উপন্যাস       :        অনন্ত প্রেম
লেখিকা        :         আরশি আয়াত
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ই জুন, ২০২৪ ইং

লেখিকা আরশি আয়াতের “অনন্ত প্রেম” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ১১ই জুন থেকে লেখা শুরু করেছেন।
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত

১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ১২)


তিনতলা বাড়ির সামনের টং দোকানটায় সকাল থেকেই বসে আছে আহাদ।একটু পরপরই চা খাচ্ছে আর বাড়িটার গেটের দিকে লক্ষ্য রাখছে মানুষের আসা যাওয়ার।তবে সে যে মুখটিকে খুঁজছে তাকে এখনো দেখা যায় নি।অবশ্য সে-ই মানুষটি নিজেও জানে তার বাসার সামনে কেউ একজন তার জন্য অপেক্ষা করছে।
ক্লাস থেকে বের হতেই কল এলো ফরিদা বেগমের।দিশা একটু অবাকই হলো।বাড়ি ছাড়ার এতদিনের মধ্যেও একবার বাবা,মা কেউ কল করে নি।আজ হঠাৎ কি হলো?দিশা ফোন রিসিভ করতেই ফরিদা বেগম বিলাপের স্বরে বললেন,'দিশা তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।তোর বাবা কেমন জানি করতেসে।উষাও ফোন ধরতেছে না।'
এতটুকু শুনেই দিশার খারাপ লাগা শুরু হয়ে গেলো।সে মা'কে আশ্বস্ত করে দ্রুত বাড়ির পথে রওনা হলো।
বাড়ি এসে দেখলো বাবা নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছেন,মা বাইরে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছেন আর নার্গিস এক কোণায় নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে।দিশাকে দেখে ফরিদা বেগম বললেন,'দেখ মা,তোর বাপ এগুলা কি শুরু করছে!বলতেছে বি'ষ খেয়ে মরে যাবে।তুই কিছু বল।'
দিশা দরজার বাইরে থেকে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,'বাবা তুমি এমন কেনো করছো?কি হয়েছে তোমার?'
ভেতর থেকে দুঃখ ভারাক্রান্ত স্বরে মইনুল ইসলাম বলে উঠলেন,'আমার আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই।'
'কেন বাবা?'
'আমার মত হতভাগ্য মানুষের বেঁচে থেকেই বা কি লাভ?যার মেয়ে কথা শোনে না!যার মেয়ের জন্য মানুষের কাছে অপমানিত হতে হয় সে-ই বাপের কি বেঁচে থাকার অধিকার আছে?'খুবই করুণ শোনালো মইনুল ইসলামের গলা।দিশার মন খারাপ হয়ে গেলো নিমিষেই।ভেতর থেকে একদলা কান্না প্রাণপণে ঠেলতে লাগলো বাইরে বের হওয়ার জন্য।কোনরকম নিজেকে ধরে রেখে দিশা জিজ্ঞেস করলো,'তুমি কি চাও বাবা?'
'মা'রে তোকে আর তোর বোনকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছি।সে-ই ছোটো থেকে আগলে রেখেছি।বড় হয়ে তোরা যদি কথাই না শুনিস তাহলে আমার কেমন লাগে বল?তোর বাবা,মা তোর খারাপ চায় না রে!প্রত্যেক বাবাই দায়িত্ববান কারো কাছে নিজের কন্যাদান করতে চায়।আমিও চাই।তুই ঘরে ফিরে আয় মা।বিয়েটাতে রাজি হয়ে যা।'
দিশা জানতো এই কথাগুলোই শোনা লাগবে।অনেক কষ্টে দুর্বল স্বরে দিশা বলল,'কিন্তু বাবা....'
তার আগেই মইনুল ইসলাম বললেন,'তুই রাজি নাহলে আনার ম'রা ছাড়া কোনো গতি থাকবে না।'
নিজের নিয়তির ওপর হাসি আসছে ওর।নিয়তির খেলা বড়ই আজব।
রাজি হলো দিশা।বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো আবার।এবার আর বেশি সময় নেওয়া হয় নি।মাত্র তিনদিন পরই বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে।বিকেলের দিকে সায়েমের ফোন এলো।এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারলো না দিশা।এই ফোনটা আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।রিসিভ করতেই অপরপ্রান্তে থেকে ব্যঙ্গাত্মক হাসি শোনা গেলো।একই স্বরে সায়েম বলল,'কি যেনো বলছিলে?বিয়ে করবে না!আবার একটা ছেলের সাথে চক্করও চালাচ্ছিলে!এখন কি হলো?শোনো,আমি যখন যা চাই তা পাই আর না পেলে ঝলসে দেই!তুমি তো জানোই তাই না?তা ওই ছেলেটার নাম আহাদ না?ওর বোনই তো ছিলো!মেয়েটা যদি রাজি হতো তাহলে ওর এইদিন দেখতে হতো না!আহা বেচারি!আর ওর ভাই শা'লা বলদটা এতদিন পর এসেছে আমার থেকে বদলা নিতে!আর তুমি যোগ দিয়েছিলে নাচতে নাচতে!শুধু একবার বিয়েটা হোক তোমার কি করা লাগবে সেটা আমি জানি আর ওই ছেলের ব্যবস্থাও করব।তবে বিয়েটা আগে হোক কারণ শুভ কাজের আগে আমি কোনো অশুভ কাজ করতে চাই না।'
এতক্ষণ দিশা একটা কথাও বলে নি।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।তাই কথাগুলোর প্রত্যুত্তর না করেই ফোন রেখে দিলো।
হোস্টেলের বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে দিশা।কাল বাড়ি চলে যাবে।অবশ্য আজই বাবা-মা আসতে দিতে চায় নি কিন্তু নানারকম অজুহাত দিয়ে চলে এসেছে তবে কাল ফিরতেই হবে।শুয়ে শুয়ে নিজের দুঃখের কথাই ভাবছিলো সে।তখনই ফোন এলো আহাদের।আজ সারাদিনে কথা হয় নি একবারও।দিশা ফোন রিসিভ করতেই আহাদের প্রফুল্ল গলা শোনা গেলো।বলল,'হ্যালো,ম্যাডাম কৃষ্ণলতা!কোথায় আপনি?'
'হোস্টেলে।'
'যাক,তাহলে আজ ঠিক জায়গায়ই এসেছি।'
'আপনি হোস্টেলের সামনে?'
'আজ্ঞে হ্যাঁ!'
'আচ্ছা,দশমিনিট দাঁড়ান।আসছি।'
'আসুন।'
দিশা নামলো কিছুক্ষণ পরই।ওকে দেখেই আহাদ বুঝতে পারলো কিছু হয়েছে।তাই নিজের কথা বাদ দিয়ে জানতে চাইলো,'কি হয়েছে আপনার?'
'কোথায় কি হয়েছে?'
'কিছু তো হয়েছে!আপনার চেহারা দেখলে আমি বুঝতে পারি।'
দিশা হাসলো।বলল,'কিভাবে?'
'এটা আমার দৈব শক্তি।'
'তাই না?'
'হ্যাঁ তাই!এবার আপনি বলুন কি হয়েছে?'
মলিন হেসে সবকিছু খুলে বলল ও।সবশুনে আহাদ মাথা নেড়ে বলল,'জীবনে সবকিছু আমাদের প্ল্যান মত হয় না!হলে আমাদের সবার জীবন পরিপূর্ণ থাকতো।'
দিশা মাথা নাড়লো।বলল,'হ্যাঁ,কাল চলে যাব বাড়ি।'
'তাহলে চলুন আপনাকে কফি খাওয়াই।'
'কোন খুশিতে?'
'আপনার বিয়ে ঠিক এই খুশিতে।'
'আমার বিয়েতে আপনি খুশি?'
'খুশি তো হওয়াই লাগবে।বিয়ে বলে কথা!'
দিশার মন খারাপের স্তর আরেকটু বাড়লো।সে মন করেছিলো এই বিয়ের খবর শুনে আহাদের ভীষণ মন খারাপ হবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।খুবই স্বাভাবিক ছেলেটা।যেন এটা হওয়ারই ছিলো!'

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন