উপন্যাস       :        অনন্ত প্রেম
লেখিকা        :         আরশি আয়াত
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ই জুন, ২০২৪ ইং

লেখিকা আরশি আয়াতের “অনন্ত প্রেম” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ১১ই জুন থেকে লেখা শুরু করেছেন।
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত

১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ১১)


আজ সকালে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় দিশার মনে হচ্ছিল কেউ ওকে অনুসরণ করছে।সায়েম যে ওর পেছনে লোক লাগিয়েছে সেটা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।দিশা মনে মনে ভাবে একটা মানুষ এতটা নীচে নামতে পারে কিভাবে?অবশ্য যে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারে তার কাছে তো এসব কিছুই না।কেবল তো শুরু!এই প্রত্যাখ্যানের শোধ তুলতে আরও অনেক কিছু করবে লোকটা!তবে দিশাও ভেঙে পড়বে না।যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে যেন জুইয়ের মত আর কারো জীবন নষ্ট নাহয়।
দিশা ভেবেছিলো আহাদ থাকবে ইন্টারভিউ বোর্ডে কিন্তু ওকে কোথাও যায় নি।আদৌ এই অফিসে চাকরি করে ছেলেটা নাকি আবারও ঢপ মারলো?
ইন্টারভিউ হয়েছে ভালোই।আশা করা যায় চাকরিটা হবে।অফিস থেকে বেরিয়ে টিউশনিতে চলে গেলো দিশা।টানা তিনটা টিউশনি করে প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ও।সকালের নাস্তাও খাওয়া হয় নি ঠিকমতো।এখন হোস্টেলে গিয়ে দুপুরের খাবার পাবে কি না সন্দেহ আছে!এরইমধ্যে ফোন এলো আয়েশার।দিশা রিসিভ করতেই বলল,'ইন্টারভিউ কেমন হলো দিশা?'
'আলহামদুলিল্লাহ ভালো।'
'এখন কোথায় আছো?
'হোস্টেলে ফিরছিলাম।'
'এখানে চলে আসো।খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নেবে পরে আহাদ এসে তোমাকে পৌঁছে দেবে।'
'কিন্তু আপু...'
'কোনো কিন্তু না।তাড়াতাড়ি আসো।'
আয়েশা ফোন রেখে দিলো।দিশা রাস্তার মোড় থেকেই একটা রিকশা নিয়ে রওনা হলো আয়েশার বাসার দিকে।
একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লায়েন্ট মিটিং এ আজ সারাদিন ব্যস্ত ছিলো আহাদ।তাই দিশার সাথে একটাবার দেখাও হয় নি।এখন হয়তো হোস্টেলে!অফিস থেকে বেরিয়ে আহাদ ভাবলো দিশার সাথে দেখা করে যাবে।হোস্টেলের সামনে এসে দিশাকে কল দিতেই রিসিভ হলো।আহাদ জানতে চাইলো,'ম্যাডাম কৃষ্ণলতা,আপনি কোথায়?'
দিশা হেসে বলল,'স্যার,আমি তো আপনার আপু বাসায়।আপু আমাকে বলল আসতে তাই এলাম।'
'ও আচ্ছা।আমি আপনার হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।'
'আহারে!কি করবেন এখন?'
'কি আর করব!আমিও আসছি আপুর বাসায়।'
'আচ্ছা,আসুন।আপু অবশ্য বলেছিলো আমাকে আপনাকে ফোন করে আসতে বলতে।'
'তাহলে বলেন নি কেন?শুধু শুধু এখানে এলাম।'
'বলি নি কারণ আপনি অনেক ব্যস্ত কি না!যদি বিরক্ত হন!'
'কিছু মানুষ স্পেশাল হয়!তাদের ফোনে কখনোই বিরক্ত হই না।'
ফোন রেখে দিলো আহাদ।তবে আহাদের শেষের কথাটা দিশা বুঝতে চেয়েও পারলো না।আহাদ কি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ওকে স্পেশাল বলল?কিন্তু ও কেন স্পেশাল হতে যাবে?নাকি এর অন্যকোনো মানে আছে?
বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিলো দিশা তাই বেল বাজার শব্দে দরজাটা ও-ই খুললো।আহাদকে আজ অন্যান্য দিনের মত লাগছে না।ফর্মাল ড্রেসে বোঝাই যাচ্ছে মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে।ক্লান্ত মুখশ্রী তবুও সুন্দর লাগছে দেখতে।সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট,হাতে ভাজ করে রাখা কোট সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর লাগছে।ভেতরে এসে হাত,পা ছড়িয়ে দিয়ে সোফায় বসে পড়লো।বড়বোনকে আশেপাশে দেখতে না পেয়ে দিশাকে জিজ্ঞেস করলো,'আপা কোথায়?'
'রুমিকে ঘুম পাড়াচ্ছে।'
'ও আচ্ছা।আমাকে এক গ্লাস পানি এনে দেবেন?'
'আনছি।'
দিশা ভেতরে গেলো পানি আনতে।একটু পরই এক গ্লাস পানি এনে আহাদের সামনে ধরে বলল,'এই নিন।খেয়েছেন আপনি?'
'হ্যাঁ ক্লায়েন্টের সাথেই খেয়ে নিয়েছি।আপনি খেয়েছেন?'
'হ্যাঁ।'
আহাদ এবার কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,'আসলে আজকের ক্লায়েন্ট মিটিংটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তাই আপনার সাথে দেখা করতে পারি নি।'
'বুঝেছি।ভীষণ ব্যস্ত মানুষ!'
আহাদ হাসলো।তারপর জানতে চাইলো,'আপনার ইন্টারভিউ কেমন হলো?'
'ভালোই হয়েছে।'
'যাক,তাহলে আশা করা যায় চাকরিটা হবে।'
'দেখা যাক।পরশু আরেকটা আছে।'
'বেস্ট অফ লাক।'
'থ্যাংকিউ।'
ওদের কথার মাঝেই আয়েশা চলে এলো।আহাদকে দেখে বলল,'কখন এলি?'
'এইতো কিছুক্ষণ আগে।রুমি ঘুমিয়েছে?'
'হ্যাঁ।তুই খেয়েছিস?'
'হ্যাঁ।'
'চা খাবি?'
'দাও।'
আয়েশা দিশার দিকে চেয়ে বলল,'তুমি খাবে?'
'খেলে মন্দ হয় না।'
আয়েশা হেসে বলল,'বসো।আসছি।'
চা খেতে খেতে টুকটাক গল্প চললো তিনজনের মাঝে।বেশিরভাগ আয়েশাই বলছে তার স্বামী,সংসারের গল্প।বাকি দু'জন শুনছে আর অল্পস্বল্প তাল মেলাচ্ছে।চা শেষ হতেই আহাদ বলল,'চলুন,আপনাকে হোস্টেলে দিয়ে আসি।'
আয়েশা বলল,'যেতেই হবে?আজ নাহয় থেকে যাও।'
'না,আপু।কাল সকাল সকাল ক্লাসে যেতে হবে।আরেকদিন এসে থাকব।'
'আচ্ছা,সাবধানে যেও।'
আয়েশার বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিশা বলল,'জানেন?আপনি অনেক লাকি।'
'হ্যাঁ সেটা তো জানি কিন্তু ঠিক কোন বিষয়ের জন্য আপনার এটা মনে হলো?'
'আপনার পরিবার এবং পরিবারের মানুষজন ভীষণ ভালো।খুব কম মানুষই এমন পরিবার পায়।'
আহাদ হাসলো।বলল,'আমরা সবাই লাকি তবে ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে।মন খারাপ করবেন না।'
দিশার চেহারায় মলিন হাসি,দৃষ্টি উদাস।আহাদ ওর অভিব্যক্তি বুঝতে পারলো।কোনো এক অজানা কারণে এই মেয়েটি মন খারাপ করলে কেন জানি ওর বুকের ভেতর কেমন করে ওঠে!
দু'জনেই পাশাপাশি চুপচাপ হেঁটে চলছে।হঠাৎই আহাদ বলল,'এই যে,ম্যাডাম কৃষ্ণলতা!'
আহাদের সম্মোধন শুনে দিশা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পাশ ফিরলো।আহাদ ওকে এখানেই দাঁড়াতে বলে দ্রুত পায়ে কোথায় যেন গেলো।ফিরে এলো একগুচ্ছ কদম হাতে।দিশার ঠোঁটে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো।উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,'এগুলো আমার জন্য?'
'জ্বি,ম্যাডাম কৃষ্ণলতা!এই কদমগুচ্ছ শুধুমাত্র আপনারই জন্য।'
দিশা হাত বাড়িয়ে ফুলগুলো নিলো।একটু আগের মন খারাপটা যেন নিমিষেই কোথাও পালিয়ে গেলো।
হোস্টেলের সামনে এসে দিশা বলল,'ধন্যবাদ আমার মন ভালো করে দেওয়ার জন্য।'
'আমি শুধু ধন্যবাদ নিই না।'
'বিস্কিটের সাথে নেবেন?আমার কাছে এই মুহুর্তে এক প্যাকেট নোনতা বিস্কিট ছাড়া কিছু নেই।'
হেসে ফেললো আহাদ।এতটা প্রানখুলে হাসতে এই প্রথমই দেখেছে দিশা।হাসলে ছেলেটাকে ভীষণ সুন্দর লাগে!হাসি থামার পর আহাদ বলল,'ঠিকাছে বিস্কিটের সাথেই দিন।'
এবার দিশাও হেসে ফেললো।
দু'জনের এমন দৃশ্য দূর থেকে ক্যামেরা বন্দী হয়েছে এবং নির্দেশ মত কারো কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন