উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
| কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
২৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২৯)
তরু তখন ফাইজানের সাথে কথা বলছে।হুট করে ফাইজান বললো, "তরু,এমন যদি হয় যে আমাদের ইমিডিয়েটলি বিয়ে করে নিতে হবে তাহলে কি করবে তুমি? "
এই প্রশ্নে তরু কিছুটা থমকায়।দ্বিধান্বিত বোধ করে মুহূর্তেই।তরুর সবে ১৬ বছর বয়স। এই বয়সে তরু বিয়ের কথা ভাবতে পারছে না।বিয়ে মানেই একটা অদৃশ্য রেসপনসেবলিটি। তরু যথেষ্ট ম্যাচিউর মেয়ে।আর ম্যাচিউর হওয়াতেই সে বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে এতো শীঘ্রই বিয়ে করলে তার ফলাফল খুব একটা ভালো হবে না।
তরুর দুই চোখে অনেক স্বপ্ন। বড় হওয়ার স্বপ্ন অনেক তরুর।সব অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের জবাব দিতে হলেও তরুকে পড়ালেখা করতে হবে।সেখানে তরু কিভাবে বিয়ের কথা ভাববে এখনই?
এসব ভাবনার মধ্যেই তরুর আবার মনে হলো, তাহলে সে কেনো ফাইজানের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে এই সময়ে?
একটা রিলেশনশীপের গোলই তো হলো দুজন বিয়ে করা।শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত একে অন্যের পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা করেই তো তরু ফাইজানকে মন দিয়েছে সেখানে তাহলে তার মাথায় কেনাও এসব হিসেব আসছে?
ভালোবাসা তো এতো হিসেবনিকেশ করে হয় নি তবে কেনো পূর্ণতার স্বপ্ন দেখতে এতো ভয়!
ফাইজান তরুকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো, "কি ভাবছো তরু?আমি আর দেরি করতে৷ চাই না।আমি চাই বিয়েটা করে নিতে।"
তরুর নিজেকে মনে হলো অকূল পাথারে পড়েছে বুঝি।কি সিদ্ধান্ত নিবে সে এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে?
ফাইজান উৎকণ্ঠা নিয়ে তরুর উত্তরের অপেক্ষা করছে। ফাইজান জানে তার বাবা মা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আরো অনেক কিছুই করবে।তার আগেই ফাইজান তরুকে নিজের করে নিতে চায়।
তরু তার হয়ে গেলে সব লড়াই ফাইজান করতে পারবে।
তরু বললো, "আমি এখনই এসব নিয়ে ভাবছি না।বিয়ে ছাড়া ও তো জীবনে অনেক কিছু করার আছে আমার। "
"অনেক কিছু করতে গিয়ে যদি আমাদের সম্পর্কটাই শেষ হয়ে যায় তরু?আমাদের ভালোবাসার চাইতে ও কি অন্য কিছু বেশি বড় হয়ে গেছে? "
"আবেগ আর বাস্তবতা এক নয়।দুটো আলাদা জিনিস। এখন আবেগের বশে আমি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতেই পারি।কিন্তু যখন আরো সময় যাবে,জীবনে নানান রকম টানাপোড়েন আসবে,সম্পর্কে তিক্ততা আসবে,মন কষাকষি হবে তখন ঠিকই আফসোস হবে কেনো নিজের জন্য নিজে কিছু না করে বিয়ে করে নিলাম।১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন মেয়েকেই দেখেছি বিয়ের পর ক্যারিয়ার গড়তে পারে নি। ২০ জন যারা ক্যারিয়ার গড়েছে তাদেরকে ঘরে বাহিরে ২৪ ঘন্টা স্ট্রাগল করে যেতে হয়েছে।"
ফাইজান তরুর থেকে এরকম জবাব আশা করে নি।সে ভেবেছিলো তরু সবকিছুর উর্ধ্বে তাকে চাইবে কিন্তু তরু তো আরো দুই ধাপ এগিয়ে চিন্তা করছে।
অথচ তরু চাইলে তো এটাও ভাবতে পারতো যে বিয়ের পর ফাইজান নিশ্চয় তরুকে তার ক্যারিয়ার গড়তে বাঁধা দিবে না।তবে কি তরু ফাইজানকে এইটুকু ভরসা করতে পারছে না!
ফাইজানের মন খারাপ হয়ে গেলো। "একদিন তুমি ভালো ক্যারিয়ার গড়ভে,জীবনে সফল হবে।সেদিন তোমার জীবনে হয়তো আমার অস্তিত্ব থাকবে না তরু।তখন?"
"যে থাকার সে সারাজীবন আমার হয়েই থাকবে তাকে আমার করে রাখার জন্য কাগজে কলমে স্বাক্ষর করে রেজিস্ট্রি করতে হবে তা আমি বিশ্বাস করি না।বিয়ের পরেও তো কতো বিচ্ছেদ হয়ে যায় মানুষের।
তাছাড়া, আপনাকে আজীবনের জন্য আমার পাশে পেতে হলে যদি একটা স্বাক্ষরকেই পুঁজি করতে হয় তাহলে সেখানে আমার ভালোবাসার মূল্য রইলো কই?
আমার ভালোবাসা কি এতোটাই সস্তা যে বেঁধে না রাখলে হারিয়ে যাবে?
তবে হয়তো আমি আপনাকে সেভাবে ভালোবাসতে পারি নি।অথবা আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।"
ফাইজান কথা বাড়ালো না।শুধু মনে মনে বললো, "তোমাকে আমি কতটা ভালোবেসেছি তা যদি তুমি কখনো জানতে তবে ভয় শিউরে উঠতে। আমি নিজেকে ভুলে গিয়ে তোমাকে ধ্রুবসত্যি বলে জানি তরু।তোমার চোখেই এই দুনিয়া দেখার স্বপ্ন আমার। তোমার তরেই মন প্রাণ সব সঁপে দিলাম।অথচ তুমি বুঝলে না।
দুনিয়ার বাস্তবতা বুঝতে গিয়ে আমার অশান্ত মনের ছটফটানি তুমি টের পেলে না।তুমি জানতে ও পারলে নাতোমাকে পেয়ে গেলে আমার জীবনের সকল অন্ধকার মুছে যেতো।"
ফাইজান ফোন রেখে দিলো।তরু জানালার পাশে বসে আনমনা হয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো। নিগূঢ় অন্ধকার বাহিরে। ঠিক যেনো তরুর জীবনের মতো। বাবা নেই,ভাই নেই,বোন নেই।থাকার মধ্যে এক মা আছেন তিনিও অন্য সংসারের ঘরণী। তরুর আপন বলতে কেউ নেই। ফাইজান সেই মুহূর্তে তরুর জীবনে এসেছে।
ঝড় বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা তরুর ঝোড়ো কাকের মতো নিঃসঙ্গ জীবনে ফাইজান এসেছিলো। এই বিশাল পৃথিবীতে তরু তখন ভীষণ একা। সেই মুহূর্তে ফাইজানের সান্নিধ্য তরুকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করেছে।
মা'কে ঘিরেই যার জীবন ছিলো তার জীবন থেকে যখন মা ও দূরে চলে গেলো তরুর তখন নিজেকে স্রোতের সাথে ভেসে যাওয়া মানুষের মতো মনে হতো। ভেসে যাওয়া মানুষ খড়কুটোকেও আঁকড়ে ধরে, ফাইজান তো একজন রক্ত মাংসের মানুষ।
মুখে যতই বলুক মা'কে ছাড়া তার অসুবিধা হবে না মনে মনে তরু ভীষণ একা হয়ে গিয়েছিলো তখন।
ফাইজান তরুকে নতুন করে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।
চোখ বন্ধ করে ফেলে তরু।ফাইজানের সরল মুখের মুচকি হাসি ভেসে উঠে চোখে। একটা মানুষ সব কিছু ছেড়ে তরুকে চায় শুধু অথচ তরু কি সব হাবিজাবি ভাবছে!
তরু ফাইজানকে ভালোবাসে।
এটা সত্যি।
ফাইজান ঠিকই তো বলেছে সবকিছুর পেছনে ছুটতে ছুটতে যদি ফাইজানকে হারিয়ে ফেলে তরু কি তখন আসলেই সুখী হতে পারবে?
ভেতর থেকে কে যেনো তীব্র প্রতিবাদ জানালো।
ফাইজান তরুর জীবনে নেই ভাবতেই তরুর হাত পা অসাড় হয়ে এলো।
তরুর মনে পড়ে গেলো ফাইজানের সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি বলে তরু ঘুমাতে পারে নি,যন্ত্রণায় মনে হচ্ছিলো বুঝি মরেই যাবে।
তরুর দুই চোখ ভিজে উঠে বারবার। দ্রুত ফাইজানের নাম্বারে ডায়াল করে।বারবার বলে আমি আপনাকে হারাতে চাই না ফাইজান।আমার কিছু লাগবে না,কোনো সফলতা, ক্যারিয়ার কিছুই না।আপনি থাকলেই হবে আমার।
ফাইজান তখন ফোন অফ করে দিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে।
এই জগৎ সংসারে ভালোবাসার মতো যন্ত্রণার শব্দ বুঝি আর একটা ও নেই।
সকালে ফাইজান ফোন অন করে চমকে উঠে। তরুর ৪৫ টা মেসেজ এসেছে। সবগুলো মেসেজে একটাই বাক্য,"আমি আপনাকে আমৃত্যু পাশে চাই বৈধভাবে। "
ফাইজানের ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠে মুহূর্তে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন