উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
৯৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১০০)
সেই বিলাসী জেলখানার দোলার রুমের খাটের উপর বসে আছে দোলা। হসপিটাল থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে মাএই বিছানায় বসেছে সে। তখনই রুমে ঢুকে দিশা। ধপাস করে দোলার পাশে বসে ভেজার মুখে দোলার পাশে বসে পড়ে। দিশার বেজার মুখ দেখে দোলা জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে দিশু, মন খারাপ কেন?
দিশা দোলার কোলের উপর মাথা রেখে সুয়ে পরে, দোলা মিষ্টি হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। দিশা দোলার মুখের দিকে তাকিয়ে, বিরক্তিমাখা কন্ঠে বললো
- তুমি কুহু আপুকে বলে দিও তো ওই কিরণ ভাইয়াকে বলে দিতে আমাকে যেন আর বিরক্ত না করে। সেই প্রথম দিন থেকে উনি আমাকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। এখানে যাবে না, ওখানে যাবে না, এর সাথে কথা বলবে না, ওর সাথে বসবে না, ভার্সিটির এখানে একা যাবে না, ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে, ব্লা ব্লা ব্লা। ওনার এসব না, না শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। ভার্সিটির সিনিয়র, তাও আবার যে সে সিনিয়র না। ব্রিলিয়ান্ট কাব্য ভাইয়ের হাফ ব্রিলিয়ান্ট কিরণ ভাইকে ভার্সিটির সবাই মাথায় তুলে রাখে। তাকে কিছু বলা মানে বাঘের গুহায় ঢুকা। তুমি প্লিজ কুহু আপুকে বলো দিও তো।
দোলা শব্দ করে হেসে দিয়ে বললো
- বললেও কুহু কিছু বলবে না।
দিশা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কেন?
দোলা দুষ্ট হেসে উত্তর দিল
- কারণ তোর কুহু আপু তোকে নিজের একমাত্র ঝা বানানোর কথা ভাবছে।
দিশা কথাটার মানে বুঝতে না পেরে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- মানে?
দোলা পুনরায় হাসিমুখেই উত্তর দিল
- তোকে কিরণ ভালোবাসে রে গাধী আর কুহুও চায় তোকে কিরণের বউ করে নিতে।
কথাটা শুনেই এক লাফে সোয়া থেকে উঠে বসে দিশা। সুদর্শন কিরণকে দেখলে যে কোন মেয়েই পছন্দ করবে। দিশাও প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়েছিল। কিন্তু কিরণের এই মাত্রা অতিরিক্ত শাসন তার মটেও পছন্দ হয় না। মনে মনে খুশি হলেও মুখ বাকিয়ে বললো
- এই নুডলস চুলের সাদা বান্দরকে কে বিয়ে।
দোলা চোখ দুটো বড় বড় করে বললো
- নুডলস চুলের সাদা বান্দর।
তারপর শব্দ করে হাসতে থাকে। তখন রুমে ঢুকে মিষ্টার ইকবাল আর মিসেস চৈতি। তাদের দেখে দোলা হাসি বন্ধ করে মুখটা গম্ভীর করে ফেলে। তা দেখে মিসেস চৈতি বললো
- মা এখনও আমাদের সাথে হাসবি না।
দোলা তাচ্ছিল্যের সুরে জিজ্ঞেস করল
- তোমরা কোনদিন মেয়ের মুখের হাসির কথা চিন্তা করেছ?
মিষ্টার ইকবাল দোলাকে বললো
- আমরা তো তোর ভালোর জন্যই ,,,,,
মিষ্টার ইকবালের কথা শেষ হওয়ার আগেই দোলা শক্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল
- আমার ভালো কথা চিন্তা করে আমাকে তোমরা কানাডা নিয়ে গিয়েছিলে, তা ঠিক ছিল। কিন্তু অতুলকে মারলে কেন?
একটু থেকে আবার বললো
- আসলে তোমরা আমার সুখের কথা ভাবনি। যদি ভাবতে তাহলে অতুলকে বলতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আমার বিয়ে করতে। আমার চিন্তা করলে সময় নিয়ে অতুলকে অন্তত যাচাই করতে। তোমরা আসলে নিজেদের অহংকার নিয়ে পড়ে ছিল। অতুলের মতো এতিম, চালচুলোহীন ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে তোমাদের মান সম্মান নষ্ট হতো। তাছাড়া তোমার ভেবেছিলে এই চালচুলোহীন ছেলে বুয়েটে পড়েই বা কি এমন আহামরি করতে পারবে। এখন অতুলের সব আছে, দেশে বিদেশে কত মেয়ে অতুলকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তাই তোমার অতুলের সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজী হয়েছ।
দোলা কথা শেষে পুরো রুম পিনপতন নিরব হয়ে যা। দোলার বলা কথাগুলো পুরোপুরি সত্য না হলেও, মিথ্যা না। তাই তারা কিছু বলতে পারেন না।

হসপিটাল থেকে ফিরে বাসা ভিতরে যাচ্ছিল অভ্র। বাসার ভিতরে যাওয়ার পথে বাগানের মধ্যে আয়াস আর দীনাকে মাটি দিয়ে কিছু বানাতে দেখে, বাসার ভিতরে না গিয়ে তাদের দিকে পা বাড়ায়। যেহেতু দুজনেই পিছনের দিকে ঘুরে আছে তাই তারা অভ্রকে দেখেনি। তাদের একটু কাছে যেতেই অভ্রের কানে আয়াসের কথা আসে। আয়াস দীনাকে তাড়া দিয়ে বললো
- তাড়াতাড়ি কর দিন। আমি চাই দোলা আন্টির বিয়ের আগেই যেন এই অর্গানগুলো বানানো কমপ্লিট হয়ে যায়।
দীনা আয়াসের দিকে তাকিয়ে তার শান্ত মিষ্টি কন্ঠে বললো
- আচ্ছা।
কথাটা বলেই মাটি দিয়ে হার্ড বানাতে বানাতে শুরু করল। কিন্তু পরক্ষণেই আবার কাজ থামিয়ে আয়াসের দিকে তাকিয়ে ডাকলো
- আয়াস ভাইয়া। একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।
আয়াস দীনার দিকে না তাকিয়ে মাটি দিয়ে মানুষ ব্রেইন বানাতে বানাতেই ছোট করে জিজ্ঞেস করল
- কি?
দীনা তার শান্ত, অবুঝ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- বিয়ে কি?
অভ্র দীনার প্রশ্ন শুনে সেখানেই থেকে গিয়ে, গাছের আড়াল হয়ে যায়। আয়াস মাটি দিয়ে ব্রেইন বানাতে বানাতেই উত্তর দিল
- বিয়ে হলো, একটা ছেলে বড় হয়ে গেলে তার ব্রেষ্ট মেয়ে ফ্রেন্ডকে নিজের কাছে নিয়ে আসার আনুষ্ঠান।
দীনা তার শান্ত, অবুঝ কন্ঠে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কেন বড় হলে কেন? ছোট হলে কেন নিয়ে আসে না?
আয়াস দীনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, ভ্রু কুঁচকে দীনার দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো
- ছোট মানুষ কি নিজের বাবা মাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?
দীনা শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল
- না।
আয়াস পুনরায় কাজে মনোযোগ দিয়ে বললো
- তাই বড় হলে নিয়ে আসে।
দীনা ঠোঁট গোল করে বললো
- ওহ আচ্ছা।
হঠাৎ দীনার মাথায় একটা প্রশ্ন জাগে। প্রশ্নটা মনে জাগতেই সময় নষ্ট না করে দীনা আয়াসকে প্রশ্নটা করল
- তুমি বড় হয়ে কাকে নিয়ে আসবে?
আয়াস বিরক্তির চোখে দীনার দিকে তাকিয়ে বললো
- এটা কেমন কথা হলো দিন। আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড তুমি, অবশ্যই আমি তোমাকে নিয়ে আসবো।
দীনার মুখে হাসি ফুটে উঠে। এতক্ষণ তার একটু চিন্তা হচ্ছিল আয়াস যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে, তখন তো তার থেকে বেশি সেই মেয়ের সাথে পড়বে, খেলবে। কথাটা ভাবতেই কেন যেন তার খুব কান্না পাচ্ছিল। আয়াস দীনাকে বললো
- এবার তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর।
- আচ্ছা।
বলেই দীনা হাসিমুখে কাজে মনোযোগ দিল। গাছের আড়ালে থাকা অভ্রের মুখেও হাসির রেখা ফুটে উঠে। সে আর এই ছোট অবুঝ প্রেমিক যুগলকে বিরক্ত না করে, বাসায় ভিতরে চলে যায়।

রাজধানী গুলশানে দশ কাঠা বাউন্ডারি ভিতর পাঁচ কাঠা জায়গা নিয়ে অবস্থিত অতুলের আধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়ির দ্বিতীয় তালায় অতুলের বিশাল বড় বেডরুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে, রুমের সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে দোলা। তখনই রুমের দরজা খোলার শব্দ হয়। দরজা খোলার শব্দ শুনে পিছনে ঘুরে দাঁড়ায় দোলা। রুমের ভিতরে ঢুকে অতুল, মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে তার সামনে থাকে দোলার দিকে। ফর্সা গায়ে গাঢ় নীল রঙের বেনারসি শাড়ি, হাতে ডায়মন্ডের চুড়ির পাশাপাশি আছে গাঢ় নীল কাচের চুড়ি, গলায় কানে ডায়মন্ডের দুল আর হার, মুখে হালকা মেকাপকেই, ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক, চোখে কাজল, চুলগুলো বাম দিকে সিঁথি করে খোলা। মাথায় একটা ডায়মন্ডের তাজ আর নীল রঙের ওড়মা। এই সাজেই যেন মেয়েটাকে রুপকথার রাজকন্যা লাগছে। দোলাও মুগ্ধ নয়নে অতুলকে দেখছে। ফর্সা গায়ে গাঢ় নীল রঙের সেরোয়ানীতে তাকেও রাজপুত্রর মতো সুন্দর লাগছে। দুজনের চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। এটা সুখের কান্ন, ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার কান্না। তাদের এতো ত্যাগ, এতো পরিশ্রম সফল হওয়ার কান্না। অতুল দোলার কাছে এগিয়ে গিয়ে, তার চোখের পানি মুছে দিয়ে তাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেয়। দোলার কান্না কমে বরং অতুলের বুকে গিয়ে কান্নার গতি আরও বেড়ে যায়। অতুল দোলার মুখ নিজের দুই হাত দিয়ে তুলে ধরে। পুনরায় চোখের জল মুছে, কপালে চুমু এঁকে দিয়ে শান্ত ক্ষীণ কন্ঠে বললো
- এই দোলা প্লিজ কান্না থামাও। আর কাঁধে না। এখন সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর কেউ তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। প্লিজ কান্না থামাও, দোলা।
দোলা নিজের কান্না থামিয়ে ব্যথিত কন্ঠে, করুন চোখে অতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
- সেদিন তোমাকে খুব মেরেছিল না। আমি যখন ফোনের স্কিনে সেই দৃশ্য দেখছিলাম মনে, মনে হচ্ছিল কেউ আমার বুক থেকে কলিজাটা বের করে নিয়ে গিয়ে তাকে মারছে। আমি না করেছিলাম, বার বার না করছিলাম। কিন্তু আমার কথা কেউ শোনেনি। ওরা বলেছিল বাংলাদেশে কারও সাথে যোগাযোগ করলে তোমাকে আবার মারবে। মারতে মারতে মেরে ফেলবে। সেই ভয়ে আমি কারো সাথে এতোগুলো বছর যোগাযোগ করিনি। অনেক কষ্ট হতো, তাও আমি কারো সাথে যোগাযোগ করিনি।
অতুল দোলার চোখে চোখ রেখে বললো
- আজ থেকে তোমার কষ্টের দিন শেষ। আমি প্রমিজ করছি এখন থেকে আমি তোমাকে এতো সুখে রাখবো যে তুমি সেই কষ্টের দিনগুলোর কথা ভুলে যাবে।
দোলা ভালোবাসাপূর্ণ চোখে অতুলের দিকে তাকিয়ে বললো
- ভালোবাসি তোমাকে।
অতুল নিশব্দের হেসে বললো
- খুব ভালোবাসি তোমাকে।
তারপর পুনরায় জড়িয়ে ধরে দোলাকে, এবার দোলাও কান্না করে না। তৃপ্তির মুখে হাসি নিয়ে জড়িয়ে ধরে অতুলকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১০১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন