উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৭২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৭৩)
সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। রোদের উত্তাপ নেই বললেই চলে। সন্ধ্যার ঠিক আগমুহূর্তে রিকশায় করে বাসায় যাচ্ছে কাব্য। তখনই ক্রিং ক্রিং শব্দ করে পকেটে থাকা তার ফোনটা বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে স্কিনের দিকে তাকায় সে, কে কল করেছে তা দেখার জন্য। কিন্তু কে কল করেছে তা সে বুঝতে পারলো না। কারণ নাম্বারটা অচেনা। তাই রিসিভ করে কানে দিয়ে বললো
- আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?
ফোনের ওপাশ থেকে একটা পুরুষালি কণ্ঠস্বর উত্তর দিল
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি নিরব।
- নিরব! কুহুর কাজিন, নিরব ভাইয়া।
নিরব নামটা শুনে প্রথম সেকেন্ডে বুঝতে না পারলেও, তার পর পরই মনে পড়ে যায় কুহুকে বিয়ে করতে চাওয়া তার চাচাতো ভাই নিরবের কথা। নিরবের সাথে তার বেশ কয়েকবার দেখা হলেও, কথা তেমন একটা হয়নি কখনো। ওই হায় হ্যালো বায়ের মধ্যেই তাদের কথা সীমাবদ্ধ ছিল। ছোটবেলা থেকেই কাব্য আর নিরব দুজনেই নিজেদের লেখাপড়া নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতো। ফলে তাদের এই ব্যস্ততার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া আর কারো সাথে তেমন সখ্যতা গড়ে উঠেনি। যদিও তাদের এই ব্যস্ততার কারণ ভিন্ন। কাব্য লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকলো নিজের কষ্ট ভুলতে। আর নিরব লেখাপড়া নিজে ব্যস্ত থাকতো নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে। কুহুর ক্ষেত্রেও কাব্য যেমন পড়ায় বেশি মনোযোগ দিত, যেন কুহুকে না পাওয়ার কষ্টটা কিছু মূহুর্তের জন্য হলেও ভুলে থাকতে পারে। ঠিক তেমনি নিরবও বেশি করে পড়ায় মনোযোগ দিত, যাতে করে নিজেকে কুহুর যোগ্য করে তুলতে পারে। নিরব নিজেকে কুহুর যোগ্য করে ঠিকই তুলেছে। কিন্তু তাও যার জন্য এতোকিছু তাকে পেল না। তার শুভাকাঙ্ক্ষী সবাই বলে সবই নাকি ভাগ্যে। তবে সে মানতে নারাজ। তার মতে ভাগ্য বলতে কিছু নেই। সে চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই কুহুকে পাবে। সে সংকল্পবদ্ধ, তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করেই ছাড়বে। তাতে যা কিছু করতে হয় সে তাই করবে। নিরব গম্ভীর কন্ঠে বললো
- হ্যাঁ।
কাব্য স্বাভাবিক কন্ঠেই প্রশ্ন করলো
- কেমন আছেন ভাইয়া?
নিরব তাচ্ছিল্যের সুরে বললো
- ভালো থাকার মেডিসিন কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করছ কেমন আছি!
কাব্য বুঝে নিরবের কষ্টটা। কুহুকে বিয়ে করার আগে পর্যন্ত তো সে এই একই আগুনে পুড়েছে। কাব্যের কষ্ট হয় নিরবের জন্য। কিন্তু তার যে কিছুই করার নেই। যত কিছুই হয়ে যাক না কেন, পৃথিবীর কোন পুরুষই যে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর ভাগ অন্য কোন পুরুষকে দিতে পারে না। সেও তার ব্যতিক্রম না। কাব্যের নিশ্চুপ ভাবনার মাঝেই নিরব শক্ত কন্ঠে বললো
- আমি কল্পনায়ও ভাবতে পারিনি কুহু তোমার মতো ছেলেকে বিয়ে করবে। এজন্যই বলে টিনেজার মেয়েদের একটু বেশিই চোখে চোখে রাখতে হয়।
কাব্যে এবারও কিছু বলে না। নিরবের উপর রাগ বা অভিমানও করে না। আগে নিরব কখনোই কাব্যকে হেয় করে কথা বলেনি। তাই কাব্য ভাবে, হয়তো কুহুকে না পাওয়ার রাগে কষ্টে নিরব এমন বলছে। তাই সে চুপ করে থাকে। নিরব আবার বললো
- যা হওয়ার তা তো হয়ে গিয়েছে। তা তো আর চেন্স করা যাবে না। ছয়মাস, ছয়মাস পর তুমি কুহুকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। আমি কুহুকে বিয়ে করবো।
কাব্য নম্র কন্ঠে বললো
- সরি ভাইয়া তা সম্ভব না।
- কেন? কি চাই তোমার। টাকা! সুন্দরী মেয়ে! আমি তোমাকে কুহুর থেকে ধনী, কুহুর থেকেও আরও সুন্দরী মেয়ে এনে দিব। যাস্ট কুহুকে তুমি ডিভোর্স দিয়ে দেও।
কাব্য শান্ত কন্ঠে বললো
- আমার কুহুকেই চাই। ওর থেকে সুন্দরী, ধনী কোন মেয়েকে না। আমার এই কুহুকেই চাই। কারণ আমি ও'কে, শুধুমাত্র ও'কেই ভালোবাসি।
- ভালোবাসো যখন তখন তার ভালোর কথা চিন্তা করছো না কেন?
- কুহু যদি আমাকে বলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে আমি সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিবে। কিন্তু তার আগে না।
- তোমার কি মনে হয়, কুহু তোমার মতো ছেলের সাথে সুখী হবে!
- একজন মানুষ নিজেকে সুখী কখন ভাবে? যখন সে তার চাহিদা মতো সবকিছু পায়। আর দাম্পত্য জীবনে মানুষ তখনি সুখের হয়, যখন তার ভালোবাসার মানুষটাও তাকে ভালোবাসে। আমি দেখতে যেমনি হইনা কেন কুহু আমাকে ভালোবাসে। তাই আমার মনে হয় না কুহু অসুখী আছে।
নিরব শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল
- তারমানে তুমি কুহুকে ডিভোর্স দিয়ে না।
কাব্য শান্ত কিন্তু দৃঢ় কন্ঠে ছোট করে উত্তর দিল
- না।
নিরব রাগী কন্ঠে বললো
- আমিও দেখবো তোমাদের এই ভালোনাসা ঠিক এতোক্ষণ থাকে।
তারপর খট করে ফোনের লাইনটা কেটে দেয় সে। কাব্য কান থেকে নামিয়ে ফোনটা চোখের সামনে নিয়ে আসে। কিছু না ভেবেই "নিরব ভাইয়া" লিখে নিরবের নাম্বারটা সেভ করে। তারপর ফোনের সাইড বাটনটা টিপে স্কিনটা কালো করে ফোনটা পকেটে ঢুকায়। সূর্য ডুবে গিয়েছে, শহরের অন্ধকার দূর করতে জ্বলে ওঠে রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা লাইটগুলো। সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কাব্য মনে মনে প্রার্থনা করে, নিরবের জীবনেও যেন এমন একজন আসে। যে তাকে কুহুরকে না পাওয়ার অন্ধকার থেকে মুক্ত করবে।
ফোনের রিংটোনের শব্দ হতেই হাতের ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে, ফোনের রিংটোনের শব্দ অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকায় অভ্র। বিছানার উপরে থাকা তার ফোনটা বাজছে। হাতের ফাইলটা টেবিলের উপর রাখে সে। সোফা থেকে উঠে বিছানার কাছে গিয়ে, ঝুকে ফোনটা নিতে নিতে স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে মুরাদ কল করেছে। কলটা রিসিভ করে অভ্র বললো
- হ্যাঁ মুরাদ বল।
ফোনের ওপাশ থেকে মুরাদ বললো
- তোর সন্দেহই ঠিক ডলি অর্গান ট্র্যাফিকিং এর সাথে যুক্ত আর তার থেকেও অবাক করা নিউজ হচ্ছে ডলি এস কে কোম্পানির মালিক শিমুল খন্দকারের একমাএ মেয়ে, ডলি খন্দকার।
- হোয়াট!
অবাক কন্ঠে অভ্র বলে। কালকে বিকেলে দীপ্তি অভ্রকে কল করে তার দাদাদের মার্ডারের কথা বলেছে। দীপ্তির মুখে এস কে কোম্পানির মালিক শিমুল খন্দকারের নাম শুনে সে বেশ অবাকই হয়েছিল। কারণ এই কোম্পানি তাদের সাথে ব্যবসা করার জন্য অনেকবার রিকোয়েস্ট করেছে। কিন্তু তার বাবা রাজী হয়নি। এ নিয়ে সে তার বাবার সাথে রাগারাগিও করে, কিন্তু তাও তার বাবা রাজী হয়নি। দীপ্তির মুখে সব শুনে তার মনে প্রশ্ন জাগে তার বাবা কি তাহলে এ সব কিছু আগে থেকে জানতো? তার বাবাকে আজকে সকালে এ নিয়ে প্রশ্নও করেছিল, তার বাবা কোন উত্তর দেয়নি। তাড়া দেখিয়ে হসপিটালের যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তার এই তাড়া দেখে অভ্রের সন্দেহ আরও বাড়ে। ভেবেছিল আজকে বাসায় এলে আমার তার বাবাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করবে। কিন্তু তার আগেই যে সে আরও একটা অবাক করা নিউজ পারে তা ভাবতেও পারেনি। ছোট করে মুরাদ বললো
- হুম।
- দীপ্তিরা জানে?
- হ্যাঁ একটু আগে আমি ইনফরমেশনটা পেয়েই ওদের সাথে কথা বলেছি। তারপরই তোকে ফোন দিলাম।
- ওদের না আজকে এস কে কোম্পানিতে জয়েন দেওয়ার কথা ছিল, দিয়েছে?
- হ্যাঁ। আজকে এস কে কোম্পানিতে যোগ দিয়েছে নতুন সাতজন কর্মচারী। তাদের মধ্যে দুইজন এইটি ডিপার্টমেন্টে, তিনজন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে, আর দুইজন ক্লিনার হিসেবে। এই সাতজনের সাথেই নাম পরিচয় গোপন করে তারা তিনজন জয়েন করেছে।
- জানি আমি না বললেও তুই ওদের দেখে রাখবি। তারপরও বলছি ওদের একটু খেয়াল রাখিস দোস্ত। সাথে নিজেরও।
- তুই একদম চিন্তা করিস না। আমরা আছি।
রুমের দরজা খুলে ঢুকে তূবা। সেদিকে তাকিয়ে অভ্র ফোনের ওপাশে থাকা মুরাদকে বললো
- আচ্ছা রাখি তোর পিচ্চি ভাবী এসে পড়েছে। তাকে পড়তে বসাবো।
চোখ দুটো ছোট ছোট করে অভ্রের দিকে একনজর তাকিয়ে, বই নিয়ে গিয়ে সোফাতে বসে তূবা। মুরাদ বুঝে যে অভ্র তূবাকে এসব কিছুই এখন জানাতে চায় না। তাই সেও দুষ্টমির সরে বললো
- শুধু মাস্টারগিরিই করিস না। একটু কাজের কাজও কিছু করিস। আমার কান দুটো মরে যাচ্ছে চাচু ডাক শোনার অপেক্ষা করতে করতে।
অভ্র দুষ্ট হেসে বললো
- সত্যিই কি তাই! নাকি আমার হসপিটালের ই এন টি স্পেশালিস্ট ওয়াসিফা আনিকার কাছে যাওয়ার জন্য আজকাল তোর কান মরে যাচ্ছে।
মুরাদ আফসোসের কন্ঠে বললো
- শালা তোর হসপিটালের ওয়ার্কহোলিক ভাইরাস। মেয়ে সারাক্ষণ কাজ নিয়ে পড়ে থাকে। আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে তার পিছনে ঘুরে, অথচ সে তাকিয়েও দেখে না।
তূবা কোলে বই রেখে মন দিয়ে অভ্রের কথা শুনছে দেখে অভ্র বললো
- এই রাখি বউ আমার পড়া বাদ দিয়ে কথা শুনছে। তোর সাথে পরে কথা হবে।
বলেই মুরাদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অভ্র কলটা কেটে দিয়ে, সোফাতে তূবার পাশে বসে। তূবা চোখে মুখে একরাশ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল
- মুরাদ ভাইয়া ডাক্তার আনিকাকে পছন্দ করে?
- হ্যাঁ করে। এই নিয়ে ডিটেইলস তোর এক্সাম শেষ হলে বলবো। এখন চুপচাপ পড়।
তূবা আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে, ঝটপট কথাগুলো বলে অভ্র। তারপর টেবিলে উপর থেকে সেই ফাইলটা নিয়ে, আবার তা দেখাতে মনোযোগ দেয়। তূবা আর কোন কথা জিজ্ঞেস করে না। জানে এখন কিছু জিজ্ঞেস করলেও অভ্র কিছু বলবে না, উল্টো তাকে তার রুমে একা একা পড়ার জন্য পাঠিয়ে দিবে। তাই চুপচাপ গাল ফুলিয়ে পড়তে থাকে সে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন