উপন্যাস       :        তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান Bangla Golpo - Kobiyal - Love Story
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান


৪২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪৩)

ঘন পাপড়িযুক্ত টানা টানা চোখ।ঠিক আগের মতোই গোলাপি ঠোঁটজোড়া।কিন্তু শীতের আদ্রতা আর নিতান্ত অবহেলায় প্রিয় ঠোঁট দুটোতে ফাটল ধরেছে।নাদুস নুদুস গাল গুলোও চুপসে গিয়েছে।কপালের ডান কোনায় থাকা সেলাইয়ের দাগটা চুলগুলোর মাঝ থেকে উঁকি দিয়ে অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে।নাকে আমারই দেয়া ছোট্ট ডায়মন্ডের নাক ফুলটা চিক চিক করছে।নিজের যত্ন না নিলেও এই নাকফুলটা যে এতকিছুর পরও জায়গামতোন আছে এটাই জানান দিচ্ছে নূরের স্মৃতি চলে গেলেও স্বামীর অস্তিত্ব তার ভিতর থেকে বিলীন হয় নাই।
চেহারা মাঝে সবকিছু বদলে গেলেও একটা জিনিস একদম বদলায় নাই।পুরো চেহারায় ঠিক আগের মতো মায়া লেগে আছে।ঘুমন্ত এই নারীটা যে কতোটা নিষ্পাপ তা তার চেহারার নূর দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

তাই বুঝি নবনি আম্মু তোমার নাম নূর রেখেছিলো।
নিকাব সরিয়ে নূরকে দেখতে দেখতে এক অন্য জগতে হারিয়ে যায় মেহরাব।এ যে ৩ বছর যাবত না দেখতে পাওয়ার পিপাসা।

পিপাসিত চোখ গুলো যেন পলক ফেলতেও রাজী না।পলক ফেললেই হয়তো নূরপাখিকে এক সেকেন্ড দেখার মূহুর্তটা হারিয়ে ফেলবো।জীবন থেকে অনেক মূহুর্ত হারিয়ে ফেলেছি আর না।


ডাক্তার এর কথা মনে পড়তেই বুকটা ধক করে উঠলো।মেহরাব সাথে সাথে নূরকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।

মেহরাব~
যাকে এত গুলো বছর বুকের সাথে মিশিয়ে বড় করলাম।যাকে জন্মের পর থেকে সূর্যের তীঘ্ন আলোর মুখোমুখি ও হতে দেইনি।যাকে চাঁদের আলোয় যত্ন করে লুকিয়ে রাখলাম।যার প্রতিটা বিপদে কাল হয়ে ছিলাম।যার একটুকরো কষ্ট হবে বলে নিজে দূরে সরে আসলাম।যার এক ফোটা চোখের পানি পড়ার আগে সব ফরমায়েশ পূরন করে দিতাম।যার দিকে আংগুল উঠার আগে সেই হাত কেটে ফেলেছি।সেই মানুষটার জীবন থেকে এত গুলো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেলো।আমার নূরপাখি এত কিছু একা সহ্য করলো?

মেহরাবের চোখ থেকে টলটল করে পানি পড়ছে।মেহরাব নূরকে বুকে মাঝখানে আলতো করে জড়িয়ে ধরে আছে।যেন চাপ দিয়ে ধরলে নূর খুব করে ব্যাথা পাবে।
আমি কই ছিলাম!!কোথায় ছিলাম আমি যখন আমার নূর ব্যাথা কাতরাচ্ছিলো।কোথায় ছিলাম আমি যখন আমার কলিজার গর্ভ থেকে কলিজার টুকরাকে বের করে নিচ্ছিলো।আমার নির্দোষ সন্তানকে ছুইতে পারি নাই আমি।পারি নাই তাকে বাবা হিসেবে নিরাপত্তা দিতে।
আমি এতোদিন যাবত নূরকে দোষারোপ করছিলাম যেখানে অপরাধী কেবল আমিইই!?আমার বাচ্চার অপরাধী আমি।আমার স্ত্রীর অপরাধী আমি।

মেহরাব চৌধুরী এক ব্যার্থতার নাম।হেরে গিয়েছি আমি।রাজনীতি নিয়ে নিজের কষ্ট নিয়ে এত মেতে উঠলাম যে আমার স্ত্রী গর্ভবতী ছিলো সেই খবর আমি পাই নাই।যে সময়টাতে তার আমাকে সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিলো আমি তখন মিটিং অফিস আদালতে ব্যস্ত ছিলাম।
তুমি অনেক ডেকেছো না আমাকে নূর পাখি।আমি শুনি নাই তোমার ডাক।যখন তোমার গলায় অপারেশন হচ্ছিলো তখন তুমি সেই দুর্বল গলায়ও মেহের ডেকেছিলে আমি আসি নাই।


যখন আমদের সন্তানকে তোমার কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছিলো তুমি চিৎকার করে বলেছিলে মেহের আমাদের সন্তান।আমি তখন ও আসি নাই।

আমার তোমার প্রতি করা নিষ্ঠুরতা প্রকৃতি মেনে নিতে পারে নাই।তাই হয়তো তোমার মস্তিষ্ক থেকে মেহরাব নামটা মুছে দিয়েছে।তোমার কষ্টের কাছে নিয়তিও হার মেনেছিলো সেইদিন তাইতো তোমাকে মেহরাবের নূর থেকে নেহা নামক জীবন দিলো।যেই জীবনে মেহরাব চৌধুরীর মতো নিকৃষ্ট মানুষের কোনো স্থান  নেই।

আমি কেন তোমাকে সময় দিতে পারলাম না কলিজা।এই অনুশোচনা আমাকে আর বাচতে দিবে না।আমি কি করে বাচবো এই বাস্তবতা নিয়ে যে আমি আমার নিজের সন্তানকে নিরাপত্তা দিতে পারি নাই।

মেহরাবের চোখের পানিতে নূরের কাধ ভিজে গিয়েছে।নূর চোখ খুলে নিজেকে মেহরাবের বক্ষগহ্বরে আবদ্ধ পায়।
নূরঃমেহের।কাদছেন কেন?

মেহরাব এই বার পুরোপুরি ভেঙে পড়লো।যেন নিশ্চুপে গড়িয়ে যাওয়ার চোখে পানি গুলো এতক্ষন এই আশ্রয়স্থলের অপেক্ষায়ই ছিলো।
মেহরাবঃআমাকে ক্ষমা করে দাও নূর পাখি।আমি খুব খুব খারাপ। আমার থেকে খারাপ আর কেউই পৃথিবীতে অবশিষ্ট নেই।


নূরঃএই কি যা তা বলছেন। দেখি আমার দিকে ঘুরেন।
মেহরাব নূরের পায়ের দিকে হাত বাড়ালো।নূর সাথে সাথে হাত দুটো ধরে ফেললো।
নূরঃকি করছেন মেহের।

মেহরাবঃএটা করার পরও আমার শান্তি হবে না নূর পাখি।আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমি আমার বাচ্চাকে ধরতে পারি নাই নূর।আমাদের প্রথম বাচ্চা।আমার রক্ত।আমি তাকে ধরার এক পলক দেখার সুযোগটা ও পাই নাই।আমার ছোট্ট পাখিটা কত কষ্ট নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে।ও তো বলবেই না আমার বাবাইটা একদম ভালো না আমার সাথে দেখাটাও করতে আসলো না।

নূর মেহরাবের দুই গালে দুটো হাত রেখেছে।কাদতে কাদতে মেহরাব চোখ ফর্সা নাক মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।মেহরাবের এমন অবস্থা দেখে নূরের চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে।
নূর মেহরাব বুকে জায়গা করে দিয়েছে।মেহরাব পাগলের মতো আচরন করছে।নূর মেহরাবের চুলগুলোতে হাত বুলাচ্ছে।

মেহরাবঃও পাখি।তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে না যখন গলায় অপারেশন করেছে।তুমি অনেক কান্না করছো না।আমি কেন ছিলাম না?নূর পাখি।

আমি কেন আমার নূরপাখি যত্ন নিতে পারলাম না।তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে।আমার বাচ্চা পারবে তার বাবাকে ক্ষমা করতে বলোনা।নূর।
নূরঃআমি আর আপনার বাচ্চা কেউই আপনার উপর রেগে নাই।যা হয়েছে তা শুধুই নিয়তি ছিলো।এখানে আপনার দোষ ছিলো না।নিজেকে দোষ দেয়া  বন্ধ করুন।


মেহরাব নূরের কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে রাখা মাথা রাখে।নূর মেহরাবের চোখের পানি গুলো মুছে দেয়।মেহরাব নূরের হাত গুলোতে চুমু খায়।
মেহরাবঃনূর পাখি।তুমি বাবুকে কোলে নিয়েছিলে?ও  আরাফ ছিলো নাকি নবনি?কার মতো হয়েছিলো দেখতে। বলো না।

নূরঃএক্সিডেন্টে বাবুর মাথায় আঘাত পায়।ডাক্টাররা বলে বাবুকে তখনই ফেলে দিতে।আমার তখন ৪ মাস চলছিলো।আমি বলেছিলাম আমি বাবু ফেলবো না।
উনার বললেন যদি না ফেলি তাহলে এই বাচ্চা মৃত্যু জন্ম নিবে আর নয়তো প্রতিবন্ধী।তবুও আমি তাকে রেখেছিলাম।কারন ততক্ষনে আমি আপনার স্মৃতি গুলো হারিয়ে ফেলেছিলাম।আমার কাছে শুধু বাবুই ছিলো আপনার দেয়া।

৬ মাসের সময় জানলাম ও নবনি মামনি।আমার সারা সারা দিন মামনির সাথে কথা বলেই কেটে যেতো।সাত মাসের মাথা পেটে প্রচুর ব্যাথা অনুভব করি।হাসপাতালে গেলে জানতে পারি আমার মেয়ে দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছে।ব্রেনের ব্যাথা সহ্য করতে পারে নাই আমাদের মেয়েটা।ডাক্টার আমার হাতে ছোট পাখিটাকে তুলে দেয়।আমার মেয়েটা একদম চুপ হয়েছিলো।

ও একদম আপনার মতো ফর্সা হয়েছিলো।চোখ গুলো নবনি মামনির ফটোকপি।নাকটা আপনার মতো।ঠোঁটটা আমার আরাফ বাবাইয়ের মতো।একবার শুধু ছোট্ট ছোট হাত গুলো দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করতে পেরেছিলাম।তারপর ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেলো ওরা।আমি চিৎকার করে মেহের বলে ডেকেছিলাম।কিন্তু আপনি শুনতে পান নাই।
আমার স্মৃতি হারানোর আগে আমি এই নামটাই বিড়বিড় করছিলাম তাই মিরা সেটা মনে রেখেছিলো।এই একটা নাম ছাড়া আমার কাছে কিছুই রইলো না।


সব কেড়ে নিয়ে গেলো সেই কাল বৈশাখি। 
নূর মেহেরের মাথার উপর মাথা ঢেকিয়ে উচ্চশব্দে কাদতে লাগলো।

নূরঃছাড়বেন না মেহের। ওকে একদম ছাড়বেন না।আমার মাসুম বাচ্চার হত্যাকারীকে একদম ছাড়বেন না।ওর কঠিন শাস্তি পাওনা।খুব কঠিন।সে এক মা থেকে তার অনাগত সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে।

মেহেরাবের কপালে রগ গুলো টান টান করে ফুলে উঠলো।চোখে আগুনের শিখায় উদয়মান হলো।

মেহরাবঃতোমার মনে আছে কে সে?

নূরঃআমার সব মনে পড়ে গিয়েছে।সব।স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছে তার নিষ্ঠুরতা।আমি প্রেগন্যান্ট জেনেও আমার পেটে গাড়ির আঘাত দিলো।আমি ওর পা ধরে বলেছিলাম আমি চলে যাবো আমার সন্তানকে বাচাক।কিন্তু সে আমাকে পথ থেকে সরাতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।


মেহরাবঃ কে সে?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন