সুইচবোর্ড খুজলো।লাইট অন করতেই নেহা স্তব্ধ হয়ে গেলো।
বেড এর উপরের দিকটায় বড় আকারের ছবির ফ্রেম ঝুলানো।ছবিটাতে মেহরাব নূর একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।ছবিটা সম্ভবত তাদের বিয়ের দিনে তোলা।কারন নূর নববধূর সাজে ছিলো।

নেহাঃএটা তো আমিইই!তার মানে আমিই নূর?
নেহার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।বিয়ের দিনের স্মৃতি গুলো ঘোলা হয়ে চোখের সামনে ভাসছে।মেহরাবকে কবুল বলা,কাগযে সাইন করা সব একটু একটু করে মনে পড়ছে।
নেহার চোখের সামনে এমন কিছু চেহারাও ফুটে উঠছে যাদেরকে আজ পর্যন্ত এই বাসায় দেখে নাই।
মেহরাবই আমার মেহের।নেহা একে একে রুমে থাকা সকল কিছু আলমারি ঘাটতে শুরু করলো।আলমারির ভিতরে থাকা ছবি ফ্রেমে সে অনেকগুলো ছবি পেলো।
নেহাঃআমার দেখা অপরিচিত মুখগুলো এখানেও রয়েছে।ইনারা কারা?আমার বাবা মা কি আছে এর মাঝে?!!

নেহার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।চোখের সামনে থাকা বস্তুগুলো ঘুরতে শুরু করেছে।
নেহা সেখানে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে।
আদ্রিয়ান মিরার সাথে সমুদ্রের পাশে রাখা বেঞ্চগুলোর একটিতে বসে আছে।
মিরাঃতা কেমন আছেন?ক্যাপ্টেন? 
আদ্রিয়ানঃআলহামদুলিল্লাহ।আপনি?
মিরাঃএত দিন ছিলাম না কিন্তু এখন থেকে অনেক ভালো আছি।
আদ্রিয়ানঃএকা আসছেন? 
মিরাঃনা।ফ্রেন্ডদের সাথে।আপনি?
আদ্রিয়ানঃওয়াইফের সাথে।
একমূহুর্তে মিরার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।নেহা চোখ বড় বড় করে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে।
মিরাঃসরি কি বললেন?


আদ্রিয়ানঃবললাম আমার ওয়াইফের সাথে হানিমুনে এসেছি।
মিরাঃআপনি ফান করছেন তাই না?আপনার বয়স ২১/২২ হবে।আর আপনি ২ দিন আগেই এসেছেন। তো এত তাড়াতাড়িতো আর বিয়ে করবেন না তাই না।আর ৩ বছর আগে তো আর এত কমবয়সে বিয়ে করে রেখে যাবেন না।
আদ্রিয়ানঃআমি বিয়ে করে মিশনে গিয়েছিলাম।
মিরা মুখটা ছোট হয়ে গেলো।
মিরাঃকি দরকার ছিলো এত অল্প বয়সে বিয়ে করার?
আদ্রিয়ানঃহয়ে গেলো আর কি।
মিরাঃআপনার ওয়াইফ কোথায়?আপনি একা ঘুরছেন যে!
আদ্রিয়ানঃও ঘুমাচ্ছে তো তাই।নতুন সংসার করছি।বুঝোই তো রাত জাগা পড়ে খুব।তাই এখন ঘুমাচ্ছে।
আদ্রিয়ান খুব সাবধানে তিথির দোষগুলো আড়াল করে নেয়।
মিরাঃওহ।আমি কি দেখা করতে পারি তার সাথে?
আদ্রিয়ানঃআচ্ছা। উঠলে নিয়ে আসবোনি।আপনি কোন হোটেলে উঠেছেন?
মিরাঃহোটেল স্টার।
আদ্রিয়ানঃওহ।আচ্ছা। ঠিক আছে।এখন যাই । আবার দেখা হবে।
মিরাঃআচ্ছা।
আদ্রিয়ানঃআহহহ।

আদ্রিয়ান খালি পায়ে হাটছিলো এতক্ষন।মিরা থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে নিলে বালিতে পড়ে থাকা কাচ আদ্রিয়ানে পায়ে ঢুকে পড়ে।
মিরা সাথে সাথে আদ্রিয়ানে হাত ধরে বালিতে বসায়।
মিরাঃআপনি কি পাগল? খালি পায়ে হাটছেন কেন?গেলোতো পা টা কেটে। দেখি আমাকে দেখতে দিন।
আদ্রিয়ানঃআর এ আমি ঠিক আছি।
মিরাঃদেখছি কত ঠিক আছেন।আপনি না বললেও বোঝা যায় বুঝলেন?মানুষকে এত বোকা ভাববেন না।


মিরা চোখ খিচে বন্ধ করে আদ্রিয়ানের পা থেকে কাচটা টেনে বের করলো।আদ্রিয়ানের পা থেকে রক্ত ঝড়ছে।
মিরার চোখে পানি টলটল করছে।
আদ্রিয়ান উচ্চস্বরে হাসছে মিরার অবস্থা দেখে।
আদ্রিয়ানঃআপনি তো এমন করছেন যেন কাচ আমার না আপনার পায়ে ঢুকেছে।
মিরাঃআমার ঢুকলেই ভালো হতো।
মিরার কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের হাসি থেমে গেলো।আদ্রিয়ান অবাক নয়নে মিরাকে দেখছে।
আদ্রিয়ানঃএই মেয়েটা এমন অদ্ভুত আচরন করে কেন!( মনে মনে)
মিরা ওড়না ছিড়ে আদ্রিয়ানের পায়ে বেধে দিলো।
মিরাঃচলুন পাশেই ফার্মেসি আছে।ব্যান্ডেজ করে ফেলি।
আদ্রিয়ানঃআরে ব্যান্ডেজ লাগবে না।আই এম ফাইন।
মিরাঃচুপ।একদম কথা বলবেন না।একতো খালি পায়ে আসে।আবার অসাবধানতার সাথে চলাফেরা করে ব্যাথা পায়।এখন আবার যাবেন না বলছে।
চুপচাপ চলুন বলছি।
আদ্রিয়ানঃআপনি কিন্তু আমার উপর জোর খাটাচ্ছেন।
মিরাঃআপনাকে যে পিটাচ্ছি না তাই অনেক।
আদ্রিয়ান জোর করে আদ্রিয়ানের হাতটা নিজের কাধে নিলো।আদ্রিয়ান মিরার উপর ভর দিয়ে হাটছে।
আদ্রিয়ানঃআমি কি এমন করলাম যে আপনার আমাকে পিটাতে ইচ্ছে করছে?
মিরাঃকি দরকার ছিলো এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার?আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারলেন না?

আদ্রিয়ানঃকরলে কি হতো?
মিরাঃআমি আসতাম আপনার জীবন।আমাকে বিয়ে করতেন।
আদ্রিয়ানঃকি?!
মিরাঃকিছু না।মজা করলাম। চলুন চুপচাপ।
মিরা আদ্রিয়ানকে ব্যান্ডেজ করিয়ে রুমে নিয়ে গেলো।তিথি দরজা খুলে আদ্রিয়ান আর মিরাকে এভাবে দেখে কপাল কুচকে ফেলে।
মিরা আদ্রিয়ানকে বেডে বসিয়ে তিথির মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।
মিরাঃতো আপনিই ক্যাপ্টেন আদ্রিয়ান এর স্ত্রী? 
তিথিঃজ্বি।আপনি কে?
মিরাঃমিরা।


তিথিঃকোন মিরা?
মিরাঃআপনার সতীন।
তিথিঃওয়াট ননসেন্স?!!
আদ্রিয়ানঃআরে মজা করছে।উনিই আমার ফ্রেন্ড।
তিথিঃকোন ফ্রেন্ড?
আদ্রিয়ানঃওই যে বলছিলাম না একজনকে বাচিয়ে ছিলাম। উনিই সে।
তিথিঃওহ।তাহলে আপনার জন্যই আমার জীবনের ৩টা বছর নষ্ট হলো?
আদ্রিয়ানঃতিথিই।কারো সাথে এভাবে কথা বলে?
মিরাঃআমি না জেনে যদি ৩ বছর কেড়ে নিতে পারি তাহলে জেনে বুঝে তো আদ্রিয়ানকে কেড়ে নিতে পারি।সাবধানে থাকবেন কেমন?!
হা হা হা।মজা করলাম।সিরিয়াসলি নিলেন নাকি!?
তিথিঃআপনি এখন আসতে পারেন।
মিরা বাকা হেসে চলে গেলো।
তিথি একবারও আদ্রিয়ানের পায়ের দিকে তাকালোও না জিজ্ঞেস ও করলো না। 
তিথিঃএই মেয়ে সুন্দর বলে প্রেমে পড়ে গিয়েছিস ওর তাই না?
ইশ কি ভালোবাসা।কি সুন্দর করে ধরে নিয়ে আসলো।
আদ্রিয়ানঃএভাবে কথা বলবি না।আমার রাগ উঠে।
আদ্রিয়ানঃএখন তো রাগ উঠবেই।নতুন পেয়েছিস না।মেয়েটা খুব সুন্দর। আমার থেকেও সুন্দর ভালো তো লাগবেই।
তা রাত কি ওর সাথেই কাটিয়ে এসেছিলি নাকি?
আদ্রিয়ানে ইচ্ছে করলো উঠে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিতে তিথির গালে।
আদ্রিয়ানঃআসার পর থেকে দেখছি আমি তোর চোখের কাটা হয়ে গিয়েছি।সহ্যই করতে পারছিস না আমাকে।না আসলেই ভালো হতো তাই না?
তিথিঃহ্যা।খুব ভালো হতো।
আদ্রিয়ান উঠে চলে আসলো রুম থেকে।ব্যাথার উপর চাপ পড়ায় ক্ষত থেকে রক্ত বেড়িয়ে আসলো।
আদ্রিয়ানের সেদিকে খেয়াল নেই।কথার আঘাত যখন হৃদয়কে রক্তাক্ত করে তখন শরীরের ব্যাথা অনুভবই হয় না।আদ্রিয়ানে ক্ষেত্রেও তাই।
মিরা বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলো।আদ্রিয়ানকে বের হতে দেখে এগিয়ে যায়।
আদ্রিয়ানঃখবরদার। একদম আগাবেন না আমার দিকে।আগুনটা তো আপনিই লাগিয়েছেন।
মিরা আদ্রিয়ান এর কথা পাত্তা না দিয়ে জোর করে কাধে আদ্রিয়ানে ভর নিলো।
মিরাঃযা আগে থেকে পুড়ে ছাড়খার সেখানে আমি কি আর আগুন ধরাবো।
আদ্রিয়ানঃমানে?


মিরাঃআপনার স্ত্রী যদি আপনাকে ভালোবেসে থাকতো তাহলে আপনার পায়ে ব্যাথা দেখে বিচলিত হয়ে পড়তো।
তার প্রথম প্রশ্ন আমি কে না হয়ে আপনি কি করে ব্যাথা পেলেন তা হতো।
তার প্রথমতো কি শেষ প্রশ্নতেও আপনি ছিলেন না।আপনি যতোই নিজেদের মাঝের সমস্যাগুলো আড়াল করেন আমার সাথে পারবেন না।সাইকোলজির স্টুডেন্ট আমি।মস্তিষ্ক পড়া আমার কাছে মশা মরার চেয়েও সহজ কাজ।
আদ্রিয়ান ফিরতিতে কিছু বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন