উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
২৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২৪)
মানুষের জীবন ভীষণ অদ্ভুত। তার চাইতে অদ্ভুত মানুষের মন।কখন যে কি চায় সে নিজেও জানে না।
কিছুক্ষণ আগেও যেই মানুষটার জন্য তরুর দুই চোখে জল টলমল করছিলো এখন সেই চোখের দিকে তাকালে মনে হয় চৈত্রের খরা।
বুকের ভেতর একটা ভীষণ ভারী পাথর চেপে বসেছে।
তরু আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে কতো কি দেখার বাকি আছে এই জীবনে?
মানুষ এমনও হয়?
এতো ভালোবেসে এভাবে আবার দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিতে পারে?
ভালোবাসা যেনো কাগজের ছেঁড়া পৃষ্ঠা, ব্যবহার শেষে দুমড়ে মুচড়ে ফেলা দেওয়া হয়।
অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো তরু বাকি রাত।আশ্চর্য! একটুও ভয় করলো না তার।যার জীবনটাই আপাদমস্তক অন্ধকারে মোড়ানো এই সামান্য রাতের অন্ধকারে তার কিসের ভয়?
রাতের অন্ধকার তো তবুও ভালো, অন্ধকার কেটে গিয়ে আলো আসবে কিন্তু জীবনের যেই অন্ধকার সেই অন্ধকার কি আদৌও গুছবে?
যে জন ভালোবাসার প্রদীপ জ্বলে জীবন আলোকিত করার কথা দিয়েছিলো সে-ই এখন তাকে অন্ধকারে ফেলে নিজে ছুটছে নতুন আলোর সন্ধানে।
ফাইজান হোস্টেলে উঠতে পারলো না।সব কিছু ঠিকঠাক থাকার পরেও শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আরেকটা ছেলে উঠে গেলো।
মেস খুঁজে সব ঠিকঠাক করে যখন মেসে উঠলো ফাইজান তখন রাত্রি প্রায় ১ টা বেজে গেছে।
ক্লান্ত দেহখানা টেনে নিয়ে বিছানায় এলিয়ে দিলো।
অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় তরু ঘুমিয়ে গেছে ভেবে ফাইজান আর কল দিলো না।একটা টেক্সট করে জানালো,"আমি ঠিকঠাক পৌঁছে গেছি তরু,গুড নাইট।দিনে কথা হবে।"
এরপর আর চোখ মেলে তাকানোর মতো শক্তি অবশিষ্ট ছিলো না ফাইজানের।
বিশেষ করে আব্বাকে মানানোর চিন্তায় ফাইজানের মাথা এলোমেলো লাগছে।
ফাইজান সিদ্ধান্ত নিলো বড় ভাইকে কল দিয়ে কথা বলবে এই ব্যাপারে। একমাত্র ভাই ছাড়া কেউ বুঝবে না তার কষ্ট।
মেসেজ পেয়ে তরু মুচকি হাসলো। এইটুকু সময়ের মধ্যে এতো পরিবর্তন ফাইজানের!
অথচ এতো দিন তো যতো যা-ই হয়ে যাক তরুর সাথে ১ মিনিট হলেও কথা বলতো ফাইজান।
কান্নায় তরুর বুক ভেঙে যাচ্ছে কিন্তু চোখের পানি আসতে দিচ্ছে না তরু।নিজেকে সে এতোটা কঠোর করবে যে পাথর লজ্জা পাবে তাকে দেখে।
যা-ই হয়ে যাক তরু কারো জন্য কাঁদবে না আর।
সকালে উঠে তরু দেখে মা কল দিয়েছে। সারা রাত জেগে থেকে তরু ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে ঘন্টা খানেক।মায়ের কল দেখে কল ব্যাক করলো তরু।রাবেয়া মেয়েকে বললো, "তোর আংকেল যাবে তোকে আনতে,আজকে একটু আসিস মা।কতোদিন তোকে দেখি না।"
তরু ভাবলো মায়ের কাছে গেলে মনটা ভালো লাগবে তাই রাজি হয়ে গেলো সানন্দে।
সালেহা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে ছেলের আর ছেলের বউয়ের মধ্যকার আসন্ন ঝামেলা দেখার জন্য।
তদবির করেছে কয়েক দিন হলো এবার তো ফল পাওয়া উচিত অথচ এখনো কিছুই হচ্ছে না।
বিকেলে স্কুল থেকে তরুকে নিয়ে এলো নজরুল।সালেহা কে সালাম দিলো তরু।সালেহা মুখ ভোঁতা করে বসে রইলো।
নাজিয়া ইশারা দিয়ে বললো, "বাদ দাও তরু,ওনার সাথে এতো কথা বলতে যেও না।উনি এরকমই।"
তরু মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মায়ের গায়ের ঘ্রাণ কি যে শান্তির তা যে মায়ের থেকে দূরে থাকে সে ছাড়া কে জানবে?
রায়ে খাবার টেবিলে নজরুল একটা কাজ করে বসলো।নজরুলের দুই পাশে দুই মেয়ে বসেছে।নজরুল পকেট থেকে দুটো বক্স বের করে দুই মেয়েকে দিয়ে বললো, "এতে তোদের জন্য সারপ্রাইজ আছে।"
সালেহা শকুনির মতো তাকিয়ে রইলো বক্সের দিকে। তরু বক্স খুলে দেখে ভীষণ সুন্দর সোনার একটা ব্রেসলেট। নাজিয়া আনন্দে চিৎকার করে উঠে বলে, "ওয়াও!বাবা দারুণ সুন্দর তো।"
তরুর ভীষণ পছন্দ হয়।
রাবেয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,সালেহা তাকিয়ে থাকে ক্রোধান্বিত হয়ে।
নিজের রাগ সংবরণ করতে না পেরে সালেহা বললো, "পোলা প্যাটে ধরলাম আমি,এখন কামাই খায় বাইরের মানুষ। ফল গাছ লাগাইলাম আমি আর ফল খায় কাকপক্ষী। হায়রে কপাল!"
নজরুল শান্ত স্বরে বললো, "আম্মা,আমার জীবনের প্রথম ইনকাম দিয়ে আমি আপনাকে একটা সোনার রিং বানিয়ে দিছি।
৩ ভরি সোনা দিয়ে একটা গলার হাত দিছি।১ ভরি দিয়ে কানের দুল।দুইটা ২ ভরির হাতের বালা।৪ টা হাতের রিং।আপনার শখ হয়েছে বলে সোনার ৫টা তাবিজ।
নাজিয়ার মায়েরেও আমি কিছু দিই নি তখন, আগে আপনার সব শখ পূর্ণ করছি।
আমি বোনদের সবাইকে একটা করে সোনার চেইন গড়িয়ে দিছি,সবার জামাইকেও সোনার চেইন দিছি।
আমি কিন্তু কোনো দিন আপনাকে দেখি নি আমার গড়িয়ে দেওয়া একটা গহনা পরতে।আমি জানি সেসব গহনার কিছুই নাই আপনার কাছে। সব আপনি আপনার মেয়েদের মাঝে বন্টন করে দিছেন।আমার সেসবের প্রতি কোনো লোভ নেই,আমি আপনাকে গড়িয়ে দিছি আপনার খুশির জন্য। আপনি যদি আপনার মেয়েদের দিয়ে খুশি থাকেন আমার আপত্তি নেই আম্মা।
আমার এখন বউ আছে,মেয়েরা আছে।এখন তাদের জন্য করার দিন মা।আপনার জন্য করার সময় তারা কেউ ভাগ চায় নি,আপনি এখন এসব খোঁচা দেওয়া কথা বলে নিজেকে ছোট করবেন না।"
সালেহা আর বসলো না খাবার টেবিলে। কাঁদতে কাঁদতে উঠে গেলো সেখান থেকে। নিজের পেটের ছেলে তাকে এভাবে অপমান করলো?
কাঁদতে কাঁদতে মেজো ছেলের ঘরে গেলো।তারা সবে খেতে বসেছে। সালেহা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সব বললো নজরুলের কথা।
সুরুয আলীর বউ বললো, "আইজ আমাদের ঘরে ভাত খান আম্মা।"
সালেহা চোখ মুছতে মুছতে বললো, "তরকারি কি রানছো?"
"আম্মা,ছোট মাছের তরকারি আর পাতলা মুসুরি ডাইল।"
সালেহা প্লেট সরিয়ে রেখে বললো, "না থাক,ঘরেই খামু রাবেয়া আজকে বড় বড় গলদা চিংড়ি ভাজছে,দেশি মুরগী রানছে।বুড়া বয়সে এইসব গুড়ামুড়া খাইতে মন চায় না।"
উঠে গিয়ে ঘরে যায় সালেহা।তারপর নিজের চেয়ারে বসে পড়ে। রাবেয়া সব কিছু শাশুড়ীর সামনে নিয়ে দেয়।৪ টা বড় বড় চিংড়ি মাছ পাতে তুলে নিয়ে সালেহা খেতে শুরু করে। না,এই বউটার রান্নার হাত খুব ভালো।
রাগ করে যে না খেয়ে থাকবে তাও পারে না সালেহা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন