উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
২৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২৮)
সমস্ত আনন্দ খুশীর দিনটা সালেহার বুকে যন্ত্রণা নিয়ে কাটলো।ছেলের এসব আদিখ্যেতা দেখে সালেহার বুকের আগুন আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
বিড়বিড় করে ওঝাকে গালাগাল দেয় সালেহা।
"হারামজাদা ওঝা,কোনো কাজেরই না।কি তাবিজ করছে কে জানে!তাবিজে উল্টো কাজ করা শুরু করে দিছে আরো।"
রাবেয়া মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।কে বলে সৎ সন্তানকে আপন করা যায় না।এই মেয়েটাকে তো রাবেয়ার এক মুহূর্তের জন্য পর মনে হয় না।মা হতে হলে কেনো পেটে ধরতেই হবে?
পেটে না ধরে ও তো মা হওয়া যায়।
তরু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো সবটা।মা খুশিতে আছে এর চাইতে বড় পাওয়া তরুর জীবনে আর কিছু নেই।
তরু তো এটাই চেয়েছিলো তার মা যাতে সুখী হয়।
রাতে নাজিয়া বসে পড়ছিলো।তরু এক পাশে বসে ফাইজানের সাথে কথা বলছে।নাজিয়া আড়চোখে তাকিয়ে তরুকে দেখে। তরুর সারা মুখে কেমন গোলাপি আভা।এই মেয়েটাকে নাজিয়ার কেনো জানি বেশি ভালো লাগে। নাজিয়ার ইচ্ছে করে তরুকে একেবারে সারাজীবনের জন্য এই বাড়িতে রেখে দেয়।কিন্তু সাহস হয় না বলার।নাজিয়া জানে তরু থাকবে না।
কিছু মানুষের ব্যক্তিত্ব এতোটাই প্রখর থাকে যে চাইলেও তাদের দিয়ে জোর করে কিছু করানো যায় না।বলা ও যায় না।
তরুকে নাজিয়ার তেমনই লাগে।
তরু মুচকি মুচকি হাসছে আর নখ দিয়ে জানালার গ্রীল খুঁটছে।
নাজিয়া ভাবে,ভালোবাসা আসলে কেমন?
একটা মানুষের সাথে যোগাযোগের অভাবে তরুর গত রাতেই তো দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। অথচ আজকে কেমন হাসছে তরু।নাজিয়ার ধারণা চেঞ্জ হয়।আগে জানতো মানুষ খাদ্যের অভাবে মা রা যায়।এখন মনে হচ্ছে খাদ্য ছাড়া মানুষ ৪৫-৬৫ দিন বাঁচতে পারে কিন্তু মানুষ ভালোবাসা ছাড়া ১ দিন ও বাঁচে না।
তা না হলে তরুর বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় কেনো গতরাতে এভাবে ছটফট করছিলো!
নাজিয়া বড় ফুফু শেফালী এসেছে দুপুরে। সালেহা নিজেই মেয়েকে খবর দিয়ে আনিয়েছেন।
শেফালী এসে নাজিয়াকে ডাকলো সালেহার রুমে।
নাজিয়ার বিরক্ত লাগলো। নাজিয়া জানে এখন দাদী আর ফুফু মিলে নাজিয়ার সাথে আরো এক পালা ঝগড়া করবে।
নাজিয়া মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে নিলো।
দাদীর রুমে যেতেই শেফালী নাজিয়াকে রসমালাই খেতে দিলো।বোসদের দোকানের রসমালাই বেশ ভালো খেতে।নাজিয়ার পছন্দের।নাজিয়া কিছুটা চিন্তিত হয়ে যায়। পরিস্থিতি তো নরমাল।নাজিয়া এরকম আশা করে নি।
রসমালাই খেতে গিয়ে নাজিয়ার মনে পড়ে গেলো মা'য়ের কথা।
পিরিচ হাতে নিয়ে নাজিয়া বললো, "আমার আমার রুমে গিয়ে খামু ফুফু।"
শেফালী বললো, "এখানে বইসা খা।আমার সামনে খাবি।"
নাজিয়া সোজা বললো, "আমি খামু না,মা'কে দিমু।"
শেফালীর গা জ্বলে উঠে শুনে। রাগান্বিত হয়ে বললো, "কেনো রে নাজিয়া?তুই এইটুকু খেতে পারছিস না?এতো নাটক দেখাস ক্যান?সৎ মায়ের জন্য যে এতো মায়া দেখাস, আজ বাদে কাল যখন ওই ঘরে বাচ্চা আসবো তোরে তখন ওই মহিলা লাত্থি মাইরা দূর করবো এই ঘর থেকে।"
নাজিয়া কিছু বললো না।
সালেহা ফিসফিস করে বললো,"তুই নাতনি কেমনে পারলি আমারে এরকম বেইজ্জতি করতে?তোর মা মরনের পর তোরে কে দেইখা রাখছে ক?আর এখন আমারে চিনস না তুই?"
নাজিয়া জবাব দিলো না। নাজিয়া ভুলে নি কিছুই।দাদী আর ছোট ফুফু মিলে নাজিয়াকে কেমন অশান্তিতে রেখেছিলো তা উপরের আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।নাজিয়া কখনো বাবাকে বলে নি ঝামেলা হবে বলে।
শেফালী গলা নামিয়ে বললো, "তোর কপাল পুড়তেছে বুঝতেছিস না তুই?
লোকে বলে মা মরলে বাপ হয় তালুই।তোর বাপ ও তেমন। দেখস না নতুন বউ নিয়ে কতো নাটক করে?
তোর মা'রে নিয়ে কোনো দিন তোর বাপ এসব করে নাই।তুই হওনের সময় ও তাও এরকম আহ্লাদ করে নি।এখন যা বেহায়াপনা করতেছে বউ নিয়ে। সাবধান হ নাজিয়া।আমরা তোর ভালো চাই।"
নাজিয়ার কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না। নরম সুরে বললো, "তাইলে এবার যাই ফুফু।মা'রে রসমালাই দিমু।"
আর না দাঁড়িয়ে নাজিয়া চলে গেলো পিরিচ নিয়ে। শেফালী মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, "এই মহিলা কি কালাজাদু জানে না-কি মা?সবাইরে এম্নে বশ করছে কেম্নে?"
সারারাত তরু ঘুমালো না।কতো বছর ধরে যেনো কথা বলা হয় নি যেনো।
সারারাত কথা বলে ফজরের পর ঘুমালো তরু।
ফাইজানদের বাড়িতে তান্ডব চলছে।কালাম হোসেন সবার উপর রেগে আছেন।সাজেদা বেগম পান্নাকে বললো, "তুই তো কইলি ফাইজান আসবো।তাইলে আসলো না ক্যান?"
পান্না নিজেও বুঝতে পারছে না। ফাইজান বারবার কল দিয়ে মায়ের খবর নিচ্ছিলো তারপর কি হলো কে জানে!
বিকেলের পর থেকে আর কল আসে নি।বাড়ি থেকে যত কল দিচ্ছে ফোন অফ।
কালাম হোসেন সাজেদাকে বললেন,"তোমার পোলা আমার মান সম্মান সব শ্যাষ করে দিছে আজকে।আমি কতো বড় মুখ করে বলছি ওদের যে আমার পোলা আসলেই বিয়ের কাজ সেরে ফেলমু।আমার কথার দাম রইলো না তোমার পোলার কাছে।আমি সাফ সাফ বলে দিতেছি সাজেদা।ফাইজান যদি নিজের পছন্দমতো বিয়া করে তবে তোমারে আমি তালাক দিমু।পোলারে শহরে পাঠাইতে আমার তেমন মত আছিলো না।তুমি নিজে সুপারিশ করছো।ওই পোলার জন্য আমার মুখ ছোট হইলে আমি ও কিন্তু তোমারে সংসারে রাখমু না।"
পান্না চমকে উঠে। আব্বা কি বলছে এসব?
কালাম হোসেন ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।লতার বাবাকে তিনি কথা দিয়েছেন। লতা সোনার ডিম পাড়া হাঁস।তাকে কিছুতেই তিনি হাতছাড়া করবেন না।ছেলেরা বোকা বলে বুঝতেছে না।ভালো ঘরের মেয়ে বিয়ে করলে ভবিষ্যতে যা পাবে ছেলেরাই তো পাবে।তিনি তো নিজের জন্য নিবেন না।ছেলেদের ভবিষ্যতের জন্যই তো এরকম সিদ্ধান্ত নিলেন।আবেগ চলে গেলে ঠিকই বুঝবো বাপে ভুল কিছু করে নাই।
সাজেদা বেগম পান্নাকে ধরে বললো, "ও পান্না।আমি এখন কি করমু রে মা।তোর বাপরে তো তোরা চিনস।আমার সংসার বুঝি এই বুড়া কালে ভাইঙ্গা যাইবো রে মা।"
পান্না নিজেও বুঝতে পারছে না কিছু। তার বাপ এক কথআর মানুষ তা সবাই জানে।
আব্বা যদি সত্যি উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলে শ্বশুর বাড়িতে কেমনে মুখ দেখাবে তারা বোনেরা?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন