উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

৮৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৯০)


রুমের মধ্যে থাকা তিন দরজার আলমারির ডানপাশে দরজা খুলে কিছু একটা খুঁজছে রোদ। প্রায় দশ মিনিট ধরে খুঁজছে সে। কিন্তু পাচ্ছে না। রোদ খুঁজেই চলেছে, তখনই রোদের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে দীপ্তি জিজ্ঞেস করল
- আপনি কি এটা খুঁজছেন?
রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে দীপ্তির দিকে তাকায়। কাঁচা হলুদ রঙের সেলোয়ার-কামিজ পরে হাতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দীপ্তি। তা দেখে রোদ চোখ দুটো ছোট ছোট করে প্রশ্ন করল
- তুমি আমার আলমারি ধরেছো কেন?
রোদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দীপ্তি বললো
- আপনি "মিষ্টার আর" তাই না।
রোদ না বুঝার ভান করে বললো
- মিষ্টার আর! এটা আবার কে?
দীপ্তি রোদের দিকে বন্দুক তাক করে বললো
- ডোন্ট ইউ ডেয়ার প্লে ড্রামা উইথ মি।
রোদ স্যালেন্ডার করার মতো হাত দুটো উঁচু করে বললো
- ওকে, আই ওউন্ট। বাট হাউ ডিড ইউ নো দেট, আই আম মিষ্টার আর?
দীপ্তি বন্দুক নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উত্তর দিল
- সেদিন যে আমরা ইমতিয়াজের বাসায় গিয়েছিলাম সেই কথা আমি, শুভ্র আর চন্দ্রা ছাড়া কেউ জানতো না। যাস্ট লাস্ট মোমেন্টে আমি মিষ্টার আর'কে টেক্সট করে বলেছিলাম। সেখানে আপনার এই কথা জানার প্রশ্নই আসে না। এদিকে অভ্র ভাইয়া সেদিন বলেছিল আপনার থেকেই তারা জেনেছে! কিন্তু আপনি কোথা থেকে জেনেছেন? আমি তো আপনাকে বলিনি। তাছাড়া আমরা কিডন্যাপ হওয়ার পর আমাদের লোকেশনটাও নাকি আপনিই খুঁজে দিয়েছিলেন। আপনি কিভাবে জানলেন যে আমাদের ওই পুরনো দোকানে বন্ধি করে রাখা হয়েছে?
রোদ হালকা হেসে বললো
- ইন্টালিজেন্ট। শুধু এতোটুকুতেই বুঝে গিয়েছ?
দীপ্তি না সূচক মাথা নেড়ে বললো
- নাহ। কেস সলভ করার পর আপনি আমাদের কাজে খুশি হয়ে বলেছিলেন, এতো ভালো কাজ করার জন্য আপনি পুরষ্কার হিসেবে, আমাদের আপনার পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা ছাড়া অন্য যে কোন একটা উইস আপনি পূরণ করবেন। তখন আমি আপনাকে আপনার কন্ঠে একটা গান রেকর্ড করে দিতে বলেছিলাম। যা আপনি গতকাল পাঠিয়েছে। আপনার সেই রেকর্ড করা গানের কন্ঠ আর র্যাগ ডে তে গাওয়া গানের কন্ঠ সেম।
রোদ পুনরায় হেসে বললো
- ইম্প্রেসিভ, এস আই এক্সপেক্টেড ফ্রম ইউ।
- আপনি আমাকে আগে থেকেই আমাকে চিনতেন, আমার সম্পর্কে সব কিছু জানতেন আর আমাকে আগে থেকে ভালোও বাসেন।
দীপ্তি কথা শুনে রোদ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল
- তোমাকে কে বলেছে, যে আমি তোমাকে ভালোবাসি?
দীপ্তি ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো
- আপনি যে ঘাড় ত্যারা লোক। ভালো না বাসলে আপনি জীবনেও আমাকে বিয়ে করতেন না।
রোদ অবাক হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে বললো
- ঘাড় ত্যারা!
দীপ্তি কৌতুহলী কন্ঠে প্রশ্ন করল
- কেন এতো অভিনয় করলেন আপনি? আপনি আমাকে ভালোবাসেন সেই কথাটা সোজাসুজি না বলে, প্রপোজ না করে এতো অভিনয় করে বিয়ে করলেন কেন?
রোদ দীপ্তির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করলো
- তোমার কি মনে হয়, তুমি কেমন মেয়ে?
দীপ্তি নিজের প্রশ্নের উত্তর সরুপ রোদ থেকে এমন প্রশ্ন আসা করেনি। কোন কথা না বলে, কপাল কুঁচকে রোদের দিকে তাকায় সে। রোদ নিজেই নিজের করা প্রশ্নের উত্তর দেয়
- আমি যদি ঘাড় ত্যারা হই, তুমিও তাহলে তাই। আমি যদি তোমাকে সরাসরি বলতাম আমি তোমাকে ভালোবাসি, বিয়ে করতে চাই। তাহলে, তুমি কখনোই আমাকে বিয়ে করতে না। তাই এভাবে বিয়ে করেছি।
দীপ্তি বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো
- এখন যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যাই।
রোদ মুখে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- বাঙালি নারীদের কাছে স্বামী, সংসার অনেক মূল্যবান জিনিস। অনেক বেশি অসহনীয় না হলে তারা কখনোই স্বামীর ঘর ছাড়ে না। আর তাছাড়া আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে, যাকে প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়ে ফেলেছো। তার সাথে এতোদিন থাকার পরও তাকে ভালো না বেসে তুমি থাকতেই পারোনা।
দীপ্তি কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- কে বলেছে আমি আপনাকে ভালোবাসি? কান খুলে শুনুন আমি আপনাকে ভালো টালো কিছু বাসি না। আমি কালকেই বাবার বাসায় চলে যাবো।
রোদ মুখে দুষ্ট হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- সত্যিই।
দীপ্তি দৃঢ় কন্ঠে বললো
- হ্যাঁ।
রোদ দীপ্তির কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বললো
- সত্যিই!
রোদকে কাছে আসতে দেখে দীপ্তি পিছাতে পিছাতে বললো
- এই আপনি আমার কাছে আসছেন কেন দূরে যান।
রোদ থামে না। দীপ্তি পিছাতে পিছাতে পুনরায় বললো
- এই দূরে জান বলছি।
রোদ তাও থামে না। দীপ্তি পিছাতে পিছাতে খাটের মধ্যে পরে যায়। রোদ খাটে দীপ্তি দুই পাশে দুই হাত রেখে বললো
- এই যে তুমি আমাকে ভালোবাসো তার প্রমাণ এটাই।
দীপ্তি তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করল
- ক,,,কি কিভাবে?
- তুমি ক্যারাটে জানা মেয়ে। খালিহাতে ছেলেদের পিটানোর মতো মহৎ রেকর্ড আছে তোমার। সেখানে হাতে বন্দুক থাকা সত্ত্বেও আমাকে দূরে সরানোর নূন্যতম চেস্টা করছো না তুমি কেন?
কথাটুকু বলে রোদ ঝুকে দীপ্তির কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে বললো
- বিকজ ইউ লাভ মি ডিয়ার।
আর আগে কোন ছেলেই দীপ্তির এতোটা কাছে আসেনি। এই প্রথম রোদ তার এতো কাছে আসার ফলে শক্তিমান, বুদ্ধিমান দীপ্তির নিজেকে খুব দূর্বল অনুভব করছে। রোদ দীপ্তির নাকের ডগায় চুমু এঁকে দিয়ে, দীপ্তি হাত থেকে বন্দুকটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দীপ্তি উঠে বসে বললো
- আপনি একটা বদ লোক।
রোদ বন্দুকটা ব্লেজারের ভিতরের পকেটে ঢুকাতে মুখে দুষ্ট হাসি নিয়ে বললো
- আই নো বেব।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়।
💞
- ভাত খেয়েছ?
ফোনের ওপাশে থেকে ভেসে আসা অনুর শান্ত কন্ঠে করা প্রশ্নের উত্তরে সোফাতে বই নিয়ে, কানে ফোন ধরে বসে থাকা শুভ্র বললো
- না।
- রাত দশটা বাজে এখনো খাওনি কেন? এভাবে তো অসুস্থ হয়ে যাবে, সামনে তা তোমার এক্সাম। যাও এখনি গিয়ে ভাত খাও।
- সন্ধ্যায় মোগলাই খেয়েছ, পেটে বিন্দু পরিমাণ জায়গা নেই। কি করে খাই।
- তাই বলে না খেয়ে থাকলে চলবে না। অল্প করে হলেও ভাত খাও।
- আচ্ছা খাব, ঘুমানোর আগে অল্প করে খেয়ে নিবো। খুশি?
অনু হাসিমুখে বললো
- হুম্ম।
শুভ্র শান্ত কন্ঠে অনুকে বললো
- আচ্ছা অনু, মা তো জানতো যে তুই আমাকে পছন্দ করিস, বাবাকেও নিশ্চিত বলেছে। তাহলে তা জানার পর তারা তোর সাথে আমার বিয়ের কথা বলেনি কেন?
সেদিনের পর থেকে শুভ্র মিষ্টার হাছিব আর মিসেস সম্পাকে চাচা চাচি না ডেকে বাবা মা ডাকে। অনু স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- তুমি যেমন বাবা-মা'য়ের মত নেই ভেবে তাদেরকে কিছু জানাওনি। তারাও ঠিক তেমন তোমার মত নেই ভেবে তোমাকে কিছু জানায়নি। বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, তোমার মতামতের বিরুদ্ধে যেন তোমাকে কিছু করতে বলা না হয়।
শুভ্র হৃষ্ট কন্ঠে বললো
- আমি খুব ভাগ্যবান রে অনু।
অনুর হাসিমাখা মুখে বললো
- আর আমিও খুব ভাগ্যবতী।
💞
দুপুর ১ঃ৪৫। গ্রীষ্মের নিস্তব্ধ এক দুপুর। রাস্তাঘাট ফাঁকা। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ এই গরমে ঘর থেকে বের হয় না। কোচিং শেষে রিকশায় করে বাসায় ফিরছে কুহু। আজকে তূবা কোচিং-এ আসেনি। তাই একা একা কোচিং করে বাসায় ফিরছে সে। হঠাৎ তার রিকশার সামনে একটা কালো রঙের মাইক্রো এসে থামে। যার ফলে থেমে যায় কুহুর রিকশাও। মাইক্রো থেকে তিনজন লোক নেমে রিকশায় বসা কুহুকে ঘিরে ফেলে। কুহু ভয় পেলেও তা প্রকাশ না করে, শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কারা তোমরা? এভাবে আমাকে ঘিরে রেখেছ কেন?
লোক তিনজন কথার উত্তর দেয় না। একজন লোক কুহুর নাকের কাছে কিছু একটা স্প্রে করলে জ্ঞান হারায় কুহু।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন



আনআমতা হাসান’র গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন