উপন্যাস       :        তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান Bangla Golpo - Kobiyal - Love Story
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান


৪৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪৪)

মেহরাব নূরকে বাসায় নিয়ে আসে।নূর আসতেই আশমিনকে নিজের কাছে এনে রাখে।আশমিন ঘুমিয়ে পড়েছে।নূর মুচকি হেসে তাকে মেহরাবের রুমে বিছানা শোয়ায়।আশমিনকে রেখে পিছনে ঘুরতেই মেহরাবের সাথে ধাক্কা লাগে।
নূরঃএই মিস্টার?আপনার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই নাকি?সেই সকাল থেকে পিছন পিছন ঘুরছেন।

মেহরাবঃকাজ তো করতে চাই।কিন্তু ডাক্টারতো তোমাকে খাটাতে নিষেধ করেছে। তাই কষ্ট দিচ্ছি না।
নূরঃমেহের!!একদম না।নেহাই ঠিক ছিলাম দূর দূর করে রাখতেন।এখন নূর হওয়ার পর থেকে পিছু ছাড়ছেন না।৩ ফিট দূরত্ব বজায় রাখবেন।

মেহরাব সুন্দর মতো যেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।নূর এর ব্যাপারটা কেমন কেমন জানি লাগছে।তবুও মেহরাব আগের থেকে অনেকটা চেঞ্জ হয়ে আছে।আগের মতো দুষ্টুমি করবে না ভেবে নূর বেডে পাশে থাকা ড্রেসিং টেবিল এর সামনে যেয়ে দাড়ালো।তারপর আস্তে আস্তে করে বোরখাটা খুলে রাখলো।মেহরাব যেন এই সুযোগেই ছিলো।নূর বোরখা খুলে রাখতেই মেহরাব একটানে নূরকে বেডে ফেলে দিলো।
নূরঃমেহের। একদম ঠিক হচ্ছে না কিন্তু। 

মেহরাবঃকি ঠিক হচ্ছে না? হুম?৩ ফিট দূরে থাকবো।বাহ!কি সুন্দর কথা ৩ বছর দূরে থাকার পর ও ৩ ফিট দূরে কি করে থাকতে বলো।এটা পানিশমেন্টতো দিতেই হবে।
মেহরাব ডেভিল মার্কা হাসি দিলো।
নূরঃএকদম না। অনেক ব্যাথা পাই মেহের।সত্যিই!
মেহরাবঃমলম আসে পাখি।


মেহরাব নূর এর ঘাড়ে তীঘ্ন দাতগুলো বসিয়ে দিলো।নূর চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।কিন্তু কিছুক্ষন পর অনুভব করলো ব্যাথা পায় নাই।
চোখ খুলে মেহরাবের দিকে অবাক নয়নে তাকালো।
মেহরাবঃঅনেক কষ্ট দিয়েছি।আর না।এই বার কষ্ট পাওয়ার পাল্লা অন্য কারো।
মেহরাব বাকা হাসি দিলো।

নেহা মেহরাব এর বুকে ঢুকে পড়লো। অনেক দিন পর যেন এক টুকরো শান্তি খুজে পেল।আবেশে চোখগুলো বন্ধ হয়ে আসলো।আরো গভীর ভাবে জাপটে ধরতে ইচ্ছে করলো মেহরাবকে।নূর ইচ্ছেটা চেপে রাখতে পারলো না।আকড়ে ধরলো তার মেহেরকে।
মেহরাব মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।নূর কয়েক সেকেন্ডেই ঘুমিয়ে পড়লো।

মেহরাবঃআমার পাখি আমার খাচায়ই ভালো আছে।মুক্ত আকাশ তোমার জন্য নূরপাখি।তোমাকে আমি আমার বুকের মাঝেই আদরে পুষবো।
মেহরাব নূরে কপালে চুমু খেলো।
আদ্রিয়ান মিরার সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।
মিরাঃআপনাদের সমস্যা টি কী আমাকে একটু খুলে বলবেন?
আদ্রিয়ান এক ধ্যানে পানির গ্লাসটার দিকে তাকিয়ে আছে।
মিরাঃক্যাপ্টেন।শুনতে পাচ্ছেন কি?

আদ্রিয়ান এখনো নিশ্চুপ।
মিরাঃআমাকে সমস্যা না বললে কি করে সমাধান বের করবো?
আপনি আমাকে সাহায্য করেছেন এই বার আমাকে সুযোগ দিন আপনাকে সাহায্য করার।
কথাটা শোনামাত্র আদ্রিয়ানের মধ্যে নড়চড় দেখা গেলো।
আদ্রিয়ান তীঘ্ন চোখে মিরার দিকে তাকালো।


মিরা জিজ্ঞাসা বোধক চাহনিতে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে আছে।
আদ্রিয়ানঃআমি আমার স্ত্রীর অতীত সর্ম্পকে জানতে চাই। ওই সময়টা সম্পর্কে জানতে চাই যখন আমি ছিলাম না ওর জীবনে।আমি গত তিন বছর এর ঘটনা গুলো জানতে চাই পারবেন বলতে?

কি পারবেন না তো।তাহলে কেন সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন?
মিরা মুচকি হাসলো।
মিরাঃঅবশ্যই পারবো।কিন্তু তার আগে আমাকে সমস্যা বলতে হবে।
আদ্রিয়ানঃওকে।আগে বলুন কি করে বলবেন আপনি?আপনিতো ছিলেন না সেই সময়।
মিরাঃআমি না তিথি নিজে বলবে সব কিছু। আপনি বুঝি ভুলে গেলেন।আমি একজন সাইকোলজিস্ট।

আমি তিথিকে হিপনোটাইজ করে সব তথ্য বের করতো পারবো।ও খুব সহজেই তোতাপাখির মতো গড় গড় করে সব বলবে।
আদ্রিয়ান লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আদ্রিয়ানঃকি বলবো?
মিরাঃবিয়ের কি প্রেমের ছিলো?
আদ্রিয়ানঃহুম।

মিরাঃএভাবে বললে হবে?ডাক্টারকে সব সমস্যা না বললে তো ভুল ভাল ওষুধ ধরিয়ে দিবে।
আদ্রিয়ান হাসলো।
মিরাঃআমি বুঝতে পেরেছি আদ্রিয়ান আপনি স্বামী স্ত্রীর মাঝের গোপনীয়তা রক্ষা করছেন।তাই ডাক্টার শব্দটার ব্যবহার করলাম।যাতে আপনি ফ্রি হতে পারেন আমার সাথে। (মনে মনে)

আদ্রিয়ানঃবিয়েটা তাড়াহুড়োতে হয়েছিলো।
আমার মিশনে যাওয়ার আগের দিন জানতে পারলাম তিথি মেহরাব আমার বড় ভাইকে ভালোবাসে। আমি খুব ভেঙে পড়ি কথাটা জেনে।যখন থেকে বুঝতে শিখেছি।শুধুই একটা মেয়েকে ভালোবেসেছি।সে ছিলো তিথি।
মেনে নিতে পারি নাই কঠিন বাস্তবতা।খুব ভেঙে পড়ি।নূর ভাবী সেইসময় আমাকে সামলে নেয়।


মিরাঃমেহরাব বিবাহিত ছিলো?
আদ্রিয়ানঃহুম।
মিরাঃবিবাহিত হওয়ার পর ও মেহরাবকে ভালোবাসতো তিথি?
আদ্রিয়ানঃহুম।আমাকে নূর ভাবীর সাথে দেখে হুট করে তিথি রেগে যায়।আর পাগলামো করে।সেই দিন ও জানতে পারে আমি ওকে ভালোবাসি।
ও আমার কাছে ক্ষমা চায়।মেহরাব ভাইয়ার প্রতি ওর যা ছিলো তা শুধুই এট্রেকশন। ভালোতো ও আমাকেই বাসতো।
আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো।

তারপর আমি এসে পড়বো যখন তখন আবারো পাগলামো করে।ওর জেদে হার মেনে বিয়ে হয়ে যায় আমাদের।
আমি চলে যাই ওর জীবন থেকে।
মিরাঃআসলেই কি ও আপনাকে ভালোবাসে?
আদ্রিয়ান রেগে তাকালো মিরার দিকে।
মিরাঃনা মানে। একদিন আগেও সে মেহরাব ভাইয়াকে ভালোবাসতো আবার পরের দিনই ও আপনাকে কি করে ভালোবাসে?

আদ্রিয়ানঃবললাম না।ওটা এট্রেকশম ছিলো আর কিছু না।
মিরাঃজ্বী বুঝেছি।তারপর?
আদ্রিয়ানঃতিনবছর পর এসে শুনি আমার মা বাবা মারা গিয়েছে।নূর ভাবী নিখোঁজ। আমার হাসিখুশি ভাই রাগ আর অগোছালো হয়ে আছে।সব কিছু বদলে গিয়েছে।
মিরাঃসরি।আমার জন্য...


আদ্রিয়ানঃতিথিকে আসার পর আগের মতো পাই নাই।দূর দূর থাকে প্রথমে ভাবলাম হয়তো মানিয়ে নিতে পারছে না।তাই সময় দিলাম।
এখানে নিয়ে আসলাম।আলাদা সময় কাটাতে।কিন্তু প্রথমে আসার জন্য রাজী হচ্ছিলো না।আর যখন আসলো উগ্র আচরণ করছে।
আমাকে রাগে এটা ও বলে দেয় আমার সাথে বিয়ে করে ভুল করেছে।
মিরাঃএকটা কথা বলি?রেগে যাবেন না তো?
আদ্রিয়ানঃবলেন।

মিরাঃআপনার স্ত্রীর মতো ভেজাল আসে।কঠিন ভেজাল। 
আদ্রিয়ান রেগে তাকালো মিরার দিকে।
মিরাঃরেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
আদ্রিয়ানঃযা জানা ছিলো বলে দিয়েছি।এইবার আপনার কাজ।
মিরা বাকা হাসলো।

মিরাঃযা বোঝার বোঝা হয়ে গিয়েছে।M ফর মিরা।M ফর ম্যাজিক।এইবার আপনার গল্পে মিরার ম্যাজিক দেখবেন।কিন্তু আবারো ভেঙে পড়বেন না তো?পড়লে সমস্যা নাই।নূর ভাবী না থাকলেও আমি তো আছি।
আদ্রিয়ানঃসবসময় মজা না করলেও পারেন।


মিরা আদ্রিয়ান এর হাতে হাত রাখলো।
মিরাঃআমার মনে হয় আপনার পরিবারে যত ঝামেলা চলছে সব কিছুতে তিথির হাত আছে।মেহরাব ভাইয়ার চেঞ্জ হওয়ার আর নূর ভাবী চলে যাওয়াতেও তিথি কোথাও না কোথাও কানেক্ট আছে।

কথাটা যদি ঠিক হয় কি করবেন?
আদ্রিয়ানঃআদ্রিয়ান চৌধুরী ছাড় আর ছেড়ে কোনোটাই দেয় না।সে যেই হোক না কেন।
এর আগে ভুল করেছিলো বাচ্চামো ভেবে মাফ করে দিয়েছিলাম।কিন্তু এইবার নিজে হাতে শাস্তি দিবো।

আর যদি আপনি ভুল প্রমানিত হোন আপনাকে ও শাস্তি দেয়া হবে।
মিরা খিলখিল করে হেসে দিলো।
মিরাঃআমাকে বিয়ে করে সারাজীবন শাস্তি দিন। আমি মাইন্ড করবো না।
আদ্রিয়ানঃবিবাহিত ছেলেকে প্রপোজ করছেন?

মিরাঃবিবাহিত না হলে আমার স্বামী থাকতেন। আমার ব্যাড লাক।বাদ দিন।
কাউকে ভালোবাসলেই পেতে হবে এমন তো কিছু না।আপনি ভালো থাকেন এটা আমার সুখ।এখন তা আমার সাথে হয় বা তিথির সাথে Doesn’t matter. 
আদ্রিয়ানঃআপনি কি ভালোবাসেন আমাকে?

মিরাঃকিছু জিনিস বুঝে নিতে হয়। ক্যাপ্টেন তো আর এমনিতে হোন নাই।ব্রেনটাকে কাজে লাগান।


বিকেলে আমার রুমে নিয়ে এসেন তিথিকে।
মিরা উঠে চলে গেলো।
আদ্রিয়ানঃঅদ্ভুততো মেয়েটা!

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন