উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৩০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩১)

তরু মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে বারবার কেমন লজ্জা পাচ্ছে। কবে কবে তরু এতটা বড় হয়ে গেলো বুঝতে পারে নি তরু নিজেও।
নিজের বিয়ে নিয়ে মায়ের সাথে নিজেই কথা বলছে।
মা কি তরু কে ভীষণ খারাপ মনে করছে?
করাটাই তো স্বাভাবিক। তরু বুঝতে পারছে না কি করতে যাচ্ছে তরু এসব।
ভবিষ্যতেই বা কী হবে তাও তরু জানে না।
তবুও তরু চায় তার বর্তমান সুন্দর হোক।ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে তরু বর্তমান নষ্ট করতে চায় না।
রাবেয়া নজরুলের কাছে তরুর ব্যাপারে সব শুনে ভীষণ হতভম্ব হয়েছে। রাবেয়ার কখনো ভাবনাতেও ছিলো না তরু এতো অল্প বয়সে প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে যাবে।মেয়েকে নিয়ে রাবেয়ার অনেক স্বপ্ন ছিলো।
অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে মেয়েকে বুকে নিয়েই তো রাবেয়া বেঁচেছিলো।মেয়ে পড়ালেখা করবে,অনেক প্রতিষ্ঠিত হবে এই স্বপ্ন দেখেই তো রাবেয়া বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেতো।সেখানে তরু এখনই বিয়ে করে নিতে চাইছে?
এতো কিসের তাড়া তরুর?
রাবেয়ার কি একবার ফাইজানের সাথে কথা বলে ভালো করে ক্লিয়ার হয়ে নেওয়া উচিত?
ফাইজানের নাম্বার তো আছে রাবেয়ার কাছে।
রাবেয়া মনে কষ্ট পেলেও মেয়েকে বুঝতে দিলো না।অসম্মতি ও জানালো না।
তরুর সাথে কথা শেষ করে ফাইজানকে কল দিলো।
ফাইজান ফোনের সিম কার্ডটা তরুর সাথে কথা বলেই চেঞ্জ করে ফেলবে ভেবেছিলো।তরুকে কল দিয়ে যেতেই তরুর মায়ের কল দেখে ফাইজান নিজেই কিছুটা হতবাক হয়।
সন্ধ্যা থেকে তরু ফাইজানকে ফোনে ট্রাই করে যাচ্ছে। কিন্তু ফাইজানের ফোন বন্ধ।
সব কিছু ঠিক করার পর ফাইজান এখন ফোন অফ করে বসে আছে। তরুর ভীষণ রাগ হচ্ছে ফাইজানের উপর।
রাগ করেই ঘুমিয়ে গেলো।
সারারাত ফাইজান দুই চোখের পাতা এক করতে পারে নি। সিদ্ধান্তহীনতায়, দ্বিধায় ভুগছে ফাইজান।ফাইজান দাঁড়িয়ে আছে চার তলার ছাদের উপর।
ফাইজানের ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে এখান থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়।
একটা জীবন অথচ কোনো কিছুই কি-না কোনো কিছুতেই ফাইজানের মতামত দেওয়ার অধিকার নেই।
এরকম করে বেঁচে থেকেইবা কি লাভ?
ফাইজানের ভাবনার মধ্যে ফাইজানের রুমমেট সাহেদ এলো।কালাম হোসেন যাওয়ার সময় মেসের কয়েকজনের ফোন নাম্বার নিয়ে গেছেন।ফাইজান ফোন অফ করে দিলে যাতে যোগাযোগ করতে পারেন তার জন্য।
শাহেদের ফোনে বাড়িতে থেকে কল আসায় ফাইজান প্রথমে অবাক হয়।
রিসিভ করতেই শুনতে পায় মা কান্নাকাটি করছে।ফাইজানের মাথায় রক্ত উঠে যায়।এরা সবাই কি ফাইজানকে পাগল পেয়েছে?
নাকি সার্কাসের ক্লাউন ভেবেছে?
সবাই ফাইজানকে ব্যবহার করতে চাইছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য।
সাজেদা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,"আব্বা রে,তুই কি চাস মা এই বয়সে ঘরছাড়া হই?
তুই কি তোর বাপরে চিনস না?
তোর বাপ নিজের কথার বাহিরে কোনো দিন গেছে?নিজে যা বুঝবো তাই করে।
আমরা সবাই জানি তোর বাপ তোগো ভালোর জন্যই সবকিছু করে।তোরা কেউ তোর বাপরে বুঝস না।
কোথাকার কোন মাইয়ার জন্য তুই বাপের মনে এম্নে কষ্ট দিতেছস আব্বা?
বাপ মার দোয়া ছাড়া মানুষ জীবনে ও বড় হইতে পারে না।শান্তিতে থাকতে পারে না।
বাপ মা'র অভিশাপ লইস না এরকম কইরা।তুই যদি ওই মেয়ের লগে সম্পর্ক না ভাঙ্গস তাইলে আমারে তোর বাপ তালাক দিবো বলছে।এই বয়সে যদি পোলাপানের জন্য আইসা স্বামীর লগে ছাড়াছাড়ি হয় তাইলে আমার আর বাঁইচা থাকনের উপায় নাই।আমি ও গলায় দড়ি দিমু।
তোগো জীবনে এখন আর বাপ মারে লাগবে না।তোরা সবাই লায়েক হয়ে গেছস।বাপ মা এখন বোঝা হয়ে গেছে তোগো।
তোরা তোগো বউ নিয়ে থাক সুখে থাক।"
কথা শেষ করে সাজেদা কালাম হোসেনের দিকে তাকালো। কালাম হোসেনের মুখে সন্তুষ্টির হাসি। এবারের প্ল্যান যে কাজ করবে তাতে তিনি নিশ্চিত। সাজেদা হেসে বললো, "কেমন বুঝলেন?আমার মনে লয় ফাইজান এবার আর অমত করবো না।"
কালাম হোসেন মাথা নাড়িয়ে বললো, "যেভাবে পরিকল্পনা মোতাবেক কথা বলতেছি আমরা দুজনেই, আশা করছি ফাইজান লাইনে এসে যাবে।একবার লতার লগে বিয়া হয়ে যাক।ওইসব পিরিতি ভুলতে দুই দিন লাগবে না।পুরুষ মানুষের ভালোবাসা আবার কি?বাতির বন্ধ করলে রাস্তার পাগল যেমন,প্রিন্সেস ডায়না ও তেমন। পুরুষের ভালোবাসাই নারীর শরীর। সে যতোই নীতিবাগীশ হোক।"
ফাইজানের এতো রাগ উঠলো যে প্রচন্ড রাগে মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলো না ওর।শাহেদের ফোনটা আছাড় মারতে যাচ্ছিলো, শাহেদ দৌড়ে এসে ফোনটা নিয়ে নিলো হাত থেকে। রাগ সামলাতে না পেরে ফাইজান ছাদের রেলিং এ লাথি মারতে লাগলো। এই মুহূর্তে ফাইজানের মনে হচ্ছে বাপ মা সবচেয়ে বড় শত্রু জীবনের।
এরকম বাপ মা যাতে কারো না হয়।
বাকি রাতটা ফাইজানের ছাদেই কাটলো।
ছাদে বসেই ফাইজান সিদ্ধান্ত নিলো। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
মনে মনে তরুকে উদ্দেশ্য করে বললো, "আমাকে কখনো ক্ষমা করো না তরু।আমি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারি নি।তোমাকে আমার করতে পারি নি।আমাকে ঘৃণা কর তুমি।"
ভোররাতের দিকে ফাইজান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
তরু ঘুম থেকে উঠে ফজরের আগে।ভোররাতের দিকে পড়তে বসে তরু।এসএসসি পরীক্ষা ঘনিয়ে এসেছে ওর।যত কিছুই করুক না কেনো পড়ালেখা বাদ দিতে চায় না তরু।সিলেবাস অনেক আগেই শেষ তরুর।এখন বারবার শুধু রিভিশন দিয়ে যাচ্ছে।
ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফাইজানের কোনো কল আসে নি।তরু আবারও ট্রাই করে। ফোন অফ।
বইয়ের উপর ফোন রেখে তরু পড়তে বসে।
বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ফাইজানের ৯ টা বেজে যায়।সাজেদা রান্নাঘরে রান্না বসিয়েছে। কালাম হোসেন বারান্দায় বসে পান খাচ্ছেন।
ফাইজান উঠানে দাঁড়িয়ে মা'কে ডাকলো।
সাজেদা ছেলের ডাক শুনে ছুটে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। বিলাপ করে কাঁদতে থাকে সাজেদা।ফাইজান নির্বিকার।
কেঁদে কেটে সাজেদা বললো, "তোর বাপ আজ দুই দিন আমার রান্না ও খায় না।বাবারে,এই বয়সে আইসা যদি তোগো কারণে আমরা দুইজন অশান্তিতে থাকি তাইলে আল্লাহর কাছে ঠেকা থাকবি তোরা।
বাপ মা'র মনে কষ্ট দিয়ে কেউ কোনো দিন সুখী হইতে পারে নাই।"
ফাইজান থমথমে সুরে বললো, "আব্বারে বলেন বিয়ের ব্যবস্থা করতে। আমি লতাকে বিয়ে করতে রাজি।"
সাজেদা চিৎকার করে বললেন,"আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমার কান্দন শুনছো তুমি। আমি জানতাম আমার পোলা আমারে কোনো দিন ও কষ্ট দিবো না।আব্বা আয় ঘরে আয়।ভিতরে গিয়ে বস।আমি তোর বোইনে গো কল করি।তোর আব্বারে গিয়ে সুখবর দিই।"
কালাম হোসেন যদিও সবটা শুনেছেন তবুও ছেলের সামনে ভাব নিয়ে বসে রইলেন চেয়ারে উঠলেন না।স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে এই প্ল্যান করেছে। ছেলে কেমন সুড়সুড় করে হাজির হয়ে গেছে। নিজের বুদ্ধিতে নিজেই সন্তুষ্ট কালাম হোসেন।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন