উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২২)

ফাইজানের আব্বা কালাম হোসেন চিকন বুদ্ধির মানুষ। সবসময়ই টাকা পয়সার পেছনে চিনাজোঁকের মতো লেগে থাকে।টাকা পয়সার গন্ধ পেয়েছেন আলমগীরের, এই টোপ তিনি কিছুতেই ছাড়বেন না।
সাজেদা মিনমিন করে বললো, "ছেলে তো রাজি না।আপনি একটু চিন্তা ভাবনা কইরা দেখেন।"
কালাম হোসেন বিরক্ত হয়ে বললেন,"ছেলের কি এখনো দুনিয়া চেনার বয়স হইছে?চোখে রঙিন চশমা দিয়া ঘুরে তোমার ছেলে।চশমার কাঁচে যেদিন ভাঙন ধরবে সেদিন বুঝবে বাপে তার ভালো চাইছে।ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাইবো।
আমি তা হইতে দিমু না।আর তোমার ছেলে কোন মাইয়া পছন্দ করছে তুমি বুঝো?মাইয়ার বাপ নাই,মা-ও বিয়া কইরা সংসার করে।
মেহমান নিয়া যে আমরা যামু,কে সমাদর করবে আমাদের?
তোমার ছেলে এই জিন্দেগীতে শ্বশুর বাড়িতে যাইতে পারবো?
শ্বশুর বাড়ি থাকে ব্যাটা মানুষের ভালো মন্দ খাওয়ার জায়গা, ওরে কে খাওয়াইবো হ্যাঁ?
আলমগীরের বাজারে দোকান আছে।তুমি বুঝো কম করে হইলেও তোমার ছেলে ৩০/৪০ লাখ টাকার সম্পদ পাইবো আলমগীরের থেকে।
এরকম সুযোগ কোন পাগলে হাতছাড়া করবে?"
সাজেদা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আজীবন স্বামীর কথামতো চলে এসেছে। স্বামী যা বলেছে তাই ঠিক জেনেছে এখন ছেলেকে বুঝাবে কিভাবে?
সন্ধ্যার দিকে কালাম হোসেন কল দিলো আলমগীরকে।আলমগীর তখন চা খাচ্ছে নিজের রুমে বসে।লতা লতার রুমে বসে বসে নখে নেইলপালিশ দিচ্ছে।
ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে কালাম হোসেন বললেন,"আলমগীর ভাই,আপনি আমাগো কুটুম মানুষ। মাইয়ার বিয়ার ব্যাপারে গতকাল কথা কইলেন।
আসলে কুটুমের ভালো করতে পারলে সবারই ভালো লাগে।
আমার ফাইজানরে তো চিনেনই আপনি। আপনাদের হাতের উপরে মানুষ হচ্ছে এখন ছেলে।বলতে গেলে আপনার ঘরের ছেলে ও।
নিজের ছেলে বলে বলছি না,আমার ফাইজান লাখে একটা। এরকম লম্বাচওড়া ছেলে,লেখাপড়ায় ও ভালো আমার ছেলে।ওর স্কুল কলেজের স্যারেরা সবসময় আমারে বলতো কালাম ভাই,আপনার ছেলে একটা রত্ন ভাই।ভীষণ মেধাবী ছেলে আপনার।
এই ছেলেকে দিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হইবো।দেখবেন এ লেখাপড়া শেষ করার আগেই চাকরি পেয়ে যাইবো।
আপনি যখন পাত্রের সন্ধান চাইলেন আমি ভেবে দেখলাম আপনার মেয়ে আমাদের নিজের মেয়ের মতো। নিজেদের ঘরের মেয়ে বাহিরে যাবে কেনো,ঘরের মেয়ে ঘরেই থাক।আপনার ঘর আর আমার ঘর আলাদা কিসের।
আমার ছেলের পড়ালেখা ও শেষের দিকে। আপনি যদি রাজি থাকেন তো আমার ফাইজানের সাথেই না হয় মেয়ের বিয়ে দেন।"
আলমগীর হাসলো ফোনের এপাশে থেকে।সে জানতো মাছ ঠিকই টোপ গিলবে।ফাইজানের মতো ছেলে সে নিজেও হাতছাড়া করতে চায় না।
তবুও ভাব দেখিয়ে বললো, "আপনার প্রস্তাব আমার পছন্দ হইছে ভাই।তবুও আমি আমার ওয়াইফের সাথে আলোচনা করি।মেয়ে যেহেতু তার,তার ও একটা মতামত আছে।"
কালাম হোসেন বললেন,"হ্যাঁ, হ্যাঁ ভাই।তা তো ঠিকই। আপনি ভাবীর সাথে কথা বলে দেখেন।সব ঠিকঠাক থাকলে আমরা আগামী মাসেই বিয়ের কাজ সেরে ফেলবো।এরপর মেয়ে মেট্রিক পাশ করলে বউ উঠিয়ে আনা হবে।"
আলমগীর কল কেটে হাসতে লাগলো। আমেনা স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে। আলমগীরকে এভাবে হাসতে দেখে বললো, "এরকম হাসেন ক্যান?কেরোসিন তেলের পিঠা খাইছেন লাগে?"
আলমগীর বললো, "আমেনা,মাছ তো টোপ গিলছে।তাই হাসতাছি।ফাইজানের আব্বা কল দিছে।"
লতা নিজের রুম থেকে ফাইজানের নাম শুনে উঠে এলো বাপ মায়ের রুমের সামনে। দরজার পাশে কান পেতে দাঁড়ায় লতা।
"ফাইজানের আব্বা কল দিছে।ফাইজানের জন্য লতারে চাইতেছে তারা।বলছে এখন না হয় বিয়ে পড়িয়ে রাখবে,মেয়ে মেট্রিক পাশ করার পর উঠাই নিবে তাদের বাড়ি।আমি বলছি আমি তোমার সাথে কথা বলে জানাবো।"
"আমার সাথে আবার কি বলবেন,আমি যে রাজি এটা তো আপনি জানেনই। আপনি হ্যাঁ বলে দিতেন।"
"আরে বোকা মহিলা।আমি এখনই হ্যাঁ বলে দিলে ওরা ভাবতো আমাদের খুব বেশি আগ্রহ ওদের ছেলের জন্য। বা মনে করতো আমরা ওদের ছেলেকে আগে থেকে পছন্দ করে রাখছি তাইলে আমাদের দামটা কমে যাইতো না। আমি কল দিমু দুই দিন পর। কল দিয়ে বলমু যে মেয়ের মা তো চায় চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী জামাই।ফাইজান তো এখনো বেকার ছেলে।মেয়ের মা নিমরাজি। তবে ভাইজান আপনি যেহেতু নিজ থেকে কথাটা বলছেন, আমি আপনারে সম্মান করি। আপনার আবদার আমি যেভাবেই হোক রাখমু।মেয়ের মা ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে। আপনি আমাদের পুরনো আত্মীয়। আপনার সাথে আমাদের সম্পর্ক অন্য রকম। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাজ ঘরোয়া ভাবে সেরে ফেলবো। আমার আবার ছুটি ও শেষ হয়ে আসতেছে। "
দরজার বাহিরে থেকে সব কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো লতা।কিছুটা বিরক্ত ও হলো আব্বা দুই দিন পর কল দিবে বলায়।এখন কল দিয়ে বলে দিলেই তো হয়।
এক ছুটে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো লতা।কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে তার কাছে সবকিছু। এতো সহজে সব হয়ে যাচ্ছে ভাবলেই লতার কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে।
জীবন এতো সুন্দর কেনো?
লতার মনে হচ্ছে সে বুঝি হাওয়ায় ভাসছে।আর কিছু দিন পর তার বিয়ে ফাইজানের সাথে!
ইশশ!
ফাইজান!
তার স্বপ্নের পুরুষ ফাইজান। কতো স্বপ্ন দেখেছে ফাইজানকে নিয়ে লতা।সব তাহলে সত্যি হবে!
তরুর কাছ থেকে ফাইজানকে লতা জিতে নিবে।
কি যে শান্তি লাগছে লতার!
ফাইজান নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে। একটা ব্যাগে নিজের জামাকাপড় আর আরেকটা ব্যাগে বইখাতা। তরুকে এই মুহূর্তে সব ঝামেলার কথা জানানো যাবে না।মেয়েটা কষ্ট পাবে ভীষণ। সারাজীবন মেয়েটা কষ্ট পেয়ে এসেছে, ফাইজান নতুন করে তাকে কষ্ট দিবে না।
তরুকে ফাইজান বললো, "আসলে আমার কলেজের হোস্টেলে উঠতে হবে তরু।তোমাকে নিজের ঘরে নিতে হলে যে আমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে তরু।এখানে লতার উগ্রতা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। লতার থেকে দূরে থাকতে হবে আমার। "
"লতার থেকে দূরে সরতে গিয়ে আমাকে দূরে সরিয়ে দিবেন না তো!"
"তুমি আমার এই বুকের ভেতর আছো তরু।আমার কলিজাটাই তুমি। কলিজা কি দূরে সরিয়ে রাখা যায় তরু।বাঁচা যাবে তাতে?
তুমি না বলো,সত্যিকার ভালোবাসা বিরহে বাড়ে,দেখা না হলে দৃঢ় হয়।হৃদয়ের আগুনে পুড়ে পুড়ে খাঁটি হয়।
আমাদের ভালোবাসা শতভাগ খাঁটি তরু।আমাদের এই দূরত্বে সেই ভালোবাসা আরো গভীর হবে।তুমি আমার হৃদয়ে মিশে আছো তরু।আজীবন থাকবে।"
তরুর ভীষণ কান্না এলো।

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন