উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


২২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২৩)

ফাইজান বের হয়ে লতাদের দরজায় কড়া নাড়ে।লতা দরজা খুলে দেখে ফাইজান দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় লতা।ভাবতেই অবাক লাগে আর কয়েকটা দিন মাত্র,তারপর এই মানুষটা লতার হবে।একেবারে লতার নিজের মানুষ।
ফাইজান বললো, "আংকেল আছে বাসায়?ডেকে দাও তো।"
লতা আলমগীরকে ডেকে দিলো।আলমগীর বের হয়ে দেঝে ফাইজান দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে দুটো ব্যাগ ও আছে।
সালাম দিয়ে ফাইজান বললো, "আংকেল,আমার আসলে পড়ালেখা শেষের দিকে তো,এজন্য চাকরির পড়াশোনা একটু বেশি করতে হচ্ছে। এখানে আসলে আমার ওভাবে পড়া হচ্ছে না।আমি চলে যাচ্ছি। ক্যাম্পাসের হোস্টেলে উঠবো।হুট করে হোস্টেলে একটা সীট পাওয়া গেলো তা তাই আগে থেকেই জানানো যায় নি।
এজন্য একটু তাড়াতাড়ি চলে যেতে হচ্ছে। লতার জন্য অন্য একজন টিচার রাখবেন আমার পক্ষে আসলে আসা ও সম্ভব হবে না ওকে পড়াতে।"
আলমগীর ভাবলো ফাইজান হয়তো জানে বিয়ের কথা বার্তা হচ্ছে তাই লজ্জায় এখন এখানে থাকতে চাচ্ছে না। খুশি হলো আলমগীর। আজকাল তো ছেলেমেয়েদের মধ্য থেকে লাজ লজ্জা উঠে গেছে।
গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, "ঠিক আছে বাবা,তোমার লেখাপড়ার বিষয় যেহেতু, যেভাবে ভালো হয় কর।আমরা নিষেধ করবো না।তবে তুমি এখানে থাকলে আমাদের ভালো লাগতো।আমি চলে গেলে তোমার আন্টি একা মানুষ। একজন পুরুষ মানুষ তো দরকার হয় মানুষের। যাই হোক,তোমার যেটা ভালো মনে হবে তাই কর তুমি। "
এই পাশ থেকে শুনতে পেয়ে লতার সমস্ত আনন্দে যেনো ভাটা পড়ে গেলো।
ফাইজান চলে যাচ্ছে! ভাবতেই লতার বুক কেঁপে উঠে, চোখ ভিজে আসে।
লতা ফাইজানকে না দেখে কিভাবে থাকবে?
মুহুর্তেই লতার বুক ভারী হয়ে গেলো। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতে লাগলো।
ফাইজান সবার থেকে বিদায় নিলো।তবে তরুকে কোথাও দেখতে পেলো না।
অভিমানিনী বুঝি অভিমান করে লুকিয়ে আছে? বোকা নারী বুঝতে পারছে না, তাকে নিজের করার জন্যই ফাইজানকে এখন দূরে চলে যেতে হচ্ছে।
ফাইজান বের হয়ে রিকশায় উঠে কল দিলো তরুকে।
কল রিসিভ করে তরু কথা বলতে পারলো না।চুপচাপ ফাইজান শুনতে লাগলো অস্ফুট কান্না।যেনো নীরবে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সমুদ্র তীরে।তরুর ফুঁপিয়ে কান্নার দমকে বারবার ফাইজানের বুক চিনচিন করে উঠছে।
পুরুষ মানুষের কতো জ্বালা কে বুঝবে তা!
এই যে চাইলেও তরুকে ছেড়ে আসার শোকে কান্না করতে পারছে না।
কান্না যেনো পুরুষের জন্য আজন্ম পাপ।দুই চোখ জ্বালা করছে ফাইজানের।বুকের ভেতর বিষাদের সুর।
সৃষ্টিকর্তা মানুষের মনে ভালোবাসা দিলো ই যখন তাহলে বিরহ দিলো কেনো?
কেনো দিলো বিচ্ছেদ!
প্রেমে পূর্ণ একটা হৃদয় কি সইতে পারে বিরহের আগুন?
না-কি পারে সইতে দূরে চলে যাওয়ার যন্ত্রণা?
বিধাতা, ভালোবাসাই যদি মনে দিলে, তবে তাকে আজীবন ভালোবাসার মতো সেই ভাগ্য ও দিও।বসন্তের কোকিল হয়ে যেই ভালোবাসা জীবনে এসেছে তাকে যেনো বিরহ শ্রাবণ হয়ে ঝরে পড়তে না হয়।হৃদয়ের মণিকোঠায় পরম ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখা ফুলটি যেনো বিচ্ছেদের যাতনায় শুকিয়ে না যায়।সেই ভালোবাসার বৃক্ষ যেনো মহীরুহ হয়ে উঠে।
তরুর মন খারাপ বুঝতে পেরে লতা এলো তরুর রুমে।দরজায় ধুমধাম ধাক্কা দিতে লাগলো।
চোখ মুছে তরু উঠে দরজা খুলে দিলো।
লতা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো, "তরুউউউউউউ,ভীষণ খুশির একটা খবর আছে জানিস?"
তরুর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, লতার ভাঁড়ামি দেখতে ইচ্ছে করছে না। দ্রুত কথা শেষ করার জন্য বললো, "কি বলবি বলে বিদায় নে।"
লতা ভীষণ লজ্জা পাওয়ার ভান করে, "জানিস আব্বা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আব্বা যাওয়ার আগে আগেই বিয়ে হয়ে যাবে।আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলে উঠিয়ে নিবে ওরা।"
লতার এরকম লাজুক হাসি, অবনত মুখ তরু দেখে নি দীর্ঘদিন। এরকম লজ্জা পাচ্ছে কেনো লতা?
সরু চোখে তাকিয়ে বললো, "তুই খুশি তো?"
"যাকে এতো দিন ধরে মনেপ্রাণে চেয়ে এসেছি তাকে পাবো আর কয়েকদিন পরেই,খুশি হবো না বল?আমি যে কি পরিমাণ খুশি তা বলে বুঝাতে পারবো না। "
তরু থমকালো।বিদ্যুৎ চমকের ন্যায় মনে পড়লো লতা ফাইজানকে ভালোবাসে।
চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো, "কার সাথে বিয়ে তোর?"
লতা লজ্জায় নুয়ে গেলো যেনো।দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললো, "ফাইজান স্যারের সাথে। "
তরু বজ্রাহতের ন্যায় তাকিয়ে রইলো। লতা মনে মনে হেসে নিলো এক চোট।খুব দেমাগ ছিলো তরুর,লতার কাছ থেকে ফাইজানকে কেড়ে নিবে!
এতো সহজে লতা হতে দিবে এসব?
ছিনিয়ে নিয়ে যাবে লতা সব,যেভাবে সব কিছু তরুর থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।
লতা আবারও বললো, "জানিস,ওনার আব্বা নিজেই আব্বাকে কল দিয়েছেন। বলেছেন ফাইজান স্যার নিজেই না-কি ওনাকে বলেছে আমার কথা। উনি নিজেই চান যাতে আব্বা যাওয়ার আগে আগেই বিয়ে হয়ে যায়।
আমার সাথে সন্ধ্যায় কথা বলেছেন ফাইজান স্যার।আমি তো লজ্জায় শেষ। ওনাকে তো আমি মনে মনে পছন্দ করতাম কিন্তু উনি যে সরাসরি বিয়ের কথা বলে ফেলবেন এটা আমার ভাবনাতেও ছিলো না।
আমি লজ্জায় বলেছি উনি যাতে বিয়ের আগের দিনগুলো মেসে গিয়ে থাকে।বুঝিস না,এখানে থাকলে আমার ভীষণ অস্বস্তি হবে,লজ্জা লাগবে ওনার মুখোমুখি হতে।
আর এমনই পাগল উনি,আমি বলতে না বলতেই সব গুছিয়ে নিলো।
আব্বাকে আরো কেমন বানিয়ে চুরিয়ে মিথ্যে বলে বের হলো। আব্বাকে কি বললো শুনবি?বলে যে হোস্টেলে উঠবে উনি।আব্বা তো বোকা মানুষ, উনি বুঝলে তো বুঝতে পারতো হোস্টেলে কি আর বলার সাথে সাথে জায়গা হয় না-কি। আব্বাকে ছয় নয় বলে বের হয়েছে। তরু আমার যে কি লজ্জা লাগছে বুঝাতে পারবো না। "
তরুর দুই কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। রাগে,ক্ষোভে ইচ্ছে করছে সব কিছু শেষ করে দিতে।এমন একটা অবস্থা যেখানে লতা যেমন জানে তরুর আর ফাইজানের সম্পর্ক আছে কিন্তু তরুর মুখ থেকে জানতে চায়,তেমনি তরুও চায় ব্যাপারটা সবার থেকে আড়ালে রাখতে।
তরুর পরিস্থিতি এখন অনুকূলে নেই।মায়ের বিয়ে হয়েছে সদ্যই।মা'য়ের অনেক স্বপ্ন তরু লেখাপড়া করবে।তরুর ও অনেক স্বপ্ন।
এই মুহূর্তে এসে তরু বিয়ে নিয়ে ভাবছে না।
অথচ ফাইজান কি-না লতাকে সরাসরি বিয়ের কথা জানিয়ে দিলো!
এজন্যেই কি এতো তাড়াহুড়ো করে ফাইজান চলে গেলো!
দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে তরু নিজের রাগ সামলালো।লতাকে তরু বিশ্বাস করতে চায় না।লতা মিথ্যা কথা বলতে পারে। অবশ্যই বলতে পারে। তরু না বললেও লতা তো নিশ্চয় বুঝে গেছে তরুর সাথে ফাইজানের কোনো একটা সম্পর্ক আছে। তাহলে লতা নিশ্চয় চালাকি করে তরুর থেকে কথা বের করতে চাইছে।
মুহূর্তে আবার তরুর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। মুচকি হেসে তরু বললো, "ভালোই তো,তোর বিয়ে হবে আমি তোর বিয়ের মিষ্টি খাবো।পরীক্ষা পাশের মিষ্টি তো অনিশ্চিত তাই বিয়ের মিষ্টি খেয়েই সন্তুষ্ট থাকি।"
লতার মুখ ভোঁতা হয়ে গেলো মুহূর্তে। কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গিয়ে শুনতে পেলো লতার বাবার ফাইজানের বাবার সাথে কথা বলছে।
লতার মাথায় মুহুর্তেই একটা দারুণ বুদ্ধি এলো।এক ছুটে এসে হাত ইশারায় তরুকে ডাকলো।
তরু তখন ভাবছে ফাইজানকে বলবে লতা তাকে কিভাবে বোকা বানাতে চেয়েছিলো।
লতার ইশারা দেখে বের হলো। বাহিরে গিয়ে দেখে আলমগীর চাচা ফোনে কথা বলছে।প্রথমে বুঝতে না পারলেও দুই একটা কথা কানে আসতেই তরুর মেরুদণ্ড বেয়ে ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
আলমগীর বলছে,"না ভাইজান,ফাইজানের পড়ালেখার কোনো ক্ষতি যাতে না হয়।আমার অসুবিধা নেই।যদিও খারাপ লাগতেছে ছেলেটা ঘরের ছেলের মতো ছিলো। দুই দিন পর মেয়ের জামাই হবে।সে যেহেতু লজ্জা পাচ্ছে আমি ও বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা।
আমি ও তাই বেশি কিছু বলি নি।বিয়ের পরে আর এসব লজ্জা থাকবে না।আপনারা আসেন একদিন আমাদের বাসায়।তারপর না হয় ওদের বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলবো বসে আলোচনা করে। দরকার পড়লে আমি ছুটি বাড়াবো। "
লতা তরুকে খোঁচা দিয়ে বললো,"কি রে, এবার বিশ্বাস হলো তোর?আমাকে তো বিশ্বাস করতেই চাস নি।এবার দেখলি?"
তরুর হাত পা থরথর করে কাঁপছে। চোখের সামনে পুরো দুনিয়া ঘুরছে যেনো।ফাইজান তাকে মিথ্যা বলেছে?
এতো বড় মিথ্যা?
লতা বললো, "জানিস,আব্বা বলেছে আব্বার সম্পদের অর্ধেক ফাইজানের নামেই করে দিবে।আমি ও তাই চাই।আমার সব কিছু তো ওরই।"
তরু ধীর পায়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলো। এই মুহূর্তে তরুর ইচ্ছে করছে মায়ের বুকের ভেতর ঢুকে গিয়ে মন খুলে কাঁদতে। মায়ের পর ফাইজানই তো তরুর সবচেয়ে আপন মানুষ ছিলো। সে-ই কি-না এভাবে ঠকালো তাকে!
কালাম হোসেন সাজেদাকে বললো, "কেমন আক্কেল তোমার ছেলের?আমাদের কিছু জানানোর ও প্রয়োজন মনে করলো না?ওই বাড়ি থেকে চলে গেলো!
ভাগ্যিস আলমগীর ভাই কিছু বুঝতে পারে নি। উনি ভেবেছে আমি হয়তো জানি,আমি ও তার কথার সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলে গেছি।
সাজেদা,ফাইজান যদি আমার কথা না শুনে তাহলে ওর কিন্তু খেসারত দিতে হবে এর জন্য। মনে রাখিও।"
সাজেদা কেঁপে উঠে ভয়ে।এই মানুষটা এমন কেনো?,
সাজেদা এখন কি করবে?
ফাইজান তো জানে ওর বাবা কেমন!
অতীতের কথা কি ও ভুলে গেছে!
কেনো তাহলে অবাধ্য হচ্ছে বাবার?
ছলে,বলে,কৌশলে যেভাবেই হোক ফাইজানকে বুঝিয়ে নিতে হবে সাজেদার।

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন