উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩)


লতার বুকের ভেতর কেমন ঢিপঢিপ করছে। বসন্তের কোকিল ডাকছে মন বাগানে।লতার নিজেকে মনে হচ্ছে মুক্ত,বাঁধনহারা পাখির মতো। ফাইজান তার দিকে তাকায় তাহলে মনোযোগ দিয়ে!
না হলে তো দেখতে পেতো না লতা সাজগোজ করে যে।
তাহলে কি ফাইজান ও লতাকে!
লতা অনেকদূর ভেবে ফেললো ফাইজানকে নিয়ে।
মাস দুয়েক আগে লতা ফাইজানকে দেখেছিলো একটা বিয়েতে।
হলুদ পাঞ্জাবি পরা ছেলেটার দিকে তাকাতেই মন কেমন করে উঠলো। সবার চাইতে অন্য রকম লাগছিলো তাকে।
ফাইজানের বোনের সাথে লতার ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিলো।
সেই বিয়েতেই দেখা ফাইজানকে।তখনই লতা ফাইজানের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়।জানতে পারে ফাইজান অনার্সে পড়ছে।মেসে থেকে পড়ে।
লতা অনেক দিন ধরে মা'কে ফুঁসলায় তার একজন প্রাইভেট টিচার রাখার জন্য। ফাইজানের গুণগান ও করে।
আমেনা জানে মেয়ে লেখাপড়ায় দুর্বল। কোনো মতে টেনেটুনে পাশ করে। সামনে ম্যাট্রিক পরীক্ষা। এখন থেকে যদি পড়াশোনা ঠিক করে না করে, মেট্রিক পাশ যদি না করতে পারে তাইলে বিয়ের বাজারে পিছিয়ে যাবে লতা।
মেয়ের কথা মতোই ফাইজানের বোনের সাথে কথা বলে। ফাইজানের মেস লতাদের বাড়ির কাছাকাছি।
ফাইজান আরো দুইটা টিউশন করায়।ছেলে স্টুডেন্ট চারজন। মেয়ে স্টুডেন্ট পড়ানোর ইচ্ছে ছিলো না ফাইজানের।মেসে ওর যত ফ্রেন্ড আছে,প্রায় সবাইকেই দেখেছে হয় তারা মেয়ে স্টুডেন্টদের প্রতি দুর্বল হয়ে যায়, অথবা রিলেশনে জড়িয়ে যায়।
ব্যাপারটা ফাইজানের কেমন যেনো দৃষ্টিকটু লাগে।সে যে সন্নাসী মানুষ তা তো না,আগুন আর মোম কাছাকাছি থাকলে মোম তো গলবেই।তাই নিজেই নিজেকে সাবধানে রাখতে চায়।এজন্য নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলো।কিন্তু আব্বা আম্মার কথা চিরকাল মান্য করে আসা ফাইজানের পক্ষে সম্ভব ছিলো না কোনো মতে তাদের কথা অমান্য করার।তবুও ফাইজান বলেছে ওর সময় হবে না,বাবা মা'কে তো এসব খুলে বলতে পারে না।
আব্বা উল্টে বললো দরকার হলে আগের একটা ছেড়ে দিতে,এরা আত্মীয় মানুষ। না করা যাবে না।
ফাইজান বিরক্ত হয়ে গেলো আজকেও লতাকে দেখে।আজকে সাজগোজ করে নি ওভাবে কিন্তু মুখে একগাদা ক্রিম,পাউডার দিয়ে বসেছে।
ভ্রু ও কেমন সাদা হয়ে আছে। বিরক্ত হয়ে ফাইজান বললো, "লতা,যাও মুখ ধুয়ে আসো।"
লতা মুখ গোমড়া করে উঠে গেলো। মুখ ধুয়ে লতা আয়নার সামনে দাঁড়ালো।নিজেকে ভালো লাগছে না খুব একটা।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো লতার।ফাইজান তাকে পছন্দ করবে তো!
মন খারাপ করে গিয়ে বসলো লতা।ফাইজান পড়াতে পড়াতে খেয়াল করলো লতার মন খারাপ মনে হচ্ছে। সেসব নিয়ে কিছু বললো না। গতকালের হোমওয়ার্ক দেখাতে বললো লতাকে।
লতার মাথায় হাত পড়ে গেলো। অংকটা সে করতে পারে নি।সে ভেবেছিলো তরুকে দিয়ে অংকটা করিয়ে নিবে।তারপর ফাইজানকে দেখিয়ে বলবে সে করেছে।কিন্তু গতকালের ঘটনার পর আর তরু লতার সাথে কথা বলছে না।লতাও তাই কথা বলে না।এই অবস্থায় হোমওয়ার্ক ও করা হয় নি।
ফাইজান আবারও জিজ্ঞেস করলো।
লতা আমতাআমতা করে বললো, "আমার গত রাতে ভীষণ পেটব্যথা ছিলো। সন্ধ্যায় শুয়ে পড়ি। "
পেছন থেকে লতার ছোট ভাই লাবিব ডেকে বললো, "মিথ্যা কথা বলছে ভাইয়া।আপু রাতে ১২ টা পর্যন্ত সিরিয়াল দেখেছে।"
লতা হতভম্ব হয়ে গেলো লাবিবের কথা শুনে। এই বিচ্ছুটা ঘরে আছে লতার মাথায় ছিলো না তা।
ফাইজান বিরক্ত হয়ে বললো, "মিথ্যা কথা বললে কেনো?"
লতা জবাব দিলো না। ফাইজানের কাছে তার ইমেজ খারাপ হয়ে গেছে।মানতে পারছে না লতা।
ফাইজান আর কথা বাড়ালো না।এরকম পড়ালেখা নিয়ে অবহেলা করা স্টুডেন্ট ওর পছন্দ না।
লতা ফাইজানের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো ফাইজান রেগে আছে। নিজ থেকেই বললো, "আগামীকাল হোমওয়ার্ক করে আপনাকে দেখাবো আমি সত্যি।"
ফাইজান গম্ভীর হয়ে বললো, "ঠিক আছে।"
বাকিটা সময় নিরবে পড়িয়ে গেলো ফাইজান।
রাতে লতা এলো তরুর কাছে।তরু তখন ড্যান ব্রাউনের ভিঞ্চি কোড পড়ছে।লতা মুখ ভোঁতা করে বললো, "আমাকে একটা অংক করে দে তরু।"
তরু কথা বললো না।
লতা কিছুক্ষণ বসে রইলো। তরুর কিছু বলছে না দেখে তরুর পাশে এসে বসে বললো, "প্লিজ তরু,এই অংকটা আমাকে করে দে।তুই তো জানিস আমি গণিতে কাঁচা।আজকে বাড়ির কাজ দেখাতে পারি নি, কাল ও যদি দেখাতে না পারি তো লজ্জায় পড়ে যাবো।প্লিজ আমাকে বাঁচা।"
তরু অগত্যা উঠে বসে অংক করে দিলো।লতা খাতা নিয়ে বললো, "তোকে ধন্যবাদ রে।ইশ,কেনো যে তুই সায়েন্সে গেলি,কমার্সে এলে আমার আর কোনো চিন্তা থাকতাও না।এখন গ্রুপের সাবজেক্টগুলোর জন্য আটকে যাবো।"
তরু একটা কথা ও বললো না লতার সাথে।
পরদিন লতা তরুর করা অংকটা দেখালো ফাইজানকে।ফাইজান কিছুক্ষণ লতার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো, "তুমি করেছো?"
লতা কনফিডেন্স নিয়ে বললো, "হ্যাঁ ভাইয়া।"
ফাইজান আর কিছু বললো না। তবে মেয়েটা যে স্পষ্ট মিথ্যে বলছে তা বুঝে গেলো।
ফাইজানের মুখে অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে। লতা কিছুটা আতংকিত হয়ে গেলো। ফাইজান যদি ওকে পড়ানো বন্ধ করে দেয়!
তার আগেই অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
মনে মনে প্ল্যান করে ফেললো লতা।
রাতে খেতে বসে লতা বললো, "কি হইছে না জানো?"
আমেনা বললো, "কি?"
"ফাইজান ভাই আছে না,উনি তো মেসে থাকে।ওখানে না-কি খাওয়ার অনেক কষ্ট।দেখো না বিকেলে নাশতা দিলে উনি সবটা খেয়ে নেয়।বেচারা কতো দিন একটু ভালো খেতে পারে না। ওখানে না-কি থাকার ও কষ্ট ওনার।
বুঝো না একটা ছোট্ট বেডে শোয় কোনোমতে কুন্ডুলি পাকিয়ে।"
আমেনা বললো, "তুই জানলি কিভাবে?"
"আমাকে উনি নিজেই বলছে।আমি বলি কি মা,আমাদের তো ঘরে তিন চারটা রুম খালি আছে।ছাদেও একটা রুম আছে।ওনারে নাইলে এখানেই থাকতে বলো।তাইলে আমার পড়াটাও ঠিকমতো হইবো।এখন তো ১ ঘন্টার বেশি পড়ায় না।তখন রাতেও পড়তে পারমু।
তরুর মা'র কেমন অহংকার দেখো না মা?আমি যদি ফাইজান ভাইয়ের কাছে বেশি করে পড়তে পারি তাইলে আমার ও রেজাল্ট ভালো হইবো।তুমি ও তখন চাচীর থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দিতে পারবা।"
আমেনা ভেবে দেখলো মেয়ে ভালো কথা বলছে।মেয়ের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মেছে দেখে আমেনা খুশি হলেন।
সিদ্ধান্ত নিলেন তাই করবেন।
লতা মনে মনে বললো, "আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন ফাইজান ভাই।আমি অনেকগুলো মিথ্যা কথা বলেছি।"
পরদিন আমেনা ফাইজানের আব্বার কাছে কল দিলো। কল দিয়ে বললো ফাইজান মেসে থাকে,মেসে কতো ঝামেলা। খাওয়া দাওয়ার কতো কষ্ট হয়।আত্মীয় স্বজন থাকে তো মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকার জন্য। আমেনারা থাকতে ফাইজান মেসে থাকবে কেনো।আমেনাদের বাসায় থাকে যাতে।
ফাইজানের আব্বা কালাম হোসেন ধুরন্ধর মানুষ। তিনি বুঝে গেলেন ফাইজানকে আমেনার পছন্দ হয়েছে। আলমগীরের এখন অনেক টাকা পয়সা। শহরে জায়গা জমি ও আছে।ছেলে মেয়ে দুইজন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন আরো বছর খানেক যাক,তারপর আমেনার কাছে কথাটা পাড়বেন।
বিকেলে ফাইজান বাড়িতে কল দিলো। কালাম হোসেন ছেলেকে বললেন লতাদের বাসায় থাকার কথা। শুনে ফাইজান বিরক্ত হয়ে গেলো। সবসময় আব্বা আম্মার কথা শুনে বলে এখন ওনাদের ঠিক করা জায়গায় থাকতে হবে!
বিষয়টা মেনে নিতে পারলো না ফাইজান।আব্বাকে কিছু বললো না কিন্তু মা'কে বললো, "মা,আমি এখানে আমার বন্ধুদের সাথে থাকি।আমার পড়ালেখার ব্যাপার আছে মা।আমি ওখানে গিয়ে থাকতে পারবো না।"
সালেহা স্বামীর সব কথায় সবসময় সায় মেলায়।স্বামীর কথা তার কাছে ধ্রুবসত্য।
তাই কাঁদোকাঁদো সুরে বললো, "বাবারে,তুই শহরে থাকস।বাপ মা'র তোরে নিয়া কতো চিন্তা তুই জানোস না তা।বড় দুই ছেলে থাকে কাতার।তুই দেশে আছস,কি খাস না খাস চোখে দেখি না।তুই আমার ছোট ছেলে।আমার কতো কষ্ট হয় বুঝবি না।তোর ভালোই চাই বাবা।তোর বাপে শুনলে মনে কষ্ট পাইবো বাবা।তুই অমত করিস না।"
মায়ের ইমোশনাল কথার চাপে পড়ে অনিচ্ছা নিয়ে ও ফাইজান লতাদের বাসায় এসে উঠলো দুই দিন পর। ফাইজানের জন্য ছাদের রুমটা ঠিক করে দিলো। লতা নিজে হাতে পুরো ঘর সাজালো।
বাবা মায়ের উপর রাগ নিয়ে ফাইজান এলো। রুমে ঢুকে ফাইজান চমকে উঠলো। কেমন জবরজং করে সাজানো। প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে রুমের সব দেয়াল।
ফাইজানের মনে হলো এটা নিশ্চয় লতার কাজ।লতা এসব সাজিয়েছে।
বিছানায় জরি দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে।মাথা গরম হয়ে গেলো ফাইজানের।
চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান হওয়া সবসময় যে সুফল বয়ে আনে না বুঝতে পারলো।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন