উপন্যাস       :        তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান Bangla Golpo - Kobiyal - Love Story
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান


৪৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৫০)

আদ্রিয়ান এর গাড়ি চৌধুরী ভিলার এসে পৌছায়। গাড়িটা থামা মাত্রই তিথি বের হয়ে বাসার ভিতরে ছুটে।যেন অনেক দিন পর প্রান ফিরে পেলো।
মিরা সেদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।আদ্রিয়ান গভীর ঘুমে।মিরা আলতো করে আদ্রিয়ান এর গাল স্পর্শ করে।
মিরাঃবাসায় এসে পড়েছি।ক্যাপ্টেন।
আদ্রিয়ানঃহুম।আর একটু ঘুমাবো।
মিরাঃআর একটু না পুরোটাই ঘুমান।বাসায় যেয়ে।
আদ্রিয়ানঃউহুম।ঘুমাতে দাও।
মিরাঃআপনার নূর ভাবীর সাথে দেখা করবেন না?
আদ্রিয়ান এর ঘুম সাথে সাথে উধাও হয়ে গেলো।হকচকিয়ে উঠে পড়ে।দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে বাসার দিকে হাটা ধরে।
মিরাকে একটাবার ডাক ও দেয় না।সুড়সুড় করে বাসার ভেতরে চলে যায়।মিরা আদ্রিয়ান এর যাওয়ার পথে চেয়ে মলিন হাসে।
মিরাঃআপনিও তিথির মতোই আদ্রিয়ান। ও মেহরাব ভাইয়াকে ঘিরে দিন দুনিয়া ভুলে যাচ্ছে।আর আপনি তিথিকে ঘিরে।

আমাকে ভালো রাখার চেষ্টাতো ভালো করছেন।কিন্তু মন থেকে কখন আপন করে নিবেন?
আমার সবটা যে শুধুই তোমায় ঘিরে ক্যাপ্টেন আদ্রিয়ান চৌধুরী।
মিরা গাড়ির বাইরে পা রাখতেই আদ্রিয়ান ফিরে আসে।
আদ্রিয়ানঃসরি।এক্সাইটমেন্ট এ সব ভুলে গিয়েছিলাম।
মিরা কোনো উত্তর দেয় না।সোজা হাটা ধরে।
আদ্রিয়ানঃওহ নো!আমি এটা কি করলাম।মিরা যে পরিমান অভিমানী মেয়ে জেনেও এতো বড় ভুল কি করে হয়ে গেলো আমার দ্বারা।এইবার ওর মান ভাংগাবো কি করে? (মনে মনে)
_ও অভিমানিনী। 
_শুনো না।
_সরি তো।
_ইচ্ছে করে করি নাই।
_দাঁড়াও না।
মিরা কোনো উত্তরই দিচ্ছে না।আদ্রিয়ান আর কোনো উপায় না দেখে মিরাকে টুস করে কোলে তুলে নিলো।
মিরাঃএই এই করছেন টা কি?নামান আমাকে।নামান বলছি।
আদ্রিয়ানঃএতক্ষন তো মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলো না।এখন কোলে তুলে নেয়ার সাথে সাথে মুখ খই ফুটেছে?


মিরাঃদেখেন।ঠিক হচ্ছে না কিন্তু। নামান আমাকে।
আদ্রিয়ানঃএটাই ঠিক হচ্ছে।আমি ভুল করেছি তোমাকে না নিয়ে একা একা ভিতরে চলে গিয়ে।এইবার এটাই আমার শাস্তি তোমাকে কোলে করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া।
আমি কিন্তু নিজেই নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি। এইবার আর রেগে থাকা যাবে না আমার উপর।
মিরা আদ্রিয়ান এর গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি হাসছে।
আদ্রিয়ানঃহেসেছো মানে ফেসেছো।তাই না? বলো বলো?
মিরাঃএকদমই না। আমাকে নামানতো।কেউ দেখে ফেললে কি বলবেন বলেন তো?
আদ্রিয়ানঃসেটা আমার মাথা ব্যাথা।তোমার ভাবতে হবে না।
আদ্রিয়ান মিরাকে কোলে নিয়ে বিন্দাস হাটছে।মনেই হচ্ছে না কোনো ওজন বহন করছে।
মিরাঃকষ্ট হচ্ছে না?দেখুন রাগ করে নাই আমি।নামিয়ে দিন। 
আদ্রিয়ানঃকি খাও বলোতো একদম নরম তুলোর মতো তুমি।কোনো ওজনই নাই।
মিরাঃআমার ওজন ঠিক আছে।আপনিই ভারী ভারী বন্দুক টেনে অভ্যস্ত তাই আমার ওজন আপনার কাছে তুলো মনে হচ্ছে।

আদ্রিয়ানঃআরে না।সত্যিই তুমি খুব হাল্কা।তিথিতো এতো হাল্কা না।
মিরাঃকি বললেন?আপনি ওকে কোলে নিয়েছেন?
আদ্রিয়ানঃনা মানে আসলে।
মিরা আদ্রিয়ান এর চুল ধরে টানতে লাগলো।
মিরাঃকেন নিয়েছেন হ্যা?বেয়াদ্দপ। ইতর। বদমাইশ লোক।
আদ্রিয়ানঃআরো জোরে টানো।এত অল্পতে হয়?আহা আরাম লাগছে না তো।আর একটু জোরে টানো তাহলেই আরাম পাবো।
মিরার হাত থেমে যায়।
আদ্রিয়ানঃএতো জেলাস?
মিরা রেগে তাকায়।চোখে পানি ছলছল করছে।
আদ্রিয়ানঃআপনাকেই প্রথম কোলে নিয়েছি ম্যাম।আর কাউকে নেই নাই।আমিতো জাস্ট ফান করলাম।এতেই কেদে কেটে ভাসিয়ে দিতে হবে?
মিরা আদ্রিয়ানকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে।আদ্রিয়ান   এর ওষ্ঠধর প্রশস্ত হয়।
আদ্রিয়ানঃএইবার বুঝলাম আমার প্রথম বিয়েটা কেন নকল বের হলো। তা না হলেতো তুমি আমার ২য় স্ত্রী হওয়ার সত্যটা মেনেই নিতে পারতে না।


মিরাঃকে বলছে পারতাম না?আপনার ২য় ভালোবাসা হওয়াটাতো ঠিকই মেনে নিতে হচ্ছে।
আদ্রিয়ান থমকে গেলো।এইভাবেতো কখনো ভেবে দেখে নাই।
আদ্রিয়ান ঠোঁটটা মিরার কানের কাছে নিয়ে বললো
আদ্রিয়ানঃকথা দিলাম শুরুটা তোমায় ঘিরে না হলেও শেষটা ঠিকই তোমায় ঘিরে হবে। 
এই একটি বাক্য মিরার হৃদয়ের ভিতরটায় আঘাত হানলো।অশান্ত বিভ্রান্ত মনটা শীতলতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো।অভিমানের পাহাড় ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
মিরা বিশ্বস্ত নয়নে আদ্রিয়ান এর চোখর গভীরে উঁকি দিলো।
মিরাঃআপনি না ভালোবেসেও যদি এতোটা ভালো রাখতে পারেন তাহলে ভালোবাসলে কি হবে?

আদ্রিয়ানঃআদ্রিয়ান এর ভালোবাসা অতি ভয়ানক মায়াবিনী।উঁকি দিতে যেয়ো না ডুবে যাবে।পরে নিজেই বলবে ভালোবাসার আগেই ভালো ছিলাম। 
মিরাঃআপনার কি মনে হয় আমি আপনার এসব কথায় ভয় পাবো আমি?মিরা কাউকে ভয় পায় না।
আদ্রিয়ানঃদেখা যাবে।
আদ্রিয়ান মিরা কথা বলতে বলতে বাসায় ঢুকে পড়ে কিন্তু সেদিকে দুজনের একজনেরও খেয়াল নেই।তারা নিজেদের মাঝেই হারিয়ে আছে।
এদিকে নূর মেহরাব আহম্মক হয়ে গেলো আদ্রিয়ান আর মিরার প্রেম দেখে।মেহরাব নূরের কানে কানে বললো
মেহরাবঃতোমার দেবরতো বলেছিলো তিথির সামনে মিরার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করবে এদিকে তো দেখছি অন্যই ডাল খিচুড়ি রান্না করছে।

নূরঃকরলেই বা কি?আপনার শালীর সাত কপালের ভাগ্য আমার দেবরের মতো ছেলে পাবে।
মেহরাবঃওইটাই ভাবছি।শালীটা না জানি কি পাপ করছিলো আল্লাহ আদ্রিয়ান এর মতো ছেলে জুটিয়েছে।
নূরঃআদ্রিয়ান এর মতো ছেলে লাখে একটা পাওয়া যায়।
মেহরাবঃআরে রাখো তোমার লাখের হিসাব।আমার শালীর মতো মেয়ে কোটিতে একটা আসে।


আরিয়ান টেবিলে রাখা কাচের গ্লাসটা নিয়ে ঠাস করে ভেঙে ফেললো।শব্দে মিরা আদ্রিয়ান বাস্তবে ফিরে আসলো।নূর মেহরাব ঝগড়া থামিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।
তিথি এতক্ষন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিলো।একদিকে আসার পর শুনলো মেহরাব নেহার নামের মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছে আর একদিকে আদ্রিয়ান মিরার প্রেমলীলা।
আরিয়ানঃহচ্ছেটা কি?একজন নূরকে ভুলে গিয়ে নেহাকে বিয়ে করছে।আর একজন তিথির সামনে অন্য একটা মেয়ে কোলে নিয়ে ঢুকছে।
সমস্যা কি তোমাদের?আল্লাহ কপাল করে আমাকেই এইরকম শালা দিলো?
ওই কয়টা লাগে তোদের?

আদ্রিয়ান মিরাকে তিথির পাশ কাটিয়ে সোফায় এনে রাখে।
আদ্রিয়ানঃআরে ভাইয়া।আপনিতো একটা চিজ।
মানে না জেনে বুঝেই যা তা ভাবছেন।মিরার পা মচকে গিয়েছিলো তাই ওকে কোলে করে আনতে হলো।আর ভাইয়ার বিয়ে মানে?
কিহ!!ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছে?
নূর মেহরাব হা করে আদ্রিয়ান এর এক্টিং দেখছে।আদ্রিয়ানকে দেখে বোঝা দায় যে ও অভিনয় করছে। 
মিরা আরো এক কাঠি এগিয়ে। 

মিরাঃআহহহহ।আমার পায়ায়ায়া।অনেক ব্যাথা। হাটতে পারছি না।
আরিয়ান তাড়াতাড়ি ছুটে আসলো কই দেখি।মিরা বেচারী ফেসে গেলো।ও তো আর জানতো না আরিয়ান ডাক্টার।
আদ্রিয়ানঃএই মেয়ে কই কি অভিনয় করে।ভাইয়া যদি এখন ধরে ফেলে! (মনে মনে)
মেহরাবঃআরে আরিয়ান তুই কি দেখবি?তুই কি হাড্ডির ডাক্টার?
আমি ডাক্টার ডাকছি।তুই ছাড়তো।
আরিয়ানঃআরে আমাকে দেখতে দে।বেশি না হলে আমিই পারবো ঠিক করতে।
মেহরাবঃসব মেয়েদের পা ছোয়ার ধান্দা। দাড়া ডাকছি আদ্রিতাকে।আদ্রিতায়ায়ায়ায়ায়া।
আরিয়ান ছিটকে সরে আসে।

আরিয়ানঃআরে ভাই। কি করছিস?আমি তো!
মেহরাবের ডাকে আদ্রিতা নিচে নেমে এলো।মিরা হাফ ছেড়ে বাচলো।
আদ্রিতাঃকি করছো তোমরা?ঘুমাবে না?
আর ভাই তুই কেন ডাকলি এভাবে? বল দেখি?
আরিয়ান বেচারা আকুতি মিনতি করছে যাতে আগুন না লাগায় ওর সংসারে। মেহরাব আর কথা বাড়ালো না।


চোখ দিয়ে ইশারা করলো আরিয়ানকে যে এইবারের মতো ছেড়ে দিচ্ছি।
আরিয়ান ও ইশারায় অনেক উপকার হলো টাইপ ধন্যবাদ জানালো।
আদ্রিতাঃকি হলো কিছু বলবি?

মেহরাবঃদেখ।তোরা।আমি আর কত কাল একা থাকতাম বল?তাছাড়া নেহা খুব ভালো মেয়ে।আমার অনেক যত্ন করে তাই ওকেই বিয়ে করে ফেলেছি।
আদ্রিতাঃকিহ!বিয়ে করে ফেলেছিস?
তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।ভাই যে বিয়ে করছে তাই তো অনেক।এখন মেয়ে যেই হয় না কেন!

আর নেহা যেভাবে আশমিনকে সামলে নিয়েছে ভাইকেও ঠিক সামলে নিবে।
আরিয়ানঃকিহহ!!তুমি এতো সহযে কি করে মেনে নিতে পারো আদ্রিতা?
আদ্রিয়ানঃআরে ভাইয়া।আমিও তো শক খেয়েছিলাম।বাট আপুনির কথায় পয়েন্ট আছে।
ভাইয়া ভালো থাকলেই হলো এইবার যার সাথেই থাক না কেন!
তিথিঃকিন্তু আমি মেনে নিতে পারবো না।মেহরাব ভাইয়ার যদি ভালো থাকতে বিয়ে করতে হয় তাহলে তা আমাকে করবে।
আদ্রিতাঃএটা তুমি কি বলছো তিথি?

তিথিঃআপুনি তুমি তো আগেও আমাকে মেহরাব ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিচ্ছেলে তাই না?
আদ্রিতাঃহ্যা।কিন্তু তখন তো আদ্রিয়ান ছিলো না।
তিথিঃএখনো নাই।আদ্রিয়ান মিরার সাথে পরকীয়া করছে।


মিরার কথাটা সহ্য হলো না। মিরা উঠে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো তিথির গালে।
তিথি রেগে মিরাকে পাল্টা মারতে হাত উঠায় আদ্রিয়ান খপ করে হাত ধরে ফেলে।
আদ্রিয়ানঃখবরদার!হাত ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিবো ।
তিথি চমকে উঠে আদ্রিয়ান এর ব্যবহারে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন