উপন্যাস : ভাঙা বোতাম
লেখক : ঋক্ষ/এফ এ শাহেদ
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
এফ এ শাহেদ (ঋক্ষ)র “ভাঙা বোতাম” শিরোনামের এই উপন্যাসটি তার অনুরোধক্রমে কবিয়াল ডট কমে প্রকাশ করা হল। আজ প্রকাশিত হলো এই উপন্যাসটির ৫ম পর্ব।
![]() |
ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ (৫ম পর্ব) |
ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ
৫ম পর্ব
কিন্তু ফারিয়ার ডাকে, সাময়িক জাগ্রত বিবেকের রশি ছিড়ে আরো গহিনে ডুবে যায় সে মণষত্ত্ব্য। সিড়িতে দাড়িয়ে আছে ফারিয়ে, অর্ককে ডাকছে উপর থেকে ডেকে যেতে। আদিম আর্কষণে মোহিত হয়ে চলছে ফারিয়ার পিছু পিছু ।
৫
ফারিয়াকে আপনারা কেউ ভাবছেন অভিনেত্রী, কেউবা প্রশ্ন করছেন শিল্প-পতীর স্ত্রী’র শুধু সৌন্দয্যে দেখতেই কি সাগরের কিনারা জুড়ে মানুষের এই আকুলতা ।
ফারিয়ার শুধু একটা শখই হয়তো তার শিল্পপতী বর পুরণ করেননি বা সুযোগ পাননি। তার বাইরে তার প্রতিটি ইচ্ছা বা শখ অপুরণীয় রাখেনি তার, (ষাটউদ্ধ্যে) কোটিপতি আরিফ খন্দকারের।
ফারিয়া ভদ্রলোকের ৩য় স্ত্রী, আগের ২জনও বর্তমান। তাতে ফারিয়ার কোন মাথা ব্যাথা প্রথম থেকে এখন পযন্ত নেয়। কারণ ফারিয়ার দর্শনে জীবনকে উপভোগ করতে অর্থ প্রয়োজন। সেটা যে উপায়েই হোক, আর পিক এন্ড চুজে’র এ স্থানে এমন সহজ সমাধানই কাম্য। আর তার মতে সব-থেকে সহজ এবং নিরাপদ রাস্তাটিই বেছে নিয়েছে ফারিয়া।
ফারিয়ার যে শখ পুরণ করেনি বা সুযোগ পাননি তার স্মামী ( আরিফ খন্দকার)। তা হলো, সুদর্শন পুরুষের সাথে একান্তে সময় কাটাতে দেওয়া। যদিও সে সখের কথা কখনো ফারিয়া প্রকাশও করেনি তার কাছে।
এ সুপ্ত বাসনা প্রকাশ না করার কারণ হয়তো সামাজিক দ্বায়বন্ধতা বা সম্পর্কের দায়বদ্ধতা। যদিও কোন দায়বদ্ধতায় ফারিয়াকে বিশেষ এই শখ পুরণের পথে বাধা হয়নি। এ সখ সে নিজেই মিটিয়েছে নিজের মত করে।
যাইহোক, কেন এত মানুষ সুন্দরী ফারিয়াকে দেখতে আসে এই সাগর পাড়ে, এক বার দেখতে অপেক্ষা করে ঘন্টার পর ঘন্টা, বিষয় টা পরীষ্কার হওয়া উচিত । যদিও সময়টা এখন এমন, হরমামেশাই টিকটক থেকে ফেসবুক রিল কিংবা ইমুতে ভাইরাল ব্যক্তিদের দেখতেও মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
জাতী হিসাবে আমাদের দেখার ইচ্ছাটা এতটা প্রবল, কি দেখছি কেন দেখছি তা না জেনেও মানুষের ভিড় দেখলে কেন ভিড় তা দেখতেও কয়েক ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে পারি। এ এক জাতী হিসাবে বিষেশ গুন আমাদের।
তবে, ফারিয়াকে দেখার বিষয়টা কিছুটা ব্যতিক্রম, তার অনেক শখের মধ্যে অন্যতম শখ নিজে গান করা এবং গানের মডেলিং করা।
যার জন্য ফারিয়া রিতীমত সাধারণের কাছে এক আবেদনময়ী মডেল হিসাবে খ্যাত, সাথে যুক্ত হয় প্রভাবশালী শিল্পপতীর স্ত্রী। সুতরাং তাকে একবার দেখতে বা তার সাথে সেলফী তুলতে সাধারনের ভিড় হওয়াটা স্বাভাবিক।
স্টিমারটি দুলছে ধিরেধিরে, আদীম আর্কষণে অর্ক ছুটছে মোহিত হয়ে ফারিয়ার পিচু পিচু। কেবিন রুমের বিশলা জানালার ফাঁক দিয়ে সাগরের বুকে নাচতে থাকা জোৎনার আলো যেন নীল-রুপালী জলস্রোত, হুড় হুড় করে ঢুকছে ঘরজুড়ে । এক পৃথিবী আকাশ-সাগর, নীল-রুপালী মায়া জগতের কামুক পরীর নিষিদ্ধ যৌনতায় তলিয়ে যাচ্ছে গভীর থেকে আরো গভীরে। যতটা গভীরে প্রবেশ করলে আদিমতা সুধু সুখ বোধের থাকবে, থেমে যাবে পৃথিবীর পার্থিব ভাবনা, তত গভীরে টেনে নেবে ফারিয়া। অর্ক সেখান থেকে টেনে নেবে অজানা বন্য সুখের রাজ্যে, যে রাজ্যে হারানোর সুখে বারবার এই নিষিদ্ধ মিলনে উদ্দ্যত হয় ফারিয়া।
সকল প্রানী কিংবা পাখীদেরও জৈব তাড়না আছে, সঙ্গী নিয়ে খুনোখুনীও আছে, তেমনি তাদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত 'ডিফল্ট' ধর্মও আছে, কিন্তু চুক্তিনামা বা কাবিনানামা নেই।
তবে, মানুষের জৈব তাড়নার সাথে আছে জীবনের বোধ ও শৃঙ্খল-নিতী । যে শৃঙ্খল থেকে একবার বের হলে, সে জীবন মানুষের থাকে না । দিন শেষে সে জীবন হয় পাখীদের মত ডালের বা বন্য প্রনীর মত খালের ।
এসকল কোন নিয়ম-নিতীর ধার ধারে না, অর্ক ও ফারিয়া । তারা সঙ্গমের আনন্দের লক্ষ্যেই মিলিত হয়, কে কতজনের সাথে কতবার মিলল, সে হিসাব কেউ রাখেনা।
চাঁদের আলোর সাথে ফিকে হয়েছে মিলনের চরম উত্তেজনা, সাগরের ঠেউ যেমন শান্ত হয়েছে ঠিক তেমনি শান্ত দুজন। ঘামে ভেজা দুটি শরির, শুধু ছুয়ে আছে দুজনের। স্পর্শ করতে পারছে না সে শরির তাদের কারো ।
সিগারেটে টান দিয়ে অর্ক আবৃতি করল ফারিয়ার প্রিয় কবিতা,
হেলাল হাফিজ- এর ভূমিহীন কৃষকের গান -
দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।
মাত্র ইঞ্চি দুই জমি চাই
এর বেশী কখনো চাবো না,
যুক্তিসঙ্গত এই জৈবনিক দাবি খুব বিজ্ঞানসম্মত
তবু ওটুকু পাবো না
এমন কী অপরাধ কখন করেছি!
ততোটা উর্বর আর সুমসৃণ না হলেও ক্ষতি নেই
ক্ষোভ নেই লাবন্যের পুষ্টিহীনতায়,
যাবতীয় সার ও সোহাগ দিয়ে
একনিষ্ঠ পরিচর্যা দিয়ে
যোগ্য করে নেবো তাকে কর্মিষ্ঠ কৃষকের মত ....
লাবনী তার বোন নীলের সাথে ফোনে কথা বলছে, অর্ক আজ ৫ দিন হচ্ছে দেশের বাইরে। ৪ দিনের কথা বললেও আজ ৫ দিন পার হচ্ছে, কোন খবর নেই। গত ২ দিন আগে সর্বশেষ হটসএপে কথা হয়েছিল। আসতে লেট হবে জানিয়েছে, তবে কবে কখন আসবে কিছু বলেনি।
নীল, লাবনীকে বোঝানোর চেষ্টা করছে । দেশের সরকারী চাকুরিজীবি আবার পুলিশ কিছু সিক্রেট মিশন তো থাকবেই এর জন্য টেনশন হবার কিছু নেই। আর লাবনী তোর বেশি ভালবাসা এমন সন্দেহের জাইগা সৃষ্টি করছে । এমন কিছু হলে তো সে তোর উপর গুরুত্ব কম দিতো।
দুবনের কথা অর্ক দিয়ে শুরু হলেও শেষ টা হয় দেশ আর বিদেশের জীবন যাপন তর্ক নিয়ে।
তবে আরো একটি ভিন্ন ধরনের তর্ক চলছে দুপুরে ডেকের উপর অর্ক আর ফারিয়ার মাঝে। এ এক অন্য মার্তার তর্ক, এখানে বোঝা বা বোঝানোর বিষয় নয়, বিষয় জীবনকে রঙিন ভাবে উপভোগের ক্রিয়া-কসরত।
বাংলাদেশের সর্ব-দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু ছেঁড়া দ্বীপের সৃর্যের শেষ আলোটুকু প্রকৃতির সর্বচ্চো রঙ দিয়ে যেন সাজিয়ে বিদায় নিচ্ছে । আর অর্ক-ফারিয়ার মনে ঢেলে দিয়ে তার শেষ শক্তি বিন্দু টুকু।
ফারিয়া তার নিয়মিত হলেও অর্ক খেয়াল করেছে, রাতের আলোতে যতটা হিস্রহ ফারিয়া দিনের আলোতে ততটাই লজ্জায় কুঁকড়ে যায় চোখ বন্ধ ফেলে সে। এ এক অন্য রকম ফারিয়া বারবার নতুন কিছুর আবিষ্কার নেশায় যেন আরো আদিম বন্য হয়ে উঠে অর্ক।
ফারিয়া হালকা গলায় বললো, আচ্ছা ডেকের উপর কেউ তো চলে আসতে পারে! ভায়োলিনের হৃদয় স্পর্শীয় সুরে কনে দেখার আলোতে অর্ক হারিয়ে যাচ্ছে ফারিয়ার উত্তাল কপ্পন উঠা অধর থেকে চোখের গভীরের চোরা বালিতে । অর্কের নিশ্বাস স্পর্শ করছে ফারিয়ার চিবুকে...!
হঠাৎই গ্লাসের টুং শব্দে সচেতন হলো দুজনই। হঠাৎ জুস হাতে ডেকের উপরে চলে আসায় কেবিন ক্র রুর সজরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসলো অর্ক। এমন আকস্কিক ঘটনা কিছুটা হকচকিয়ে গেল ক্র । তার জাহাজে চাকুরির ১৬ বছরে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। যদিও সে আসার আগে অনুমতি চেয়ই উপরে এসেছে তবে কেন এমন হলো বুঝতে পারছে না সে।
কিছক্ষণ পর তাল সামলে দুঃখিত বলে ক্র নিচে নেমে গেল ....
চলবে ...
৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
লেখক সংক্ষেপ :
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
দারুণ পরের পর্ব চাই
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন