উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


২৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ২৭)

একটাই জীবন অথচ কতো দুর্গম সেই জীবন চলার পথ।সেই কণ্টকাকীর্ণ পথ মানুষ হেটে যেতে পারে একজন বিশ্বস্ত জীবন সঙ্গী পাশে পেলে।
একজন উত্তম জীবন সঙ্গীই পারে জীবনের সব দুঃখ দূর করে খুশিতে ভরিয়ে দিতে।
নজরুল সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে রাবেয়া ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম,ঠোঁট কাঁপছে কোনো কারণে রাবেয়া ভীষণ ভয় পেয়েছে সম্ভবত।
নজরুল রাবেয়াকে কাছে টেনে নিলো। চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, "কি হয়েছে রাবু?ভয় পাচ্ছো কেনো?"
রাবেয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, "একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে।"
"কিছু বলার থাকলে বলবে নিশ্চয় তাই বলে এরকম কাঁপছো কেনো?"
"আমি জানি না আপনি কি মনে করবেন। আমার খুব ভয় করছে।"
"আচ্ছা তুমি আমাকে বলো আগে।কোনো ভয় নেই।আমি আছি তো।"
"আমি সম্ভবত কনসিভ করে ফেলেছি।এই দেখেন ইউরিন টেস্টের কিট। "
নজরুল তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো শুনে। উল্লাসিত হয়ে বললো, "কি বললে রাবু?আবারও বলো?"
রাবেয়া বুঝতে পারছে না এটা কি খুশির খবর নাকি দুঃখের।নজরুল এতো উত্তেজিত হয়ে গেলো কেনো?
নজরুল রাবেয়ার সামনে ফ্লোরে বসে পড়লো।রাবেয়ার দুই হাতে চুমু খেয়ে বললো, "আমি যে কি পরিমাণ খুশি হয়েছি রাবু তোমাকে বুঝাতে পারবো না। "
এক দৌড়ে নজরুল ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।রাবেয়া থম মেরে বসে রইলো আগের জায়গায়। তার মাথায় ঘুরছে মেয়েদের কথা। এই ব্যাপারটা মেয়েরা সহজভাবে যদি না নেয়?
মেয়েরা যদি মনঃক্ষুণ্ন হয় জানতে পারলে!
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে অনেকটা সময় কেটে গেলো রাবেয়া বুঝতে পারলো না।
কয়েকদিন ধরেই রাবেয়ার শরীর খারাপ লাগছে।সকাল হলেই শরীর আরো বেশি খারাপ লাগে যেনো।বিছানা থেকে মাথা তুলতেই ইচ্ছে করে না।তার উপর গা গুলিয়ে বমি তো আছেই।
নজরুলই প্রথম ব্যাপারটা ধরতে পেরে কিট নিয়ে আসে চেক করার জন্য।
রাবেয়ার ভাবনার মধ্যে সালেহা রুমে এলো। খেঁকিয়ে উঠে বললো, "পালঙ্কে বইসা কি দিবাস্বপ্ন দেখতাছো নাকি?না-কি মা মাইয়া মিইল্লা আমার পোলারে কেম্নে ধ্বংস করবা সেইটা চিন্তা করতেছো?নিজে তো আমার পোলার ঘাড়ে আইসা চাপছো এখন মাইয়া ও নিয়ে আসছো।ভাগ্য বলা যায় আমার পোলার।বউয়ের লগে দামড়ি মাইয়া ও ফিরি পাইছে। লাজ লইজ্জা তো মা মাইয়া কারোরই নাই।"
তরু তখন ঘুমে।সারারাত জেগে থেকে ঘুমিয়েছে সকালের দিকে।নাজিয়া জেগে ছিলো। দাদীর চিৎকার শুনে বের হয়ে যায় নাজিয়া।দাদীর এসব কথা শুনে এগিয়ে যায় মা'য়ের রুমে।
মাথা গরম হয়ে যায় নাজিয়ার তরুকে এভাবে মন্দ কথা বলায়।
দাদীর হাত টেনে ধরে নাজিয়া বললো, "দাদী,আপনেরে তো আমার আব্বা খাওন, পরন কোনো কিছুর অভাব দেয় না।আপনি, আপনার মাইয়ারা আমার আব্বার মাথাটা পারলে চাবাইয়া খাইতেন।তারপরেও কিসের এতো বিষ আপনার?
এই চিমসে যাওয়া শরীরে এতো ত্যাজ দেখান,আপনি না জানি জোয়ান কালে আমার মায়েরে কতো যন্ত্রণা দিছেন।
আপনার কি মরনের ভয় নাই মনে? এক পা কবরে চইলা গেছে, আল্লাহরে ডাকবেন, ইবাদত করবেন তা না কইরা হেঁটে হেঁটে কূটনামি করেন ক্যান?
তরু আমার বোইন,আমার বোইন আমার লগে থাকবো।আপনের যদি তরুরে অপছন্দ হইয়া থাকে আপনার আরো তিন পোলা আছে তাগো ঘরে গিয়ে থাকেন।আমাগো ঘরে তো আমার জন্ম হওয়ার পর থাইকাই আছেন।এবার বাকি তিন ঘরে থাকেন।আর এইখানে থাকতে হইলে আমাগো ঘরে কে থাকবো,কে খাইবো এসব নিয়ে চিল্লাপাল্লা করা বন্ধ করে বোবার মতো থাকন লাগবো।"
রাবেয়া মেয়েকে ধমকে উঠে বললো, "নাজিয়া,এসব কেমন কথা? এভাবে কথা বলতে নাই মা।উনি তোমার দাদী।মুরুব্বি মানুষ, মনে কষ্ট যাবে।"
"মা,মুরুব্বি বইলাই তার মন আছে,আর তোমার আমার মন নাই এইটা কোন হাদিসে আছে মা?উনি যখন তোমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে তখন?
ওনার মনে থাকে না তোমার মনে আঘাত লাগে যে?
সারাদিন তো জোঁকের মতো তোমার রক্ত চুষে খায়। তোমারই তো ওনার সব কাজ করে দেওয়া লাগে।
অন্য চাচীরা তো করে না।কেউ ফিরে ও তাকায় না।তাইলে তোমার লগে ক্যান এতো লাগতে আসে?কিসের এতো ক্ষোভ ওনার? আমি অনেক চুপ ছিওয়াম আর চুপ থাকবো না।"
সালেহা বিলাপ জুড়ে দিলো।পায়ের জুতা খুলে নিজের কপালে নিজে জুতাপেটা করতে লাগলো।
সালেহার চিৎকার শুনে আশেপাশের মানুষ ছুটে এলো।রাবেয়ার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মুহূর্তে।
সবাই আসতেই সালেহা বললো, "এই নাতিনে আমারে খাওনের খোঁটা দেয়। সৎ মায়ের পাল্লায় পড়ে এই নাতিন আমারে ঘর থাইকা বাইর করে দিতে চায়।
আর এই ডাইনি বেটি আমার সহজ সরল নাতিনের মনে আমারে নিয়া বিষ ঢুকায়।আমি কই যামু রে আল্লাহ!"
নজরুল এলো খানিক্ষন পরেই।তার বুকের ভেতর খুশীর ফোয়ারা বইছে।বাড়িতে এসেই দেখে অবস্থা বেগতিক।
সালেহা কান্না করছে।সব শুনে নজরুল নাজিয়ার দিকে তাকালো। নাজিয়া কেমন বেপরোয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
এগিয়ে গিয়ে নজরুল বললো, "নাজিয়া,উনি তো আমার মা,এরকম কড়াভাবে ওনার সাথে কথা বলো না মা।উনি মুরুব্বি মানুষ। "
নাজিয়া সরু চোখে তাকিয়ে বললো, "আব্বা,উনি মুরুব্বি এই অজুহাতে উনি ওনার জিহবা নামক ছু *রি দিয়ে কথার কো *পে কাউকে র ক্তা ক্ত করে ফেলবে?
আমি তাকিয়ে দেখবাও?
উনি মুরুব্বি বলে ওনার জন্য সব জায়েজ?"
নজরুল হেসে ফেললো। নাজিয়া হয়তো খুব রুডলি কথা বলেছে কিন্তু যা বলেছে তা কিছু ভুল বলে নি।তবুও মেয়েকে একটু বুঝিয়ে নজরুল মায়ের কাছে গিয়ে বললো, "মা,মিষ্টি খান।"
সালেহা কান্না বন্ধ করে ছেলের দিকে তাকালো। তিনি বিলাপ করেছেন আর ছেলে মিষ্টি নিয়ে এসেছে?
কাহিনি কি?
নজরুল হেসে ফেললো। হেসে বললো, "খুশির খবর শুনেন সবাই,আমি আবারও বাবা হইতে যাইতেছি আল্লাহর রহমতে।"
নাজিয়া খুশিতে চিৎকার করে রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে। সালেহা হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো। ছেলে কি বলছে প্রথমে বুঝে উঠতে পারে নি। বুঝার পর সালেহা আরো জোরে বিলাপ দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
ছেলের আর ছেলের বউয়ের মধ্যে ঝামেলা হওয়ার জন্য তাবিজ কবচ পর্যন্ত করলেন অথচ আল্লাহ তাদের মধ্যে কি-না মোহাব্বত আরো বাড়াইয়া দিতেছে?
তাবিজ কি উল্টো কাজ করলো না-কি!


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন