উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৪০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪১)


কথা ছিলো বৌভাতের পর তরু বাবার বাড়ি আসবে তারপর আর শ্বশুর বাড়ি যাবে না।ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলেই যাবে।কিন্তু দেখা গেলো পরিস্থিতি আলাদা।
বৌভাতের দিন সকাল থেকে সাজেদার কোমর ব্যথা শুরু হলো।এমন অবস্থা সাজেদা হাউমাউ করে কান্না করে। উঠে দাঁড়াতে পারে না,বসতে পারে না।
বৌভাতের দিন তরুর দিকের মেহমান যখন তরুকে নিয়ে আসতে চায় তখনই কালাম হোসেন বিগলিত হেসে রাবেয়াকে বললো, "বেয়ান কি বলেন, আমার পরিবারের এই অসুস্থতার মধ্যে আপনি বউ নিয়ে যাবেন?শাশুড়ীর সেবা যত্ন করবে না নতুন বউ?"
রাবেয়া বললো, "এরকম তো কথা ছিলো না বেয়াই।আমার মেয়ের বিয়ে না হলে কি করতেন আপনারা? "
নজরুল রাবেয়াকে বললো, "আচ্ছা থাক না দুদিন,আমি দুদিন পর এসে মেয়েকে নিয়ে যাবো।"
রাবেয়ার মনটা অস্থির হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে কোনো গোলমাল হবে নিশ্চয়।
তরু কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ফাইজানকে ভালোবেসেছে, বিয়ে করেছে, স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু ফাইজান কাছাকাছি আসতে চাইলেই তরুর মনে পড়ে যায় ফাইজান লতার সাথে কথা বলেছে।
এটা মাথায় আসলেই তরুর মাথা গরম হয়ে যায়।
তার উপর ফাইজান রুমে আসলেই বাহির থেকে সাজেদা বেগম নাঁকি সুরে ডাকতে থাকেন।
ফাইজান নিজেও মা'য়ের এরকম ব্যবহারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। ফাইজানের সন্দেহ হয় মা সত্যি অসুস্থ তো!
মায়ের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
রাবেয়া খুঁতখুঁতে মন নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ফাইজান এগিয়ে এসে তরুকে বললো, "তৈরি হয়ে নাও তুমি তরু,বাড়ি যাবে তুমি ওনাদের সাথে। "
কালাম হোসেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ছেলের দিকে। নিজের ঘর থেকে সাজেদা ছেলের এই কথা শুনে কোঁকানো বাড়িয়ে দেয়।
তরু হতভম্ব অবস্থায় পড়ে যায়। সাজেদা বেগমের কোঁকানো শুনে তরুর মনে হচ্ছে ওনার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে যেনো।
কালাম হোসেন গম্ভীর হয়ে বললেন,"তরু আজকে যাবে না আমি বলেছি না? "
ফাইজান বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "তরু যাবে আব্বা।আম্মার এমন কোনো মারাত্মক অসুখ করে নি আর তো না তরু ডাক্তার কিংবা নার্স।আম্মার অসুখ হলে ডাক্তার দেখানো দরকার, তরুকে দেখানো না।তরুর টেস্ট পরীক্ষা চলছে।আমি চাই না বিয়ের চক্করে তরুর পড়ালেখায় ক্ষতি হোক।তরুর পড়ালেখার ব্যাপারে আমি এক চুল ও ছাড় দিবো না।
আম্মাকে দেখার জন্য ভাবীরা দু'জন আছে,আপারা আছে,আমি আছি।"
কালাম হোসেনের মাথা গরম হয়ে গেলো রাতগে।মেহমানদের সামনে কিছু বলতে পারছে না।ছেলের এরকম চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনে কালাম হোসেনের ইচ্ছে করছে ফাইজানের গালে কষে একটা চড় বসায়। এতো ঔদ্ধত্য কালাম হোসেনের অপছন্দ।
তরু অনিচ্ছা সত্ত্বেও তৈরি হয়ে নিলো।
ফাইজান তরুকে গাড়িতে তুলে দিয়ে তরুর দিকে তাকিয়ে বললো, "আমার উপর অনেক রাগ,অভিমান,ক্ষাওভ জমা আছে তোমার তরু।এটুকু জেনে রেখো আমার প্রতি তোমার যত রাগ,অভিমান,ক্ষোভ,ভালোবাসা জমে আছে,তার চাইতে বেশি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আছে।"
তরুরা চলে যাওয়ার কথা শুনে সাজেদা বেগম রেগে গেলেন।বিছানা থেকে নেমে এসে কালাম হোসেনকে বললেন, "ফাইজানের বউ কি সত্যি চইলা গেছে।"
কালাম হোসেন জবাব দিলেন না।তার মাথা এখন গরম হয়ে আছে।
ফাইজান ঘরে এসে দেখে মা মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। ফাইজানের আর কোনো সন্দেহ রইলো না মা'য়ের অসুস্থতার নাটকের ব্যাপারে। তবুও ইচ্ছে করে মা'কে বললো, "এ কি মা!তুমি উঠে আসলা কেনো?তোমার না শরীর খারাপ। "
উত্তেজনায় সাজেদা অসুখের নাটকের কথা ভুলে গেছে। ফাইজান বলতেই মনে পড়লো তার।আচমকা কোমর চেপে ধরে বললো, "ও মা গো,কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে মনে হয় আমার। তরু কই?আমার কোমরটা মালিশ করে দিতে বল।"
ফাইজান বললো, "আমার বউ তো নেই মা,ওকে পাঠিয়ে দিয়েছি আমি।কোমরে মালিশ লাগলে আপাদের বলো।"
সাজেদা মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, "পুতের বউ আনছি আমার সেবা করার জন্য, বউ আনি নাই বাঁদী আনছি ঘরের।আমার মাইয়ারে কেনো মালিশ করবো।"
"মা,আমি ঘরে বউ আনছি। আমার কাছে তরু শুধু বউ না,তরু হচ্ছে মূল্যবান শোপিসের মতো। তাকে আমি কাজ করার জন্য আনি নি মা।তাহলে কাজের লোক নিয়ে আসতাম,কবুল বলে, রেজিস্ট্রি করে তরুকে আনতাম না।
তরু ফুলের মতো, তাকে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখতে হবে।"
ফাইজানের বড় ভাবী এসে বললো, "তোমার বউ ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখা ফুল হইলে আমরা কি?"
ফাইজান হেসে বললো, "তরু তো আমার বউ,তাই আমার বউ আমার কাছে ফুল।আপনারা যার বউ তাদের জিজ্ঞেস করেন তাদের কাছে আপনারা কি,আমার কাছে আমার ভাইয়ের বউ এটুকুই। "
সাজেদা কালাম হোসেনের সামনে গিয়ে বললো, "শুনলেন আপনার বেহায়া পোলার কথা? ৪০ বছর হইছে এই সংসারে আসছি,গাধার মতো খাইটা এই সংসার গড়ছি।এখন নাকি ওগো বউরা কাম করতে পারবো না।কাইল বিয়া কইরা আইজকাই আপনার পোলা কি কয় শুনছেন?"
কালাম হোসেন বললেন,"তোমার ছেলের মতো অসভ্য, বেয়াদব আমি দ্বিতীয়টা দেখি নি।আমার মুখের উপর কথা বলে ওর বউকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার সিদ্ধান্ত ও মানে নি।"
ফাইজান হেসে বললো, "আব্বা,রাগ করেন ক্যান।তরু আমার বউ,তাই তরুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এখন শুধু মাত্রই আমার। আপনি, মা,আপা কেউ-ই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।"
ফাইজানের মেজো ভাবী "দুই দিনেই ফাইজানের এরকম রূপ বদল,তাবিজ করে ফেলছে না-কি? "
ফাইজান হেসে বললো, "আপনার মনে হয় ভাইজানের ভালোবাসার উপর ভরসা নাই,তাই ভাইজানরে তাবিজ করে রাখা লাগে। আমার তরুর প্রতি ভালোবাসা আছে, তার জোরেই বলছি।তাবিজের জোরে না।"
চলবে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন