উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩০)
আলমগীর আমেনার সাথে বসে লতার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে।তরু গতকাল বিকেলে চলে এসেছে আবার নজরুলদের বাড়ি থেকে।
স্কুল থেকে ফিরে খাওয়ার পর আমেনা তরুকে বললো উঠান ঝাড়ু দিতে।
তরু কথা না বাড়িয়ে উঠান ঝাড়ু দিলো।
ঘরের সামনে সিড়িতে বসে আমেনা আর আলমগীর কথা বলছে।ওদের কথা তরুর কানে যাচ্ছে। হুট করে ফাইজানের নাম শুনে তরু চমকায়।
আলমগীর আমেনাকে কথাটা জানালো।
তরু সবটা শুনতে পেলো। তরু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে আসলে!
ফাইজান কি তাহলে ডাবল রোল প্লে করছে!
তরুর ভীষণ দমবন্ধ হওয়া কষ্ট হচ্ছে। তরু বুঝতে পারছে না কি করবে এই মুহূর্তে!
আগেই তো ভালো ছিলো তরু।কেনো এই ভালোবাসা নামক মায়ায় জড়ালো!
দিশেহারা হয়ে তরু কাজ শেষ করে ঘরে চলে গেলো। এই মুহূর্তে তার মতো অসহায় মনে হয় দ্বিতীয় কেউ নেই।
ঘরে গিয়ে তরু অস্থির ভঙ্গিতে হাটাহাটি করতে লাগলো। মা থাকলে এই মুহূর্তে ছুটে গিয়ে মা'কে জড়িয়ে ধরতো তরু।মা'ই তো তরুকে সবচেয়ে উত্তম সমাধান দিতে পারতেন।
এখন তরু কাকে বলবে?
নাজিয়াকে?
নাজিয়া নিজেই তো তরুর বয়সী। সুদুরপ্রসারি চিন্তা নিশ্চয় সে অতটা ভালো করতে পারবে না।হঠাৎ করেই একজনের কথা মনে পড়ে গেলো তরুর।
কন্ট্যাক্ট থেকে নাম্বার বের করে কাঁপা হাতে ডায়াল করলো।
নজরুল দোকানে ছিলো। তরুর কল দেখে কিছুটা অবাক হয় সে।তরু কখনো তাকে কল দেয় না। আজকে হঠাৎ কল দিলো!
কোনো সমস্যা হয়েছে নিশ্চয়।
রিসিভ করতেই তরুর বিমর্ষ সুর শুনতে পেলো।
তরুর মুখ থেকে সব শুনে নজরুল বুঝতে পারলো তরুর মন খারাপের কারণ।
নজরুল বললো, "তরু,তুমি চোখ বন্ধ করে ভাবো তো তুমি আসলে কি চাও?দুইটা অপশন তোমার কাছে। এক ফাইজানকে ছাড়া জীবনে এগিয়ে যাওয়া।
দুই ফাইজানকে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়া।
যদি ফাইজানকে ছাড়া নিজেকে নিয়ে ভাবতে চাও এখন তাহলে তোমার সামনে একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। তোমার মায়ের অনেক স্বপ্ন তোমাকে নিয়ে। তোমার রেজাল্ট ভালো, তুমি ভালো শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে ভালো কোনো পজিশনে যেতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে ফাইজানকে যে তুমি ভবিষ্যতে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাশে পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই কিন্তু। ফাইজান তোমার জন্য ৮-৯ বছর অপেক্ষা করতে পারবে?ওর ফ্যামিলিকে মানিয়ে নিতে পারবে?
মানুষের মন ভীষণ বিচিত্র তরু।এক জনমের ভালোবাসা হারিয়ে ও মানুষ নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে পারে আবার কেউ এক মুহূর্তের ভালোবাসাকে ও ভুলতে পারে না। সবার মানসিক অবস্থা যেহেতু এক না।
আবার দেখো,তুমি যদি চাও ফাইজানকে সাথে নিয়েই তোমার জীবনে এগিয়ে যাবে তাহলে তাও করতে পারো।তোমার মা হয়তো চাইবে না এতো শীঘ্রই তুমি সংসারে জড়িয়ে যাও।তুমি চাইলে আমি তোমার মা'কে ম্যানেজ করে নিবো।কিন্তু তরু,ফাইজানের ফ্যামিলির মানুষ কেমন তা তুমি জানো হয়তো। ওরা কি তোমার পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এসবে সাপোর্ট করবে?
তোমার তখন অনেক দায়বদ্ধতা থাকবে তরু।সেসব কি তুমি পালন করতে পারবে যথাযথভাবে?
তুমি ভেবে দেখো না।"
তরুর ভীষণ হোপলেস লাগছে।নজরুল আংকেল ভুল কিছু বলেন নি।
তরু কি ভালো থাকতে পারবে ফাইজানকে ছাড়া?
তরুর কেমন দিশেহারা লাগছে।ফাইজানকে নিয়ে কেনো এতো টানাটানি করতে হচ্ছে!
তরু কি পারবে আসলে ভালো থাকতে ফাইজানকে ছাড়া?
ফাইজানের পক্ষে নিশ্চয় সম্ভব হবে ৮-৯ বছর অপেক্ষা করা।করতে পারলে তো ফাইজান আজকে তাকে বিয়ের কথা বলতো না।
ফাইজানকে ছাড়া তরু কিভাবে থাকবে?
তরু না রাজি হলে পরিবারের চাপ ফাইজান নিশ্চয় লতাকে বিষয় করবে।লতার সাথে বিয়ে হলে চোখের সামনে ফাইজানকে দেখবে তরু।এর চাইতে বেদনার দ্বিতীয় কিছু নেই।তরু পারবে না সহ্য করতে।
ফাইজান তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। সেই ভালোবাসাকে তরু হারাতে দিবে না।
দরকার হলে স্ট্রাগল করবে সে।তবুও ফাইজানকে চায়।
তরু আর এসব নিয়ে ভাবতে চায় না।
শান্ত স্বরে তরু বললো, "ফাইজানকে চাই আমি আংকেল।"
নজরুল হেসে বললো, "ঠিক আছে মা,অসুবিধা নেই।তুমি ভীষণ সাহসী আর বুদ্ধিমতী মেয়ে।আমার বিশ্বাস তুমি সব বাঁধা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।তোমার মাকে আমি বুঝিয়ে নিবো ভেবো না তুমি। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে নিশ্চিত পাশে পাবে।আমি তোমার বাবা হতে না পারলেও বাবার দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করতে চাই তরু।আমি আশা করবো তুমি আমাকে সেই সুযোগ নিশ্চয় দিবে।"
ফাইজান টিউশন শেষ করে মেসে ফিরে দেখে তার বাবা মেসের বাহিরে বসে আছেন।আব্বাকে দেখে ফাইজান চিন্তায় পড়ে গেলো। আব্বা এখানে এসেছেন কেনো?
কোনো খারাপ সংবাদ না-কি?
কালাম হোসেন ছেলেকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বললেন,"তোমার মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়েও তুমি বাড়িতে গেলে না ফাইজান?তোমার দুই ভাই দেশের বাহিরে,তোমার মা তোমার জন্য কেমন ছটফট করছিলো তা একটা বার নিজের চোখে দেখতে গেলে না তুমি? "
ফাইজান জানে তার এখন নরম হয়ে কথা বলার সময় নেই।সে নরম হয়ে কথা বললে সবাই তাকে পেয়ে বসবে।জীবনের সবকিছুতে বাবার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে কিন্তু বিয়ের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে যদি নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা না থাকে তাহলে এই জীবনের দাম কি?
বিয়ে মানে তো শুধু শরীরের মিলন নয়,মনের মিলন ও হতে হয়।শরীরের মিলন যদি গুরুত্বপূর্ণ হতো তাহলে বিয়ে না করে মানুষ পতিতালয়ে যেতো।
"বাড়িতে আমি গিয়েছিলাম আব্বা,কিন্তু আম্মাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা যে আমাকে গাঁথতে চাইবেন লতার সাথে তা আমি জানতাম না।লতাকে বাড়ির উঠানে দেখেই আমার সন্দেহ হয় আপনারা কিছু একটা যুক্তি করেছেন।আপনাদের ফাঁদে তাই পা দিই নি।"
কালাম হোসেনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। গম্ভীর হয়ে বললেন,"আমি তোমার বাপ।আমি তোমার খারাপ চাই না এটুকু মনে রাখিও।প্রেম ভালোবাসা এইগুলা দুইদিনের। টাকা পয়সা,অর্থ সম্পদ আজীবনের। "
"আর মানসিক শান্তি? টাকা পয়সাতে কি সব শান্তি আব্বা?আপনার কাছে শান্তি হতে পারে কিন্তু আমার কাছে না।আমার কাছে সব শান্তি যাকে আমি ভালোবাসি তার মাঝেই।আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে নিছি আব্বা।"
কালাম হোসেন শক্ত হয়ে বললেন,"আমি ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছি ফাইজান বাবা।এক দিকে তুমি তোমার পিরিতের মাইয়ারে বিয়া করবা,অন্যদিকে আমি তোমার মা'রে তালাক দিমু।মামলা শেষ।আশা করি তোমাগো ৫ ভাই বোনের কোনো আপত্তি থাকবে না তাতে?তোমার মানসিক শান্তি যদি ওই মেয়ে হয় তাইলে আমার ও মানসিক শান্তি লতার লগে তোমার বিয়ে দেওয়া।"
ফাইজান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। কালাম হোসেন আর দাঁড়ালেন না।বজ্রাহতের ন্যায় ফাইজান তাকিয়ে রইলো তার বাবার গমন পথের দিকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন